Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প ।। ইচ্ছের ডানা ।। মিতা দাস


 ইচ্ছের ডানা

মিতা দাস 


আইলাইনারটা বেশ ভালো করে পরা হয়েছে এবার। আগেরবার তো পুরো ঘেঁটে গিয়েছিলো, তারপর অনেক ইউটিউব ভিডিও দেখে, ভালো করে শিখে নিয়ে,এবার ঠিক হয়েছে। এবার আইশ্যাডো পরাটাও শিখতে হবে, কিছুতেই দুটো শেড মিক্স করে পরতে পারছিলো না। এইসব কথাই ও ভাবছিলো, হঠাৎ বাবার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি মিসেলার দিয়ে মুছে, বোনের আইলাইনারটা ড্রয়ারে রেখে দিলো সুজিত। ততক্ষনে তার বাবা ওপরে চলে এসেছিলেন, যদিও মুখে বিন্দু মাত্র মেকআপের চিহ্ন ছিল না, তবুও সুজিতকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার বাবার ভ্রু কুঁচকে গেল। একটু সন্দেহ হয়েছিল, কিন্তুু কিছু বললেন না। আগেও এই নিয়ে অনেক কথা হয়ে গিয়েছিলো, যদিও সুজিতকে তারপর আর দেখেননি সেরকম কিছু করতে, তবুও মনটা খুত খুত করছিলো। কি বলতে এসেছিলেন, সেটা না বলে নিজের ঘরে চলে গেলেন। আজকে আবার ছেলে সুজিতের আচরণ ভাবাচ্ছে যতীন বাবুকে। শুধু ছেলে কেন? তার মেয়ের আচরণ ও স্বাভাবিক না, সত্যি ছেলেটা আর মেয়েটা যে কেন স্বাভাবিক আচরণ করে না? তার মেয়ে সৌমীর কোনো কিছুই, জামাকাপড় থেকে শুরু করে স্বভাব, সাজগোজ কোনো কিছুই মেয়েদের মতো না।     

অনেক কষ্টে বাইরের লোকেদের থেকে লুকিয়ে রেখেছেন, যদি তারা জেনে যান, তাহলে কি ভাববেন? তাই উনি আর ওনার স্ত্রী সুজাতা অনেকবার তাদের ছেলে মেয়েকে বুঝিয়েছেন কোনটা করা উচিত আর কোনটা করা উচিত না। তার স্ত্রীও সৌমীকে মেকআপ বক্স, শাড়ি ইত্যাদি কিনে দিয়েছেন যাতে ওকে মেয়ে লাগে, সৌমী তার চুল বড় রাখতে পছন্দ করে না, তবুও তাকে বাধ্য করেছেন চুল বড় রাখতে। সমাজে বেঁচে থাকার জন্য যে "স্বাভাবিক" হতেই হবে তাদেরকে। কিন্তুু সুজিত কিছুতেই বুঝতে পারে না কেন? কেন তাদেরকে নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করতে দেওয়া হয় না? ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে, স্কুলের প্রথম দিন হোক, কি কোনো কারণে ব্যথা পাওয়া, সৌমী যখন কাঁদতো, তখন তার মা বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে চুপ করতেন, কিন্তুু যখন সুজিত কাঁদতো তখন তাকে চুপ করাতে করাতে ওনারা বলতেন " কেন মেয়েদের মতো কাঁদছিস?" আচ্ছা শুধু মেয়েরাই কি কাঁদতে পারে? ছেলেদের ব্যথা লাগে না? সুজিত সত্যি বুঝে পায় না কেন তার বাবা মা ঠিক উল্টোটা করেন তাদের জন্য। সুজিতের আজও মনে আছে সেইদিন টার কথা যেদিন ও প্রথম বলে বাড়িতে যে ও নাচ শিখবে, কত্থক শেখার খুব ইচ্ছে ওর। সেদিন তার বাবা মা আর একটা কাকুও বাড়িতে এসেছিলেন, তারা খুব হাসা হাসি করেছিলেন, তারা নাচের স্কুলে ভর্তি করালেন ঠিকই, কিন্তুু সুজিতকে না, ফুটবল শেখার ইচ্ছে রাখা সৌমিকে। সুজিতকে ক্রিকেটে ভর্তি করানো হলো, যদিও ক্রিকেট তার ভালই লাগে খেলতে, কিন্তুু খারাপ লাগলো এটা ভেবে যে তার ইচ্ছেটাকে গুরুত্ব দেওয়া হল না। তারপর একদিন সুজিতকে মেকআপ করতে দেখে যতীন বাবু খুব রাগারাগি করেছিলেন, এমনকি ওকে থাপ্পড় মেরে দিয়েছিলেন, সৌমীকে তো সারাক্ষণ শুনতে হয় কোনটা ওর করা ঠিক আর কোনটা মেয়ে হিসেবে করা উচিত নয়। দুজনেই মুখ বন্ধ করে মেনে নিয়েছিল।

এই বাড়িতে সুজিতকে বোঝার মতো কেউ নেই একমাত্র সৌমী ছাড়া, সেও তো ভুক্ত ভুগী। তার ইচ্ছেরও কোনো দাম নেই। তাই তারা ঠিক করে যখন তাদের ইচ্ছের কোনো দাম এই বাড়িতে নেই, তখন তারা তাদের বাবা মায়ের ইচ্ছে অনুযায়ী চলবে, কিন্তুু নিজেদের ইচ্ছেটা কেও গুরুত্ব দেবে, কিন্তুু লুকিয়ে। তাই মাঝে মাঝেই সুজিত তার বোনের মেকআপ বক্স খুলে মেকআপ করে আর নিজের কত্থক শেখার ইচ্ছে পুরন করার জন্য কত্থক ক্লাসে ভর্তি হয়। ওদিকে সৌমীও চুপি চুপি ফুটবল কোচিং নেয়, তার সাথে মাঝে মাঝে কত্থক শিখতে যায়, যাতে কেউ সন্দেহ না করে। সৌমী মাঝে মাঝে স্টেপ বুঝতে না পারলে সুজিত সাহায্য করে। ওদিকে সুজাতা যখন মেয়ের মেকআপ বক্স খুলে দেখেন যে সেটা ব্যাবহার হয়েছে, সৌমী ব্যাবহার করেছে ভেবে উনি খুশি হয়ে যান। এইভাবেই দুজনে দুজনকে সাপোর্ট করে, কিন্তুু মাঝে মাঝে দুজনেরই খুব খারাপ লাগে যে ওদের ইচ্ছের কোনো দাম দেওয়া হয়না। সৌমী মাঝে মাঝে বলে " দাদা, আমরা কি কোনোদিনও একটু ভালোভাবে কিছু করতে পারবো না? কতোদিন এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে করবো?" উত্তরে সুজিত বলে " আর যে কোনো উপায় নেইরে, যদি আমরা বলি তাহলে এইটুকু স্বাধীনতাও তো থাকবে না।" 

সৌমী তার কলেজের ফুটবল টিমে ভর্তি হয়েছিল, অবশ্য ভর্তি হোওয়ার সময় ও তাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছিল ফুটবল কোচের থেকে, কিন্তুু প্রতিভা যে অযাচিত কথা থামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সেটা সৌমী প্রমাণ করে দিয়েছে। এখন সৌমী ফুটবল টিমের স্টার প্লেয়ার আর ওকে দেখা দেখি অনেক মেয়েও টিমে যোগ দিয়েছে। সুজিত ও একটা ড্যান্স ক্লাসে ভর্তি হয়েছে, তার বোনের ক্লাসে ভর্তি হলে তার বাবা মা যেনে যেতে পারেন, তাই অন্য একটা ক্লাসে ভর্তি হয়েছে, মাঝে মাঝে অফিসে কোনো প্রোগ্রাম হলে মেকআপের দায়িত্ব সুজিতের থাকে, ও মেকআপ করিয়ে দেয় আবার শিখেও নেয়। দুজনেই নিজেদের প্রতিভা নিয়ে গর্ব বোধ করে, কোনো ম্যাচ বা কম্পিটিশন জিতলে একে অপরকে নিজেদের ট্রফি, সার্টিফিকেট দেখায়, কিন্তুু বাবা মাকে দেখানোর সময় উল্টে দেয়। সৌমীর ট্রফি সুজিত দেখিয়ে বলে যে ও ক্রিকেটে পেয়েছে, আবার সুজিতের প্রাইজ সৌমী দেখিয়ে বলে যে ও ড্যান্স কম্পিটিশনে পেয়েছে।
 
সমস্যাটা শুরু হয় সেদিন থেকে, যেদিন পাড়ার পরিতোষ কাকু সুজিতকে ড্যান্স ক্লাস থেকে বাইরে বেরোতে দেখেন। সুজিতের ড্যান্স ক্লাসটা তার বাড়ির থেকে দূরে যাতে তার বাড়িতে বা পাড়াতে কেউ জানতে না পারে। সুজিতের বাড়ি বেহালাতে তাই ও তেরতলায় একটা ড্যান্স ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলো। পরিতোষ বাবু কোনো কাজে ওইদিক গিয়েছিলেন, হঠাৎ সুজিতকে ড্যান্স ক্লাসের সামনে দেখে অবাক হয়ে যান। সুজিত ও প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনা কি করবে, তাই চুপ করে পরিতোষ বাবুর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। পরিতোষ বাবু সামনে এসে জিজ্ঞেস করেন " কিরে সুজিত, তুই নাচের ক্লাসের সামনে কি করছিস?" সুজিত বুঝে পায়না কি বলবে, তারপর বলে ফেলে " কিছুনা কাকু, বোনকে এখানে ছাড়তে এসেছিলাম"।পরিতোষ বাবু " ও আচ্ছা" বলে চলে যায়। কোনরকমে হাফ ছেড়ে বাঁচে সুজিত, ভাবে যাক কোনো সন্দেহ করেনি, নাহলে কেস খাওয়ার থেকে কেউ বাঁচাতে পারতো না। কিন্তুু সত্যিটা আর কতদিন লুকোনো যায়? পরিতোষ বাবু সেদিন ঠিক করেছিলেন তার মেয়েকেও ওই নাচের ক্লাসেই ভর্তি করাবেন, মনে মনে ভাবলেন ভালই হবে, সৌমী আছে তাই কোনো সমস্যা হবে না, একসাথে যাতায়ত করতে পারবে, কোনো অসুবিধে হবে না। কিন্তুু ফি কতো আর কখন ক্লাস হয়, এইসব যতীন বাবুর থেকে একবার জেনে নিতে হবে, তাই উনি ঠিক করেন কালকে যতীন বাবুর বাড়িতে যাবেন।

কালকের দিনটা সৌমীর জন্য খুব জরুরি, কালকে ইন্টার কলেজ ফুটবল ম্যাচ আছে, যদি ওদের কলেজ জিতে যায়, তাহলে ফাইনাল ম্যাচের জন্য কোয়ালিফাই করবে, আর সেটা করতে পারলে, স্টেট লেভেল ম্যাচ খেলার জন্য কোয়ালিফাই করবে। সুজিতকে কথাটা বলাতে ও খুব খুশি হয়েছে, ও ঠিক করেছে যে সৌমীর ম্যাচ ও কালকে দেখতে যাবে। সৌমীর আনন্দে ঘুম আসছিলো না, আবার একটু টেনশন ও হচ্ছিলো। সুজিতের ঘরের গিয়ে ওকে তুলে জিজ্ঞেস করে " দাদা, কালকে যদি সিলেক্ট হয়ে যাই তাহলেতো ফাইনালের জন্য সিলেক্ট হবো, তারপর ওটাতে সিলেক্ট হলে স্টেট লেভেলের জন্য সিলেক্ট হবো।" সুজিত শুনে বললো " তাতে অসুবিধে কোথায়? ভালই তো, তুই তো এটাই ছেয়েছিলিশ।" সৌমী বললো," সেটা না দাদা, আমি বরাবর চেয়েছিলাম যে আমি সিলেক্ট হয়ে যাই, কিন্তুু সিলেক্ট হাওয়ার পর অনেক ট্রেনিং হবে, তার থেকেও বড় কথা গার্ডিয়ানের পারমিশন লাগবে, সেগুলোর কি হবে?" সুজিত বললো " তুই ওই নিয়ে ভাবিস না, কালকের ম্যাচে কনসেনট্রেট কর, বাকিটা আমি দেখে নেবো।" সৌমী আবার নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পরলো।

পরদিন সকালে সুজিত আর সৌমী নিজেদের মতো ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে যায় যাতে কেউ কিছু বুঝতে না পারে। দুজনে চৌরাস্তা পৌঁছে একসাথে অটো নিলো। কলেজে পৌঁছে সৌমী তারাতারি ড্রেস চেঞ্জ করে নিলো, আর একটু পরেই ম্যাচ শুরু হয়ে যাবে। ওদের কোচ স্যার কিছু ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দিলো, ওদিকে সুজিত দর্শকের আসনে বসলো, যতই হোক একটু বুক ঢিপ ঢিপ করছে, কিন্তুু সৌমীকে ভয় পেতে না করলো। ম্যাচ শুরু হয়ে গেলো, সৌমী প্রথমেই একটা গোল দিলো আর দর্শকের আসনের সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠলো। খুব আনন্দ হচ্ছিলো সুজিতের, আনন্দে নাচছিল সৌমী। কিন্তুু ওদের জানা ছিলোনা ওদের বাড়িতে ওইসময় কি হতে চলেছিলো।

সুজিত আর সৌমী কলেজ যাওয়ার পর যতীন বাবু পেপার পড়ছিলেন, সেই সময় পরিতোষ বাবু এলেন। যতীন বাবু ওনাকে দেখে হেসে উঠে দাড়ালেন, তারপর বসতে বললেন, দুজনেই গল্প করতে আরম্ভ করে দিলেন, সুজাতা দেবীকে চা বানাতে বললেন। প্রথমে নিজেদের কাজ নিয়ে, তারপর এদিক ওদিক গল্প করে পরিতোষ বাবু আসল কথায় আসলেন। পরিতোষ বাবু বললেন " আচ্ছা যতীন বাবু আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছিলাম।
"হ্যাঁ বলুন না" যতীন বাবু বললেন।
পরিতোষ বাবু বললেন "আচ্ছা সৌমী যেই নাচের ক্লাসে যায়, সেটা কেমন একটু বলতে পারবেন? কতো টাকা নেয়, কখন ক্লাস হয়।"
যতীন বাবু বললেন "ক্লাসটা তো খুবই ভালো, সৌমী ও অনেকদিন হলো শিখছে, তা আপনি কেন জিজ্ঞেস করছেন?"
পরিতোষ বাবু বললেন " আসলে আমিও ভেবেছিলাম আমার মেয়েকে ওখানে ভর্তি করাবো, সৌমী ও থাকবে, ভালই হবে একসাথে যাতায়াত করতে পারবে, অনেক দূর........."
পরিতোষ বাবুর কথাটা শেষ হলো না, তার আগেই যতীন বাবু বললেন " দূর? বেশি দূরে নাতো, এইতো কাছেই ওর নাচের ক্লাস, দুটো বাড়ি পরে। কোনো অসুবিধে হবে না, ও নিজেই যাতায়াত করতে পারবে।"
পরিতোষ বাবু বলে উঠলেন " সেকি যতীন বাবু, সৌমী তারাতলাতে ক্লাস করে না?"
যতীন বাবু বললেন " না তো, ও এখানেই ক্লাস করে।"
পরিতোষ বাবু অবাক হয়ে বললেন " কিন্তুু অমি সুজিতকে তারাতলাতে দেখলাম, ও একটা নাচের ক্লাস থেকে বের হচ্ছিলো, আমি বলাতে বললো যে সৌমী ওখানে যায়, আর ও ওখানে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলো।"

কথাটা শোনা মাত্রই যতীন বাবুর মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো, উনি যা বোঝার বুঝে গিয়েছেন, কিন্তু কি বলবেন কিছু বুঝতে পারছিলেন না, পরিতোষ বাবুকে কোনমতে "পরে দেখছি" বলে উঠে গেলেন, পরিতোষ বাবুও আর কিছু বললেন না, "আসছি" বলে চলে গেলেন। পরিতোষ বাবু চলে যাওয়ার পর যতীন বাবু মনে মনে ভাবলেন " তাহলে এতদিন সুজিত আমাকে মিথ্যে কথা বলেছিল, যা কিছু বলেছিল সব মিথ্যে ছিলো ।" রাগে তার চোখ লাল হয়ে গেল, চুপচাপ সুজিতের আসার অপেক্ষা করতে থাকলেন।

ওদিকে সৌমী খুব খুশি, তার কলেজ ফাইনালে সিলেক্ট হয়েছে। প্রথমে একটা কলেজকে টেক্কা দিয়ে সেমিফাইনালে উঠতে পেরেছিলো, তারপর জিতে যাওয়ার পর, ফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করলো। ফাইনাল ম্যাচ আরও দুইদিন পরে, ম্যাচ শেষ হওয়ার‌ পর সৌমীর কলেজের সবাই তাকে জড়িয়ে ধরলো, সত্যি, খুবই আনন্দের দিন, সুজিত ও এসে সৌমীকে জড়িয়ে ধরলো, বললো " আজকে সত্যি আমার খুব আনন্দ হচ্ছে, তুই এতো ভালো খেলেছিস, আমি তোকে যতো দেখছিলাম, ততো মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম।" সৌমী বললো " ইস যদি এই কথাটা বাবা মা কে বলতে পারতাম!" সুজিত বললো " সেটা করলে এইটুকু ও করতে পারবি না"। সৌমী মাথা নিচু করে বললো " হ্যাঁ জনিরে।" বলে সৌমী আবার ড্রেস চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসলে, ঠিক সকালে যেটা পরে বেরিয়েছিলো, যেটাতে মনে হচ্ছিলো ও কলেজে ক্লাস করে আসছে। কলেজ থেকে বেরিয়ে সুজিত আর সৌমী একটা দোকানে কিছু খেতে ঢুকলো, আগেই বাড়িতে বলা ছিলো যে আসতে আসতে সন্ধে হবে, তাই কোনো অসুবিধে ছিলোনা, আর সৌমীরও খুব খিদে পেয়ে গিয়েছিলো। খাওয়ার অর্ডার করে সুজিত জিজ্ঞেস করলো " আচ্ছা তোদের ফাইনালটা কবে রে?" সৌমী বললো " আর দুই দিন পরে।" শুনে সুজিতের মুখটা শুকিয়ে গেলো, সৌমী সেটা লক্ষ্য করলো, ও জিজ্ঞেস করলো " কি হয়েছে দাদা? কি ভাবছিস তুই?" 
সুজিত বললো " তোর ফাইনাল ম্যাচ দেখতে আসতে পারবো না রে।" সৌমী জিজ্ঞেস করলো "কেন, কোনো অসুবিধে?" সুজিত বললো " অসুবিধে না, সেদিন আমার একটা ড্যান্স কম্পিটিশন আছে, যদি জিতে যাই তাহলে বাইরে পারফর্ম করার একটা চান্স আছে।" শুনে সৌমী খুব খুশি হয়ে গেলো, ও আনন্দের সাথে বললো " সত্যি? কি বলছিস তুই? আগে বলিসনি কেন? এটাতো খুব ভালো খবর।" ও এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলো। সুজিত বললো " আমি বলতাম, আসলে সময় পাইনি বলার। কিন্তুু ফাইনাল ম্যাচে হয়তো‌ আসতে পারবোনা, যদি কোনো কারণে দেরি হয়ে যায়।" সৌমী বললো " তুই চিন্তা করিসনা দাদা, তুই তোর মতো কম্পিটিশনে মন দে।" সুজিত বললো " আমি তাও আসার চেষ্টা করবো"। দুজনে খাওয়ার খেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাড়িতে পৌঁছে দেখে সবাই চুপ করে বসে আছে, সবার মুখ গম্ভীর, তারা যে ঢুকলো, তাও কারুর কোনো কথা নেই। সুজিত প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনি, ও যতীন বাবুকে কিছু একটা বলার জন্য এগিয়ে আসতে যাবে, কিন্তুু যতীন বাবু উঠে তার গালের মধ্যে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো। সুজিত হতবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকলো। যতীন বাবু রাগে নিজেকে সামলাতে পারছেন না, উনি আরেকটা থাপ্পড় মারত যাবেন কিন্তুু সুজাতা দেবী আর সৌমী তাকে আটকে দিলেন। যতীন বাবু সুজিতের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন " মিথ্যুক, ঠকবাজ তুই এতবড়ো কথা লুকিয়েছিস?" সুজিত কাপতে কাপতে বলে উঠলো " আমি কি লুকোলাম তোমাদের থেকে?" 
যতীন বাবু বলে উঠলেন " পরিতোষ বাবু আজকে এসেছিলেন বাড়িতে, তার মেয়েকে নাচের ক্লাসে ভর্তি করাবেন বলে, তারাতলাতে।" শুনে সুজিতের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো, কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না। ও চুপ করে গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকলো, সুজিতকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে যতীন বাবু চিৎকার করে বললেন " আমি না করেছিলাম না? বলিনি এইসব মেয়েদের‌ জিনিস করবি না। তুই ভাবতে পারছিস কেউ জানলে আমরা মুখ দেখাতে পারবো না।" সুজিত আর চুপ করে থাকতে পারলোনা, যখন জেনেই গেছে , তখন আর চুপ করে থেকে লাভ নেই, আজকে একটা এসপার ওসপার‌ করবে। সুজিত খুব আসতে, শান্ত হয়ে বললো " কেন মুখ দেখাতে পারবেনা বাবা? আমি কি এমন কাজ করেছি?"
যতীন বাবু আরও রেগে গিয়ে বললেন " লজ্জা করছেনা তোর? সুজাতা দেবীও বললেন " তুই আমাদের কিছু না বলে এরকমটা করতে পারলি? তোর একবারও মনে হলোনা কেউ এটা জানতে পারলে কি ভাববে?"
সুজিত এখনও শান্ত, ও বললো " আমার লজ্জা করেনা বাবা, আমি কোনো খুন বা চুরি ডাকাতি করিনি যার জন্য আমাকে লজ্জা পেতে হবে", সুজাতা দেবীকে উদ্দেশ্য করে বললো " আমি যদি তোমাদেরকে বলতাম, তাহলে তোমরা আমাকে যেতে দিতে? আর কে কি ভাববে সেই জন্য আমি নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারবোনা?"
" না পারবিনা, এরকম অদ্ভুত ইচ্ছে রেখে এই সমাজে থাকতে পারবিনা তুই।" যতীন বাবু বলে উঠলেন, তিনি বললেন " এই সমাজে থাকতে গেলে কিছু নিয়মে চলতে হয়, নিজের ইচ্ছে মতো সব করা যায়না।"
সুজিত বললো " সমাজ তো মানুষের জন্য বাবা, যদি সমাজে থেকে মানুষ নিজের ইচ্ছায় কিছু করতে না পারে, তাহলে কিসের সমাজ?"
যতীন বাবু বললেন " অযথা তর্ক করবোনা, কোন ইচ্ছের কথা বলতে চাইছিস তুই? নাচ শেখা, এটা তোর ইচ্ছে? মেকআপ করা, এটা তোর ইচ্ছে? এগুলো কোনো সাধারণ ছেলের ইচ্ছে হতে পারে? কোনো ছেলেকে দেখেছিস এরকম করতে? এইসব কাজ মেয়েদের, এগুলো মেয়েরা করে।"
"এরকম কোথাও লেখা নেই বাবা যে খেলাধুলো শুধু ছেলেরা করতে পারবে আর সাজগোজ নাচ মেয়েরা‌ করতে পারবে, এটা তোমার সমাজ ঠিক করেছে" সুজিত বললো, ও আরও বললো " তোমার সমাজ এইভাবেই কতো স্বপ্নকে শেষ করে দিয়েছে, কতজনের ডানা কেটে দিয়েছে সেটা জানো? কেন সন্মানে লাগবে বলে? কিসের সন্মান? এরকম সন্মান রেখে কি লাভ যেটা স্বপ্নকে শেষ করে ফেলে?"

যতীন বাবু বললেন " আমি কিছু শুনতে চাইনা, যদি এই বাড়িতে থাকতে চাস, তাহলে নাচ গান সব বন্ধ করতে হবে, নাহলে বেরিয়ে যেতে পারিস।" সুজাতা দেবী আটকানোর চেষ্টা করলো, কিন্তুু যতীন বাবু শুনলেন না। সুজিত ঠিক করলো ও চলেই যাবে, আর কিচ্ছু শুনবে না, ও ওর ঘরের দিকে যেতে যাবে, এমন সময় সৌমী বলে উঠলো " যেতে হলে শুধু দাদা কেন যাবে? আমিও যাবো।" সুজিত আটকাতে চেষ্টা করলো, কিন্তুু সৌমী শুনলো না, " আমাকে বলতে দে দাদা", বলে সৌমী এগিয়ে এসে বললো " শুধু দাদা তোমাদেরকে লুকিয়ে কাজ করেনি, আমিও করেছি। নাচের ক্লাসের সাথে সাথে আমিও ফুটবল খেলছি, কলেজের হয়ে ম্যাচ খেলছি।" যতীন বাবু আর সুজাতা দেবী অবাক হয়ে সৌমীর দিকে তাকিয়ে থাকলো, সৌমী বলে চললো " আর শুধু তাই না, আজকে আমি একটা ফুটবল ম্যাচ জিতেছি, দুদিন পরে ফাইনাল, সেখানে সিলেক্ট হলে স্টেট লেভেলে খেলতে পারবো।" সুজাতা দেবী বললেন " সৌমী তুইও? তুই কি করে করতে পারলি একটা মেয়ে হয়ে?" সৌমী একটু ব্যাঙ্গ হেসে বললো " সেটা তোমরা কোনোদিন বুঝবে না, মানুষ স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারেনা। তোমরা তো কোনোদিন আমাদের ইচ্ছেটা জিজ্ঞেস করোনি, আমরা কি চাই, তোমরা যা বলেছো, আমরা তাই করে গেছি, কিন্তুু আমরা খুশি কি না সেটা একবারও তোমরা ভেবেছো?" 

সৌমী বলে চললো " আজকে আমি আমার কলেজের হয়ে একটা ম্যাচ জিতলাম, দাদা এতো সুন্দর নাচ করতে পারে, কিন্তুু আমরা ভয়ে তোমাদেরকে বলতেই পারিনা। মনে হয় যদি তোমরা যেনে যাও তাহলে আমরাতো আর কিছু করতে পারবোনা, কেন? কারণ সমাজ সেটা ভালো চোখে দেখবেনা। আচ্ছা সমাজ কি সব কিছু? আমাদের ইচ্ছের কোনো দাম নেই?" সৌমী কেঁদে ফেললো, সুমিত আর কথা বাড়ালো না, সৌমীকে বললো ওর সাথে আসতে। ঘরে যাওয়ার আগে বলে গেলো " আমাদের ইচ্ছেটা তোমরা কোনোদিন গুরুত্ব দিলেনা, তোমরা চিরকাল সমাজের কথা ভেবে এসেছো, আচ্ছা যদি তোমাদের কোনো ইচ্ছে থাকতো, যেটা ছাড়া তোমরা থাকতে পরতে না, যেটা সমাজ আটকাতো, তাহলেও কি তোমরা এইভাবে ছেড়ে দিতে?" কথাটা বলে সুজিত সৌমীকে‌ নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো, সৌমীকে বললো নিজের জমা কাপড় গোছাতে, তারা আর এই বাড়িতে থাকবেনা। সুজিত নিজের ঘরে এসে বসে মাটিতে বসে পরলো, চোখ দিয়ে জল পরে যাচ্ছে, কিন্তুু আজকে আর মুছে ফেলছে না যেটা অন্যদিন করে থাকে, অন্যদিন আটকে রাখতে হয় কান্না, কিন্তুু আজকে আর আটকাচ্ছে না, অনেকদিন পর মন খুলে একটু কাঁদছে, শেষ কবে কেঁদেছিল, সেটা মনে নেই।

স্মৃতি এরকম একটা জিনিস, মনের যতো গভীরেই চাপা দেওয়া থাক না কেনো ঠিক কোনো না কোনো ভাবে বেরিয়ে আসে। সুজিতের‌ শেষ কথাটা যতীন বাবুর কানে বাজতে থাকলো "আচ্ছা যদি তোমাদের কোনো ইচ্ছে থাকতো, যেটা ছাড়া তোমরা থাকতে পরতে না, যেটা সমাজ আটকাতো, তাহলেও কি তোমরা এইভাবে ছেড়ে দিতে?" যতীন বাবুর অনেক কথা মনে পরে গেল, যেগুলো আজ অবধি কাউকে বলেনি। একটু বসে থাকার পর ঠিক করলেন সুজিতের সাথে কথা বলবেন। সুজিত ততক্ষনে ওর ব্যাগ গুছিয়ে ফেলেছিল, সৌমীও ব্যাগ নিয়ে রেডি, যতীন বাবু ঘরে ঢুকলেন। ওরা ওনাকে ঢুকতে দেখলো কিন্তুু কিছু বললো না। যতীন বাবু কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থাকলেন, অপরাধ বোধ তাকে গ্রাস করেছে, তারপর বললেন " তোরা যখন চলেই জাবি ঠিক করেছিস, তখন একটা কথা শুনে যা।" দুজনে যতীন বাবুর দিকে তাকালো, যতীন বাবু বলে চললেন " সুজিত, তুই জিজ্ঞেস করলি না আমার কোনো ইচ্ছে থাকলে, সেটা যদি সমাজ আটকাতো, তাহলে সেটা আমি ছেড়ে দিতাম কি না........" একটু থামলেন, তারপর সোফায় বসে বললেন " আমাকে ছাড়তে হয়েছিলো, সত্যি বলতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আমিও তোর মতো ছোটবেলায় সাজতে খুব ভালোবাসতাম, গাড়ির থেকে বেশি পুতুল দিয়ে খেলতাম, কিন্তুু একদিন যখন বাবা দেখতে পেলেন, তখন সব পুতুল ফেলে দিলেন, এমন কিছু আমার সামনে রাখতে দিলেননা যেটা মেয়েদের ছিলো, কাঁদলে বকা দিয়ে থামিয়ে দিতেন। আমার দাদারাও আমাকে মেয়ে বলে ক্ষেপাতে লাগলো, যাতে আমি ওগুলো কিছু না করি। আমি আস্তে আস্তে ভাবতে লাগলাম হয়তো বাবা ঠিকই বলছেন, হয়তো এটাই করতে হয়, তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও আর কোনো মেয়েদের জিনিস হাত দিলাম না। সুজিত তোকে যখন দেখলাম মেকআপ করতে তখন ভয় পেয়ে গেছিলাম, আমি তো ছোট ছিলাম তাই আমাকে বেশি কথা শুনতে হয়নি, কিন্তুু তুই ওরকম করছিস সেটা জানলে তো কেউ তোকে শান্তিতে বাঁচতে দেবেনা, তোকে সারাক্ষণ কথা শুনতে হবে।"
সুজিত এতক্ষন সব কথাগুলো শুনছিলো, তারপর যতীন বাবুর সামনে এসে বসে বললো " কে কি বলবে আমাকে, আমাকে কি শোনাবে তাতে আমার কিচ্ছু মনে হবেনা বাবা, সমাজ হয়তো আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না, কিন্তুু আমি যদি আমার স্বপ্নটার কথা না ভবি, তাহলে আমিও শান্তিতে থাকতে পারবনা, আমার ইচ্ছেটা চিরকালের মতো বন্ধী হয়ে থাকবে, কোনোদিন স্বাধীন হবেনা।" সৌমী এগিয়ে এসে বললো " সমাজ কি ভাবছে সেটাতে আমাদের কিচ্ছু এসে যায় না বাবা, তোমরা কি ভাবছো সেটাতে আমাদের এসে যায়। যদি তোমরা সমাজ কি ভাববে সেটা ভেবে ভয় পাও, তাহলে আমরা কিভাবে খুশি থাকবো?" 

যতীন বাবু দুজনের মাথায় হাত দিলেন, উঠে দাড়িয়ে বললেন " আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে তোরা রেস্ট নিয়ে নে, কালকে দোকানে যেতে হবে।" সুজিত আর সৌমী একে অপরের দিকে তাকালো, সৌমী জিজ্ঞেস করলো " কেন বাবা?" যতীন বাবু বললেন " কেন মানে? এইতো তুই বললি দুদিন পরে তোর ফাইনাল, ভালো জার্সি কিনতে হবে তো।" দুজনে বিশ্বাস করতে পারলো না, আনন্দে যতীন বাবুকে জড়িয়ে ধরলো। সুজিত বললো " বাবা দুদিন পরে আমার কিন্তুু নাচের কম্পিটিশন আছে, আমারও কিছু লাগবে।" যতীন বাবু বললো " হ্যাঁ ! তোর ও একই দিনে? তা‌ বেশ কি লাগবে বলিস।" কথাটা বলে যতীন বাবু বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, আবার বললেন " এখন চল, খেতে যাবি, আর ঠিক করে নিতে হবে কোন প্রোগ্রামটা কখন অ্যাটেন্ড করবো, আমি দুটো প্রোগ্রাম দেখতে চাই।"

দুদিন পরে সকাল থেকেই সবাই ব্যাস্ত হয়ে দৌড়াদৌড়ি আরম্ভ করে দিলো, দুটো প্রোগ্রাম অ্যাটেন্ড করতে হবে, সুজিত আর সৌমী আগে খেতে বসে গেছে, ঠিক হয়েছে যতীন বাবু সুজিতের সাথে ড্যান্স ক্লাসে যাবেন, আর সুজাতা দেবী সৌমীর সাথে কলেজে যাবেন আর সুজিতের ড্যান্স শেষ হলে ওরা কলেজে আসবে। তারা নিজেদের মতো বেরিয়ে গেলেন। সুজিতের ড্যান্স কম্পিটিশন শুরু হলো, ওর নাচ দেখে হলে থাকা সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলো, যতীন বাবুর খুব গর্ব হচ্ছিলো সুজিতের ওপর। যখন রেজাল্ট বলা হলো, সুজিত ফার্স্ট হলো, হাতে ট্রফিটা নিয়ে যতীন বাবুকে প্রণাম করলো, যতীন বাবু বললেন " আমি খুব খুশি হয়েছি সুজিত" সুজিত হাসলো, যতীন বাবু বললো " এখন চল সৌমীর কলেজে, দেখি ও কি করছে।"
কলেজের মাঠেও সবাই উত্তেজিত, "সৌমী সৌমী" করে সারা কলেজ চিয়ার করছে, সুজাতা দেবী আনন্দের সাথে দেখছিলেন, জেতার জন্য আরও একটা গোল বাকি, যতীন বাবু আর সুজিত এসে বসলেন, তারাও খুব আনন্দের সাথে দেখলেন কিভাবে পুরো কলেজ সৌমীকে চিয়ার করলেন। সৌমী দৌড়ে যাচ্ছে গোল পোস্টের দিকে, আর নিমেষের মধ্যেই গোল! পুরো কলেজ আনন্দের সঙ্গে উঠে দাড়ালো, সৌমীর কলেজ জিতে গেছে, কিছু স্টুডেন্টরা মাঠে দৌড়ে গিয়ে সৌমীকে ঘাড়ে তুলে চিয়ার করলো " হিপ হিপ হুররে" সৌমী দৌড়ে গিয়ে সুজিত, যতীন বাবু আর সুজাতা দেবীকে জড়িয়ে ধরলো।

 যতীন বাবু ঠিক করলেন সবাই রেস্টুরেন্টে খাবেন, আজকে তাদের আনন্দের দিন, সুজিত আর সৌমীও খুব খুশি, আজকে তারা নিজেদের ট্রফিটা সবার সামনে দেখাতে পারছে, আর লুকিয়ে, পাল্টে দেখাতে হবেনা। চারজনেরই আজকে খুব হালকা লাগছিলো, তাদের মনটা হালকা লাগছিলো। আজকে তারা সবাই স্বাধীন, যতীন বাবু আর সুজাতা দেবী তাদের পুরনো চিন্তা থেকে আর সুজিত আর সৌমী স্বাধীন ভাবে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।

"জেন্ডার রোল" অর্থাৎ লিঙ্গ ভূমিকা অথবা এমন কিছু কাজ ঠিক করে দেওয়া যেটা শুধু একটা লিঙ্গ করতে পারবে, বিপরীত লিঙ্গ করলে সেটা সমাজের চোখে দৃষ্টিকটু হয়ে যায়। আমরা স্বাধীন হলেও এখনো সমাজে অনেক নিয়ম এরকম আছে যেটার থেকে আমরা স্বাধীন হতে পারিনি, আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে বসে আছে। সেরকমই একটা হলো জেন্ডার রোল। আমরা নিয়ম বানিয়ে দিয়েছি কোন কাজ গুলো ছেলেরা করবে আর কোন কাজ গুলো মেয়েরা করবে, কাজকেও "ছেলেদের মতো" , "মেয়েদের মতো" বলে ঠিক করেছি, স্কুলেও ঠিক একই জিনিস বাচ্চাদের বোঝানো হচ্ছে, ওদের মনের মধ্যে এখনই ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে ছেলে আর মেয়ে আলাদা। যতোদিন সমাজ ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে পার্থক্য করতে থাকবে ততোদিন কি আমরা সত্যি স্বাধীন হতে পারবো? 
 
---------------------- 


 মিতা দাস
দেবী বাড়ি রোড নতুন পাড়া নিয়ার পোস্টাল কোয়ার্টার, কোচবিহার - ৭৩৬১০১






মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩