অভাগা
নিরঞ্জন মণ্ডল
তোমার পুজো নতুন জামা জুতোয় সেজে ওঠায়,
আমার পুজো ঝিলের জলে শাপলার ফুল ফোটায়।
তোমার পুজোয় হৈ-হুল্লোড়,হরেক খাবার খাওয়া
আমার পুজোয় লুকিয়ে খিদে ধানের খেতে চাওয়া।
তোমার পুজোয় ঠাকুর দেখা খেলনা আইসক্রিম,
আমার পুজোয় ঘাসের ডগায় জমছে কি না হিম
তাকিয়ে কেবল দেখা ;
তোমার পাশে বন্ধু অনেক আমি নিপাট একা।।
পুজোয় তোমার বেবাক ছুটি নেইকো পড়ার চাপ
আমার পুজোয় কাজের ফাঁকে দিঘল শ্বাসের ছাপ।
তোমার পুজোয় বেড়িয়ে আসা খুশির হাওয়ায় ভেসে,
আমার পুজোয় চোখ জোড়া ঘুম কঠিন দিনের শেষে।
তোমার পুজোয় মণ্ডপেতে চোখ ধাঁধানো আলো,
অমার পুজোয় মাটির দাওয়া,জমাট আঁধার কালো
ছোট্ট ঘরের কোণে
টেমির আলোর দপদপানি বাবা মায়ের মনে।।
তোমার পুজোয় গান কবিতা গল্প বলার খেলা
আমার পুজোয় বাঁচতে চাওয়া কুড়িয়ে অবহেলা।
পুজোয় তোমার রঙ তুলিতে যখন ছবি আঁকা
শুকনো মেঘে তখন আমার মনের আকাশ ঢাকা।
উড়িয়ে ঘুড়ি তাকিয়ে তুমি নীল আকাশের পানে
নাচিয়ে তাকে খলখলাবে লাটাই-সুতোর টানে।
ঝিলের জলে আমি
খুঁজব কিছু শালুক দানা--হিরের চেয়েও দামি!!
তোমার পুজোয় দুগ্গঠাকুর মিষ্টি চোখে চেয়ে
দশটা হাতে টানবে কাছে ঢাকের বোলে নেয়ে।
আমার পুজোয় রুগ্ন বাতাস মেঠো পথের বাঁকে
দিক হারাবে বাবলা ডালের ধঁধুল ফুলের ডাকে
ছড়িয়ে যাবে ধানের পাতায়,শাপলা শালুক ফুলে
জড়িয়ৃ যাবে দিনের শেষে সাঁঝ-তারাদের চুলে।
মিটমিটিয়ে কেঁদে
হারিয়ে যাবে অকাশ পারে তারারা দল বেঁধে।।
তোমার পুজোয় চিকন রোদের এলিয়ে পড়া গা
বাঁশির সুরে চমকে উঠে ছুঁইবে তোমার পা।
আমার পুজোয় ঝিমধরা রোদ শিরিষ ডালে শুয়ে
মাঝ-দুপুরে পিছলে হঠাৎ লুটিয়ে যাবে ভুঁয়ে!
তোমার পুজোয় আসবে মামা মেসো পিসে মাসি,
আমার পুজোয় ঘরের চালে ঝরবে রাশি রাশি
শুকনো পাকুড় পাতা ;
মহাজনের চাইব দয়া নুইয়ে দিয়ে মাথা!!
এমনি পুজোই বছর ফেরে বারে বারেই আসে
আমায় ঠেলে হিম-আঁধারে দাঁড়ায় তোমার পাশে।
ছড়িয়ে সুবাস ভেজায় তোমায়,শোনায় নতুন গান
আমার ঘামেই ভিজিয়ে হাওয়া জুড়োয় তোমার প্রাণ।
এক দেশেতেই জন্মেছি সব,বাড়ছি পাশাপাশি
তোমার চেয়ে দেশকে আমি কম কি ভালোবাসি?
তবু এমন কেন
ভুলেও তুমি--ভালোই জানি-ভাবই না কক্ষণো!!
=============
নিরঞ্জন মণ্ডল/উত্তর 24 পরগণা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন