সাতসকালে পাড়া মাথায়, হাঁক পাড়ছে বুড়ি
আয়রে আমার চুনোপুঁটি, বাজলো পাঁচটা কুড়ি।
কুড়ুল হাতে চললো বুড়ি, সঙ্গে পান্তা ভাত
আচ্ছা আচ্ছা জোয়ান নাকি, বুড়ির কাছে কাত!
বুড়ি নাকি রোজ সকালে মাইল দশেক হাঁটে
তেষ্টা পেলে চুমুক মারে জার্সি গরুর বাঁটে,
চুনোপুঁটি সঙ্গে বুড়ির থাকে সকল কাজে,
সন্ধ্যে বেলায় কাজ ফুরোলে চপ-ফুলুরি ভাজে।
সেই বুড়িটা এক বিকেলে মাথায় কাঠের বোঝা,
কিচ্ছুটি নেই পেটে তখন, চলছে প্রথম রোজা।
দেখলো হঠাৎ একটু দূরে, একটা মেয়ে পড়লো ঘুরে
চারধারে তার দাঁড়িয়ে আছে গোটা চারেক ছোঁড়া,
এক পলকে বুঝলো বুড়ি নয়ত এটা খেলা থুড়ি,
সর্বনাশের ইচ্ছা ওদের শয়তানেরই গোড়া!
এরপরে যা ঘটলো তখন, চারটে ছোঁড়ার জীবন-মরণ
বুড়ির হাতে দুলছে কুড়ুল, টকটকে লালবরণ!
চারটে ছোঁড়া প্রাণ বাঁচিয়ে বললো থানায় সব সাজিয়ে
বুড়িই নাকি করছিল খুন -- কুড়ুলখানা দিয়ে!
ওই ছেলেদের বাবা কাকা, পকেট ভরা কালো টাকা
উপুড় করে ঢেলে দিতেই-- থানার টেবিল ফাঁকা,
চারচারজন পুলিশভায়া ধরলো বুড়ির হাত আর পায়া
শুনলো না কো একটা কথাও, বললো, কাটা মায়া!
বছর কয়েক পর সে বুড়ি জেলের ভিতর ভাঙছে নুড়ি
দেখতে পেল সেই মেয়েটা একটু দূরে বসে,
অবাক চোখে তাকিয়ে বুড়ি ফেলে দিয়ে হাতের নুড়ি
ফিসফিসিয়ে ডাকলো তাকে --বললো কি রে ছুঁড়ি?
তুই কি করে এই নরকে হাঁটলি কেন এই সড়কে?
কেনইবা তুই পড়লি ধরা শয়তানেরই হাতে?
দু-চোখ ভরা জল ছাপিয়ে ধরা গলায় ঠোঁট কাঁপিয়ে
বললো মেয়ে যে ঘটনা বুড়ির পাশে বসে --
ওই ছেলেরা যুক্তি করে, বন্ধু সেজে করলো বিয়ে
নিয়ে গেল মাসেক পরে মিথ্যে আশা দিয়ে
বলেছিল, চাকরি আছে বিদেশ থাকে, আপিস কাছে
যেতে হবে সেই শহরে রাখবে ভাতে -মাছে,
অভিনয়ে ভুলে ছুঁড়ি বিদেশ এল কপালপুড়ি
ভালোবাসার ফাঁদ চেনেনি সদ্য ফোটা কুঁড়ি।
এরপরে সব নরক জ্বালা, দিল যারে বরের মালা
বিকিয়ে দিল শরীরটা তার --দরজা বন্ধ তালা!
আসতো যারা রোজ দুবেলা করতো তাকে ফালাফালা
তাদের কাছেই বলতো কেঁদে নিজের জীবন-জ্বালা।
এমনি এক রাতের বেলা তার ঘরেরই দরজা ঠেলা
অন্ধকারেই নিল হাতে মদের ভাঙা বোতল,
মাতাল যখন ঢুকলো ঘরে টলমলিয়ে গায়ের 'পরে
ঢুকিয়ে দিল অস্ত্র কাচের --একটা যদি মরে!
এক ছুট্টে বেরিয়ে এসে, পথের মাঝে দাঁড়িয়ে শেষে
কিচ্ছুটি সে চিনতো না তাই ভিড়েই গেল মিশে।
কপালে পাপ থাকলে তখন মরার পরেও হয়না মরণ
ধরলো পুলিশ তাকেই এবার, তার বেরোলো শমন!
এরপরে এক দুঃখ-গাথা শুনে বুড়ির ঘুরলো মাথা,
ভাগ্য কেন এমন?
ঢুকতো পুলিশ দিন দুপুরে ছিঁড়তো তাকে অন্ধ ঘরে
পালা করে আসতো সবাই
হয়নি বিচার যখন!
বলেছিল, মুখ খুললে পুঁতে দেবে জেলের ঝিলে
জানবে না তো কাক-পাখিতেও রটবে "ফেরার" তখন!
মরেই আছি আর কি মরণ?
আর কী হবে? যাক না জীবন!
বলেই দিলাম আদালতে জানতে চাইলো যখন,
তারপরে যা ঘটলো ঘটার
চাকরি গেল পুলিশ ব্যাটার,
আমার গলায় দিল মালা করলো সবাই বরণ।
বললো আইন, খুন করেছে শাস্তিটা তাই লেখাই আছে
খাটতে হবে জেল কিছুদিন--
হবে না তো মরণ!
শুনলে বুড়ি, কেমন বলো কি ছিল কি হয়ে গেল,
চলো এবার ভাঙবো নুড়ি
দু-জনাতে, কেমন!
================================
অনিন্দ্য পাল
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল
গ্রাম -- জাফরপুর
পোঃ-- চম্পাহাটিি
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন