Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রবন্ধ -- ডাঃ অরুণ চট্টোপাধ্যায়



শীতকালের রোগঃ প্রতিকার ও প্রতিষেধন
(Winter diseases: remedies and prevention)

ঋতুবৈচিত্রে ভরা আমাদের এই দেশ। ছটি ঋতুর সহাবস্থান যেমন একঘেয়েমি দূর করে তেমনি সম্ভাবনা আনে এক একটি ঋতুতে এক একটি রোগের। কার্তিক মাস চলে গেছে, অগ্রহায়ণ যাবার মুখে। শীত পড়েছে। এবার ধীরে ধীরে বাড়বে। বাতাসের তারপমাত্রা কমবে আর কমবে শরীরে উত্তাপের অস্বস্তি। আসবে নানা রঙবাহার মরশুমি ফুল যা আমাদের চোখকে তৃপ্তি দেবে। শীত থেকে বাঁচতে মানুষ নানা রঙের বৈচিত্রে ভরা শাল-সোয়েটার গায়ে দিয়ে বাইরে বেরোবে। নানা জায়গায় বেড়াবে বা করবে বনভোজন। কত রকম শাক-সব্জিতে বাজার উঠবে ভরে। নানা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিয়োজিত করবে নিজেকে আর নিজেদের। উষ্ণতার প্রাবল্য কম থাকার ফলে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যকর আর গতিময় হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ শীত আমাদের কাছে বেশ উপাদেয় একটি ঋতু। ঈশ্বরের আশীর্বাদ স্বরূপ। কিন্তু আগেই যেহেতু বলেছি প্রত্যেকটি ঋতুই আসার সময় তাদের নিজেদের মত করে রোগের সম্ভাবনাকেও নিয়ে আসে। প্রত্যকটি ঋতুই বহন করে নিজ নিজ রোগের জীবানু। তাই শীতকাল ভাল বলে বা আমাদের কাছে গতিময় আর ছন্দময় বলে তা কোনও রোগ সৃষ্টি করে না এই ধারণা লেখা যেতে পারে একমাত্র বোকাদের অভিধানেই। চালাক ও বুদ্ধিমান মানুষের উচিত ঋতু অনুযায়ী রোগ আর রোগের সম্ভাবনাগুলিকে আগাম চিহ্নিত করে রাখা। শুধু রোগ আর রোগের সম্ভাবনাই নয়, মজুত রাখা উচিত সম্ভাব্য প্রতিবিধান আর প্রতিষেধকগুলিকেও।  
শীতকালের রোগঃ একটা অবাক করা বিষয় হল এই যে, শীতের রোগের সৃষ্টি কিন্তু শীতে নয় মোটেই। রোগের গোড়াপত্তন হয় শীতের আগে হেমন্তে আর শীতের শেষে বা প্রাক-বসন্তে। সারা শীতকালে যখন বাতাসের তাপমাত্রা প্রায় একই থাকে তখন সাধারণত খুব একটা বেশি কেউ  ভোগে না। তাই হেমন্তে যখন আপনার দেহে শীতের কোনও অনুভূতিই নেই বরং হাওয়া নাতিশীতোষ্ণ তখনই সতর্কতা আবশ্যক। ভোরে, সকালে বা সন্ধ্যা ও রাত্রিতে শরীরে অতিরিক্ত আবরণ প্রয়োজন। ঠান্ডা সাধারণত প্রবেশ করে মানুষের খুব কোমল আর সংবেদনশীল অংশ দিয়ে। সেই অংশগুলি হল নাক, কান, গলা, হাতের চেটো, পায়ের পাতা মাথার তালু আর বুক। কান, গলা আর মাথা তিনটেই একসঙ্গে ঢাকা সম্ভব একটি মাফলার দিয়ে। হাতের থেকেও পায়ের পাতা আরও সংবেদনশীল। তাই পায়ে মোজা এবং বাইরে বেরোলে হালকা চটি পরা খুব দরকার। শীতের আগে বা পরে অনেক সময়েই মনে হয় যে আমাদের তো এখন শীত লাগছে না তাই আর শরীর ঢেকে কী হবে? কিন্তু মনে রাখতে হবে শীতের অনুভূতি আর ঠান্ডা লাগা কিন্তু এক নয়। ঠান্ডা লাগা কিন্তু একটি চোরাগোপ্তা আক্রমণ। কখন আর কীভাবে লাগবে আপনি ঘুণাক্ষরেও টের পাবেন না। ঠান্ডা লাগার পর অর্থাৎ হাঁচি, কাশি চোখ লাল এসব হওয়ার পর আপনার খেয়াল হবে ইস কালিপুজোর দিন অত রাত পর্যন্ত ফাঁকা ছাদে বাজি পোড়ান তো ঠিক হয় নি। অথবা জগদ্ধাত্রী পুজোয় রাত জেগে ঠাকুর দেখার সময় আর একটু প্রোটেকশন নেওয়া উচিত ছিল।
তবে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করলেই যে রোগ হবে না তা নয়। তবে রোগ যদি আক্রমণ করেও তো তার প্রকোপ কমতে পারে আর আপনার মানসিক প্রস্তুতি আপনার মনকে চাঙ্গা করে শারীরিক কষ্ট কিছু কমাতে পারে। রোগকেও হয়ত আর গভীরে প্রবেশ করতে নাও দিতে পারে।
শীতকালীন ব্যাধিঃ
সর্দি-কাশি-জ্বর তো স্বাভাবিক ঘটনা। এগুলি গরম বা বর্ষাকালেও হতে পারে। এগুলি সর্বদাই যে খুব ভয়াবহ হয় তাও নয়। অন্তত যতক্ষণ না এগুলি অন্য কোনও বড় রোগের উপসর্গ হিসেবে হাজির হচ্ছে। টাইফয়েড, প্যারা টাইফয়েড, বসন্ত, হাম, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ব্রংকাইটিশ, নিমোনিয়া ইত্যাদি আরও অনেক রোগের উপসর্গ হিসেবে জ্বর আসে। সেক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকই এগুলির প্রতিবিধান করতে পারেন। বাড়িতে বসে প্রাথমিক চিকিৎসায় তা সারান সম্ভব নয়।
মনে রাখতে হবে আমাদের মুখের ভেতর জিভের শেষ প্রান্তে গলার প্রবেশপথের দুইপাশে রয়েছে দুই পাহারাদার। এদের টনসিল বলে। ঠান্ডায় কিন্তু টনসিল আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত হতে পারে ভোকাল কর্ড যার কম্পনে আমাদের মুখের কথা বাইরে পৌঁছয়। এই দুটি খুব সংবেদনশীল অংশ আর সহজেই আক্রান্ত হতে পারে। যদিও টনসিল ইনফেকশন দ্বারা আক্রান্ত হয় তবু আক্রান্ত না হলেও ঠান্ডায় ফুলে গিয়ে ব্যথা হতে পারে। এমনি গলাব্যথা বা সোরথ্রোটের সম্ভাবনা থাকেগলা ব্যথা বা গলাধরা এই দুটি ক্ষেত্রেই ঈষদোষ্ণ গরম জলে নুন ফেলে গার্গল করলে অনেক উপশম হয়।
শীতকালে কুয়াশার জন্যে বাতাসে ভাসমান ধুলিকণা অনেক বেড়ে যায়। আমরা সবাই জানি এই ধুলিকণা ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়ার বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। তাই কিছু ধরণের ইনফেকশন এই শীতে হওয়ার সম্ভাবনা। এর একটি হল ইনফ্লুয়েঞ্জা। এই রোগে সর্দি-কাশি-জ্বর, গায়ে হাতে প্রবল ব্যথা, মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে অনর্গল স্রোতের ধারার মত কাঁচা জল পড়া, নাক সেঁটে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি। ইনফ্লুয়েঞ্জা শুধু কষ্টদায়ক তাই নয় খুব অস্বস্তিকরও বটে। ইনফ্লুয়েঞ্জা কিন্তু ভীষণ আর দ্রুত সংক্রামক এক ব্যাধি। বাড়ির কোনও একজনের হলে সারা বাড়ির সকলের হওয়ার প্রচন্ড সম্ভাবনা। তাই রোগিকে একটু আলাদা রাখাই ভাল। এই রোগটি আবার হাঁচি-কাশি দ্বারা সংক্রামিত হয়।  
শীতের প্রারম্ভে বা সারা শীতকালের যে কোনও সময় পেট আক্রান্ত হতে পারে। ঘনঘন পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা, বমি ইত্যাদি। এ সমস্ত ক্ষেত্রে শরীর জলীয় অংশ দ্রুত কমতে থাকে তাই নুন-চিনির জল বারে বারে খেতে হবে। গ্লুকোজ খাওয়া যেতে পারে। পেট ভীষণ গরম হয়ে যায়। পেট ফাঁপা, ফোলা আর ব্যথা এর অনুষঙ্গ হয়। নুন-চিনির জলে শারীরিক দুর্বলতা ক্রমশ কমে আসে। তাছাড়া ডাবের জল, বার্লি, মুশুর ডালের জল ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে বলকারক হয়।
শীতে দেখা দেয় নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ইত্যাদি। বা যারা সারা বছর ভোগেন এই রোগগুলোতে তাদের রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা। শীতকালে ফুসফুস আর শ্বাসনালীর সর্দি জমে যায়। ফলে কাশিও বাড়ে। যারা অ্যালার্জিতে ভোগেন তাদের অ্যালার্জির বৃদ্ধি হয় এই শীতেই। সেজন্যে সর্দি-কাশি তো বটেই শরীরের নানা জায়গায় চর্মরোগ বিশেষ ভাবে চুলকানি অনেক বাড়ে। শিশুদের ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ব্রংকোনিউমোনিয়া হওয়ার বা বাড়ার সম্ভাবনা। তাছাড়াও রয়েছে হুপিং কাশির প্রকোপ। রয়েছে হাঁপানির বৃদ্ধির সম্ভাবনা। কারণ শীতকালে বিশেষভাবে বয়স্কদের ফুসফুস দুর্বল থাকে আর তাতে সর্দির প্রাবল্য হাঁপানির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে।
হাড় এবং সন্ধিপীড়া অর্থাৎ bone and joint diseases. যাদের হাড় দুর্বল অথবা যারা প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ তাদের হাড়ের জয়েন্টগুলি ঠান্ডায় ফুলে যেতে পারে ও ব্যথা হতে পারে। অর্থাৎ প্রায় সমস্ত রকম বাতের কষ্ট শীতের ঠান্ডায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। আর্থ্রাইটিস, রিউম্যাটিজম, গাউট প্রভৃতির বৃদ্ধি কিন্তু এই শীতকালেই।  
উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ডিজিজঃ শীতের ঠান্ডায় শরীরের রক্তবাহী শিরা-উপশিরা সংকুচিত হয়। ফলে রক্ত চলাচলে বাধা পায় আর রক্তের চাপ বেড়ে যায়। ফলে হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। বেড়ে যায় হার্ট স্ট্রোক বা করোনারি অ্যাটাকের সম্ভাবনাও। বিশেষভাবে মধ্যরাতেই এই সম্ভাবনা বাড়ে।
চামড়ার রুক্ষতা ও শুষ্কতাঃ শীতকালে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা অনেক কমে। তাই বাতাসে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণও মারাত্মক ভাবে কমে যায়। এই হ্রাস চামড়ার ওপর প্রভাব বৃদ্ধি করে আর চামড়ার মসৃণ ভাব অন্তর্হিত হয়ে চামড়াকে খসখসে, ফাটা ফাটা আর অনুজ্জ্বল করে। অনেক সময় ফাটা বা ক্র্যাক এত বেশি হয় যে ঘা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এর প্রতিবিধান হল চামড়ায় নিয়মিত তেল, ভেসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা গ্লিসারিন মাখা। গ্লিসারিণ কিন্তু কখনও খাঁটি বা raw মাখা উচিত নয়। তাতে ফাটা বেড়ে যেতে পারে। অর্ধেক জল ও অর্ধেক গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়।
প্রতিকারঃ অনেক সময় বা অনেক জায়গায় ওষুধের দোকান অনেক দূরে থাকতে পারে। বা ওষুধ অমিল থাকতে পারে। আমাদের এই দেশ কিন্তু গাছ-গাছড়ায় ভর্তি। এই সমস্ত গাছপালা, পাতা, ফল, ফুল ইত্যাদি যেমন খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেমনি এদের মধ্যে রয়েছে ভেষজ উপাদান। যেগুলি থেকে খুব সহজে প্রাথমিক ওষুধগুলি তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। এগুলি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যেতে পারে।  
রসুন (Garlic): এই মূল বা কন্দটি এত সাংঘাতিক মূল্যবান তার ভেষজ গুণে যে এটি শুধুমাত্র আয়ুর্বেদেই নয়, ইউনানি ও হোমিওপ্যাথিতে অত্যন্ত আদরণীয়। কেবল প্রস্তুতির ভেদাভেদ ছাড়া। পেঁয়াজ গাছ যারা দেখেছেন তাদের কাছে রসুন গাছের বিশেষ পরিচয় লাগবে নাদুটি গাছ প্রায় এক রকম দেখতে। এমন কী এদের পাতা আর পত্রগুচ্ছের মাঝে যে কলিটি থাকে তা পর্যন্ত। তবে পেঁয়াজের রয়েছে তীব্র ঝাঁঝ আর রসুনের উগ্র গন্ধ।  
শুধু রোগ আরোগ্যেই নয়, রোগ প্রতিরোধেও রসুনের ভূমিকা অতুলনীয়। শুধু কৃমি দূর করাই নয়, এর সাহায্যে অন্ত্রস্থঃ (intestinal) পরজীবীও দূর করা সম্ভব। কৃমি বহু সময় আমাদের পাকস্থলীর বিকলতা আনে। যে সমস্ত মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা ক্রমশ কমতে থাকে তারা নিয়মিত রসুন খেলে এই প্রবণতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। রসুনে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও সামান্য ভিটামিন 'সি' থাকে। তাই যারা হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে রসুন খুব উপকারী। শ্বাসকষ্ট উপশমে, হজমে সহায়তা করে প্রস্রাবের বেগ বাড়িয়ে মূত্রথলির কষ্ট দূর করে। শ্বাসনালীর শ্লেষ্মা নিবারক ও উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে কার্যকরী। শরীরে কোলেস্টেরল লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। রান্নায় কোনও না কোনও বিশেষ ভাবে আমিষ পদে আমরা প্রায় রোজ রসুন খাই। তবুও তবে আমাদের এই রোগগুলি থেকে মুক্তি পাই না কেন? কারণ রান্না করলে এই কন্দটির ভেষজ গুণ বিনষ্ট হয়। তাই ভেষজ গুণের জন্যে একমাত্র কাঁচা রসুনই উপকারী। তবে রসুনের পাতা ভেজে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।   
আদা (Ginger): আদা এত সাধারণ একটি জিনিস যে এর বিশেষ কোনও পরিচয় লাগে না। আমাদের প্রায় প্রতিটি রান্নাতেই উল্লেখযোগ্য মশলা হিসেবে এটি নিত্য ব্যবহৃত হয়। এটা ঠিক যে রান্নায় অতিরিক্ত আদার ব্যবহার হজম যন্ত্রকে উত্তেজিত করে ফলে হজমের গোলযোগ দেখা দিতে পারে। কিন্তু এই কন্দটির ভেষজ হিসেবে ব্যবহার সেটি ঘটায় না। কারণ ভেষজ হিসেবে এর ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বাঁধা থাকে। হঠাৎ সর্দি লাগলে শ্বাসযন্ত্রের উপরের অংশ যেমন, নাসারন্ধ্র (nostril), তালু (soft pallet),  টনসিল, ইত্যাদি আক্রান্ত হয়। গলা বসে যায়, নাক ও চোখ দিয়ে জল পড়ে, সামান্য কাশি ইত্যাদি হয়। এমন কী সামান্য স্বাসকষ্ট পর্যন্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আদার রস খুব উপকারী। আদা শুকিয়ে যে শুঁট হয় সেটিও নানা গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ ও ইউনিনানিতে আদা খুব গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ।

হলুদঃ (turmeric):
এটিও রান্নায় নিত্যব্যবহার্য বস্তুর গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ। হলুদের সঙ্গেও আমাদের পরিচিতি গভীর ও প্রায় আবাল্য। শরীর যন্ত্রের মধ্যে হলুদের কাজ মূলত লিভার, স্টম্যাক আর ইন্টেস্টাইনে। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি কৃমির সংক্রমণ শুধু খাদ্যই নয় দেহের যে কোনও খোলা অংশ যেমন হাত ও পায়ের চামড়া দিয়েও হতে পারে। কৃমি মূলত বাসা বাঁধে ইন্টেস্টাইনে। সে সেখান থেকে আমাদের পুষ্টিরস চুষে খেতে থাকে। শুধু তাই নয় আবার শরীরে ঢেলে দেয় এক জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ। তাই জ্বর, সর্দি-কাশি, দুর্বলতা, হজমের বৈকল্য, চর্মরোগ ও আরও অনেক উপসর্গ দেখা দেয়। এই ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদের রস খুব উপকারী। হাত-পা ফোলা (Edema), রক্তদূষণে, কিছু লিভারের অসুখে হলুদ খুব উপকারী। পা পিছলে পড়ে অনেকের হাত পা মচকে যায় বা ব্যথা হয়। সেক্ষেত্রে চুনের সঙ্গে হলুদ গুঁড়ো অথবা বাটা গরম করে প্রলেপ লাগালে ব্যথা আস্তে আস্তে কমে আসে। চোখের রোগ যেমন কনজাংটিভাইটিস রোগে হলুদ জলে গুলে সেই জলের ছিটে চোখে দিলে রোগের উপশম হয়। প্রতিদিন কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেলে হজম শক্তির সঙ্গে লিভারও বেশি সক্রিয় হয়। চর্মরোগে এটি বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। হলুদ চামড়ার উজ্জ্বলতা বাড়াতে সক্ষম। নিয়মিত কাঁচা হলুদ বাটা মাখলে চামড়ার উজ্জ্বলতা বজায় থাকতে পারে। সৌন্দর্যচর্চায় এটি অত্যন্ত নিরাপদে ব্যবহৃত হয় আর হয়ে আসছে। বিয়ের আগে গাত্রহরিদ্রার প্রচলন সেজন্যে। যদিও মাত্র একদিন ব্যবহারে শরীর ঝকঝকে হয় না তবে এই প্রচলন একটি প্রতীক।  
তুলসিঃ তুলসি খুব সাধারণ একটি গাছ যা সর্বত্র পাওয়া যায়। সর্দিকাশি, জ্বর ঠান্ডা লাগাতে তুলসি পাতার রস করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। তুলসি লিভারকে সক্রিয় করে হজম শক্তি বাড়ায়। মধু ও তুলসি পাতা রক্তের ইউরিক আসিডকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। তুলসি পাতা দিয়ে জল ফুটিয়ে সেই ভাপ নাকে মুখে লাগালে তা মাথাব্যথা আর সর্দির পক্ষে উপকারী। তুলসি রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সক্ষম। তুলসি পাতার রস খেলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হতে পারে। তুলসি পাতা থেঁতো করে ক্ষতে লাগালে ক্ষতের উপশম হয়।
বাসকঃ এককালে চিকিৎসার যখন এত বেশী উন্নতি হয় নি তখন বাসক পাতা সেদ্ধর জল সর্দিকাশির প্রায় একমাত্র ওষুধ হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ছিল। কাশি বিশেষভাবে হুপিং কাশিতে এর ব্যবহার বেশ চমকপ্রদ। মিছরি আর গোলমরিচের সঙ্গে এই পাতা জলে ফুটিয়ে সেই জল বার বার (দিনে অন্তত দুবার) কাশির প্রকোপ কমে আসে।
নিমঃ নিম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গাছ। ভেষজ হিসেবে নিমগাছ, এর পাতা ছালের ব্যবহার বহু প্রাচীন। শুধু আয়ুর্বেদেই নয়, ইউনানি ও হোমিওপ্যাথিতে এর ব্যবহার বিশাল। ডায়াবেটিস রোগে প্রতিদিন কাঁচা নিমপাতা চিবিয়ে খেলে এবং নিয়মিত ভাবে খেলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে। খোসপাঁচড়া ঘা প্রভৃতি চর্ম রোগে এই গাছের পাতা ফুটিয়ে লাগাতে হবে। নিমের মলম এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকারী। দাঁত ও মুখের রোগ যেমন মাড়ি ক্ষয়ে যাওয়া, মুখে ঘা ইত্যাদির জন্যে নিমের ডাল দাঁতন হিসেবে ব্যবহার করা বা নিমপাতার জল দিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে কোনও তেঁতো জিনিস কৃমিবিনাশক। তাই নিমপাতারও এই গুণ থাকা স্বাভাবিক। নিমপাতার রস নিয়মিত খালিপেটে খেলে এই রোগ দূর হয়। এছাড়াও ব্রণ, ফোঁড়া, মুখে ফুস্কুড়ি ইত্যাদিতেও এর ব্যবহার ফলপ্রদ।
কালমেঘঃ শিশুদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ মূল্যবান গাছ। কোষ্ঠবদ্ধতায়, কৃমিতে, কফ বৃদ্ধি পেলে, পেট কামড়ালে বা ক্ষিদে কমে গেলে কালমেঘের রস বিশেষ উপকারী। কালমেঘ পাতার বড়ি শিশুদের নিয়মিতে খাওয়ালে এই সব উপসর্গ অনেক হ্রাস পাবে।
ঘৃতকুমারীঃ (Aloe Vera) এই মূল্যবান গাছটির দিকে এখন সবাই অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়েছে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও এর ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে দিনের পরে দিন। এখন অনেকেই বাড়িতে এই গাছ লাগাচ্ছেন। আয়ুর্বেদ, ইউনানি ছাড়াও হোমিওপ্যাথিতে এই গাছটি দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কোষ্ঠবদ্ধতা, ফিক ব্যথায় (muscle pain) এই পাতার শাঁস কিছুদিন ধরে নিয়মিত মালিশ করলে ব্যথা কমে যায়। এই গাছের পাতার শাঁস ত্বকের ওপর সুন্দর কাজ করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। কোষ্ঠবদ্ধতা, উদরাময় সারান ছাড়াও হজমশক্তির বৃদ্ধি ঘটে এই গাছের পাতার রসে।
পুদিনাঃ রান্নাকে সুস্বাদু করতে এই পাতার ব্যবহার দীর্ঘকালের হলেও ভেষজ হিসেবে এটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে হজম যন্ত্রের ওপর কাজ করে। বদহজম, পেটফাঁপা ইত্যাদি রোগে এটি বেশ কয়েক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পাতা ছেঁকে শুধু জলটা খেলে উপকার পাওয়া যায়। জন্ডিসে, কম প্রস্রাবে এই পাতা খুব উপকারী। পুদিনা গাছের ডাল শুকিয়ে গুঁড়ো করে তা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের বিভিন্ন রোগের সমাধান হয়। আয়ুর্বেদ ছাড়াও এটি ইউনানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করে। 
সজনে ডাঁটা ও সজনে ফুলঃ এই গাছ খুব একটা বিরল নয়। আমাদের চোখের সামনেই কোথাও না কোথাও এই গাছ দেখা যায়। শীতের শেষে বাজারে প্রচুর ডাঁটা আর ফুল আসে। এই ডাঁটা আর ফুল বসন্ত রোগের প্রতিষেধক। রান্না করে এমন কী ভেজে খেলেও এই বস্তুগুলির ভেষজগুণ নষ্ট হয় না। বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব সাধারণত শীতের শেষেই ঘটে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে রোগারোগ্যে এটি প্রাকৃতিক ভেষজ সমাধান বলা যেতে পারে।
ওপরের এই সমাধানগুলি সব আমাদের হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। তবে এই সমস্ত দিয়ে তৈরি ওষুধ পেতে গেলে ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন নিয়ে ওষুধের দোকানে যেতেই হবে। সর্বদা মনে রাখতে হবে এই প্রবন্ধ পড়লেও আপনি কিন্তু কোনোভাবেই চিকিৎসক নয়। সুতরাং একমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু করেই আপনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। নিজেকে চিকিৎসক না ভাবাটাই শ্রেয়। 
MOB. 8017413028
*  Medical Practitioner,  AYUSH (Deptt. Of Health and Family Welfare, Govt. of W.B.)  

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩