পিয়ালী বসাক : অক্সিজেন ছাড়াই ৮৮৪৮ মিটারে প্রথম বাঙালী নারী
সুইটি রায়
নারীশক্তিকে বলা হয় আদ্যাশক্তি। নারী যেমন প্রেয়সী, তেমনি জননী আবার সেই নারীই মা চন্ডী। এখন নারী রা ঘরে বাইরে সর্বত্র সমান ভাবে দক্ষতা ও বুদ্ধি মত্তার পরিচয় দিয়েছে।
আমি নারী
আমি সব পারি
আমি রাজ্য চালাই দেশ ও চালাই
বিশ্বটাকে এগিয়ে দিতে মহাকাশে দিই পারি
আমি দুঃসাহসী নারী
আমি তরোয়াল হাতে যুদ্ধ করেছি
হিমালয়ের চূড়ায় উঠেছি।
হ্যাঁ সত্যিই সত্যি এক বাঙালী নারী অক্সিজেন ছাড়াই তার জয়ের ধ্বজা হিমালয়ে স্থাপন করেছেন। চন্দননগরের বাসিন্দা পিয়ালী বসাকের অনেক অভাবের মধ্যেই বড়ো হয়ে ওঠার গল্প। বাবা শয্যাশায়ী। মা কে নিয়ে জীবন যুদ্ধের পথে যখনই সে পাহাড়ের নাম শুনেছে ছুটে ছুটে গেছে। পারিবারিক আর্থিক অবনতির কারণে পর্বত আরোহণের স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হবে এই আশঙ্কায় বাড়ি থেকে নেপালে পাড়ি দেয়। চন্দননগরের বাসিন্দা পিয়ালী অঙ্ক নিয়ে স্নাতক পাশ করে। এখন এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। পিয়ালী যেমন মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট তেমনি আইস স্কেটিংয়েও নজর কেড়েছেন।
দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে ২০০৮ সালে পর্বত আরোহণে বেসিক কোর্স করে। ২০১০ সালে আ্যডভ্যান্স কোর্স করে।
ক্রাউডফান্ডিং-এর টাকা একটু একটু করে ভরসা জুগিয়েছিল পিয়ালীকে। তারপরও স্বপ্ন ছোঁয়া হয়নি।। পরিস্থিতি প্রতিকূল থাকায় এভারেস্টের শিখরের ৪৫০ মিটারের নিচ থেকে সমতলে ফিরে আসতে হয়ে। নিজেকে আবার প্রস্তুত করে আবার এগিয়ে যায। এবার জয় নিশ্চিত।
গত মার্চ মাসে চন্দননগর থেকে এভারেস্টের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। স্বপ্ন পূরণ হয়ে মে মাসে সকালে এবং তার সাথেই পিয়ালী প্রথম বাঙালী কন্যা হিসেবে অক্সিজেন ছাড়াই বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে রেকর্ড বইয়ে নাম নথিভুক্ত করে। গত বছর সেপ্টেম্বরেই প্রথম বাঙালী ও দেশের প্রথম অসামরিক ভারতীয় হিসেবে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসলু জয় করেন।
এখন পিয়ালী র অভিজ্ঞতার ঝুলিতে অমরনাথ থেকে মানসুল, ধৌলগিরি জয়। মুলকিলা ১০ মাউন্ট এর মতো শৃঙ্গ জয় করেন।
চন্দননগরের পর্বত আরোহী পিয়ালীর পরবর্তী অভিযান মাকালু ও অন্নপূর্ণা জয় করা।
এখনকার দুর্গারা হেরে যাওয়াকে শেষ ভাবে না বরং ঘুরে দাড়িয়ে জিততে জানে।
DVC (দমোদরভ্যালি করপোরেশন) -এর পক্ষ থেকে বাংলা পর্বতারোহী মিস পিয়ালী বসাককে কোলকাতায় DVCর সদর দপ্তর-এ (ডি ভি সি টাওয়ার্স) সম্বর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
আমরা সকলেই আশা করি যেন এই বঙ্গ তনয়া যেন ভবিষ্যতে আরও সাফল্য অর্জন করেন। ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস গোটা বিশ্বে পালিত হয়। তাই এই আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এমন নারী সম্পর্কে সকলের কাছে উপস্থাপন করা উচিত।
এখন প্রত্যক নারীর মধ্যেই আছে হিমালয়া কন্যা পার্বতী। যে অশুভ শক্তির বিনাশ করে। বারবার এই পৃথিবীতে সুখ শান্তি ফিরিয়েছেন। নারী এখন যেমন মা দূর্গা তেমনি সীতা। ধৈর্য্য আত্মসম্মান ও বিচক্ষণতার সাথে মানুষের মনে প্রেরণা জুগিয়েছে।
==========
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন