google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। প্রাণের ঝর্ণা ।। দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৭ মার্চ, ২০২৩

অণুগল্প ।। প্রাণের ঝর্ণা ।। দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

  

প্রাণের ঝর্ণা

 দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়



হঠাৎ ছুটির আবহে ছোটা পুরুলিয়ায়। এবার দোল প্রকৃতি সনে।হাসি হাসি পলাশ কুসুমকে বন্ধু করতে রঙের আঙ্গিনায়। অযোধ্যা পাহাড়ের বুকে পলাশ দাঁড়িয়ে লাল স্বাগত জানাল আমাদের।কচি পাতায় মোড়া কুসুম বিচিত্র সুষমার আলিঙ্গনে তখন।ঘোরলাগা চোখ মুখ সকলের প্রকৃতির আপ্যায়নে। স্ত্রী মেয়ের মুখ চোখ বলে দিল, পয়সা উসুল !
     বাঘমুন্ডি ব্লকের 'বামনী ফলস' এক বিমুগ্ধ বিস্ময়। প্রকৃতি যেন আপন হাতে সৃষ্টি করেছে এই ঝর্ণা। উঁচু থেকে জলের ধারা দস্যি দামাল ছেলের মতো যেন মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। চোখের তারায় সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যেন।একদম নীচে পৌঁছে ঝর্ণার ছোঁয়া পেতে গেলে পাঁচশোর বেশি সিঁড়ি নামতে হবে। স্ত্রী মেয়ে কিছুটা নেমে এক বড়ো পাথরের ওপর বসে পড়লো। ঝর্ণার জলের গুঁড়ো আবীরের মতো ওদের সারা শরীরে। তৃপ্ত প্রফুল্ল ওরা ওখানেই ঝর্ণার সাথে বন্ধুতায় মগ্ন হয়ে পড়ল। আমি চললাম নীচে, আরো নীচে।
       বামনী ফলস নামটা শুনেই বুকের মধ্যে ডানা ঝাপটানোর শুরু।বাবা মারা যাবার পর মায়ের লড়াই তখন চোখের সামনে। নিজেদের দুমুঠো ভাতের জোগাড় করতে হিমসিম অবস্থা। তবুও সকলের ভালো মন্দের খবর রাখতো মা। সামর্থ্য থাকলে সাহায্যও করতো সকলকে নিজের সামর্থ্য মতো। মা যেন  সকলের কাছে  অচিরেই হয়ে উঠলো 'বামুন মা'! পরে উচ্চারণ বিভ্রাটে তা বদলে হয়ে গেল' বামনী'! আদর করে মায়ের গাল টিপে আমিও মজা করে ডেকে উঠতাম ঐ নামে।' বামনী ফলস' নামটা শুনেই তাই বুকের পাঁজরে ধাক্কা। মনে হল মা বোধহয় নীচে দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য। দেখা করবো না ! সদ্য ষ্টেন বসা বুকের মধ্যে একটা মোচড় আমার আকাশের তারা হয়ে যাওয়া মার জন্য। স্ত্রী মেয়ের নিষেধকে তখন স্ট্রেট ব্যাটে বাউন্ডারির বাইরে করে নিচের সিঁড়িতে পা ।
      বাইকের ধাক্কায় হাঁটুর পুরনো চোটটা মাথা চাড়া দিচ্ছে মাঝে মাঝে। তবুও নেমে চলেছি এলোমেলো সিঁড়ি বেয়ে টলোমলো পায়ে।মা যেন টানছে আমায়। রোদের তেজ পুড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশ।তার ওপর পাথরের গরম। নীচে থেকে কয়েকটি ছেলে লাফাতে লাফাতে ওপরে উঠে আসছে। সারা গা ভেজা। বুঝলাম ঝর্ণা গায়ে মেখে আনন্দ আস্বাদন ওদের। হঠাৎ ওদের পাশ দিতে গিয়ে ছোট্ট সিঁড়িতে পা গেল হড়কে। দু'হাত বাড়িয়ে কিছু ধরার চেষ্টা বৃথা। বুঝলাম ছিটকে পড়ছি নীচে, অনেক নীচে পাথরের ওপর। চোখের সামনে সব কিছু কালো হয়ে এলো। নিকষ কালো অন্ধকার! মনে হল কে যেন আমায় দুহাতে জড়িয়ে ধরলো তার বুকে। হারিয়ে যাওয়া তার গায়ের গন্ধ পেলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই।
   চোখ খুলে তাকাতেই দেখলাম সব উৎসুক মুখ আমার ওপর ঝুঁকে। ভিড়ের মধ্যে স্ত্রী ও মেয়েকে ও দেখলাম। ওদের চোখ দিয়ে যেন ঝর্ণার সব জল ঝরে পড়ছে। উঠে বসার চেষ্টা করলাম।উৎসাহী কয়েকজন মুখে চোখে জল দিল।একটু তাজা হলাম যেন। সকলেই আশ্চর্য ! ওদের মুখে শুনলাম ওপর থেকে নীচের আমগাছটার ওপর প্রথমে পড়ি। সেখান থেকে গড়িয়ে গাছের গোড়ায়।তাই একেবারে থেঁতলে যায় নি শরীর। কোমড়ে একটু ব্যথা।বড়ো কোন বিপদ হয়নি দেখে স্ত্রী ও মেয়ের মুখে হাসি। মেয়ে ঝাঁপিয়ে বুকের ওপর। উঠে বসে ঝর্ণার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। যেন মা বসে আছে ঝর্ণার জলভেজা পাথরটার ওপর। মুচকি হেসে যেন বলছে, হ্যাঁ স্পষ্ট শুনতে পেলাম যেন বলছে, "ভয় কিরে বাবু ! আমি তো আছি !"

                    *************"
 
 দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
 চড়কডাঙ্গা রোড, কাঁঠাল বাগান, উত্তরপাড়া, হুগলি,
 পিন : ৭১২২৫৮, পশ্চিমবঙ্গ


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন