সময়ের আয়নায়
সময় মানুষের জীবনের সব থেকে বড়ো শিক্ষক ।মানুষের রুচি ,চিন্তাধারা ,জীবনশৈলী
,জীবনদর্শন ,অনুভূতির স্তর -সবকিছুই বদলে যায় সময়ের সাথে সাথে ।আমাদের জীবনে
শিক্ষা একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ।স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন -''যাবৎ
বাঁচি ,তাবৎ শিখি '' অর্থাৎ সারা জীবনই আমরা শিক্ষা অর্জন করে চলি -শেখার কোনো
শেষ নেই ।শিক্ষার মূল ক্ষেত্রের কেন্দ্র তিনটি -শিক্ষক ,শিক্ষার্থী ও
শিক্ষাদান প্রক্রিয়া ।
সুদূর অতীতে ব্রহ্মচর্যতে শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে থেকে অধ্যয়ন
সমাপ্ত করতো ।গুরুও সন্তানস্নেহে শিষ্যদেরকে নিজের সবটুকু বিদ্যা উজাড় করে
দিতেন ।যুগের সাথে ধীরে ধীরে এলো টোলকেন্দ্রীক শিক্ষাব্যবস্থা ।গুরুদেব হলেন
গুরুমশাই ,আর শিষ্যেরা হলো শিক্ষার্থী ।তারপর আরো সময় এগিয়ে চললো ।ততোদিনে
পাশ্চাত্য সভ্যতার হাওয়া ঢুকে পড়েছে ।গুরুমশাই হলেন মাস্টারমশাই ,আর
শিক্ষার্থীরা হলো ছাত্র ।আজ মাস্টারমশাইরা হলেন স্যার আর ছাত্র -ছাত্রীরা
স্টুডেন্ট ।যে শিক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক -শিক্ষার্থীর পারস্পরিক সম্পর্ক
সেই শিক্ষা আছে নিজের স্থানেই ,শুধু পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে ।আর আমূল পরিবর্তন
হয়েছে শিক্ষক -শিক্ষার্থী সম্পর্কের ।তবে তা গৌরবজনক না লজ্জাজনক তা
আলোচনাসাপেক্ষ ।সবকিছুরই ভালো ও খারাপ -দুটো দিকই থাকে ।কোন্টা আমরা গ্রহণ করে
নিজেদেরকে সমৃদ্ধ না ধ্বংস করবো -সেটা আমাদের নিজ নিজ রুচি ও বিচারবুদ্ধির ওপর
নির্ভরশীল ।
বিশ্বায়নের যুগে বেশকিছু উন্নয়নমূলক ও বিনোদনমূলক উপকরণের দৌলতে
মূল্যবোধ ও নীতিবোধের অবক্ষয় চোখে পড়ার মতো ।আজকালকার বেশকিছু শিক্ষার্থী
স্বপ্নের রঙীন দুনিয়ায় বাস করে ।নিজেদের দায়বদ্ধতা স্বীকার তো দূরের কথা পিতা
-মাতা -শিক্ষক /শিক্ষিকার প্রতি কিঞ্চিৎ শ্রদ্ধাটুকুও পোষণ করে না ।আবার
বেশকিছু শিক্ষক -শিক্ষিকা আছেন ,যাদের কাছে শিক্ষাদানের মহৎ কর্ম নেহাতই পেশা
।সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি তাঁরা কোনোরুপ কোনো দায়বদ্ধতা স্বীকার করেন
না ।ফলস্বরূপ ,কিছু জনের দোষে ভুগতে হয় সকলকে ।আজ শাসন আর শোষণের মধ্যে
পার্থক্য বিলুপ্ত হওয়ায় চোখের সামনে অনেককিছু দেখেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক
-শিক্ষিকারা শাসন করবার আগে বেশ কয়েকবার ভাবেন ,পাছে তার শাসনের কপালে ''শোষণ
''তকমাখানি জোটে ।
যে ''শিক্ষক ''শব্দটি শোনামাত্রই হৃদয়ে বইতো শ্রদ্ধার ফল্গুধারা ,আজ
স্থানে স্থানে সেই শিক্ষকই হচ্ছেন লাঞ্ছিত -অপদস্থ ।এটা ভাবাও যেন খুব কষ্টকর
।কিন্তু কষ্টকর হলেও এটাই সত্যি ।সময়ের আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি -''সময়টা
বয়ে যাচ্ছে ,সাথে আমরাও বয়ে যাচ্ছি লাগামছাড়া গতিতে ''।
=================================
অমৃতা বিশ্বাস সরকার
ভাদুল ,বাঁকুড়া
শিক্ষা বিষয়ক একটা মূল্যবান লেখা।
উত্তরমুছুন