Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারী দিবসের তাৎপর্য ।। পাভেল আমান

 

 বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারী দিবসের তাৎপর্য

পাভেল আমান

"বিশ্বে কিছু মহান সৃষ্টি চির যা কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের রচনায় নারীর বীরত্বগাঁথায় কোন বাহুল্য নেই। নারীর ভূমিকা সভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাসে সমন্তরাল। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ই মার্চ তারিখে পালিত হয়। আবিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসাবে এই দিবস উদযাপন করে থাকে। ভৌগোলিক দিক থেকে পৃথিবীর এক এক প্রান্তে নারী দিবস পালনের প্রধান লক্ষ্য এক এক রকম। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ,শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয় , আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। এক কথায় খোলসা করে বলতে গেলে নারী জাতির ক্ষমতায়ন। নারী দিবস হচ্ছে সেই দিন যেদিন জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেওয়ার দিন।
        ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় উৎপাদনকে কেন্দ্র করে সমাজ বিবর্তনের পরিক্রমায় আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে শ্রেণীবিভক্ত সমাজে প্রাদুর্ভাবে নারীরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বেড়াজালে আটকে পড়েন।ক্রমশ পিতৃতান্ত্রিক থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে দেওয়া মতবাদ ও গ্লানি তাদের অন্দরমহলে বন্দি করে ফেলে।অন্দরমহলের অসূর্যস্পর্শারা সমাজ পতিদের নিকট সবচেয়ে সতী-সাধ্বী গর্বের পাত্রী হিসেবে বিবেচ্য হতে থাকেন।দীর্ঘ যুগের গ্লানিময় নারীরাও এই মানসিকতার শিকার হয়ে পড়েন।ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েও তারা পুরুষের পাশে থেকেই সমাজকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার নিরলস সংগ্রামটুকু করতে পারেন। নারীর প্রতি মর্যাদা শ্রদ্ধা ও সম্মানের দৃষ্টি নিয়ে"বিশ্বে কিছু মহান সৃষ্টি চির যা কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর"। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের রচনায় নারীর বীরত্বগাঁথায় কোন বাহুল্য নেই। নারীর ভূমিকা সভ্যতার অগ্রযাত্রার ইতিহাসে সমন্তরাল। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ ই মার্চ তারিখে পালিত হয। আবিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ হিসাবে এই দিবস উদযাপন করে থাকে। ভৌগোলিক দিক থেকে পৃথিবীর এক এক প্রান্তে নারী দিবস পালনের প্রধান লক্ষ্য এক এক রকম। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ,শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয় ,আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। এক কথায় খোলসা করে বলতে গেলে নারী জাতির ক্ষমতায়ন। নারী দিবস হচ্ছে সেই দিন যেদিন জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত ,সাংস্কৃতিক ,অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেওয়ার দিন।ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় উৎপাদনকে কেন্দ্র করে সমাজ বিবর্তনের পরিক্রমায় আদিম মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থেকে শ্রেণীবিভক্ত সমাজে প্রাদুর্ভাবে নারীরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বেড়াজালে আটকে পড়েন।ক্রমশ পিতৃতান্ত্রিক থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে দেওয়া মতবাদ ও গ্লানি তাদের অন্দরমহলে বন্দি করে ফেলে।অন্দরমহলের অসূর্যস্পর্শারা সমাজ পতিদের নিকট সবচেয়ে সতী-সাধ্বী গর্বের পাত্রী হিসেবে বিবেচ্য হতে থাকেন।দীর্ঘ যুগের গ্লানিময় নারীরাও এই মানসিকতার শিকার হয়ে পড়েন।ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়েও তারা পুরুষের পাশে থে তাদের আর্থিক সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যে অধিকার সে কথাটা আজ সেভাবে কোনদিন ভেবেও দেখেনি।এই দিবসটি পালনের পাদপ্রদীপের রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। ১৮৫৭ সালে মজুরি বৈষম্য, কর্মঘন্টা নির্দিষ্ট করা, কর্মক্ষেত্রে অমানবিক পরিবেশ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাজপথে নেমেছিলেন গার্মেন্টস কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সংঘবদ্ধ হয়ে ,সুশৃংখলভাবে নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে মিছিল শুরু করে। সেই মিছিলে চলে সরকারি লেঠেল বাহিনী প্রচন্ড দমন-পীড়ন। ১৯০৮ সালে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে, জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন এর নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ, জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের অন্যতম। তদুপরি ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দেন। এই সম্মেলনে ক্লারা প্রতিবছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়১৯১১ সাল থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস রূপে দিনটি পালিত হবে। দিনটি যথাযথভাবে পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪সাল থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। তারপর ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দিবসটি পালনে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রসংঘ। এরপর থেকেই গোটা পৃথিবী ব্যাপীই পালিত হচ্ছে দিনটি সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে।উন্নত বিশ্বের দেশগুলো নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জোর দাবি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের গুরুত্বকে অনুধাবন করে বিগত ১০০বছরে নারীর অধিকার ও মর্যাদা কে অভাবনীয় স্বীকৃতি দিয়েছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, রাজনীতি ,অর্থনীতি সাহিত্য দর্শন ,গবেষণা ,কূটনীতি ,ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাষ্ট্রপরিচালনার সহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারী পুরুষের সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারায় ,তারা তাদের সমাজের প্রগতির ধারাকে অনেকটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পেরেছে এবং ধীরে ধীরে কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে।বিশ্বের অনেক দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।তন্মধ্যে রয়েছে আফগানিস্থান ,আর্মেনিয়া ,আজারবাইজান, বেলারুশ কম্বোডিয়া ,কিউবা ,কাজাকিস্তান ,রাশিয়া, তাজিকিস্তান ভিয়েতনাম, ইউক্রেন প্রভৃতি। এছাড়া চীন, ম্যাসিডোনিয়া মাদাগাস্কার , নেপালে শুধুমাত্র নারীরাই ছুটি পেয়ে থাকেন।
        একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীজুড়ে নারীদের অবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করা গেলেও সার্বিক বিচারের নিরিখে তা সন্তোষজনক নয়। এখনো তারা প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ,নিপীড়িত ,অবহেলিত ও শোষিত।যুগপুরুষ' স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলেছেন" জগতের মঙ্গল কখনোই হবে না ,যদি নারীদের অবস্থার উন্নতি না হয় ।মেয়েদের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন ব্যতীত মানবজাতির উত্কর্ষ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।"বিশ্বজুড়ে উন্নয়ন কর্ম যজ্ঞে নারীদের অসামান্য অবদান রয়েছে।কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বব্যবস্থা নারীদের অবদানের  প্রকৃত মূল্যায়ন করেনা।বিশেষত উন্নয়নশীল দুনিয়ায় সার্বিকভাবে মেয়েদের অবস্থা সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ফরাসি ব্যক্তিত্ব Simone de Beauvoir র সেই বিখ্যাত উক্তি "Women are not born but make". খুব প্রাসঙ্গিক মনে হয়।মানব ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে উন্নত বিশ্বে ও সমতা, মর্যাদা নানাবিধ বৈষম্য ,শোষণের হাত থেকে মুক্তি পেতে লড়াই করতে হয়েছে।সাম্প্রতিক তথ্য ও পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেও এখনো মেয়েদের উপার্জন পুরুষদের তুলনায় কম।পুরুষদের তুলনায় নারীদের দারিদ্রতা বেশি ।সে দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, প্রশাসনিক ,কূটনীতিতে মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব বেশ কম।
        ভারত এবং উন্নয়নশীল দেশের মেয়েদের অবস্থা ও যেন একটি মুদ্রার দুটি দিক-এক পিঠে রয়েছে আশা জাগানোর মতো ছবি, অন্যদিকে রয়েছে সেইসব বাস্তবতার ছবি যা আমাদের দুশ্চিন্তা জন্ম দেয়। আরব দুনিয়া এবং আফ্রিকার বিস্তৃত অঞ্চলে মেয়েরা এখনো বৈষম্যের  শিকার। অর্থনৈতিক পরাধীনতা তথা পুরুষ নির্ভরতাকে এরা তাদের জীবনের স্বাভাবিক ধারা বলে মেনে নিয়েছে। কারণ তাদের অধিকাংশই মেয়েদের স্বনির্ভরতা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। সমাজতাত্ত্বিক দের অভিমত লিঙ্গ বৈষম্য পৃথিবীজুড়ে এক অনভিপ্রেত বাস্তবতা। পাশ্চাত্যে ভোটাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিকারের জন্য অনেক লড়াই করতে হয়েছে। এদের আরো অভিমত মানব সভ্যতা গড়ে ওঠার সূচনা লগ্ন থেকেই সমাজের রাস থেকে গেছে পুরুষদের হাতে। ভারতের সংবিধানে মেয়েদের জন্য সমতার মর্যাদার কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৮%এর বেশি মেয়েরা।বিগত দশক গুলিতে এদেশের মেয়েদের সাক্ষরতার হার বেড়েছে, বেড়েছে শিক্ষা সচেতনতা ।পেশাদারী জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েরা তাদের কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে এবং দিচ্ছে। রাজনৈতিক ,সামাজিক এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও তথা নানা কর্মকান্ডে মেয়েদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বেড়েছে। স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থাগুলিতে মেয়েদের জন্য সংরক্ষণ তাদের ক্ষমতায়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এত কিছু সত্ত্বেও মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার পথে নানান বাধা-বিপত্তি রয়েছে।কারণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশে-বিদেশে প্রতিটি সমাজেই পুরুষেরা নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য নানা অজুহাতে নারীদের চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট। সবচেয়ে বড় দুঃখের কথা নারীদের নিজেদের মহল থেকে আসা বিরোধিতা। যা নারীদের নিজেদের অতিক্রম করতে হবে।
        আধুনিক সমাজের সর্বস্তরেও আজ নারীরা অবমাননার শিকার। মানবতাবোধ কোথায় যেন বিলীন হয়েছে গোটা সমাজ ব্যবস্থাটারই। তাই মেয়েরাই আজ সর্বাপেক্ষা অবজ্ঞার পাত্র। নারীর শরীর আজ পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে- সিনেমা, টিভির পর্দায় চোখ রাখলেই প্রতিনিয়ত উপলব্ধ হয়।পণ্য থেকে প্রসাধনী, পানশালা থেকে পাথর খাদান- সর্বত্রই নারীদের যান্ত্রিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতা প্রতিদিন যেভাবে বাড়ছে তা ভেবে শঙ্কিত ও শিহরিত হতে হচ্ছে।নারী ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা প্রত্যহই যেভাবে ঘটে চলেছে সমাজে ,তাতে বোঝা যায় পুরুষের কাছে নারীর মূল্যায়ন ও গুরুত্ব কোথায় সীমাবদ্ধ।শিশু থেকে সন্ন্যাসিনী আট থেকে আশি -সকলেই যেখানে নারী দেহ রূপে ভাবিত ও চিহ্নিত হচ্ছে তখন আশঙ্কার মাত্রা অনেকগুণ বেড়ে যায় বইকি।ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারীবাদী আন্দোলনকারী নারীদের প্রতি অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গঠনের চেষ্টা করে চলেছে অবিরাম।স্বাধীন দেশ তাদের উত্তরাধিকার হিসেবে দিয়েছিল নতুন সংবিধানে, সাম্যের অধিকার। সম্প্রতি গত কয়েক মাস ধরে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বিরোধিতা করে আন্দোলন চলছে দেশের বহু অংশে। দিল্লির শাহবাগের জমায়েত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যার নেতৃত্বে একদল সাহসী নারী। রাষ্ট্রের সংবিধান বহির্ভূত আইনের প্রতি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে তারা সামিল। এত দিন যখন এই শাহবাগের আন্দোলনকে প্রতিহত করা যায়নি তখন আর বল প্রয়োগ করে বা কূটনীতির মাধ্যমে এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না।অদ্ভুত এক আঁধার যখন ঢেকে ফেলছে ভারতবর্ষের আকাশ, তখন ছোট্ট একটি জোনাকির মতো জ্বলছে শাহীনবাগ। এই জোনাকির দেহ থেকে নির্গত আলোটুকু নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সার্চলাইটের মতো শক্তিধর নয়। কিন্তু এই এক বিন্দু আলো, অন্ধকারের বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধার প্রতীক দীপ্যমান প্রাণের স্পন্দন। এই আলো টুকু যেন বলছে প্রাণ আছে ,এই পোড়া দেশটার এখনো প্রাণ আছে।সেই অসংখ্য ফুটকি ফুটকি আলোর মধ্যেই জ্বলে উঠছে সংঘটিত নারী জাতির ক্ষমতা।কিন্তু সামাজিক ন্যায়ের জন্য তাদের লড়াই জারি রাখতে হলো প্রতি পদক্ষেপে, সামাজিক পরিস্থিতি কঠিনতর হলো ও অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে।অর্থনীতি এগিয়ে চলে, দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার বাড়ে ,বৈদেশিক বাণিজ্য, শিল্পায়ন বিস্তৃত হয় নতুন শাখা-প্রশাখায়।মেয়েদের হাতে তার ফল পাকা আমলকির মত এসে পড়লনা।সাধারণ জ্ঞানের চটজলদি বই পড়ে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়ে শিখে গেছে নারীর সামাজিক বঞ্চনার পিছনের গাল ভরা নামটি। পিতৃতন্ত্র। পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা। একুশ শতকে যখন ইসরোর চন্দ্রযান এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহিলা বিজ্ঞানীরা, ভাসুর ঠাকুর পিতৃতন্ত্রের মহিমায়,ভারত বর্ষ তখনও পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কিশোরী বধূর দেশ।আইন কাজে পরিণত না হওয়ার পিছনে মূল কারণ গুলি বহাল তবিয়তে রয়েছে। সমস্ত কারণ বিশ্লেষণ করে বলা যায় মেয়েরা আজ থমকে দাঁড়িয়ে নেই। গত ৩-৪ বছরে মেয়েদের মাথায় উঠেছে বেশকিছু উজ্জ্বল শিরোপা। ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন পদার্থবিদ্যায় কানাডার ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড ,রসায়নে আমেরিকার আর্ণল্ড,  সাহিত্যে পোল্যান্ডের ওলগা তোকারচুক, আর শান্তি পুরস্কারে ইরাকের নাদিয়া মুরাদ।২০১৯এঅর্থনীতিতে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে পুরস্কার পেলেন এস্থার দুফলো।ভারতে বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ যে স্বীকৃতি সেই শান্তি স্বরূপ ভাটনগর পুরস্কারের দিকে যদি তাকাই,২০১৮ সালে পদার্থবিদ্যায় এই শিরোপা পেয়েছেন অদিতি সেন দে, ২০১৯এ গণিতে নীনা গুপ্ত।পরিসংখ্যান বা তালিকা দিয়ে সত্যি কিছু প্রমাণ বা অপ্রমান হয়তো হয় না ,কিন্তু এটুকু তো বোঝা যায়, যে বিভিন্ন বিষয়ে মেয়েরা সত্যিই এগিয়ে এসেছে অনেকখানি। মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অনেক রাজনৈতিক ,দার্শনিক মতামত ,ফর্মুলা অনেকের ঝোলাতেই আছে, রাজনৈতিক দলগুলির নানারকম প্রস্তাব আছে ,সরকারের প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু মনে হয় তার চেয়েও বড় কিছু বোধ জীবনের পাঠশালার শিক্ষা থেকে আজ মেয়েদের মধ্যে কাজ করছে। সেই বোধ খেলার মাঠ, বিজ্ঞানীর পরীক্ষাগার ,কর্মক্ষেত্রের পুরনো প্রাচীর ভেঙে ফেলছে।সেখানেই এতদিনের নারী আন্দোলনের জয়ের ফসল ও আস্বাদ পাচ্ছি আমরা। আমাদের আরেকটু প্রয়োজন নিরপেক্ষ সংবাদ সচেতনতা। কেবল চলচ্চিত্র আর বিনোদন জগতের নারীদের চকচকে সাফল্যকে তুলে না ধরে অন্য জগতের সফল নারীদের কোথাও সমানভাবে যেন আমরা জনসম্মুখে প্রকাশ ও উদযাপন করি।
        কোন একটি বিশেষ দিনকে সমগ্র নারী জাতির উদ্দেশ্যে নিবেদন করে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে নানারকম আলাপ-আলোচনা ও কর্মসূচির দ্বারা পালন না করে বছরের প্রতিটি দিনই যদি নারীর মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত হতে না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করা যায় তবে প্রকৃতার্থে সেটাই হবে নারী দিবসের প্রকৃত সার্থকতা ও প্রাসঙ্গিকতা। সেই সহজ-সরল বহুচর্চিত শপথকি আমরা অর্থাৎ আপামর আমজনতা নিতে পারিনা ? এই সোজাসাপ্টা প্রশ্নটা অবলীলায় তুলে দিলাম নারী-পুরুষ সকল সমাজের সমীপে? পরিশেষে আবারও অকপটে ব্যক্ত করি আসুন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে বসবাসের উপযোগী একটি নারীবান্ধব ,সুস্থ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নারী দিবসের চোখে বিশ্বকে দেখি। পৃথিবীর প্রতিটি বিবেকবান মানুষের হৃদয়- মনে সাড়া ও নাড়া দিক নারীর ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সতত মর্মবাণী।

 ========================================

পাভেল আমান, শিক্ষক, হরিহরপাড়া, মুর্শিদাবাদ।

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩