"ওরা আছে তাই আমরা আছি"
এই ভ্রমণ কাহিনীটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাকৃতিক পরিবেশ কে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা।
তো
প্রকৃতি বলতে আমরা বুঝি পাহাড়, নদী, জঙ্গল এইগুলি। এইসব কিছু একত্রে পেতে
গেলে একবার অবশ্যই ঘুরে আসতে হবে পশ্চিমবঙ্গের নর্থবেঙ্গল এর দুটি জেলা
জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার, যারা ডুয়ার্স অঞ্চল নামে পরিচিত। আগে
শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলা নামে পরিচিত ছিল, বর্তমানে আলিপুরদুয়ার ২০তম
জেলা হিসেবে সংযোজন হয়েছে। এখানকার কালচিনি ব্লক পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম
একটি ব্লক।
এই ডুয়ার্স অঞ্চলে দুই প্রকারের জঙ্গল দেখা যায় -
1) Woodland Forest.
2) Grassland Forest.
নীচে বিস্তারিত বর্ণনা করব এই জঙ্গলের ধরণ গুলোকে নিয়ে:
এবার আসি টুর প্লান সম্বন্ধিত বিস্তারিত আলোচনায়:
ডুয়ার্স
অঞ্চল টা যেহেতু অনেকটা বড় জায়গা নিয়ে অবস্থান করছে সেহেতু পুরো
ভালোভাবে ঘুরতে গেলে আমাদের কে যে কোন একটা সাইট থেকে শুরু করতে হবে, তাই
আমরা কলকাতা থেকে #কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস এর টিকিট করি #নিউ মাল জংশন অব্দি
। ট্রেন টি শিয়ালদা থেকে ঠিকঠাক টাইমে ছাড়ে কিন্তু হয় কি নিউ
জলপাইগুড়ির পর শিলিগুড়ি স্টেশন এবং তারপর থেকেই ট্রেনের গতি কিছুটা মন্থর
হতে শুরু করে কিন্তু চিন্তার কিছু নেই দু পাশে জানলায় চোখ রাখলে আপনি
দেখতে পাবেন সুন্দর চা বাগান ও কিছুটা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেনটি কিভাবে
আপন গতিতে ছুটে চলেছে। যদি আপনার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তাহলে সে জঙ্গলে আপনি
কিছু পশু বা ময়ূর ইত্যাদি দেখতে পারেন। এভাবেই সেবক স্টেশন পেরিয়ে কিছু
ব্রিজ, কিছু শুকনো নদী পেরিয়ে ট্রেনটি গিয়ে দাঁড়াল #নিউ মাল জংশন
স্টেশনে, ঘড়িতে তখন সকাল ১০ টা, স্টেশনটি খুবই ফাঁকা ফাঁকা স্টেশনের
উল্টোদিকেই চায়ের ক্ষেত সেখানে শ্রমিকরা চা তোলার কাজে ব্যস্ত। কি সুন্দর
মনোরম পরিবেশ নেমেই যেন মনটা একটা অসাধারণ শান্তি পেল। ট্রেন থেকে নেমেই
আগে থেকে বলে রাখা ড্রাইভার দাদা #সঞ্জীব কে ফোন করে নিলাম তারপর আমরা
সেকেন্ড ক্লাস ওয়েটিং রুমের সৌজন্যে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস করে ওখান থেকেই রওনা
হলাম সেদিনের গন্তব্যের দিকে কারন আমাদের সময় খুবই অল্প সুতরাং এক
মুহুর্ত নষ্ট করার মত সময় আমাদের নেই। সেখান থেকে বেরিয়ে গাড়ীতে গিয়ে
বসতেই কথা বলে নিলাম সেদিনের গন্তব্যের সম্বন্ধে, তো সেই মতো সঞ্জীবদা
আমাদেরকে খুবই সাহায্য করল কোথায় কোথায় আমরা ঘুরবো কিভাবে যাব সে
সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করতে করতে গাড়ি গিয়ে থামল একটা ছোট্ট চায়ের
দোকানে সেখান থেকে আমরা চা এবং কিছু জলখাবার খেয়ে চলতে শুরু করলাম।
আজকের গন্তব্য সামসিং, লালিগোরাস, সুলতানেখোলা, রকি আইল্যান্ড, আর সাথে ঝালং, প্যারেন ও বিন্দু।
১) সামসিং :- এটি
হলো উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চা বাগান, সত্যিই অসাধারণ সাজানো একটি টি
এস্টেট এর মধ্যে আমরা ঢুকে বেশ কিছুটা সময় কাটালাম এবং অনেক মুহূর্ত ফ্রেম
বন্দি করলাম।
২) লালিগোরাস :- এটি একটি অসাধারণ ভিউ পয়েন্ট এখানে নিচ থেকে বয়ে চলা নদী উপর থেকে যেন মনে হয় সাপের মতন ইকিবিকি কেটে বয়ে চলেছে।
৩) সুনতালেখোলা :- এখানে
দেখার মত বিশেষ কিছু নেই আছে একটি পুরানো ঝুলন্ত ব্রিজ। এই পয়েন্ট- র
কিছু আগেই গাড়ি আপনাকে নামিয়ে দেবে এবং ওখানকার লোকাল গাড়ি ২০০ টাকার
বিনিময়ে নিয়ে যাবে কিছু টা পথ। তবে চাইলে আপনি হেঁটেই চলে যেতে পারেন খুব
একটা বেশি দূর নয় কিন্তু ড্রাইভাররা সবসময় আপনাকে গাড়ি নেওয়ার জন্য
বাধ্য করবেন।
৪) রকি আইল্যান্ড :- এখানে রয়েছে কিছু পাথরের ঢিবি এবং তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে একটি পাহাড়ি নদী শুনলাম র্বষায় নাকি তার রূপ হয় অপরূপ সুন্দর।
৫) ঝালং, প্যারেন ও বিন্দু :- এগুলি
এক একটি গ্রাম। ঝালং একটি ভিউ পয়েন্ট আছে যেখান থেকে পুরো পাহাড় ও বয়ে
চলা নদীর গতিপথ খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায়। এরপর পথে পড়ে প্যারেন, এটি
একটি সুন্দর সাজানো গোছানো ছোট্টো পাহাড়ি গ্রাম। এই গ্রামে ঢোকার মুখেই
এমন একটি অসাধারণ জিনিস লক্ষ্য করলাম যে রাস্তার দু'ধারে অসাধারণ হলুদ রঙের
একটি ফুল সুন্দর সারিবদ্ধ ভাবে ফুটে আছে যেন মনে হচ্ছে তারা তাদের গ্রামে
আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এরপর প্যারেন পেরিয়ে বিন্দুর আগে আমরা একটা জায়গায়
দাঁড়িয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম #Apple zone. অসাধারণ সুন্দর ভাবে
কাঁসার থালায় পরিবেশন করলেন আমাদের দুপুরের খাবার এবং তার টেস্ট সত্যিই
অনস্বীকার্য, (চিকেন মিল ১৫০/-) আর তার পাশেই একটি পাহাড়ি ঝরনা বয়ে চলেছে
অনবরত। খাবার শেষ করে এবার আমরা এগিয়ে চললাম বিন্দুর দিকে বিন্দু হচ্ছে
ভারত ও ভুটানের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম এটি কে ভারতের শেষ গ্রাম বলে ধরা
হয়। এখানে বিন্দুর ড্যাম সত্যি দেখার মতন। এখানকার আদিবাসীরা কিছু
দোকানপাট করে ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্ধারণ করেন এবং
সেখানকার মানুষেরা সত্যি খুবই সরল, সেখান থেকে আমরা কিছু কেনাকাটা
করেছিলাম, কিছু চকলেট কিছু চাইনিজ ইত্যাদি। একজন তো আমাদেরকে খাওয়ানোর
জন্য খুব সুন্দর একটি পকোড়া ভাজলো যা আমরা খেলাম এবং তারপর কিছুটা পকোড়া
উনি আমাদেরকে ফ্রিতেই খেতে দিলেন।
আজকের
মতন ঘোরা শেষ হল এবার আমাদের হোটেলে ফেরার পালা আমাদেরকে লাটাগুড়ি ফিরতে
হবে কিছু না হলেও মোটামুটি 40 থেকে 50 কিলোমিটার তো হবেই। ফেরার সময়
গাড়িতে উঠেই ড্রাইভার দাদা বলেছিল যে কিছুদূর যাওয়ার পর আমি যেখান থেকে
বলবো সেখান থেকে তোমরা বাইরে নজর রাখবে কিছু পশু দেখা যেতে পারে, আমরা
ভেবেছিলাম আমাদেরকে সান্তনা দেবার জন্য কথাটা বলছে কিন্তু তারপর যেটা
দেখলাম সেটা একদম অন্যরকম জিনিস সত্যি অভাবনীয়। চালসা গেট পেরিয়ে হঠাৎই
দেখলাম যে রাস্তার পাশে গাড়ী ফোকাসটা পড়তেই কি যেন একটা নড়ে উঠল,
ড্রাইভার দাদা বলে উঠল ওই দেখ হাতিএকটু আশ্চর্য হয়ে গেছিলাম কিন্তু তারপর
তাকিয়ে দেখলাম সত্যিই সেটা হাতি। এই অঞ্চলের মানুষেরা হাতি কে মহাকাল বলে
পুজো করে। এটা ছিল চাপড়ামারি রেঞ্জের অন্তর্গত এরপর মূর্তি নদীর ব্রিজ
পেরিয় একটু চা খেয়ে আমরা চললাম হোটেলের উদ্দেশ্যে আমরা একটু কম রেঞ্জের
হোটেল এবং গরুমারা ন্যাশনাল পার্কের কাছাকাছি লোকেশানে সেই মতন পেয়ে গেলাম
#লাটাগুড়ি #পথেরসাথী, সেখানে 1000 টাকার বিনিময়ে পেলাম 4 বেডের রুম।
এখান থেকে গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক টিকিট কাউন্টার এর দূরত্ব পায়ে হাঁটা
পথে মাত্র 5 মিনিট। একরাশ আশা নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালবেলা
রয়েছে জঙ্গল সাফারি আছে গরুমারা তে।
*গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক :- এটি
Woodland Forest এর অন্তর্ভুক্ত। সকাল সাড়ে 5.30 টা নাগাদ চললাম টিকিট
কাউন্টারের দিকে 6.00 টা সময় টিকিট কাউন্টার খোলে এরপর টিকিট কেটে মাথা
খোলা জিপ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম গরুমারা জঙ্গল সাফারি উদ্দেশ্যে। অল্প
অল্প ঠান্ডা তার মধ্যে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে জিপ গাড়ি করে এগিয়ে চললাম
গভীর জঙ্গলের দিকে। এভাবে ঘণ্টা দুয়েকের সাফারি শেষে ভাগ্যে জুটলো কয়েকটা
ময়ূর আর কয়েকটা পাখি ব্যাস আর কিছুই না। তবে খুব একটা খারাপ লাগলো না
বেশ একটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ। সাফারি শেষে হোটেলে এসে ফ্রেশ হয়ে স্নান করে
টিফিন করে বেড়িয়ে পড়লাম জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক এর উদ্দেশ্যে, NH 31
ধরে এগিয়ে চললাম বেশ কিছুটা যাওয়ার পর একটা ভিউ পয়েন্ট গেলাম যার নাম
লাল ঝামলা বস্তি।
#লাল ঝামলা :- এটি
অসাধারণ ভিউ পয়েন্ট আর নিচে বয়ে যাওয়া নদী আরো সুন্দর তাই আর দূর থেকে
নয় একেবারে সরাসরি কাছে গিয়েই পাহাড়ি নদীর গতিপথ কে উপভোগ করে আসলাম এবং
কিছু মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করে এগিয়ে চললাম।
এরপর পথে যেতে যেতে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে দুপুরের খাবার সেরে নিলাম, এবার যাব সাউথ খায়েরবারি।
#সাউথ খয়েরবাড়ি :- এটি
একটি Tiger Reserve Centre এখানে পৌঁছে বাঘ দেখার জন্য টিকিট কেটে ওখানকার
লোকাল টোটো কে সঙ্গে নিয়ে গেলাম Reserve Centre এ । এখানে কয়েকটি
লেপার্ড ও একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে।
সেখান
থেকে দেখে বেরোনোর পর হঠাৎ একজন বলে উঠল হাতি আসছে এই শুনে আমরাও তো দৌড়
লাগালাম তাদের পেছনে বনের মধ্যে গিয়ে শুনলাম দূরে কিছু হাতি কলা খাচ্ছে
কিন্তু হাতি দেখতে পেলাম না যাইহোক ফিরে আসলাম তারপর হোটেলে ঢুকে ফ্রেশ
হয়ে চললাম পরদিন সকালবেলা জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্কে জঙ্গল সাফারি করব তার
জন্য টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে। টিকিট কেটে রুমে ফিরে
খাওয়া-দাওয়া সেরে তাড়াতাড়ি বিছানায় চলে গেলাম পরদিন সকাল সকাল উঠে
জঙ্গল সাফারি তে যাব।
#জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক :- এটি
মাদারিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এবং ভারতবর্ষের বিখ্যাত একটি
Grassland Forest । সকাল ছটার মধ্যে। ন্যাশনাল পার্কের সামনে পৌছে নিজেদের
জীপ গাড়ি তে উঠে পড়লাম এবং চললাম গভীর জঙ্গলের উদ্দেশ্যে তেমন কিছু দেখতে
পেলাম না, ওই কয়েকটা ওয়াচ টাওয়ারের পাশে কিছু হাতি টহল দিচ্ছিল আর কিছু
ময়ূর আর একটা গন্ডার কিছুদূরে জলের মধ্যে বসে ছিল। তারপর হল়ং বাংলাতে
এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম এবং যারা হাতি সাফারি করছে তাদের ভালো লাগাটা
কিছুটা অনুভব করলাম করে এগিয়ে চললাম জঙ্গল সাফারির শেষের পথে। এবার চোখে
পড়ল একটা বাইসন, ব্যাস এবারের মতো জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্কের সাফারি শেষ
হলো।
#কিন্তু
একরাশ হতাশ হয়ে ফিরলাম। তার কারণ পশু দেখিনি সেটা কোন বড় বিষয় নয় কারণ
জঙ্গল সাফারি মানে পশু দেখা নয় এর উদ্দেশ্য হচ্ছে জঙ্গলের নিস্তব্ধতাকে
অনুভব করা আর যদি ভাগ্যে থাকে দু-একটা পশু পাখি নিজের চোখে দেখা কিন্তু
আমাদের #ড্রাইভার #গাইড যেভাবে আমাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাজে ব্যবহার করছিল
তাতে সত্যিই জলদাপাড়া আসার আর কোন ইচ্ছা আমার অন্তত নেই।
তারপর
হোটেলে ফিরে টিফিন করে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম পরবর্তী
গন্তব্য #বক্সা জয়ন্তীর উদ্দেশ্যে। এই দিনে আর কিছু দেখার না থাকায় আমরা
ঠিক করলাম যে এখান থেকে লোকাল ট্রেনে পৌঁছাব সেইমতো সাড়ে এগারোটার একটি
লোকাল ট্রেন #মাদারিহাট স্টেশন থেকে ধরলাম এবং পৌছালাম #রাজাভাতখাওয়া
স্টেশনে ১২.৩০ নাগাদ। স্টেশনের পাশেই একটি হোটেলের সাথে আগে থেকেই কথা বলা
ছিল সেই মতন তাকে ফোন করে তার হোটেলে গিয়ে উঠি আমরা এবং তাড়াতাড়ি
খাওয়া-দাওয়া সেরে একটি অটো করে চললাম রাজাভাতখাওয়া মিউজিয়াম ও
সিকিয়াঝোরা তে, বোর্ডে করে জঙ্গল সাফারি করার উদ্দেশ্যে। মিউজিয়াম নিয়ে
তেমন কিছু বলার নেই স্থানীয় কিছু পশু পাখির ছবি ও পশুপাখির ছাল চামড়া
দিয়ে কিছু নিদর্শন বানানো আছে আর এইস্থানের নামকরণের রহস্য লেখা আছে।
মিউজিয়াম দেখা শেষ করে এগিয়ে চললাম সিকিয়াঝোরার উদ্দেশ্যে।
#সিকিয়াঝোরা :- এখানে
জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে র্বোডে করে যেতে হয় বেশ কিছুটা দূরে গভীর জঙ্গলে
সঙ্গে দুজন থাকেন তারাই গাইড করে নিয়ে যায়। এই ক্যানেল টি সরাসরি জয়ন্তী
নদীর সাথে সংযুক্ত হয়ে রয়েছে বলে কথিত আছে এবং এই ক্যানেলে মাঝে মাঝেই
হাতিরা স্নান করতে চলে আসে এবং বেশকিছু পশু চলে আসে যদিও আমরা তাদের দেখা
পায়নি কিন্তু তাদের পায়ের ছাপ আমরা লক্ষ্য করেছি।
সাফারি
শেষে হোটেল এ ফিরে হোটেল মালিকের সাথে কিছু আলোচনা করে নিলাম পর দিনের
ট্যুর সম্বন্ধে। পর দিনের ট্যুর বক্সা জয়ন্তী কিন্তু বক্সা জয়ন্তী একদিনে
সম্ভব নয় কিন্তু আমাদের হাতে আর একটা দিনই সময় আছে তো সে মত কি আর করা
যাবে উনি বললেন যে তোমরা জয়ন্তীর ঘুরে এসো খুবই ভালো লাগবে সে মতনই
ড্রাইভার ঠিক করে দিলেন এবং ঠিক হলো যে 2000 টাকার বিনিময়ে উনি আমাদের
#জয়ন্তী #চুনিয়া #ভুটিয়া এবং #মহাকাল ঘুরিয়ে New Alipurduar Station এ
drop করে দেবে সেইমতো পরদিন সকালবেলা গাড়ি চলে আসলো এবং আমরা রওনা হলাম।
#বক্সা
জয়ন্তী রেঞ্জে ঢুকার জন্য পারমিশন করাতে হয় পারহেট 100 টাকা এবং চারচাকা
গাড়ি থাকলে 300 টাকা সমস্ত নিয়মকানুন মিটিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম বক্সা
টাইগার রিজার্ভ সেন্টার তথা জয়ন্তীর দিকে। এই জয়ন্তীকে বলা হয়
#ডুয়ার্সের রানি। এই জয়ন্তী রেঞ্জে প্রবেশ করে একটি গাইড কে সঙ্গে নিয়ে
আমরা চললাম #পুকুরি লেকের দিকে।
#পুকুরি লেক :- এই
লেকটি এখানে পূজিত হয় মোটামুটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ ফিট উঁচুতে অবস্থিত এবং
এখানে এই লেকের জলে কেউ পা দেয় না এবং এই লেকে কিছু মাগুর মাছ ও কচ্ছপ
ঘুরে বেড়ায় এগুলো কেউ কেউ ধরে না। পায়ে হেঁটে প্রায় 2 km পথ উপরে উঠে
একটু কষ্ট হচ্ছিল বটে কিন্তু চারদিককার পরিবেশ মনটাকে খুব শান্ত করে দিল।
ওপরের কিছুটা সময় কাটিয়ে তারপর আবার 2 km পথ হেঁটে নিচে নেমে আসলাম। এবার
পরবর্তী গন্তব্য চুনিয়া ওয়াচ টাওয়ার।
#চুনিয়া :- এটি
একটি ওয়াচ টাওয়ার এখানে পৌঁছাতে হলে গাড়ি নিয়ে পুরো জয়ন্ত নদীটাকে
ক্রস করতে হয়। একদম অবাক করা ব্যাপার যেখানে বর্ষায় নদীর জল দুকূল
ছাপিয়ে যায়, সেখানে বছরের অন্য সময়ে একফোঁটাও জল থাকে না সেই নদীতে শুধু
পাথরের নুড়ি আর নুড়ি আর কিছুই সেখানে নেই সেখানে । নদীটি পেরিয়ে একটি
গ্রাম আছে যেখানে মাত্র 63 জন বসবাস করেন। এই গ্রামটি পেরিয়ে আমরা আস্তে
আস্তে চললাম গভীর জঙ্গলের পথে এবং একটা সময় পৌছে গেলাম গন্তব্যে, পথে কিছু
হরিণ ও ময়ূরের দেখা মিলল।
#ভুটিয়া :- এখানকার
একটি বস্তি এবং এর নামে একটি ওয়াচ টাওয়ার ও আছে। সেখানে গিয়ে চোখে
পড়লো কয়েকটা হর্নবিল পাখি তারপর আবার ফিরে আসলাম জয়ন্তী নদীর বুকে এবং
জয়ন্তীর মধ্য দিয়েই এগিয়ে চললাম মহাকালের পথে।
#মহাকাল :- এটি
ছিল আমাদের ভ্রমণের শেষ পয়েন্ট। গাইড আগে থেকে একটু ভয় দেখিয়ে ছিল
দু'ঘণ্টা হাঁটতে হবে বলে। যাইহোক এমন কিছু না আমাদের গ্রুপের দুজন গেলো
আমরা দুজন নদীর বুকে দাঁড়িয়ে থাকলাম বেশ কিছুক্ষন উপভোগ করলাম তার মধ্যে
দিয়ে সরু হয়ে বয়ে চলা জয়ন্তীর জলের কলকল আওয়াজ সত্যিই অভূতপূর্ব এক
মুহূর্ত। সেই মুহূর্তগুলোকে একের পর এক ফ্রেমে বন্দি করলাম এবং ফিরে আসলাম
আমাদের হোটেলে।
#রাজাভাতখাওয়া তে, এসে দুপুরের খাবার শেষ করে সোজা রওনা দিলাম #নিউ আলিপুরদুয়ার স্টেশনের দিকে, কারণ এবার বাড়ি ফেরার পালা।
#ট্রেন :-
#পদাতিক এক্সপ্রেস সময় বিকাল ৫.৪৫। আরো অনেক ট্রেন নিউ আলিপুরদুয়ার ও
আলিপুরদুয়ার জংশন থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছাড়ে। ট্রেনে উঠার আগে স্টেশনের
লাগোয়া সামনের মার্কেট থেকে সামান্য কিছু কেনাকাটা করে ও রাতের খাবার
নিয়ে ট্রেনে চড়ে বসলাম ইতিমধ্যে শুরু হল বৃষ্টি মনে হলো প্রকৃতি যেন তার
সমস্ত রূপ উজার করে দিতে চাইছে। এই বর্ষা সিক্ত সন্ধ্যা টাকে মনের
মনিকোঠায় গেঁথে নিয়ে রওনা দিলাম বাড়ির পথে।
বি: দ্রঃ -
১)
জঙ্গলে গিয়ে কখনোই ভাববেন না যে আপনি পশুপাখির সম্মুখীন হবেনই, কারন
জঙ্গল সাফারির অর্থ শুধু পশু পাখি দেখা নয়, সাফারির আসল অর্থ হচ্ছে
জঙ্গলের নিস্তব্ধতাকে উপভোগ করা।
২) জঙ্গলে প্লাস্টিক একদম ফেলবেন না।
৩)
এখানকার স্থানীয় মানুষরা অনেক কষ্টের পরেও তারা কিন্তু কখনোই জঙ্গলকে
নষ্ট করে না সুতরাং আপনিও সেরকম কোনো কাজ না করার চেষ্টা করবেন।
এভাবেই গড়ে উঠবে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ।
=================