google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re তিনটি কবিতা ।। শাশ্বত বোস - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

তিনটি কবিতা ।। শাশ্বত বোস

 

 তিনটি কবিতা ।। শাশ্বত বোস

 

ভালোবাসা একটি বসন্ত


পাতাঝরা স্রোত আর কালের গাত্রে রাতের হিংস্রতা, ভেঙে দেয় শব্দের বেড়াজাল|

ঝড়ের বুক চিরে দেখা দেয় বিজলীর হাসি|

 যে আমায় "ভালোবাসি" বলেছিল, তাকে খুঁজে পাই অন্ধকার মোহনার বাঁকে |

গণিকার শরীর জুড়ে আমি প্রেম খুঁজেছি, সেও ছিল কোন এক বসন্ত বিকেল|

এখন ভালো কথারা হানা দেয় মাঝদুপুরে, আমার দুচোখ জুড়ে সন্ধ্যে নামে|

আমার ভালোবাসারা ভিড় করে সব, ইছামতির গোধূলি রাঙা নীলে|

বিবেকে তখন আবেগ আর মননের পূর্ণরতি|

যেন শরীর জোড়া অমাবস্যায়, বিন্দুরূপে চন্দ্রোদয়|

সেই বসন্তে আসলে "আমি" ছিলাম না ,

আমার প্রেয়সীর কোলে মাথা রেখেছিল আমার বিদেহী দোসর|

যেমনটা তেপান্তরের পাড়ে ঘটে, প্রতি চৈত্রে, আগুন আর চিতার সাথে|

এখন বসন্ত পাল্টে গিয়েছে অনেকটাই|

রক্তপলাশ তাঁর বুকে, এঁকে দিতে পারেনি নাগরিক কথকতা|

বিপ্লবের চেতনা এখনও সেই বসন্তেই আসে|
বিবর্ণ নারীর নগ্ন শরীরে, আঁকা কবিতার ডানায় ভর করে||
 

বাংলা ভাষার দেশ


 

বাংলা ভাষা, মাতৃস্তন্যপেয়, মাতৃজঠর হতে

আমার মরমে প্রবেশ তার, যেমন পরাগে মধুপের সঙ্গম |

প্রেমে, অপ্রেমে কিংবা বিরহে, মক্কা মদিনায় কিংবা

কাবা পাথরে আমি শুধু তাকেই দেখতে পাই|

ভাষা আমার প্রথম সোপান, অনশ্বর ঈশ্বরসম|

রাস্তায় মিটিংয়ে মিছিলে, কিংবা প্রেমিকার প্রথম চুম্বনে

ভীষণরকম ভাবে মিশে আছে সে, উদ্বাস্তু বিহঙ্গ আর দিকভোলা তটিনীর মতো|

গৃহহীন শ্রমিকের দাবী কিংবা দশটা পাঁচটার বিক্ষোভ অনলে,

সস্তার কেবিনে অন্তরঙ্গতায় আমি শুধু তাকে দেখি|

যে আমার কলমে এঁকে দেয় রফিক, জব্বার কিংবা নমিতার মরদেহ|

"বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে" শত বিহঙ্গের কলতান

আমার মরমে ভোরের আজান কিংবা আহিঃ ভৈরবী হয়ে নাড়া দেয়|

সকল চিন্তনকে কাঁপিয়ে, এঁকে দেয় ভাষা শহীদের লাশ|

নিরেট কর্পোরেট সম অন্তরঙ্গ যৌনতার বেড়াজাল

ঘিরে ফেলে আমাকে, ঠিক তখনই বিজ্ঞাপনের পাতায় দেখি

"মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো",

রমনা কিংবা শিলচর, ধানসিঁড়ি কিংবা ইছামতি, সীমানা মুছে এঁকে দেয় এক নতুন মানচিত্র|

যেন নবান্নে সন্ধ্যামালতীর আঘ্রাণ||

 
 

সীমন্তিনী

 

 অনুভূতিহীন পুরুষতার মাঝে, আমি তোমায় দেখেছি|

আমার ঘনঘোর মেঘনিপুণ মনে এঁকেছিলে তোমার সঘন চুম্বন|

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পরশতার আবেশ মুছে যায়নি তখনো,

রাত্রিপাতের স্বপ্নে তোমার অশরীরি আলিঙ্গন||

 

আমার কৈশোরের মূর্ছনায় মূর্ত তুমি,

কতকটা অপ্রেমী দাম্পত্যের মতো|

দেশভাগের যন্ত্রণা মুছে যায় তোমার খোলা চুলে,

ক্ষুব্ধ সায়রে সামিয়ানা আঁকে বিরহী নক্ষত্র যত||

 

সীমন্তিনী, তোমার সুদীর্ঘ্য বেণীপথে রাজপুত্রের সদর্প পলায়ন|

যতবার চিনেছি তোমায় রংতুলির বর্ধিত দামে,

ততবার ফাঁক হয়েছে সমুদ্রের বুক, ফেনিল প্রস্রবণে|

আকাশ কুসুম কল্পনায় ডেকেছি তোমায় বেপরোয়া, বেনামী ডাকনামে||

 

তোমার সীমান্তরেখায় জমা হয়, ব্যর্থ কবির জন্মান্তরের ক্লেদ|

পুরোনো ট্রামের সমান্তরাল শিরাপথে, বন বীথিকার হাতছানি|

তোমার নামে মহাকাব্য পাল্টে যায়|

আমার অজ্ঞানে বেজে গিয়েছো তুমি, চোরাগলির নীরব অশ্রুখানি||

 

 

শাশ্বত বোস

ডাক্তার বাগান লেন

পোস্টমল্লিকপাড়া

শ্রীরামপুর,হুগলী 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন