Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

গল্প ।। অতীত ফিরে আসে ।। স্তুতি সরকার



অতীত ফিরে আসে

স্তুতি সরকার


আজ রূপা নাগ ম্যাডাম এর সাংবাদিক সম্মেলন। রূপা নাগ অতি সুন্দরী সুবেশা তরুণী। সমাজের অতি উচ্চ বর্গে অধিষ্ঠানকরেন। স্বামী মারা যাবার পরে বর্তমানে উনি একাই  স্বামীর বিশাল সাম্রাজ্য আর তাঁর বিসনেস অক্লেশে সামলে চলেছেন। আরবিস্ময়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ক্রমশতা তিনি বাড়িয়েই  চলেছেন।বড়ো বিসনেট ম্যাগনেট হওয়া সত্ত্বেও উনি কিন্তু একা থাকতেবেশী পছন্দ করেন। মিতভাষী মানুষ তিনি।ওনার আর একটা সামাজিক পরিচিতি হলো উনি সুলেখিকা। সেই সুবাদে লেখিকাহিসেবে অনেক গুলো এওয়ার্ডও ওনার ঝুলিতে রয়েছে বর্তমানে।  


    এহেন রূপাদেবী আজ একটা ক্লোজ ডোর ইন্টারভিউ দিতে রাজি হয়েছেন। সেই সূত্রে কিছু আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের সামনেউনি ওনার বেশ কিছু না বলা কথা জানাবেন। সাংবাদিকদের কিছু প্রশ্নের উত্তরও দেবেন তিনি।

একে একে সমস্ত চেয়ার পূর্ণ হয়ে গেলো হলের সকাল দশটা বাজার বেশ কিছুটা আগেই। অস্পষ্ট গুঞ্জনে ঘরটা মুখরিত। চা বিস্কুটপরিবেশন করা হলো। ধীরে ধীরে চারিদিকে ভারী পর্দা ঢাকা এসি হলের আলো সব ডীম হয়ে এলো। এখন ঠিক সকাল দশটা।রূপা নাগের জীবনীর ওপর তৈরী একটা ডকুমেন্টারির  ছোটো ভিডিও ক্লিপ হলের টিভির পর্দায় চালিয়ে দেওয়া হয়েছে সকাল ঠিকদশটায়। রূপাদেবীর অতীত জীবনী সম্বন্ধে মোটামুটি জানকারী দেবার জন্য।হলে নি:শব্দ নিরবতা বিরাজ করছে এখন।সকলেইযার যতটুকু দরকার সেই ভিডিও থেকেই নোট করে নিতে লাগলেন হলের স্বল্প আলোতে। একটা কথা বলার দরকারসম্পূর্ণহাউস ওয়াইফ থেকে বিসনেসের ছত্রছায়ায় তিনি পা রেখেছেন স্বামীর অবর্তমানে। তাঁর সম্বন্ধে অনেক কথাই বাতাসে ভাসে। কিন্তুসঠিক  কিছুই ঠিকমতো কেউই জানেন না তাঁর সম্বন্ধে। তাই মানুষজন এতো আগ্রহীকৌতুহলী ওনার সম্বন্ধে জানবার জন্য।


    মৃদুমন্দ আলোয় মেঠো বাঁশির সুর হাল্কা ভাবে বেজে চলেছে হলে। চঞ্চলা তিন বছরের মিষ্টি বাচ্চা মেয়েটা চকিতে এদিকেওদিকে তাকিয়ে দৌড় দিয়েছে ব্যস্ত মেন বাস রাস্তার মাঝখান দিয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য  হয়ে। হলের সবাই শিহরিতআতঙ্কিত।আজ বাচ্চা মেয়েটির মা মারা গেলেন। মায়ের শবদেহ বহনকারী গাড়ি এইমাত্র যে মেন রাস্তা দিয়ে নিয়ে চলে গেছে শ্মশানেরউদ্দেশ্যেসেই রাস্তায় বাঁধনহারা সেই ছোট্ট  মেয়েটা ছুটে চলেছ খালি পায়ে। প্রচণ্ড গরমে কচি কচি পায়ের পাতায় ফোসকা পড়েযাচ্ছে। তিনবছরের বাচ্চাটা কিছুই বোঝেনা।  ছুটছে মরিয়া হয়ে ওর মার শবদেহবাহী গাড়ীর পিছনে। ওকে কেউ তেমন ভাবেদেখার নেই এখন।বাবা মা আর তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে রূপাএই তিন জনের সংসারে বেড়ে ওঠে রূপা বেলেঘাটার বস্তীর এককামরার ঘরে।রূপতো তিনজনকেই  যেন ভগবান উজাড় করে দিয়েছেন। এতো গরীব ওরাঅথচ  ওদের চেহারায় আর চালচলনে যেন বনেদিয়ানার ছাপ সুস্পষ্ট। বড়োলোকের ছেলে লাল্টু বিয়ে করে বসলো মুসলিম মেয়ে রূপবাণুকে। বাবা মা বহু চেষ্টাকরেও যখন ছেলেকে ঘরে ফেরাতে পারলেন নাতখন আক্ষরিক অর্থেই ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করলেন। লাল্টু যেমন সুন্দর দেখতেদোহারা চেহারালম্বা সুঠাম দেহের অধিকারীমাখনের মতো হলুদে গায়ের রং যেনো  মোমের মতো পিছ্লে যাচ্ছেটিকোলো নাকসপ্নীল বড়ো বড়ো চোখ দুটোআর পেয়েছেন জমিদার  সুলভ চেহারা বংশ পরম্পরায়।সবার নজর কাড়েন এই সুপুরুষটি। 

রূপবাণুও তেমনি অতি সুন্দরী খানদানি বড়োলোক মুসলিম ঘরের মেয়ে। গোলাপী গায়ের রঙে গাল দুটো যেনো লাল আভাযুক্তটোল পড়ে গাল দুটোয়। ঠোঁট দুটো যেনো পাতলা ফিনফিনে গোলাপী রঙের।  


    কাজেই হিন্দু মুসলমান চিরশত্রু দুজনেই দুই বাড়ীথেকে বিতাড়িত হয়ে বিয়ের পর বাধ্য হয়ে বেলেঘাটায় বস্তি অঞ্চলে একবেডরুমের ঘর ভাড়া করে থাকতে আরম্ভ করলো।রূপবাণু কিন্তু বিয়ের সময়ে হিন্দু  ধর্ম গ্রহণ করেছিলো। লাল্টু ওরফে সুভাসশিক্ষিত ছেলে।একটা ছোটোখাটো অফিসে ড্রাফ্টসম্যানের কাজ কোনো রকমে রাতারাতি জুটিয়ে নিলো। অতি কষ্টের সংসারেকিছুদিন পরে ঘর আলো করে ওদের কোলজুড়ে আসলো রূপা। যেনো দেবশিশু আকাশ থেকে ওদের কোলে নেমে এলো। রূপযেনো তার  ফেটে পড়ছে। এতো সুন্দরী ছোট্ট মেয়েটা। যে দেখে একবার কোলে নিতে চায় ওকে। আদর করে।সংসারের আয়বাড়াবার জন্য সুভাস এবার লোনেতে একটা ট্যাক্সি কেনে। দিনের বেলায় ড্রাইভার দিয়ে গাড়ি চালাতো। সারাদিনের চাকরীরপরে যেটুকু অবসর সময় মিলতোসে নিজে স্টিয়ারিং ধরতো তখন।ট্যাক্সির লোন পরিশোধ করে আর নিজের চাকরীর এইযৎসামান্য আয়ে অতি কষ্টে দিন গুজরান করা।  কিন্তু রূপামাকে বেলেঘাটার পাশেই লরেটো কনভেন্ট স্কুলে এই তিন বছরবয়সেই ভর্তি করে দিয়েছেন সুভাস বাবু ইতিমধ্যেই। অথচ বিধিবাম। মেয়েকে ভালো ভাবে মানুষ করতে গিয়ে সংসারে স্বামীস্ত্রীকে  অর্ধাহারে প্রায় কাটাতে হতো। ফলে শীঘ্রই রূপবাণু খুবই অসুস্থ হয়ে  হাসপাতালে ভর্তি হলেন।  জীবিত অবস্থায় আরফিরতে পারলেন না। ঘরে তিন বছরের রূপাকে প্রতিবেশীর কাছে রেখে সুভাস প্রিয়তমা  স্ত্রীকে সদ্গতি করতে নিয়ে গিয়েছিলেনসৎকার সমিতির গাড়ীতে করে কেওড়াতলার মহাশ্মশানে।  

    ইত্যাবসরে কখন প্রতিবেশীর বাঁধন কেটে রূপা রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে ছুটতে থাকে বেলেঘাটার মতো এতো ব্যস্ত রাস্তায়।কোনোক্রমে পাড়ার লোকেরা বাচ্চাটাকে দেখতে পেয়ে ধরে বাড়ীতে নিয়ে এসে ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। সমবেত হলেরলোক নি:শ্বাস ফেলে বাঁচে।


    সেই থেকে রূপার বাবা তার বাবা মা দুইই হয়ে ওঠেন। অনেকেই বলে ছিলেন তাঁকে আবার বিয়ে করতে।কিন্তু তিনি তাওকরেননি। ক্রমে দিন কাটতে লাগলো। সুভাস বাবু দারিদ্র্য এতোটুকুও বুঝতে না দিয়ে  রূপাকে খুব ভালো ভাবে মানুষ করতেলাগলেন। রূপসী রূপা ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোরেকৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করলো। একের পর এক স্কুলের গণ্ডিপেরিয়ে কলেজকলেজের ডিগ্রি   অতিক্রম করে ক্রমে বিসনেস ম্যানেজমেন্ট পাশও করে গেলো। তাদের বাপ আর মেয়েরজগতের মধ্যে কারুর প্রবেশ ঘটেনি ইতিমধ্যে। দু'জনেই দু'জনের মধ্যে বণ্ডিং করে ফেলেছেন এমন ভাবে যে রূপাকে এবারে পরেরহাতে দিতে হবে ভাবলেই সুভাস বাবুর মনটা মোচড় দেয়। মেয়ের যে বেশ বয়স হয়ে যাচ্ছে। কথায় বলে মেয়ে পরের ধন। পরেরহাতে তাকে তো তুলে দিতেই হবে। রূপা  ঠিক করে নিয়েছে এমনি ভাবেই বাপ মেয়েতে দিন কাটিয়ে দেবে। সুভাস বাবুর  তোবয়স হচ্ছে। আজকাল আর শরীরে দেয়না। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর যখন রাত্রে গাড়ী বার করেনতখন চোখ দুটোবুজে আসে ঘুমেক্লান্তিতে। চোখেও আজকাল কম দেখছেন তিনি। রূপাকে কখনও কোনো কিছুই বুঝতে দেননি তিনি। একদিনরাত্রে শেষ ট্রিপটা সেরে গাড়ী গ্যারাজে করাব আগেই সুভাস বাবুর গাড়ী এক্সিডেন্ট করলো। স্টিয়ারিং বুকে গুঁজে গেলো।স্টিয়ারিঙের ওপরে মাথা রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন সুভাস বাবু। পথচারীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃতঘোষণা করেন। রূপার জীবনে নেমে আসে একাকীত্ব যে কি চরম দু:সহ অবস্থাকল্পনাতীত। বাস্তব জগতে একা-  একদমএকা হয়ে গেলো রূপা। কি করবে তা সে জানেনা। বাবা ছাড়া তার জগত তো শূণ্য। (ভিডিওটা এই পর্যন্তই।

                          ।।ইন্টারভ্যাল।।


হলে লাইট জ্বলছে এখন। চা কফির ব্রেক। কফি স্যাণ্ডুইচ্ বা কেক প্যাসট্রিস নিয়ে সবাই খেতে ব্যস্ত।

      এই ইন্টারভ্যুটা বেশ একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে। ইন্টারেস্টিং। রূপা ম্যাডাম তাঁর জীবনের মতো পরতে পরতে ভালোই চমকদিতে পারেন।পনেরো মিনিটের ব্রেক অতিক্রান্ত। আবার হলের লাইট মোহময় রূপ ধারণ করেছে। কিন্তু এখন স্টেজে একটা চেয়ারেপয়েন্টেড আলোর নীচে কখন যেনো এসে বসে গেছেন রূপারূপা নাগ। চারিদিকে মৃদু গুঞ্জন ধ্বনি। ধীরে ধীরে স্টেজের স্পটলাইট জোরালো হয়ে উঠলো 

     রূপা নাগের মাথার উপরে। সাদা ফিনফিনে সিফনের শাড়ি আর লম্বা হাতা সাদা ব্লাউজে ভূষিতাকানে  গলায় আর হাতেহাল্কা হীরার মানান সই গহনায় সুশোভিতা রূপা নাগের রূপের দ্যুতি দেখে চোখ সরেনা  উপস্থিত দর্শকদের। দুহাত যোড় করেরীণরীণে গলায়রূপা বললেন- "নমস্কার।হলে পিণ্ড অফ সাইলেন্স। 

রূপা বললেন," মস্ত বড়ো বিসনেস ম্যাগনেট সুজিত নাগ মহাশয় ইনস্টিটিউট অফ বিসনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের বার্ষিক সভারপুরস্কার বিতরণী উত্সবে এসে আমাকে দেখলেনওনার হাত  থেকে যখন ফাস্ট প্রাইজটা নিচ্ছিলাম তখন। তখন চার চোখেরমিলন  হয়েছিলো সামান্য একটু সময়ের জন্য। শুধুমাত্র ওইটুকুই" তার কএকদিন পরে রূপা ম্যাডামের ঘরে ঘটক হিসাবে একমহিলার আগমন। তখন সবে মাত্র রূপার বাবা মারা গেছেন। মাথার ওপর কোনো গার্জেন নেই। ঘরেতেও তিনি একা। সবদিকবিবেচনা করে বিয়েতে রূপার মত দেওয়া। গরীব বাবা মেয়েকে কোনো কষ্ট  বুঝতে না দিয়ে মিশনারী স্কুলে পড়িয়ে বড়োলোকেরমেয়েদের মতো করে মানুষ করে ছিলেন। আসলে রূপা দেবীর বাবা মা বড়ো ঘরেরই মানুষ ছিলেন জন্মসূত্রে। কাজেই সেইআদবকায়দায় মানুয় করতে তাঁদের কোনো  অসুবিধা হয়নি। শুধু নিজেরাই যা অমানুষিক কষ্ট সহ্য করেছেন একমাত্র মেয়েকেমানুষ করতে গিয়ে।  মাত্র তিন বছর বয়স থেকে মা হারা রূপা বাবার কাছেই মানুষ। 


    বিয়ে হয়ে গেলো। এটিকেট জানা রূপার বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নিতে কোনো অসুবিধাই হয়নি। বিয়েরপরে টাইমপাস হিসাবে গল্প লিখতে আরম্ভ করেন রূপাদেবী। ক্রমে বড় বড় ম্যাগাজিনেবড়ো বড়ো পত্রিকায় তাঁর গল্পগুলোপ্রকাশ হতে লাগলো।এভাবে কিছুটা নামডাক হলো রূপার। ইদানিং বেশ কয়েকটি এওয়ার্ডও মিলেছে লেখিকা হিসেবে তাঁর।ওনার বই থেকে সিনেমাও  হয়েছে কএকটা। 


    এবার কোনো সাংবাদিক জিগ্গেস করলেন রূপার লেখার ইন্সপিরেশানটা কি  উত্তরে রূপা যা বল্লতাতে সবাই স্তম্ভিতরূপাবললেনওনার যা কিছু লেখাসবই নাকি উনি যা স্বপ্ন দেখেন সেটাই গল্প আকারে  লেখেন এবং এটাই সত্যি। আরোও একটাআশ্চর্য কথাযতক্ষণ না গল্পটা লেখা শেষ হয়চরিত্রগুলো জীবন্ত হয়ে গিয়ে ওনার সঙ্গে ওঠা বসা করে। ওনাকে ছেড়ে যায়না।বুদ্ধিমতী তীক্ষধা রূপার প্রতিটি কথাই ওজনদার। তিনি নিশ্চয় বুঝেই বলেছেন কথাগুলোএই কথাগুলো শুনে সকলেইস্পেলবাউণ্ডরূপার লেখার পরিধি বিস্তৃত। সামাজিকঐতিহাসিকরীতিমতো বিভীষিকা পূর্ণ ভৌতিক গল্পরহস্য উপন্যাসপ্রভৃতি সবেতেই তিনি সিদ্ধহস্তা। আগেই বলেছিরূপা ম্যাডামের কিছু বই এর গল্পের সিনেমাও হয়েছে এবং সেই সিনেমাগুলোওএকাধিক সম্মানে ভূষিত। 

    এবার কেউ একজন প্রশ্ন করলেনভৌতিক উপন্যাস লেখার সময়ে তিনি তাহলে ভৌতিক পরিমণ্ডলে  বাস করেন? ..... রূপারসংসংক্ষিপ্ত উত্তরহ্যাঁ।

    আর একজন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জিগেস করলেন এখন কি কোনো উপন্যাস লেখায় হাত দিয়েছেন ম্যাডামরূপা স্বগোক্তি করেবললেন, "ভৌতিক!" 

    কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেনএকটু ডিটেইলে বলা যায় কিনা। রূপা ম্যাডাম বললেননিশ্চয়ই বলবো। তবে তারপরে আরকোনো কথা জমবে না। সেটাই হবে শেষ সেসন। হলের আলো জ্বলে উঠলো।  

এখন লাঞ্চ।রূপাও সমবেত অতিথিদের সঙ্গে লাঞ্চ  করলেন। সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন। রূপার প্রসংশায় সকলেপঞ্চমুখ হয়ে উঠলেন।

    

    লাস্ট সেসনএবার পরিবর্তিত পরিস্থিতি। হলের মধ্যে একটা ঝোড়ো হাওয়ার অস্থিরতা। হলের এসি কন্ কণে ঠাণ্ডা।সকলেরই শীত ধরে যাচ্ছে এমন অবস্থা। গায়ে একটা পাতলা সাদা চাদর জড়িয়ে রূপা  স্টেজে উপবিষ্টা। কোথা থেকে দমকাহাওয়া এসে...  রূপার আঁচলগায়ের সাদা চাদর আর চুলগুলো  সব এলোমেলো করে উড়িয়ে দিচ্ছে। সত্যিই যেনো একটাভৌতিক দমবন্ধ করা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে  এখন। রূপা বলতে আরম্ভ করলো রীণরীণে স্বরে, "আমি এখন কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেকিছু ছবি দ্যাখাবো।আমার বিবাহিত জীবনের কিছু ছবি যা আজ পর্যন্ত কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।সকলে নড়েচড়ে বসলেন।রূপা স্বপ্নাবিষ্ট চোখে সদ্য নবপরিণীতা রূপার আর তার পরিবারের কিছু ছবি দেখালেন। রূপার কি অপরূপ রূপস্বর্গেরঅপ্সরীরাও বোধহয়  হার মেনে যায় এই রূপের কাছে। তারপর বিবাহিত জীবনের নানান পর্যায়ের ছবি যা গল্পটাকে ধীরে ধীরেপরিণতির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। ছবি দেখানোর সমাপ্তি প্রায় ঘটেযখন রূপারা একবার পাহাড়ে বেড়াতে গেলেন,  পরিবারেরসঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে মিস্টার নাগ এক্সিডেন্টালি  পাহাড় থেকে আচম্বিতে গভীর খাদে পড়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেন। এরপরহঠাৎ হল অন্ধকার হয়ে গেলো। চারিদিক নিস্তব্ধ।

রূপা দেবী রীণরীণে গলায় কিছুটা জোরালো আভাসে ঘোষণা করলেনএবার আমাদের মধ্যে উপস্থিত হবেন।যারা দুর্বলচিত্তেরতারা হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারেন। হলের এক্সিট গেটের আলো জ্বলে ওঠে মিনিট দু'য়েকের জন্য। 


    আবার নিকোষ অন্ধকারে ডুবে যায় হলঘর। স্টেজের পিছনের পর্দায় বড়ো করে ভেসে ওঠে বিভৎস কাটাছেঁড়া জোড়াতালিদেওয়া মিষ্টার নাগের মুখ। কি বিভৎসকাটাছেঁড়া মুখের ওপরে পাথরে  চোখের স্থির চাহনি। শুধু মাত্র মুখটা বড়ো করে স্ক্রিনেদেখানো হয়েছে। অনেকেই মাগো বলে দু'হাতে মুখ ঢাকলো। রূপা আবিষ্টের মতো বলে চললেন, "উনিই এখন আমার গল্পলেখার সাবজেক্ট। শয়নে স্বপনে নিশিদিনে আমার সঙ্গে ওঠা বসা ঘোরা ফেরা করছেন" সাসপেন্সের চরমে এসে তিনি যোগকরলেন, "এখন আমি ওনার ২৬ বছর বয়স অবধি গল্পটা  লিখতে পেরেছি। কতদিনে শেষ করতে পারবো জানিনা। আশাকরিযতো দিননা শেষ হয়ততোদিন পর্যন্ত তিনি আমার সঙ্গে থাকবেন। গল্পের শেষটা  লেখা পর্যন্ত আশাকরি আপনারাও অপেক্ষা করবেন"রূপা দেবী সমাপ্তি টানলেন কথার। অন্তিম চমকের একটু অবশিষ্ট ছিল তখনও। স্টেজের স্ক্রিনে কন্দর্পকান্তি সুপুরুষস্লিম ২৬ বছর বয়সের মিনাগের জীবন্ত ছবি ভেসে উঠলো এখন। ঠিক তার পাশের দরজা খুলে এবার প্রবেশ করলেন২৬ বছরবয়সের... মিনাগ (?) সামনে এসে রূপা নাগের হাত ধরে সমবেত দর্শক মণ্ডলীর সঙ্গে মিশে যেতে এগিয়ে আসছেন হাসি মুখে।চমকের পর চমক। -- হলে আলো জ্বলে উঠলো এখন।থমকে গেলেন দর্শক মণ্ডলী। ঠিক বুঝতে পারলেননা কি ঘটতে চলেছেএবারহুবহু ২৬ বছরের মিনাগের প্রতিচ্ছবি নিয়ে এগিয়ে আসলেন এবার ওনারই ২৬ বছর বয়সের সুপুত্র তার মা রূপা দেবীর  হাত ধরে। মুহুর্মুহু হাততালি তে ঘর ভরে গেলো। টি ব্রেক! & হ্যাপি এণ্ডিং।

 

------------------------------ 



  স্তুতি সরকার। 

হাইল্যান্ড উইলোসব্লকফ্ল্যাট নং৫০৪।

নিউটাউনএকসান এরিয়া বি

কলকাতা৭০০ ০৬৭ 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক