নিবন্ধ ।। কবিতায় উত্তরাধুনিক প্রসঙ্গ ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক ২১ - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

Friday, February 16, 2024

নিবন্ধ ।। কবিতায় উত্তরাধুনিক প্রসঙ্গ ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক ২১

প্রসঙ্গ উত্তরাধুনিক 

বিদ্যুৎ ভৌমিক

        
"উত্তরআধুনিক"-- প্রসঙ্গ নিয়ে ইতিমধ্যে অনেকে অনেক ভাষণ-টাষণ দিয়েছেন, নানা সাহিত্যধর্মী ম্যাগাজিনে লম্বা লম্বা প্রবন্ধ লিখেছেন পন্ডিত মহল ৷ আমি সেই বিচারে পণ্ডিত-  টন্ডিত নই, তবে আমার সামান্য অল্পসল্প পড়াশোনা থেকে এটা বলতে পারি, আসলে আমার যেটা মনে হয় এই উত্তর আধুনিকতাবাদ আধুনিকতাবাদের একটা প্রকারন্ত দিক! যা গোটা ব্যাপারটাকে সমৃদ্ধ করে। কিম্বা আধুনিকতার পরবর্তী সিঁড়ি বলা যেতে পারে৷ কিন্তু আসলে আদৌ সেটা নয়! কারণ এরা পরস্পর বিরোধীপক্ষ৷ আধুনিকতার মূল উপজীব্য হল, এটা যে সময়, তাকে আদ্যোপান্ত ধারণ করা৷ কিন্তু উত্তরাধুনিকতার মূল বিষয়টা হল, কোন কিছু ধ্রুব অর্থাৎ সত্য মেনে ধারণ করা যাবে না৷ ফলে এই ধ্রুবহীনতাকে আদর্শ ধরে যে কাঠামোকে গ্রহণ করা হয় তাকেই বলা যেতে পারে উত্তরাধুনিকতাবাদ৷ এই মতবাদটিতে লেখকের যে ক্যারেক্টরের কথা বলা হয়ে থাকে তা মূলত লেখকের স্বাধীনতা কিম্বা স্বকীয়তা৷ কবিতার বিষয়বস্তুই হল বাস্তবতার ভিন্নরূপ! কেননা কবি তার চারপাশে যেই চিত্র উপলদ্ধি করেন তাই শব্দের মাধ্যমে আঁকেন৷ তবে বাস্তবতাকে যদি ধ্রুব না মানা যায় তবে কি দরকার কবিতায় ধ্রুবহীনতা? এটাও কিন্তু সত্যি এই সব ব্যাপার ট্যাপার নিয়ে বেশি ভাবলে কিন্তু আসল দিকটায় ফাঁক থেকে যাবে৷ সেটা হল কবির কলম দিয়ে কবিতা নির্মাণ না হয়ে ব্যাকরণ ট্যাকরণ শব্দ ও অক্ষরে গড়ে উঠবে৷ আমি বিশ্বাস করি কবিতা মূলত সমাজ ও শিল্প গঠনের উপর নির্ভর করে নির্মাণ হয়৷ আবার এটাও সত্য কবিতা কিন্তু গঠন নির্ভর নয়৷ কবিতা হল বিষয় আর ভাব নির্ভর৷ বাস্তবতার কল্পনা জ্ঞান দ্বারা যে নির্মাণ কাজ সাধিত হয় সেটাই কবিতা৷ আমরা কি আগের কোন কবির কবিতা ফেলে দিতে পারবো, কিম্বা তাঁদের সৃষ্টি নিয়ে বিদ্রুপ করতে পারি ? অবশ্যই নয়৷ যেটা পারি তা কেবল কবিতার ভিন্নধারা নির্মাণ করতে৷ এইজন্যেই কবিতা আধুনিক বা পুনরাধুনিক হয় না৷ আধুনিক কিম্বা পুনরাধুনিক হয়ে যার কবিতার শব্দ, গঠন, ভাষা আর তার সময়ের প্রেক্ষাপট ৷ 


________________________________________


             

বিদ্যুৎ ভৌমিকের একটি কবিতা 

ক্যালেন্ডারে পঁচিশটা রাত





একটু ঝুঁকেছি যেই ; ওধারে দেখান্দ্রিয়ের শুক্লা চতুর্দশীর কথা ঋতুগন্ধ ছড়ায় ! যদিও মন বেঁধে বেঁধে প্রায় শব্দহীন আমি , তবু পুজারীর আসনের পাশে কোষাকুশি এভাবেই অবিবেচক নীরব ! পুজ্যপাদ প্রিয় পুরুষ প্রতিবিম্বের বিপরীতে নপুংশক ; অথচ সমবেত ইচ্ছাগুলো এর ভেতর মাথা ঠেলে উস্কানি দিতই , যদি আমি নগ্ন হতাম .....  !


আমিতো অশারীরীক হয়েই স্মৃতি নির্ঘুম এবং প্রত্যন্তে নির্জন !

রোমকূপ থেকে জন্ম এক ঋষি কন্যা ; যার যোনিপদ্মের ঘ্রাণে ভূত - প্রেত - অপ্রমেও দেবতারাও প্রতিপলে হস্তমৈথুন করে কল ঘরে রোজ ! 


এভাবেই ক্যালেন্ডারে রাত ডুবে সকাল দেখা দিলে হৃদয় খুলে বেরিয়ে আসতে কিছুটা সময় হারিয়ে যায় ; প্রাচীন শিক্ষক রতি মিলনের সিলেবাস নিয়ে ছোটে প্রিয়তমা ছাত্রীর দেহগন্ধ নিতে ছাদের রেলিং এর তারে ঝোলানো ছেঁড়া ফ্রকে !



এতকাল চলেছে আমাকে নিয়ে খেলা ; বাসর ঘরে নগ্ন হবার ডাক আসে কাপুরুষের চোখের ভাষায় !

গভীরে বীজ পুঁতে দেয় আদেখা ঈশ্বরের নামে ; এর পর দশ মাস , দশ দিন ..... !



একটা জীবনেই নারী হয়ে ওঠা ! একটা শরীরে চলে মন পোড়া দহন !

এভাবেই পুরুষ পোকারা আমার রক্ত চোষে অতৃপ্ত রাতে - রাতে - রাতে এবং সূর্য ওঠার কিছু আগে !


বেঁচে আছি নিভৃতে এভাবেই ; খেলনা ঘরের পুতুল গুলো মুখস্ত মুদ্রার মতই অপাঠ্য হু-হু শূন্যতায় মাখা , তবুও স্বপ্ন থেকে বেরিয়ে না আসার কঠিনতম নিপুন ব্যাকরণ ছোট থেকেই পুরুষের চোখের খিদে মেটায় ! 



বরং ওষধি স্বপ্নের ভেতর অনন্ত ভিখারি , আমরা সমস্ত যুগের নারীরা ! 
শরীর ও মন নিয়ে অবুঝ শিকারী ; পোশাকের ভেতর খোঁজে আমাদের নির্জন কঙ্কাল ......  ! প্রতিদিন এই ঘরে বিষজ্বালায় পুড়ে উঠি ; আমাকেও আত্মঘাতী করে ভাসমান সময় ! আমাকেও প্রভূত কষ্টে নরক দেখাতে নিয়ে আসে যাবতীয় স্তব্ধতা ,
অথচ ওরাই অর্থাৎ পুরুষ দেহগুলো যোনিগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসে প্রথম আমাদের মা বলে ডাকে !! তবু কত শত বছরের ক্যালেন্ডার স্বভাবতই এভাবেই বোবা হয়ে থাকে !!!

   
________________________________________


বিদ্যুৎ ভৌমিক
ফিরিঙ্গি ডাঙা লেন , মল্লিকপাড়া ,
সূচক ৭১২২০৩ শ্রীরামপুর , হুগলী ,
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।



________________________________________

No comments:

Post a Comment