শিক্ষার সেকাল ও একাল
'যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে
পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।'.... এ. পি. জে. আব্দুল কালাম ।
জীবনে চলার পথে বাবা মা প্রথম শিক্ষক । তাঁরাই শিশুমনে প্রথম বোধ তৈরি করেন ।
গুরুজনদের প্রণাম ,দয়া ,মায়া , এই বোধ জন্মায় যদি তাঁরা নিজেরাই তা পালন করে
দেখিয়ে দেন । তখন জীবন ছিল অনাড়ম্বর ,সহজ ,সরল ,প্রচার বিমুখ ।
যৌথ পরিবারে সবার সাথে মিলিয়ে চলার শিক্ষা , একে অন্যের দুঃখে সহানুভূতি
দেখানো , ভাগ করে নেওয়া -- ইত্যাদি ছিল ।
স্কুল জীবনে আমাদের শিক্ষক ,শিক্ষিকারা ছিলেন একদিকে যেমন ব্যক্তিত্বময়ী
,অন্যদিকে তাঁদের অন্তরে স্নেহ ভালবাসা তিরতির করে বয়ে যেত । শাসন ছিল অল্প
,বড়জোর বকুনি ,ভয় দেখানো কিন্তু কখনো আঘাত করতেন না । একালে দেখি অনেক শিক্ষক
শারীরিক , মানসিক আঘাতও করেন যে স্কুল থেকে ফিরে ছেলেটি আত্মহত্যা করে ।
সেকালে একটু কিছু হলেই বাবা মা ছুটে আসতেন না ,স্কুলে আসার পর পুরো দায়িত্ব
ছিল শিক্ষিকাদের । তাঁরা সেটি পালন করতেন ।
সেদিন এক স্কুল ঘেরাও করা হল , দাবি -তাদের ছেলেমেয়ে পাশ করিয়ে দিতে হবে । একে
পাশ ফেল প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে ,তারপর যদি ফেল করার পর পাশ করিয়ে দেওয়া হয়
তাহলে শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় ? ভাবতে হবে ।
সেকালে বা কয়েক বছর আগেও স্কুলে পাঠিয়ে বাবা মা নিশ্চিন্ত থাকতেন ,এখন স্কুলেও
কেউ নিরাপদে নেই । শিক্ষকরা ছাত্রীদের ,এমনকি শিশুদেরও নির্যাতন করছেন --প্রায়
খবরের কাগজে বের হচ্ছে ।এর বিপরীতে বলা যায় -- ভাল শিক্ষকরাও আছেন ।
বিদ্যায়তনে রাজনীতি এক চিরদিনের সমস্যা । বহিরাগত ছেলেরা কলেজে প্রবেশ করে
মারপিট করে ,রক্তারক্তি করে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করে ,শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ।
এক্ষেত্রে কঠোরতা দরকার । শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রীদের এমন রাজনীতি করা উচিত নয়
যেখানে প্রাণ চলে যায় ।
এখন দেখি নানা কারনে ছেলেমেয়েরা অনশনে বসে । তাদের সুবিধে ,অসুবিধে একটু
সহানুভূতি দিয়ে দেখলে এরকম পরিস্থিতি হবার কথা নয় ।
শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড । মেরুদণ্ড সোজা রাখাই উচিত বলে মনে করি । অন্যায়কে
যদি অন্যায় বলা না হয় তাহলে সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে । সেখানে শক্ত হতেই হবে ।
সেকালে আমরা খুব কম খরচে পড়াশোনা করেছি এখন পড়ার পিছনে এত ব্যয়
হয় যে বাবা মায়েরা আর দ্বিতীয় সন্তান নিতে চান না ।
আমরা কখনও ভর্তি হতে টাকা দিই নি এখন এমন টাকা চাওয়া হচ্ছে যে কোন কলেজে ভর্তি
হতে না পেরে ছেলেটি শেষ পর্যন্ত হতাশায় আত্মহত্যা করছে । বিপন্ন এক অবস্থা এবং
নৈরাজ্য শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে ।
সম্প্রতি মালদার ছেলেরা অনশন করেছে কারন তাদের সার্টিফিকেট বৈধ নয় । সেই
সার্টিফিকেটের কি দাম ,কেনই বা এরকম অবৈধ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে ? তাতে
তাদের দোষ কোথায় ? ভাবতে হবে পাঁচ বছর তারা পড়াশোনা করেছে আর বাবা মায়েরাও
কষ্ট করে পড়িয়েছে ।
বাংলা স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা কমছে ,কোথাও স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । শিক্ষা
যাতে পরবর্তী কালে কাজে আসে তেমন শিক্ষা দেওয়া উচিৎ ।
ছেলেমেয়েরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে ,নীল তিমি কত ছেলেমেয়ের প্রাণ কেড়ে নিল ,
ছেলেমেয়ে একাকীত্বে ভুগছে ,নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে , বিষণ্ণ এক দিন এসেছে -- এখন
সুস্থ্য মানসিকতার ছেলেমেয়ে গড়তে হবে আগামীর জন্য ।
পরিশেষে বলব --যথার্থ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ুক । উদ্ভাসিত হোক আগামী । ছাত্র
শিক্ষক সম্পর্ক নিবিড় অটুট থাকুক । সুন্দর ,সুস্থ্য এক সমাজ আমাদের সবার কাম্য
।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন