দুদিন ধরে মাছ, মাংস,পিঁয়াজ এত খেয়েছি যে পেট গরম হয়ে গেছে । পেটের মধ্যে গুড়গুড় আওয়াজ হচ্ছে - মনে হচ্ছে যেন ইঁদুরে দৌড়ে মরছে পেটটায়।
গিন্নি চেঁচামেচি শুরু করে দিল -- গে-লো আরো বেশি করে ছাইপাশ গে-লো। দুর্গন্ধে টেকা দায়! আজ রাতে তোমার ঘরে আর থাকা যাবে না। বমি উঠে এল আমার। বুড়ো বয়সে ভিমরতি? ডাক্তার ওনাকে বারবার নিষেধ করেছে রিচ খাবার খেতে। কে শোনে কার কথা?
আমার গিন্নির এই এক দোষ। একবার বলার সুযোগ পেলে তাকে আর থামানো যাবে না। আর সুযোগ? সেতো সবসময়ই খুঁত ধরতেই ব্যস্ত।
আমি তবুও চেষ্টা করলাম -- আরে মহামায়া এত কেন চেঁচাও? গ্যাস তো সব বেড়িয়েই গেল আর চিন্তা কেন? তুমি এখানেই শোও কিচ্ছু হবে না।
তুমি যতটা বলছো ওতো খারাপ গন্ধ কিন্তু আমার নয়!
মহামায়া রেগে গেল -- হ্যাঁ রে অবনী মিনসে, তোর জুঁই ফুলের চাষ হয়েছে পেটে।
যাক বাবা, আমি চুপ মেরে যাই। এখন সবে আমার নাম ধরেছে এরপর আমার গুষ্টির শ্রাদ্ধ দেখিয়ে ছাড়বে। পাশ ফিরে শুয়ে কানে বালিশটা চাপা দিয়ে, শুধু আস্তে করে বললাম -- কাল সকালেই বাজারে গিয়ে ডাব কিনে আনবো। ডাব খেলেই সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
কখন যে ঘুমের দেশে চলে গেছি জানি না। আধঘুমেই উঠে পড়লাম আর চায়ের আশা ত্যাগ করেই বাজারের থলে হাতে বেরিয়ে গেলাম। বউ ঘুমকাতুরে - ঘুমাচ্ছে ঘুমাক - চায়ের আশায় জল ঢেল দিলাম -- উঠলেই সেই রণচন্ডী!
বাজারে এত ভীড় বাপরে! করোনা কালেও কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। সব কথা কানে ঢুকেও ঢুকছে না কেন কে জানে? কি একটা ঘোরের মধ্যে এ যেন আমি রয়েছি। হয়তো পেট গরমের জন্য এ অবস্থা।
মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি আজ শুধু হালকা সব্জি কিনবো। মহামায়াকেও খুশি করবো। প্রথমেই দু দুটো বড় বড় ডাব কিনে ফেললাম। থলে এদিক ওদিক চেপে ঢুকিয়ে দিলাম - বেশ ভারী আর থলে ভরে গেল। কিনলাম পেঁপে, লাউ, ঢেড়স, কাঁচকলা। কিনে থলেতে ঠেসেঠুসে ঢোকাতে লাগলাম -- ওরে বাপ আমার? থলে যে আর নড়ে না -- কি ভারীই না হয়েছে থলেটা। একে টেনে তোলা এক ভয়ংকর ব্যপার হল!
এখনও কিছু কেনাকাটা বাকী । দোকানদারের কাছ থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ চেয়ে নিলাম। হজম করা আর নরম করার সব্জি কিনলাম। ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বাজার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো। বাজারের ভারী থলে এক দোকানীর সামনে রেখে " একটু দেখবেন দাদা " বলে ডাক দিলাম।
দোকানী ব্যস্ত তাও ঘাড় কাত করে দিতেই আমি বাজারে আরো সব্জি দেখতে লাগলাম। পাকাপেঁপে, পাকাবেল, পাকাকলায় হাত ভারী করলাম।
কেনা শেষ হলে আমার থলিটা নিতে গিয়ে দেখি আমার মতোই অনেকেই থলে ওখানে গচ্ছিত রেখেছে। যাকগে চুলায় যাক, আমার পেট ঠান্ডার জন্য সব সব্জি কেনা হয়ে গেছে , আমি থলেটা তুলে নিলাম -- " দাদা নিলাম " - বলে হাঁটা দিলাম।
দুপা এগিয়েছি থলেটা যেন আর ততো ভারী লাগছে না। থলেটা একবার দেখলাম কিন্তু কিছু বুঝতে পারলাম না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার বুদ্ধির মাথা কাজে এল। ডাব আর ভারী ভারী সব্জি সব হালকা হয়ে থলের মধ্যে ফাঁকফোকরে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে।
তাই থলে অনেক হালকা লাগছে নিশ্চয়ই।
বাড়ি :ফিরেই গিন্নিকে হাঁক পারলাম -- কই শুনছো -- ও মহামায়া কোথায় গেলে গো? এক থলে সবজি এনেছি যে ---
মহামায়া উপরে ছিল। হাঁকডাক শুনে নীচে এলো।
আমি থলেটা একেবারে ওর পায়ের কাছে রাখলাম,খুশি করার জন্য। কোথা দিয়ে কি হলো কে জানে অন্যদিন হলে গিন্নি ঘুরে চলে যেত আজ উনি থলে ফাঁক করে উঁকি দিয়েই আঁতকে উঠলেন -- ওরে আমার বাজার করনেবালা রে --এই জন্য এত তাড়া বাজার যাওয়ার?
আমি ভিমড়ি খেয়ে গেলাম, কি হলো ব্যাপারখানা? আমিও থলে খুলে দেখেই অবাক এ কি দেখছি? -- এ যে পাঁঠার মাংস আর পিঁয়াজ আদা, রসুনে একেবারে ঠাসা !
আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই মহামায়া চেঁচিয়ে বাড়ি মাত করে দিল। -এটা কার থলে? আমাদের তো নয়?
আমি ভালো করে দেখলাম -- তাইতো এটা দেখতে একইরকমের হলেও আমাদের নয়। এবার মাথা খুলে গেল -- ওহঃ তার মানে থলে বদল হয়ে গেছে নিশ্চিত।
আমি বোকা তাই এত সময় নিলাম ব্যাপারটা বুঝতে। গিন্নি ততক্ষণে গজগজ করতে করতে উপরে উঠে গেলেন -- ফোঁস ফোঁস করে যেন বিষ ঢেলে দিলেন -- " থলে হাতে বাজার করে এনেছেন অবনী ঘোষাল -- এক অকর্মার ঢেকি! "
।।।।।।।।।।।।।।।
# অমাদীপ
নিমতা
কোলকাতা ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন