Featured Post
নারীবাদী কবি নিকিতা গিলের কবিতার অনুবাদ ও তাঁর বার্তা ।। রণেশ রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
নারীবাদী কবি নিকিতা গিলের কবিতার অনুবাদ ও তাঁর বার্তা
রণেশ রায়
উপস্থাপন
কবি নিকিতা গিলের জন্ম ২০ জুন ১৯৮৭ ইংল্যান্ডে বেলফাস্ট শহরে। তিনি বংশ পরিচয়ে ভারতীয়। এখন প্রবাসী। খুব ছোট থেকেই তিনি কবিতা লেখেন। নারীবাদী আন্দোলনকারী হিসাবে আজ একজন পরিণত বহু পরিচিত লেখিকা। তাঁর লেখার প্রতিটি ছত্রে তিনি বিদ্রোহিনী। নারীর মধ্যেকার অফুরন্ত এক সুপ্ত শক্তিতে বিশ্বাসী। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর ঘৃণা। এই ঘৃণা ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নয়। প্রগতির পথে প্রতিবন্ধক একটা প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহ। তিনি মানবতাবাদী। তাই মানব কল্যানে নারী শক্তির ব্যবহার তাঁর কাঙ্খিত। তাঁর কবিতা পড়লে এই উপমহাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিনের কথা মনে পড়ে। দুজনে সমকালীন লেখিকা যদিও বয়সে তসলিমা কিছুটা বড়। দুজনেই নারী স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন। তাঁদের লেখার প্রতিটি ছত্রে বিদ্রোহের ঝংকার, আগুনের স্ফুলিং। গিলের লেখায় অনেক উপমার ব্যবহার হয়েছে। তবে সবই খুব সহজবোধ্য নিদৃষ্ট অর্থবাহক। তাই দুরুহের জালে আবদ্ধ নয়। সোজাসুজি স্পষ্ট করে স্পষ্ট ভাবে বলা। অর্থবাহক সে বার্তা। কাব্যগুনে ভরপুর কবিতাগুলো। তাই সহজে তাকে আমজনতার মধ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।
এছাড়া তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে এই মহাবিশ্ব। সৌরজগৎ আর তার বিকাশের ধারা। পৃথিবী আর তার মানুষ আর মনুষ্য সমাজ। মানুষের জন্ম মৃত্যুর রহস্য প্রকৃতির ক্ষয় লয়ের নিয়মকে কিভাবে অনুসরণ করে তা তুলে ধরা হয়েছে সৃজনশীল কবিতার মাধ্যমে। প্রকৃতির জগতে পুরুষ নারীর দ্বন্দ্ব মানুষের জগতের মতই সত্য। এই মহাজগতের সৃষ্টি ক্ষয় লয়ের নিয়মকে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন কবিতার মাধ্যমে যা তাঁর কলমের আঁচড়ে কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে।
ইংরেজিতে নিকিতা গিলের লেখা কবিতা বাংলায় অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের অঙ্গীভূত করতে পারলে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই আমার এই প্রচেষ্টা। আমি লেখালেখি করলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে সাহিত্যের লোক নই। সাহিত্যের ব্যাকরণ আমার জানা নেই। যেভাবে ভাবি সেভাবে লিখি। তাই আনুষ্ঠানিক সাহিত্যের চোখে লেখায় অনেক ফাঁক থেকে যেতে পারে। তাও এই লেখা যদি পাঠক মনে স্থান পায় তবে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।
সব নয় বেশ কিছু কবিতার অনুবাদ করেছি। কবিকে কবিতার বার্তার মাধ্যমে বাঙালী পাঠক সমাজে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিছু অনুবাদ কবিতা বেছে নিয়ে প্রতিটির নীচে টিকা যোগ করেছি। চেষ্টা করেছি যেভাবে আমি বুঝেছি সেভাবে সংক্ষেপে কবিতার মর্মার্থ তুলে ধরতে আর কবির বার্তা পৌঁছে দিতে। সহজভাবে জনতার কাছে যেন সে বার্তা পৌঁছয় তার চেষ্টা করেছি। কতটা সাফল্য পাব এ কাজে তা পাঠক পাঠিকারাই বিচার করবেন।
আমার লেখায় নিকিতা গিল প্রধানত একজন নারীবাদী ব্যক্তিত্ব। নারী অধিকারে সোচ্চার। নারী অধিকার নারীর স্বাধীন সত্তা সেই সত্তায় লুকিয়ে থাকা শক্তি নিয়ে তিনি অসংখ্য কবিতা লিখেছেন পশ্চিমি জগতে যা আজ জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর জেহাদ কবিতায়। নারীকে তিনি জ্বলন্ত সূর্য কণা বলে চিহ্নিত করেছেন। নারীর হৃদয়ে ঘুমিয়ে থাকে এক দানবী যা নারী শক্তির প্রতীক। সে দানবী জাগলে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটবে বলে তিনি মনে করেন। আর পুরুষতন্ত্র তাকে ভয় করে। তাঁর মতে নারী শক্তির উত্থানের উপর নারী সমাজের ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। নারীকে নিজের শক্তিতে জয় করে নিতে হয় নিজের ভাগ্য । কোন অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করে নয় নারী সমাজকে দাঁড়াতে হয় নিজের শক্তির ওপর নিজের পায়ে। Fierce Fairy Tales, Your Soul is a River, Wild Embers, Great is the Goddesses, Heart is a Sea, Where Hopes Come From হল তাঁর লিখিত বিখ্যাত কাব্যগ্রন্ত্র। এই বইগুলোতে ইংরেজিতে লেখা বিভিন্ন কবিতাগুলোর মধ্যে কিছু কবিতার বাংলায় অনুবাদ করে কবিতাগুলোর মর্মার্থ তুলে ধরা আমার উদ্দেশ্য।এর একটা আদর্শগত দিক আছে। আজ পৃথিবীজুড়ে সব দেশেই পুরুষতন্ত্রের রাজত্ব। নারীর অধিকার সংকুচিত। তার ওপর আর্থ সামাজিক এমন কি দৈহিক নির্যাতন আজ দুনিয়া জুড়ে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। অথচ সব দিক থেকে নারী হলো অর্ধেক আকাশ। এই শোষণ ভিত্তিক সমাজে গরিব মানুষেরা নিপীড়িত শোষিত। নারীরা এই ব্যবস্থার শিকার দুভাবে: নারী বলে ধনী গরীব সব নারীরা আর গরীব ঘরের নারীরা একই সঙ্গে গরীব বলে। আমরা যারা শোষণ মুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখি তারা মনে করি নারী সমাজের মুক্তি না ঘটলে সমাজের আর্থসামাজিক ব্যবস্হা না বদলালে নিপীড়িত মানুষের মুক্তি নেই আবার নিপীড়িত মানুষের মুক্তি না ঘটলে নারী সমাজের মুক্তি নেই। তাই নারীর অধিকারের লড়াই সমাজ বদলের লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত। নারীবাদী আন্দোলন তাই শ্রেণী সংগ্রাম সমাজবদলের লড়াইকে বাদ দিয়ে নয়।এর সঙ্গে যুক্ত। তাই নারীবাদী আন্দোলনকে অস্বীকার করা যায় না। নারীবাদী আন্দোলনের মধ্যে খুঁজে পেতে হয় সমাজবদলের লড়াইয়ের উপাদান। কারণ এটাও শেষ বিচারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
আমার এই ক্ষুদ্র চেষ্টার লক্ষ্য নিকিতা গিলের কবিতার উদ্দেশ্য নারীবাদী আন্দোলন ও তাকে কেন্দ্র করে কবিতায় তাঁর চিন্তা ভাবনাকে তুলে ধরা। এই প্রক্রিয়ায় কবিকে বাংলা সাহিত্যের আঙিনায় নিয়ে আসা। আমাদের সমাজে নারীদের অবস্থান তুলে ধরা। তাদের নিজ শক্তিতে জেগে ওঠাকে মদত করা। ভারতের মত পিছিয়ে পড়া দেশে নারী অধিকার বিষয়টা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মের নামে তথাকথিত ন্যায় নীতিকে সামনে রেখে সামাজিক আচার আচরণকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে পুরুষতন্ত্র অবাধে রাজত্ব করে যেতে পারে। নারী জাগরণে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিকিতা গিলের কবিতাগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাংলায় তা পরিবেশন করা নারী আন্দোলনের স্বার্থে বিশেষ জরুরি। নিকিতা গিলের কয়েকটি কবিতা ধরে নারীসত্তার বিভিন্ন দিকগুলো উন্মোচন করা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা নীচে কয়েকটা কবিতা ধরে বিষয়টা সহজভাবে তুলে ধরব যাতে কবির কবিসত্তা পরিস্ফুট হয়।
১
An Ocean Called Healing কবিতা অবলম্বনে
সে এক সমুদ্র যার নাম নিরাময়
নিজেকে সারিয়ে তুলতে
ডুব দাও সে সমুদ্র অতলে
যে সমুদ্র আগে তুমি দেখনি,
দেখবে সে আটকে গেছে
নোঙর করা জাহাজে,
গোপনে রাখা নরম সে
আটকে আছে তোমারই হৃদয় সাগরে।
সে গভীর অতলে
সমুদ্র মন্থন তোমার
মন্থন তোমার নিজেরই অন্তর আঁধারে ;
তুমিই ডুবিয়ে রেখেছ সেখানে
তোমার আতংকের স্মৃতিকে
সে স্মৃতিকে ভুলে থাকতে।
তারা চেষ্টা করবে তোমাকে ডুবিয়ে দিতে
হাঙ্গরের দাঁতে তোমাকে টুকরো টুকরো করতে,
রক্ত ঝরে, তুমি ক্ষতবিক্ষত তাদের আঘাতে ;
যদি সেখান থেকে রক্ষা পেতে পার
তুমি ফিরে যাবে সে স্থানে
যেখানে তোমার ক্রোধ রক্ষিত আছে,
নোঙর করেছে সে সমুদ্র গহ্বরে
তুমি ধ্বংস হও না তার রোষে।
যখন তুমি নিজেকে নোঙর মুক্ত কর
সে তোমার আলিঙ্গন মুক্ত,
বিদায় জানাও তাকে,
তুমি পৌঁছোও এসে
সমুদ্রের নিরাপদ সৈকতে
শেষ পর্যন্ত ফিরে যাও
হৃদয়ের প্রশান্ত গৃহে,
প্রজ্জ্বলিত সে আলোক বর্তিকা
তোমার হৃদয়প্রদীপ আলোতে,
তোমার হৃদয় গর্ভ গৃহে
নিরাপদ তুমি তোমার অন্তরে,
তোমার সেরে ওঠা ক্ষতে
প্রজ্জ্বলিত তুমি তোমাতে।
ওপরের কবিতায় দেখানো হয় সমাজে নারীরা অসহায় অবস্থায় থাকে। নিজেকে গোপন করে রাখে। তার অভাব অভিযোগ তার ওপর নির্যাতন সবই সে হৃদয় অন্তরে চেপে রাখে। সেখানে সে ক্ষত বিক্ষত। পুরুষতন্ত্র যেন হাঙরের মত হিংস্র যে নারী হৃদয় ক্ষত বিক্ষত করে। নারীর ক্ষোভ বিক্ষোভ তার থেকে উদ্ভব হওয়া ক্রোধকে পুরুষতন্ত্র আটকে রাখে তার নিজের ভেতর যেন নোঙর করা দিশাহারা জাহাজের সঙ্গে । এর থেকে মুক্ত হতে নারীকে নোঙর মুক্ত হতে হয়। নারীর হৃদয় যেন অতল সমুদ্র যাকে সে চেনে না। হৃদয় সমুদ্রে কি মুক্ত আছে সে জানে না।সেটাই নারী শক্তি। কবি চাইছেন সেই অতল সাগরে ডুব দিয়ে তাঁর অবস্থা সে যেন দেখে নেয়, তাকে উন্মোচিত করে, এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে লড়াই করে। তবে নারী ফিরে পাবে শৃঙ্খলমুক্ত প্রশান্ত এক জীবন। বিষয়টাকে খুব সহজে উপমার সাহায্যে তুলে ধরা হয়েছে কবিতায়।
২
নিকিতা গিলের For Her কবিতা অবলম্বনে
তোমারই জন্য
আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থলে
মেয়েটির বাস
প্রতিদিন দিনান্তে
তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই,
যদিও সেই অন্ধকার হৃদমাঝে
আঁধার ডুবিয়ে রাখে তাকে
তাকে শেষ করে দেওয়ার জন্য
দড়িটা তার গলায় ঝোলে
তাও সে বিশ্বাস রাখে
আমার জীবন হয়ে উঠবে মায়াবী সুন্দর।
সে তাও এ জীবন পছন্দ করে
আমি এ জীবন উৎসর্গ করি তাকে
যাতে আমার জীবনে আসে সাফল্য।
যেদিন সত্যি সাফল্য আসে জীবনে
আমার হৃৎপিন্ডে হাত রেখে আমি বলি তাকে
বলি আমি তার কানে কানে
এটা তোমারই জন্য।
জীবনে সাফল্য পাওয়ার জন্য যে মরিয়া সে উপলব্ধি করে তার অন্তঃস্থলে অন্ধকার জগতে আছে এক নারী যে নিজের দুরাবস্থার মধ্যেও তার সাফল্য কামনা করে। আর এই ব্যক্তিটি সেটা উপলব্ধি করে ভাবে যে সে জীবনে সাফল্য পেলে তা এই নারীকেই উৎসর্গ করবে যে সব অনাচার মেনে অসহায় জীবন যাপন করে পরের সেবা করে । এটা অনেকটাই আমাদের ঘরের মা বোনেরা তাদের স্বামী সন্তান ভাইদের জন্য করে থাকে।
৩
নিকিতা গিল Why I am Magic অবলম্বনে
কেন আমি জাদু
কোন কোন দিন তৃষ্ণার্ত আমি
তৃষ্ণায় শুকিয়ে মরি
জল খুঁজে ফিরি,
আবার কোন দিন আমি সরোবর,
জলে ডুবে থাকি
তৃষ্ণা থাকে না আমার,
কিন্তু সেদিনই আমি পূর্ণ হয়ে উঠি,
আমি সম্পুর্ন, নিজেকে ভালোবাসি,
যেদিন আমি উভয়ই।
পুরুষ প্রধান সমাজে নারীর জীবনে তৃষ্ণা থাকলে জল থাকে না আর জল থাকলে তৃষ্ণা থাকে না। সে এক অসম্পূর্ণ জীবন। পূর্ণতা সেদিনই আসে জীবনে যেদিন দুটোই তার জীবনে সে পেতে পারে ।
৪
Black Hole অবলম্বনে
কৃষ্ণ গহ্বর
এই মহাকাশে মহা বিশ্ব মাঝে
চরম শক্তিধর সে কৃষ্ণগহ্বর
তার শক্তির টানে কেউ রেহাই পায় না
যেই হোক সে যত শক্তিধর।
কিন্তু এই মর্ত মাঝে মানব সমাজে
এক কৃষ্ণগহ্বরের বাস
সে তাকেই ভালোবাসে
যে সব ছিনিয়ে নেয়
নিংরে নেয় তোমাকে আমাকে
তাও নরাধম সে টিকে থাকে।
এই মহাবিশ্বে চরম শক্তিধর হল কৃষ্ণ গহ্বর। তার শক্তির কাছে সবাই নগণ্য সে যতই শক্তি ধরুক না কেন।সবাইকে সে বেঁধে রাখে।কিন্তু এই পৃথিবীতে মানব সমাজ সবচেয়ে নিকৃষ্ট।এখানে এক কৃষ্ণ গহ্বর আছে, সে তাকেই ভালোবাসে যে সব ছিনিয়ে নেয়। পুরুষতন্ত্র হল এই কৃষ্ণ গহ্বর।
৫
নিকিতা গিল Who You Are কবিতা অবলম্বনে
কে তুমি
তুমি এক চমৎকার রমণী
ভালোবাসার পাত্রী।
তাও ওরা বলে,
তুমি ভালোবাসার উপযুক্ত নও
তোমাকে ভালোবাসা যায় না।
আমি বলি, ঠিক এইজন্যই,
ওরা বলে বলেই,
তুমি শক্তিধর তুমি মহীয়সী
তুমিই উপযুক্ত ভালোবাসার পাত্রী
তোমায় ভালোবেসে আমি ধন্যি।
কবির মতে এই ব্যভিচারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সেই রমণীই শক্তিধর মহিয়সী যাকে পুরুষরা মনে করে ভালোবাসা যায় না। কিন্তু ঠিক এই কারণেই কবি তাকে ভালোবাসেন।
৬
নিকিতা গিলের Wolves কবিতার ভাবান্তর
সেই নেকড়েরাই
আমি অনেক ভেবেছি, ভেবে দেখেছি
কেন তোমায় আমি এত পছন্দ করি,
এত গুণমুগ্ধ আমি কেন তোমার
উত্তর খুঁজে পেয়েছি তার,
আমি আজ গুণমুগ্ধ তোমার
এইজন্য নয় যে
এই পৃথিবী তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে
অশেষ নিপীড়িন হয়েছে তোমার ওপর,
ওরা তোমাকে পরাস্ত করেছে
ভেঙে খান খান করেছে তোমাকে,
ধ্বংস করেছে তোমায়,
তোমাকে ওরা নেকড়ের মুখে ছুড়ে ফেলেছে
চেয়েছে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে খেতে।
আজ তুমি আমার প্রাণ কারণ,
তাও তুমি বেঁচে আছ আজ,
বেঁচে আছ মাথা তুলে সম্মানের সঙ্গে
কারও অনুগ্রহ না নিয়ে।
সব নিপীড়ন সব যন্ত্রণা
সব অসম্মানকে পরিণত করেছ
তোমার অস্ত্রভান্ডারে, তোমার প্রত্যয়ে,
তারাই হয়ে উঠেছে তোমার হাতিয়ার।
আর ওই নেকড়েদেরই
সম্মানের পাত্র তুমি আজ,
যাদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল
তোমার পেছনে
আজ তারাই তোমাকে সন্মান করে,
তোমাকে স্মরণ করে
নিজেদের মুক্তির জন্য,
যাদের দাঁড় করানো হয়েছিল
তোমার বিরুদ্ধে তোমার জল্লাদ হিসেবে,
তাদের শ্রদ্ধার পাত্র তুমি আজ।
ওপরের কবিতায় নিপীড়িত দুর্গত নারী যে সন্মান নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে নিজের ক্ষমতায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে সব বাধা বিপত্তির মধ্যেও নিজের তথা নারী মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যায় সেই নারীই কবির কাছে সম্মানিতা, তাকেই কবি ভালোবাসে। শুধু কবি নয় এই ব্যবস্থায় যারা নারী সমাজের বিপত্তির কারণ নারীকে অবদমিত রাখে তারাও শেষ পর্যন্ত নারীর এ আত্মসম্মানবোধ তার লড়াইকে সন্মান করে। এর মধ্যে নিহিত আছে এই সত্য যে কোন পুরুষ এককভাবে নারী সমাজের শত্রু নয়। লড়াইটা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে পুরুষের বিরুদ্ধে নয়। এই ভাবনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে লড়াইয়ে নারী পুরুষের লিঙ্গ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক যা নারী আন্দোলনকে বৃহত্তর আঙিনায় পৌঁছে দেবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন