Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

ভ্রমণকাহিনি : রমলা মুখার্জী (ব্যানার্জী)




দিই পাড়ি কন্যাকুমারী





পুজোর অষ্টমীর দিন থেকে কি বৃষ্টি কি বৃষ্টি! লক্ষ্মী পুজোর পরেই কন্যাকুমারী যাওয়ার টিকিট। শেষে কি বানচাল হয়ে যাবে নাকি? না, মেঘ কেটে সোনালী রোদ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। হাওড়া থেকে বিকেল চারটেতে রওনা দিলাম কন্যাকুমারী এক্সপ্রেসে। তারপর দিন ট্রেনে সবাই মিলে হইহুল্লোড় করে আর নানারকম উল্টোপাল্টা খেয়ে বেশ কেটে গেল। তারপর দিন সকালে স্বপ্নে দেখা কন্যাকুমারীর মাটি স্পর্শ করলাম। ট্যাক্সি করে এসে উঠলাম দারুণ এক হোটেল 'সানভিউ'তে। সমুদ্র কাছেই- সমুদ্রে স্নান করে খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে দেবী কুমারীর মন্দির দর্শন করতে গেলাম। দেবীর নামানুসারেই এই তীর্থনগরীর নাম কন্যাকুমারী। খুবই জনপ্রিয় এই তীর্থস্থান। একদিকে ভারতভূমির শেষপ্রান্ত আর অন্যদিকে আরবসাগর, ভারতমহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর এই তিন সমুদ্রের সম্মিলন। এইজন্য একে ত্রিবেনী সঙ্গমও বলা হয়। উত্তরদিকের তোরণদ্বার দিয়ে কুমারী মন্দিরে প্রবেশ করার প্রধান পথ। পরমাসুন্দরী বালিকারূপিণী দেবী ডানহাতে মালা নিয়ে তপস্যারতা। তামিল বৈশাখী মাসে (মে-জুন) বৈশাখ উৎসব খুব ঘটা করে এখানে হয়। দু বেলা দেবীকে শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয়। সাদা মার্বেল পাথরে তৈরী মূর্তিটি ভারি সুন্দর।
    আমার মনে প্রশ্ন জাগল দেবী কেন এখানে কুমারী? অনুসন্ধান করে জানতে পারলাম সেই পৌরাণিক কাহিনি। একসময় দৈত্যরাজ বালাসুর দেবতাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে করতে দেবতাদের পরাজিত করে তাদের শুধু বিতাড়িত করল না নির্মম অত্যাচার করতে লাগল। সহ্য করতে না পেরে মা বসুন্ধরা বিষ্ণুদেবের কাছে গেলেন। শ্রীবিষ্ণু পরাশক্তির স্মরণ নিতে বললেন কারণ একমাত্র পরাশক্তিই পারবে প্রবল পরাক্রান্ত বালাসুরকে নিধন করতে। দেবতারা আয়োজন করলেন যজ্ঞের, উদ্দেশ্য পরাশক্তিকে প্রসন্ন করা। দেবী দেখা দিয়ে বললেন, "আমি অবিলম্বে বালাসুর ও অন্যান্য অসুরদের বিনাশ করব।" দেবতারা তাঁর কথায় আশ্বস্ত হলেন। দেবী পরাশক্তি কুমারী বালিকারূপে কন্যাকুমারীতে এসে কঠোর তপস্যা করতে লাগলেন। কন্যাকুমারী থেকে মাত্র তেরো কিলোমিটার দূরে সুচীন্দ্রম মন্দির। সেখানে দেবাদিদেব মহাদেব থাকেন। শিবঠাকুর কুমারী কন্যাটিকে দেখে তার প্রতি অনুরক্ত হলেন ও বিবাহ করতে চাইলেন। বিবাহের আয়োজন চলতে লাগল। কত চাল, ডাল ভোজের জন্য আসতে লাগল। কিন্তু বালাসুর ব্রহ্মার বরে কেবলমাত্র কুমারী কন্যার হাতেই বধ্য তাই দেবর্ষি নারদ শুনে তো প্রমাদ গুনলেন। ব্রহ্মার বিধানে আর কেউ তো বালাসুরকে মারতে পারবে না। তাই নারদ শিবকে গিয়ে বললেন বিবাহ হবে মধ্যরাত্রের এক বিশেষ শুভলগ্নে। শিবের মনে আনন্দের সীমা নেই। সুচীন্দ্রম মন্দির থেকে শিব সেজেগুজে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। শিব যখন বালুকুমপরাইতে (সূচীন্দ্রম মন্দির থেকে ৫ কিমি দূরে) এসে পৌঁছালেন নারদ এক ফন্দী আঁটলেন। এক মোরগের রূপ ধরে নারদ উচ্চরবে ডেকে উঠলেন। শিব মনে করলেন রাত্রি শেষ হয়ে ভোর হয়ে গেছে। বিবাহের শুভলগ্ন অতীত ভেবে তিনি বিরহ কাতর 
বক্ষে ফিরে গেলেন সুচীন্দ্রমে। বিয়ে হলনা। দেবীও পণ করলেন তিনি চিরকুমারী থাকবেন তাই কন্যাকুমারীর দেবী কুমারী। বিবাহের জন্য আয়োজিত সমস্ত অন্ন ও খাবার কাঁকর আর বালিতে রূপান্তরিত হয়ে আজও সমুদ্রতীরে সেই অলৌকিক কাহিনীর সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
      এদিকে কুমারী কন্যার অপরূপ রূপের খ্যাতি লোকমুখে শুনে বালাসুরও কুমারী কন্যাকে বিবাহ করতে চাইলেন। দেবী যখন কিছুতেই তাকে বিবাহ করতে সম্মত হলেন না তখন বালাসুর দেবীকে জোর করে তুলে নিয়ে যেতে উদ্যত হলেন। বালাসুর যেই বিরাট তরবারি বার করেছেন দেবীও বার করেছেন তাঁর কালান্তক অসি। চলল প্রবল যুদ্ধ। কিন্তু অশুভের পরাজয় শুভের জয়। অবশেষে দেবী চক্র দিয়ে বালাসুরকে সংহার করলেন। দেবতারা নিশ্চিত হয়ে দেবীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে ফিরে এলেন স্বর্গে আর সুখে বাস করতে লাগলেন। কুমারী দেবীর নাকে হীরের নাকছাবির মতই আমার মনের মণিকোঠায় এই কাহিনি চিরদিন উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। 

  
   পরের দিন গেলাম সমুদ্রের ধারে সানরাইজ পয়েন্টে ভোর সাড়ে পাঁচটায়। কিন্তু মেঘে ঢাকা আকাশ। কিছু পরেই মেঘ সরে গিয়ে সূর্যদেব দেখা দিলেন। সবে উদিত হচ্ছেন- অপূর্ব সে দৃশ্য। মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলাম। সম্পূর্ণ সূর্যোদয় উপভোগ করার পর গেলাম বিখ্যাত সেই বিবেকানন্দ রকে। তীরভূমি থেকে প্রায় ২০০ মিটার ছাড়িয়ে সমুদ্রের বুকে স্বামী বিবেকানন্দের স্মৃতিতে তৈরি হয়েছে প্রস্তরময় দ্বীপে তাঁর স্মৃতিসৌধ। বিদেশ যাত্রা করার আগে স্বামীজী পরিব্রাজক রূপে কন্যাকুমারীতে আসেন ১৮৯২ খ্রীস্টাব্দে আর ঐ শিলাখণ্ডে বসে গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হন। ভারতীয় স্থাপত্যের এক অন্যতম নিদর্শন এই সৌধটি। প্রবেশপথটিতে অজন্তা-ইলোরার গুহামন্দিরের শৈলী অনুসরণ করা হলেও সমস্ত সৌধটি আমাদের পশ্চিমবঙ্গের বেলুড়মঠের অনুরূপ। ১৯৭০ সালে এই সৌধটির উদ্বোধন হয়। 
     পরিব্রাজকের ভঙ্গীতে ব্রোঞ্জের তৈরি প্রমাণ মাপের মূর্তিটি প্রধান মন্দিরের গম্বুজের নিচেই স্থাপন করা হয়েছে। অদ্ভুত সুন্দর সে মূর্তি। মন্দির সংলগ্ন প্রশস্ত ধ্যানমন্ডপে আমরা সবাই বসে ধ্যান করলাম- আর আমি স্বামীজীর কথাই ধ্যানে প্রার্থনা করলাম- "জ্ঞান দাও, বুদ্ধি দাও, ধর্ম দাও, অহংকার দিও না।"

     অপর আর একটি স্মৃতিসৌধ আমরা ঐ সমুদ্রতীরে দেখতে পেলাম। স্মৃতিসৌধটি বিখ্যাত তামিল কবি থিরুভাল্লভার, যিনি 'থিরুক্কুরলি' নামে বিখ্যাত বইটি লিখেছেন- যেটি 'তামিল বেদ' নামে পরিচিত। বিরাট এই সৌধটির উচ্চতা ১৩৩ ফিট। ২০০০ সালের জানুয়ারী মাসে তামিলনাড়ুর তখনকার মুখ্যমন্ত্রী ডঃ এম.ইউ.করুণানিধি এই বিরাট উচ্চতার শিলামূর্তিটির উন্মোচন করেন। 
     সমুদ্রে স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে আমরা গেলাম কন্যাকুমারী থেকে ১৩ কি.মি দূরে সুচীন্দ্রমের স্থানুমলয়ন মন্দিরে, যেখান থেকে শিব কন্যাকুমারীতে আসছিলেন বিবাহ করতে। বৈষ্ণব ও শৈব এই দুই সম্প্রদায়ের কাছে এই মন্দিরটি মহা পুণ্যস্থান। মন্দিরগর্ভে একটি মাত্র লিঙ্গ। লিঙ্গটির নাম স্থানুমলয়। লিঙ্গ একটি হলে কি হবে?- একটি লিঙ্গেই ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর এই তিন দেবতার ভাবদ্যোতক মন্দিরের অলিন্দে ১৮ ফুট লম্বা শ্রী হনুমানজীর সুন্দর মূর্তিটি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মন্দিরের অপূর্ব স্থাপত্যকলা সত্যই প্রশংসনীয়।
     তামিলনাড়ুর এই দ্রষ্টব্যস্থানগুলি দেখে আমরা রওনা দিলাম কেরালার পথে। 'আজ তবে এইটুকু থাক, বাকি কথা পরে হবে।' যদি পরে সুযোগ পাই কেরালার কথা নিশ্চয়ই বলব।  
            
=======000======
ডঃ রমলা মুখার্জী,বৈঁচি, বিবেকানন্দ পল্লী,হুগলী, ৭১২১৩৪, পঃ বঃ
হোয়াটসঅ্যাপ- ৯৪৭৪৪৬২৫৯০
মোবাইল- ৭০০৩৫৫০৫৯৫



জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক