google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re প্রবন্ধ : বটু কৃষ্ণ হালদার - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

প্রবন্ধ : বটু কৃষ্ণ হালদার



আদুরেমনা শীতের আগমনী বার্তা



সাদা কাশফুল যেমন জানান দেয় শরৎকাল এসেছে, ঘরের মেয়ে উমা আসবে বাপের বাড়ি, ঠিক তেমনই সোনালী পাকা ধানের খেত গাঁদা, ডালিয়া, সূর্যমুখী, গোলাপের রঙ্গিন পাখনার উপর ভর করে আদুরেমনা শীতের আগমন ঘটে। সবুজ, সতেজ,বনময়, স্বপ্নীল ভারত এক ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ।রঙ্গিন প্রকৃতির ঋতুরঙ্গশালা তার আনন্দময় আগমন বিস্তার ঘটে ঋতু গুলির মধ্যে দিয়ে। ভারতের প্রত্যেকটি ঋতু বৈচিত্র গুরুত্বপূর্ণ। ঋতু পরিবর্তনের বর্ণ বিচিত্রা ধারা পথে নিয়মিত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার খেলায় মগ্ন হয়। প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতির অনন্য রূপের ডালি নিয়ে হাজির হয়। ঠিক তেমনই হেমন্তের ডানায় ভর করে সোনালী আলোর পরশে শিশির রাঙানো আলতো স্পর্শে শীত নিয়ে আসে পৌষ পার্বণ ও নলেন গুড়ের বার্তা। শীত আসে হৃদয়ের আবেগের অনেকখানি পরশ জুড়ে। তন্দ্রায় বিজড়িত চেতনায় দূর বনান্তরালে পাখিদের কূজন,পথচারীদের বিচ্ছিন্ন সংলাপ ভেসে আসে দূর হতে। চারিপাশ কুয়াশার স্তব্ধতায় মগ্ন। এক সীমাহীন বিষন্নতা ও বৈরাগ্যে সকলের হৃদয় কানায় কানায় ভরে ওঠে। শীতের বুড়ি কুয়াশার লেশ হীন মাত্রা ছুঁয়ে কাঁপতে কাঁপতে চলেছে শুকনো পাতার  সন্ধানে বনাঞ্চলে। ঘন কুয়াশার চাদর সরিয়ে পূর্ব দিগন্তে ধীরে ধীরে সোনালী আলোর পরশ ছড়িয়ে পড়ে দিগন্তময়। গাছগাছালি, ডালপালা, পাতা, টিনের চাল, খড়ের ছাউনী হতে সোনালী বিন্দু ঝরে পড়ে মলিন ঘাসের ডগায়। ঝরে পড়ে আম্র মুকুল। মেঠো পথ ধরে কৃষকরা বলদ নিয়ে চলেছে মাঠের পানে। দুটি শালিক শুকনো বাবলার ডালে মুখোমুখি বসে রোদ পোহাচ্ছে। এক ঝাঁক কাক আপন ডানায় ভর করে ঘন কুয়াশার পাহাড় ঠেলে উড়ে চলে যায় দুর সীমাহীন বলাকায়।
লেপের তলা দিয়ে উঠি উঠি করে ও উঠতে ইচ্ছে করে না। শিয়রে হিংস্র শীত কেশ ফুলিয়ে থাবা পেতে বসে আছে। গরম বিছানার রচিত উত্তাপ কেমন দুর্নিবার অলসের চেতনায় ঘিরে ধরে। শীতের সেই কোন ভোরে উঠে মা উনানে ধান সিদ্ধ করতে ব্যস্ত। ঠাকুমা,জেঠিমারা নকশী কাঁথা গায়ে দিয়ে জুবুথুবু হয়ে বসে আগুন পোহাতে থাকে। তাদের কথোপকথন ভেসে আসে। সরিষার ক্ষেতে মৌমাছিরা গুঞ্জন করতে শুরু করেছে। শীতের সকাল যেন এক প্রৌঢ়া কুলবধূ। বদ্যি বাড়ির আটচালা হতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পঠনের সুর ভেসে আসে।
"খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধ মন", গানটি বেশ জনপ্রিয়। ঠিক তেমনি নলেন গুড় বাংলার মানুষের কাছে অতি প্রিয় এক প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি। চারিদিকে ঘন কুয়াশার প্রাচীর, তারই মাঝে খেজুর গাছে ঝুলে থাকে রসের হাড়ি। গ্রামের মানুষরা খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহায়,সেই রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করতে থাকে।দূর হতে ভেসে আসে তার মিষ্টি সুগন্ধ। শীত মানেই পৌষ পার্বণ। পৌষ পার্বণ বাংলার জনপ্রিয় প্রাচীন সংস্কৃতি।পৌষ পার্বণের নতুন ধানের থেকে তৈরি চালের গুঁড়ো দিয়ে পিঠে পুলির সঙ্গে নলেন গুড়ের এক আত্মিক সম্পর্ক। আর মকরের গঙ্গাস্নান মানে কপিল মুনির আশ্রম। সব তীর্থ  বারবার গঙ্গাস্নান একবার। এই আদুরে মনা শীতে র সময় আপনাকে যে কপিল মুনির আশ্রম এ আসতেই হবে একবার। বহু মানুষ ও মনীষীদের আগমনে কপিল মুনির আশ্রম প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। কপিল মুনি আশ্রম এই বাংলা র অহংকার, গর্ব।
তবে একদিকে যেমন আলো অপরদিকে তেমন অন্ধকার, ঠিক শীতের আগমনে বনভূমিতে শুরু হয় হাহাকার। মালতীলতা পত্রশূন্য,ঝুমকো লতা তার রং ফুরায়।তবুও হাড় কাঁপানো শীতের মধ্য দিয়ে কুয়াশাচ্ছন্ন শিশির ভেজা র  মধ্যে আছে প্রকৃতির মাধুর্যতা। এই শীতের সময় গ্রামে-গঞ্জে নানা মেলা,পার্বণ উৎসবের ধুম লেগে যায়। ঘন কুয়াশার বুক চিরে সোনালী আলোর জন্য অপেক্ষা করতে করতে কতটা সময় চলে যায় ঠিক বুঝতে পারা যায় না। রৌদ্র ঝলমল পরিবেশে রোদে গিয়ে বসে পরম সুখ ভোগ করা মধ্যে অনাবিল আনন্দ। এই শীত কৃষক পরিবারে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। মা লক্ষ্মীর আশীষ সোনালী ফসল মাঠ থেকে ঘরে ফেরার পালা। তবে কথায় আছে কারো" পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ"। শীতের সুখকর অনুভূতি মাঝেও দুঃখের বার্তা বয়ে আসে হতদরিদ্র পরিবার গুলির মাঝে।কলকাতার ফুটপাতবাসী সহ এমন বহু পরিবার আছে যাদের কাছে লেপ-কম্বলের সুখকর বিছানা শুধু স্বপ্ন। যাদের হাড় হিম করা রাত কাটে পাতলা কাপড় গায়ে দিয়ে, নয় তো  খড় কুটো গাছের ডালপালা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে, তারই পাশে বসে বসে কেটে যায় অগণিত কত রাত। অপেক্ষা করে সূর্যের প্রখর উষ্ণতার জন্য, সূর্য তাদের কাছে এক সুখের জগত। শীতের বিদায়ের অপেক্ষায় মগ্ন থাকে, এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চায়।

 =========000=========


বটু কৃষ্ণ হালদার,৩২৭/৩ এম জি রোড, রোজি অ্যাপার্টমেন্ট, পোস্ট_আর সি ঠাকুরানী, হরিদেবপুর কবরডাঙ্গা, কল_৭০০১০৪, ফোন_৯৮৩০৪২০৯০৪, ৮৬১৭২৫৫৯৫৮