Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

গল্প ।। মুখোশের আড়ালে ।। মৌসম সামন্ত (অসুর)

মুখোশের আড়ালে 

মৌসম সামন্ত (অসুর)


আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে অনিমা সেই চোখ, সেই, মুখ, সেই রঙ আগের চাইতে চেহারায় লাবণ্য এসেছে কিছুটা এর কারণ ইদানিং মনটা খুব ভালো তার কিন্তু এই ঔজ্জ্বল্যতার আড়ালে কুৎসিত চেহারাটা বাহ্যত দেখা যায় না অথচ সে দেখতে পাচ্ছে ঠিকই নিজের ভেতরের কদর্যতা যখন নিজের চোখেই ধরা পড়ে, যখন আত্মগ্লানি অনুভব হয় সেই মুহূর্তের কষ্টগুলোর সাথে আর কোনো কষ্টেরই তুলনা হয় না বুকের ভেতর ভারি একটা পাথর চেপে বসে, প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য ফুসফুস অস্থির হয়ে পড়ে কিন্তু নিঃশ্বাস নিতেও ভয় লাগে নিজের চারপাশে যে পাপের বীজ বুনেছে সে সেগুলোই যেন দূষিত কালো ধোঁয়া হয়ে বাতাসের সাথে মিশে আছে প্রতিটি নিঃশ্বাসের সাথে এই দূষিত বাতাস তার ভেতরে প্রবেশ করবে ক্রমশ গ্রাস করে নেবে তাকে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ কান্নায় ভেঙে পড়ল অনিমা অনেক বড়ো পাপ করে ফেলেছে সে ভালোবেসে ফেলেছে ভালোবাসা পাপ নয়, কিন্তু অনিমার ভালোবাসা, ভীষণ বড়ো পাপ!
__________________________________
 
এই শুনছো, শোনো না?’
 
হুম বলো
 
আমি টেস্ট করেছি সাইন বলছে পজিটিভ
 
মানে কী?’
 
অনিমা বুঝতে পারে না কী বলবে? সারাজীবন বাংলা সিনেমায় যেমন দেখে এসেছে, ‘তুমি বাবা হচ্ছোএভাবে? নাকি বলবে, ‘বাসায় নতুন অতিথি আসছেকিন্তু কোনোটাই সে বলল না একরাশ জড়তা নিয়ে অনিমা বলল,
আমি প্রেগন্যান্ট
 
আচ্ছা কংগ্রেটসএকেবারেই স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল সজীব
 
আমি এখন কী করব?’ ভীত কণ্ঠে জানতে চাইল অনিমা
 
এতো সকালে আর কী করবে? আসো আমার পাশে এসে ঘুমাও
__________________________________
 
বউমাতোমার কয়টা রুটি ছেঁকতে কতোক্ষণ লাগে! সজীব তো রেডি হয়ে বসে আছে ওর অফিসের দেরি হচ্ছে তো
 
শাশুড়ির চিৎকারে অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে এলো অনিমা আজকাল কী হচ্ছে কে জানে! ফেলে আসা দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে আর এভাবেই অতীতে বিচরণ করতে করতে বর্তমানের সব কাজ ---- করে ফেলছে টেবিলে নাশতা দিয়ে চুলায় চা বসাতে গেল অনিমা অমনি সজীবের চিৎকার,
 
এগুলো কী রাঁধো অনিমা? ভাজি খাচ্ছি নাকি ঘাস খাচ্ছি বুঝতেই পারছি না বিয়ের দশ বছরেও রান্নাটা শিখতে পারলে না!’
 
অনিমা দৌড়ে গিয়ে হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ভাজিতে সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছে না সজীবের পছন্দ মতোই তো রান্না করেছে পাতাকপিতে চিংড়ি, টমেটো, বেশি করে কাঁচামরিচ আর শেষে ধনেপাতা সজীব চায় পাতাকপি ভাজি সবুজ হবে আর খুব বেশি সেদ্ধ হবে না অনিমা তাই গুড়া মসলা দেয় না ভাজিটাও আধাসেদ্ধ করে সবই তো ঠিক ঠিক করেছে কিন্তু সজীব এভাবে বলছে কেন! বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি সজীব নিজেই বলছে,
 
এতো মোটা করে কেটেছ কেন? ভাজি এতো মোটা করে কাটে? একটা কাজও তুমি পারফেক্টলি করতে পারো না
 
অনিমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে ওর বলতে ইচ্ছে করে না, পাতাকপির গোড়ার দিকের অংশ একটু মোটা হয় চুপচাপ চলে আসে রান্নাঘরে শুনতে পায় শাশুড়ি বলছে,
তাড়াহুড়ো করে কাটছে মনে হয় সবগুলো তো মোটা হয় নাই
 
আরো অনেক কিছু বলে তিনি ছেলেকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন কিন্তু অনিমার সেদিকে খেয়াল নেই, চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে ওর এতো অল্পতেই কেন এই পোড়াচোখে পানি আসবে? নিজেকেই ইচ্ছেমতো বকতে থাকে সে
 
শীতকালের সময়গুলো ঠিক শীতের মতোই রুক্ষ ঘন কুয়াশা যেন শুধু প্রকৃতিকেই না মানুষের মনকেও চারপাশ থেকে জাপটে ধরে অনিমার বড্ড মন খারাপ হয় সময়গুলোতে বাচ্চাদের স্কুল, ঘরের কাজ, রান্না-বান্না সবকিছু করেও যেন সময়টা কাটতে চায় না আলমারির ড্রয়ারে যত্ন করে রাখা একাডেমিক সার্টিফিকেটগুলো বের করে, দুফোটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে ফেলে তারপর যত্ন করে আবার কাগজগুলোকে বন্দি করে রাখে সেই অন্ধকার কুঠুরিতে জন্মদিনে দেওয়া বন্ধুদের উপহারগুলোরও ঠাঁই হয়েছে পাশের এমন আরেকটা আয়তাকার বক্সে একটা কার্ড বের করে উল্টে দেখে, গোটা গোটা অক্ষরে লেখাতোর টোলপড়া হাসিটা অমলিন থাকুক আজীবন- শুভ জন্মদিন দোস্তমৃদুলের লেখা মৃদুল কি জানে হাসতে ভালোবাসা সেই মেয়েটা আজকাল হাসতে ভুলে গেছে!
 
শীতকালের দিনগুলো ছোটোই হয় অথচ অনিমার যেন দিনটা কাটতেই চায় না ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে ফিরে গোসল, খাওয়া-দাওয়া সেরে বাসার টিচারের পড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকে শাশুড়ি এই সময় ইসলামিক বই পড়েন অনিমা একটু গড়িয়ে নেয় কিন্তু আজ কেন যেন চোখদুটো লেগে আসে মাসের কয়টা দিন দুপুরবেলা না চাইতেও ঘুম আসে, ক্লান্তিতে, অবসাদেমোবাইলের রিংটোনে ঘুম ভাঙে অনিমার কানে মোবাইল ধরে বলে,
হ্যালো
 
কী ঘুমাচ্ছ?’
 
হুম
 
ঘুমাবেই তো ঘুম ছাড়া তোমার আছে কী!’ বলেই লাইনটা কেটে দেয় সজীব অনিমা উঠে পড়ে ঘড়িতে দেখে বিশ মিনিটের মতো চোখবন্ধ ছিল তার এটাকে কি ঘুম বলে! আচ্ছা ঘুমালেই বা! তাতে সমস্যাটা কী! কারো তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বিয়ের পর থেকেই অনিমা খেয়াল করেছে, সজীব ওর ঘুমঘুম কণ্ঠ শুনলেই রেগে যায় অথচ একজন এই কণ্ঠ শুনে বলেছিল, ‘তোমার ঘুমজড়ানো কণ্ঠটা ভীষণ সুন্দর আরেকটু কথা বলো না প্লিজ
 
সে লোকটা অনিমার কেউ ছিল না ওর বান্ধবী বিথীর প্রেমিক ছিল সে একদিন দুপুরবেলা প্রয়োজনেই ফোন করেছিল অনিমা ঠিক আজকের মতোই ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলেছিল,
হ্যালো ফয়সাল ভাই…’
অহ হো, অনিমা ঘুমাচ্ছ?’
 
হুম বলেন সমস্যা নাই
বিথীকে পাচ্ছি না সকাল থেকে তুমি কি জানো কিছু?’
 
জানি না কিছু জানতে পারলে আপনাকে জানাব
 
ইয়ে, অনিমা তোমার ঘুমজড়ানো কণ্ঠটা ভীষণ সুন্দর আরেকটু কথা বলো না প্লিজ
 
ভাই আপনি আমার সাথে ফ্লার্ট করছেন আপনার প্রেমিকা জানলে কিন্তু কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে আপনাকে
 
কী বলো! সাংঘাতিক তো ওর ফ্যামিলিতে কেউ কষাই ছিল নাকি! আমি তো জানতাম না
 
অনিমা খিলখিল করে হেসে ফেলেছিল আজ সে ঘটনা মনে পড়াতে আবারো ঠোঁটে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল মানুষের মন কী অদ্ভুত! মাত্রই সজীবের কথায় অভিমানে চোখে পানি চলে এসেছিল আর এখন ফয়সাল ভাইয়ের কথা মনে পড়ে মনটা ভালো হয়ে গেছে অনিমা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে আসরের নামায পড়ে বিকেলের নাশতার আয়োজন করতে রান্নাঘরে যেতে হবে
 
তিহাম আর তিয়ানার টিচার রবিন আসে সন্ধ্যাবেলায় ভার্সিটির স্টুডেন্ট সজীবের বন্ধুর দূর সম্পর্কের ছোটোভাই এমনিতে রবিনের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা হয় না আজ নাশতা দেওয়ার সময় রবিন অনিমাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে অনিমার অস্বস্তি হয় খুব রবিন বলে উঠে,
ভাবি আপনার শরীর খারাপ নাকি! চেহারা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে!’
 
অনিমা মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলে,
তাই নাকি! কই আমি তো ভালোই আছি
নিজের ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় অনিমা সত্যিই কি চেহারা খারাপ হয়ে গেছে! সজীব তো কিছু বলেনি অবশ্য সজীবের কি সময় হয় অনিমার মুখের দিকে তাকানোর? কার ওপর যেন প্রচণ্ড অভিমান হয় অনিমার বুকের ভেতর তীব্র একটা হাহাকার বয়ে যায় মোবাইল নিয়ে ডায়াল করে সজীবের নাম্বারে,
 
হ্যা অনিমা বলো
কী করছ?'
 
অফিসে মানুষ কী করে? লুডু খেলে না নিশ্চয়ই
এভাবে বলছ কেন? তুমি ফোন করেছিলে তখন আমি শুয়েছিলাম তাই এখন…’
 
দরকারে তোমাকে পাওয়া যায় না কখনো বে-দরকারে ফোন করো কাজের প্রেসারে আছি এখন ফাও আলাপের সময় নাই
 
অনিমা কয়েক মুহূর্ত স্থাণু হয়ে বসে রইল সজীব লাইন কেটে দিয়েছে এতো অবহেলা! অভিমানে বুক ভেঙে আসতে চায় অনিমার বুকের ভেতর প্রচণ্ড ভাঙচুর হচ্ছে চিৎকার করে না কাঁদলে এই ভাঙচুর তাকেই ভেঙে ফেলবে দমবন্ধ হয়ে আসতে চাইছে ওর
আম্মা আমি ছাদে যাচ্ছি কাপড় আনতে ভুলে গেছিলাম'
 
তাই বলে এই সন্ধ্যারাতে ছাদে যাবা? কালকে আনিও
 
অনিমা শাশুড়ির কথা আমলে নেয় না দ্রুতপায়ে ছাদে চলে আসে ছাদে আসলে কোনো কাপড় নেই কিন্তু মাথার ওপর খোলা আকাশ আছে এই আকাশের নিচে বসে একটু মনখুলে কাঁদা দরকার নাহলে ভেতরে অল্প যে তোলপার হচ্ছে তা প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে
 
অনিমা শব্দ করেই কাঁদছে প্রতিবার কান্নার দমকে বেরিয়ে আসছে এতোদিনের জমানো দুঃখ, অভিমান, হতাশা একটা সুন্দর জীবনের জন্য মানুষ কত কীই না করে অনিমাও চেয়েছিল গল্পের মতো সুন্দর হবে জীবনটা সিনেমার মতো প্রথম প্রেগন্যান্সির সময় স্বামী কোলে তুলে আনন্দ প্রকাশ না করলেও কপালে অন্তত একটা চুমু খাবে প্রেগন্যান্সির প্রতিটা মুহূর্ত অমূল্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, নানান রকমের অনুভূতি, রাত-বিরাতে আজগুবি সব জিনিস খাওয়ার ইচ্ছে, কোনো কারণ ছাড়াই কেঁদে বুক ভাসানো, অথবা অকারণেই আনন্দে ঘরময় প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ানো- সব কিছু কারো সাথে শেয়ার করতে খুব ইচ্ছে হয় আর সেই মানুষটা হয় একান্ত আপনজন নিজের স্বামী কিন্তু সজীবকে সে পায়নি সেসময় সেসময় না, পরেও পায়নি আজ এই বোনের মেয়ের বিয়ে, কাল ওই ভাইয়ের ছেলের স্কুলে ভর্তি, গ্রামে জায়গা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা, অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে যাওয়া নানাকাজে ব্যস্ত ছিল সজীব ব্যস্ততা এখন আরো বেড়েছে শুধু মাসের কয়েকটা দিন রাতের বেলা নিতান্ত প্রয়োজনে কাছে আসা মিনিট দশেক উদ্দামতার পর সব নীরব-নিস্তব্ধ দেয়াল ঘড়ির টিকটিক শব্দও যেন অনিমার হৃদয়কে তখন এফোঁড়ওফোঁড় করে দিতে চায়
 
কখনো বৃষ্টি দেখে ভেজার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারে না অনিমা জ্যোৎস্নার প্লাবনে গা ভাসাতে পারে না সজীবের উত্তর, ‘বৃষ্টিতে ভেজার বয়স আছে নাকি!’ ‘চাঁদ দেখার কী আছে! চাঁদ তো প্রতিমাসেই ওঠে
 
মানুষের জীবন গল্প বা সিনেমার মতো রোমান্টিক হয় না এটা অনিমা মানে তাই বলে বাস্তবতা এতোটা কঠিন হতে পারে অনিমা সেটা মানতে নারাজ যদি মেনে নিতে পারতো তাহলে নিশ্চয়ই এখন সবার কাছ থেকে লুকিয়ে ছাদে এসে কাঁদতে হতো না কিন্তু এভাবে আর কতো! অনিমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় তো এভাবেই চোখের জলেই কেটে যাচ্ছে
__________________________________
 
শীতের রুক্ষতার পর প্রকৃতিতে যেমন বসন্ত আসে, ঠিক অনিমার জীবনেও হঠাৎ করে ফাগুন হাওয়া এলো সময় কাটাতে কিংবা অতীতের দুঃখময় স্মৃতিগুলো ভুলে থাকতে অনিমা লেখালেখি শুরু করল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, বিভিন্ন ওয়েব সাইটেচন্দ্রাবতীছদ্মনামে নিজের জীবনের গল্পগুলোকেই তুলে ধরতে লাগল অল্পদিনেই তার একান্ত নিজের গল্পগুলো সবার গল্প হয়ে গেল কমেন্টবক্স থেকে ইনবক্সেও পাঠকরা ক্ষুদে বার্তা দিচ্ছে, তাদের ভালো লাগা জানাচ্ছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে অনিমার ভালো লাগে আজকাল সজীবের নিত্য গালমন্দ ভুলে থাকে এই লেখালেখির জগতে ডুবে থেকে সজীব বাসায় এলেই আবার কিছু সময়ের জন্য সব ভুলে পুরোনো অনিমা হয়ে যায় যন্ত্রের মতো সংসারের কাজ করে, এমনকি সজীবের সাথে অন্তরঙ্গতাও হয় অনুভূতিহীন, দায়সারাভাবে এরপর সজীব যখন ওপাশ ফিরে ঘুমায় অনিমা নিঃশব্দে কেঁদে বালিশ ভেজায় সংসার সামলানো, বাচ্চা জন্ম দেওয়া তাদের বড়ো করা আর স্বামীর শারীরিক চাহিদা মেটানো এসবের জন্যই যেন অনিমার প্রয়োজন যেদিন এসব প্রয়োজন সে মেটাতে পারবে না সেদিন ওকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে এতোদিনের সম্পর্ক, অথচ ভালোবাসা, আন্তরিকতা, শ্রদ্ধাবোধ এসবের ছিঁটেফোটার দেখাও মেলে না অনিমা ভাবে, আমি কি এতোই মূল্যহীন!
 
একদিন বিষণ্ন দুপুর অনিমা মোবাইলে ইনবক্স চেক করছিল অচেনা একজনের মেসেজ দেখল আদারস বক্সে রিজভী আহসান নামের একব্যক্তি একটি ইউটিউব লিংক পাঠিয়েছেন, সাথে লিখেছেন, ‘আপনার কবিতা পড়ে এতোটাই বিমোহিত হয়েছিলাম আবৃত্তি না করে পারলাম না
 
অনিমা আবৃত্তিটা শুনল তার নিজের লেখা কবিতা-
 
কোনো এক রাতজাগা পাখির ডানায় চড়ে
ঘুরে বেড়াই তেপান্তর,
ঘুরে ঘুরে দেখি, খুঁজি-ফিরি,
আপন কি কেউ আছে এতো এতো মানুষের ভীড়ে?
কেউ কি আছে একান্ত আমার নিজের?
 
আমার চোখের গভীরতায়
নিজেকে হারিয়েছিল যে যুবক,
আমি তার প্রেমে পড়িনি
নিষ্পলক চেয়ে থাকার মুহূর্তগুলো
বিশেষ নয় বিভীষিকাময় ছিল
আমি তাই ফিরেও তাকাইনি
 
আমার গালের টোলে ডুবে গিয়েছিল যে বালক
আমি তার প্রেমেও পড়িনি,
নিতান্ত অবহেলায় এড়িয়ে গিয়েছি,
অসমবয়সী প্রেম কী করে হয়!
আমি তাই ওপথ মাড়াইনি
 
আমাকে ঠিক আমার মতোই রাখবে বলে
দিব্যি দিয়েছিল যে পাগল ছেলেটা
আমি তাকে বিশ্বাস করিনি,
তার ছলছল চোখের ভাষাকে অবজ্ঞা করেছি,
তার অভিশাপেই কি ভালোবাসা আর আসেনি!
 
আজকাল প্রচণ্ড তৃষ্ণার্থ হয়ে থাকি
একফোঁটা ভালোবাসার আশায় উন্মুখ আমি,
ভালোবাসা এখানে খুব দামী,
সহজে কি বিলানো যায়?
এখন আমি ভালোবাসাহীন কাঙাল ফকির
তোমাদের রাস্তায়
তোমাদের সুখি সুখি মুখ দেখে আমি
মরে মরে যাই, তৃষ্ণায়, ঈর্ষায়
 
একটা সুপুরুষ ভরাট কণ্ঠে নিজের কবিতা শুনে অনিমার মনে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল একবার, দুবার, তিনবার এভাবে অসংখ্যবার শুনল যতো শুনে ততই মুগ্ধ হয় একসময় সে আবিস্কার করল, কানে হেডফোন লাগিয়ে সারাদিন শুধু অচেনা ভদ্রলোকের কণ্ঠই সে শুনে যাচ্ছে
 
অনিমা রিজভীকে আবেগাপ্লুত হয়ে মেসেজ করল ভদ্রলোকও প্রতিউত্তর দিল সাথে সাথে এভাবে মেসেজের আদান-প্রদান হতে হতে অনিমা বুঝতেই পারল না কবে, কখন, কীভাবে সে রিজভীর প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতে শুরু করেছে এই আকর্ষণ ধীরে ধীরে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ছোটোবড়ো সবকিছুই সে রিজভীর সাথে শেয়ার করে রিজভী কখনো অনিমাকে বলেনি সে অনিমাকে পছন্দ করে বা ভালোবাসে কিন্তু অনিমা কেন যেন ধরেই নিয়েছিল রিজভীর সাথে সে প্রেম করছে প্রেমে পড়লে যেমন মেয়েদের চেহারায় লাবণ্য আসে অনিমারও এসেছে তাছাড়া আজকাল সে নিজের যত্ন নিচ্ছে খুব
 
নিজের সাংসারিক জীবন ভালোভাবেই চলছিল বরং আগের চাইতেও ভালো মন ভালো থাকলে সবকিছুই ভালো থাকে রিজভীতে আচ্ছন্ন অনিমা সজীবের অবহেলা কিংবা গালমন্দকে আর আমলেই নেই না রাতের অন্তরঙ্গতায় অন্ধকার ঘরে সজীবের মুখটা দেখা যায় না অনিমা নিজের অবচেতন মনেই সজীবের জায়গায় রিজভীকে কল্পনা করতে শুরু করে অন্যরকম রোমাঞ্চ কাজ করে তার মধ্যে সেই থেকে মিলনের রাতগুলোকে আর নিছককরতে হয় বলে করামনে হয় না আজকাল অনিমার আগ্রহই বেশি থাকে সজীব স্ত্রীর এমন আচরণে খুশিই হয় তার স্ত্রী হাসিমুখে তার সাথে অভিনয় করে যাচ্ছে এটা সে ঘুণাক্ষরেও টের পায় না অনিমা বাস্তবতা ভুলে বাস করতে শুরু করে তার নিজের রচিত কল্পনার জগতে যেখানে সে রিজভীর সাথে সংসার পেতেছে ওদিকে অনিমার মনের খবর রিজভীও জানে না সে শুধু ভালো বন্ধু হিসেবেই অনিমার সাথে যোগাযোগ রাখছে
_______________________________
 
আচ্ছা তোমার কি মনে হয় আমরা পরকীয়া করছি?’
 
নাহ! তা মনে হবে কেন? আমরা তো রোজ দেখা করছি না কিংবা অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছি না আমরা তো একে অপরকে ঠিক ওভাবে দেখি না আমরা ভালো বন্ধু এখানে পরকীয়া মনে হওয়ার তো কারণ নেই
 
রিজভীর সরল সহজ উত্তরে অনিমার মনটা ভেঙে যায় আবার নিজেই নিজের মতো করে জোড়া লাগায় নিজেই নিজেকে বোঝায় রিজভী তাকে ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করে না
 
আচ্ছা তুমি বিয়ে করছ না কেন? তোমার মনে হয় না তোমার একটা বিয়ে করা দরকার?’
 
চ্যাট করতে করতে অনিমা রিজভীকে প্রশ্নটা করে রিজভী উত্তর দেয়,
ব্যবসাটা আরেকটু গুছিয়ে নিই বছরে দেড়েক পর বিয়ে করব ভাবছি
 
তাহলে তো এখন থেকেই মেয়ে দেখা দরকার তুমি বললে আমি মেয়ে দেখতে পারি কেমন মেয়ে পছন্দ তোমার?’
 
পাত্রী তো রেডিই আছে শুধু বিয়ে করা বাকি
 
অনিমা ভাবে রিজভী অনিমার কথাই ভাবছে সে আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়,
তাই নাকি? কে সে? আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে না?’
 
রিজভী একটু পর একটা মেয়ের বেশ কয়েকটি ছবি পাঠালো, কয়েকটা রিজভীর সাথে বেশ অন্তরঙ্গভাবেই তোলা অনিমা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার মনে হচ্ছে তার হৃদয়টা ভেঙে কয়েক সহস্র টুকরো হয়ে গেছে অফলাইন হয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল শাওয়ার ছেড়ে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পানির নিচে
 
নাহ! রিজভী প্রতারণা করেনি রিজভী কখনই বলেনি সে অনিমাকে পছন্দ করে তাহলে অনিমার এতো খারাপ লাগছে কেন! কেন মনে হচ্ছে তার পৃথিবীটা উজাড় হয়ে গেছে! আর সে আসলে কী অসম্ভব কল্পনা করছিল এতোদিন! সজীব, তিহাম আর তিয়ানাকে নিয়েই ওর সংসার এরাই তো চরম সত্য এরাই তো অনিমার পৃথিবী তাহলে এতোদিন কোন পৃথিবীতে সে বাস করছিল অনিমা!
 
এরপর শুরু হলো অনিমার নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া শুরু হলো নতুন করে হিসাব নিকাশ
__________________________________
 
ভুলতে চাইলেই কি ভোলা যায়? কাউকে মনপ্রাণ উজাড় করে ভালোবাসার পর কীভাবে তার সাথে দূরত্ব রেখা টানা যায়! অনিমা এখন ভালোভাবেই জানে রিজভী অন্য কাউকে ভালোবাসে তার পৃথিবীটা শূন্য শূন্য লাগে প্রেমে পড়া, ভালোবাসা পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর অনুভূতি বলা হয়, ভালোবাসা পবিত্র কিন্তু স্বামী-সন্তান-সংসার থাকার পরও অন্য কোনো পুরুষকে মন দেওয়া, ভালোবাসা, সে তো ঘোরতর অন্যায় অন্যায়ের ভার সইতে পারছে না অনিমা পারছে না রিজভীকেও ভুলতে
 
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে প্রতিদিন একজনকে খোঁজে সেই মেয়েটাকে যে ছিল শুভ্র সাদা মনের, যার হাসিতে পবিত্রতা ছিল, যার কথায় আচরণে স্বচ্ছতা ছিল সে মেয়েটা কোথায় হারিয়ে গেছে! আজকাল আয়নায় যাকে দেখা যায়, সে স্বামী কর্তৃক অবহেলিত, পরপুরুষে আসক্ত, নির্লজ্জ, পাপের ভারে বিদ্ধস্ত এক নারী অনিমা নিজেই নিজের চোখে চোখ রাখতে পারে না আজকাল স্বামীর চোখে চোখ রাখতে পারে না দিনরাত এক অভ্যন্তরীণ অনলে পুড়তে থাকে তবুও অনিমাকে সংসার করে যেতে হয় ভেতরে পাপবিদ্ধ মন লুকিয়ে রেখে বাইরে হাসিমুখে অভিনয় করে যেতে হয়, প্রিয়তমা স্ত্রীর চরিত্রে, আদর্শ পুত্রবধুর চরিত্রে নিজের কাছে নিজেকেই অপরিচিত লাগে আজকাল একটি শরীরে যেন কয়েকটি চরিত্রের বসবাস এদের মধ্যে অনিমা খুঁজতে থাকে শুদ্ধ অনিমাকে, ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়ে কিন্তু তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া না
 
আঠারো বছর পর
 
অনিমা আজ সকাল থেকেই খুব ব্যস্ত তিয়ানার বাগদান হবে আজ ছেলে তিয়ানার পরিচিত তিয়ানার সাথে নাকি ভালো বোঝাপড়া আছে নিজের জীবন তো যেমন তেমন কেটে গেছে এখন মেয়ের জীবন নিয়েই চিন্তিত অনিমা রাফিদকে যতটুকু দেখেছে ভালোই মনে হয়েছে বাকিটা এখন তিয়ানার ভাগ্য
 
পায়েশের বাটিতে বাদাম কুচি আর কিশমিশ ছিটিয়ে টেবিলে রাখল নিজের মনেই ভাবছে, এই দুধসাদা পায়েশে সবুজ পেস্তা কুচি আর বাদামী কিশমিশের কারণেই আরো সুন্দর আকর্ষণীয় দেখাচ্ছে কাচ্চিতে এলাচ আর লবঙ্গ না হলে কি ঠিকঠাক সুগন্ধ আসতো? মাংস পর্যাপ্ত তাপে জ্বাল দিয়ে সেদ্ধ না করলে কি খাওয়া যেত? জীবনটাই কি তেমন না? শুধু একপেশে রোমান্স আর সুখে ভরপুর হলেই কি জীবনের আসল স্বাদটা পাওয়া যেত? দুঃখ, অভিমান, জরা আছে বলেই তো সুখগুলোকে এতো অমূল্য আর লোভনীয় মনে হয়
 
ব্যস্তভঙ্গীতে মোবাইল কানে সজীবকে নিচে নামতে দেখল অনিমা মেহমানরা চলে এসেছে অনিমার চোখ থেকে এক ফোঁটা স্বচ্ছ তরল গড়িয়ে পড়ল এখন আর কোনো দুঃখ নেই অনিমার সজীব হয়তো বেশি রোমান্টিক ছিল না কখনোই, হয়তো ব্যস্ত ছিল বেশি হয়তো রাগ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতটা আয়ত্ব করতে পারেনি কিন্তু কোনো দায়িত্বে বিন্দুমাত্র অবহেলা করেনি সমাজের প্রতিটা মানুষ সজীবকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে অনিমাকে ঈর্ষা করে এতো চমৎকার একজন মানুষের সহধর্মিণী বলে একসময় কতো বোকাই না ছিল অনিমা! এভাবে কখনো ভাবেনি এখন বয়স বাড়ার সাথে সাথে বোধে পরিণত হচ্ছে যা কিছু আছে তার জীবনে সবকিছুর জন্যই একবার চোখ বন্ধ করে ধন্যবাদ জানাল সৃষ্টিকর্তাকে
 
মেহমানরা চলে এসেছে সবার সাথে পরিচিত হতে গিয়ে একজনের দিকে চোখ আটকে গেল অনিমার মোটামুটি গড়নের, শ্যামলা বরণ, চোখে ভারি ফ্রেমের চশমা চশমার আড়ালের চোখদুটো খুব পরিচিত আর হাসিটা কখনোই মন থেকে মুছে ফেলার মতো নয় রিজভী! এখানে কেন এসেছে?
 
রাফিদ বলল,
আম্মা ইনি আমার ছোটাচ্চু
 
অনিমা হাসার চেষ্টা করল রিজভী কি অনিমাকে চিনতে পেরেছে? হালকা একটু মেদ এসেছে শরীরে কপালের সামনে অনেকগুলো চুল সাদা এগুলো কি অনিমাকে অপরিচিত লাগার জন্য যথেষ্ট?
 
আচ্ছা! তোমার ছোটো চাচা! তোমার চাচী আসেনি?’
 
আম্মু চাচ্চু তো বিয়েই করেননি
কথাটা বলল তিয়ানা রাফিদ তিয়ানাকে কী যেন জিজ্ঞেস করল দুজন কীসব কথা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অনিমার কানে কিছুই গেল না এই বাসাভর্তি মেহমান, এতো আয়োজন, এতো হট্টগোল সব ধীরে ধীরে ঝাপসা হতে শুরু করল চোখের সামনে হঠাৎ করেই কালো পর্দা নেমে এলো অনিমার
__________________________________
 
চোখ খুলতেই সজীবের উদ্বিগ্ন মুখটা দেখতে পেল অনিমা মাথার ওপর ফ্যানটা ঘুরছে বেশ শব্দ করেই আগে তো এতো শব্দ করতো না! হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে উঠে বসতে চাইল অনিমা সজীব বাধা দিল,
আরে করছ কী! শুয়ে থাকো কী যে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে!’
 
কী হয়েছিল আমার?’
 
কী হবে আর! ঠিকমতো কিছু করতে তো পারোই না নিজের যত্নও নিতে পারো না প্রেশার কততে নেমেছে জানো? আমি তোমার খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসছি তুমি খবরদার উঠবে না
 
সজীব চলে গেল অনিমা চুপচাপ বসে ভাবছে কেন এমন হলো! সব তো ভালোই চলছিল এভাবে রিজভীর এতো বছর কেন সামনে আসতে হলো কী করবে অনিমা! নিজের হৃদস্পন্দন কীভাবে ঠেকাবে! মেয়ের চাচা শ্বশুর তার কোনো আচরণে মেয়ের জীবনে না অন্ধকার নেমে আসে
 
বাগদানের অনুষ্ঠান ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে অনিমাকে কিছুই করতে হয়নি সজীব, রাফিদ, তিহাম ওরাই সামলে নিয়েছে সব বেয়াই, বেয়াইন আর অন্যরা অনিমার রুমে এসেই বিদায় নিয়ে গেছে সেসময় সবার অলক্ষ্যে রিজভী অনিমার হাতে একটা টিস্যু ধরিয়ে দিল অনিমা ওয়াশরুমে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে টিস্যুর ভাঁজ খুলল সাদা টিস্যু পেপারে কালো জেলপেন দিয়ে লেখা,
 
চন্দ্রাবতী, এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি রাফিদ একজনকে ভালোবাসে জানতাম সে যে তোমারই মেয়ে সেটা জানতাম না তোমার সংসার যেন না ভাঙে, বাচ্চারা যাতে বাবা-মায়ের সাথে একছাদের নিচেই হেসেখেলে বড়ো হয় এজন্য আমি সেদিন মিথ্যে বলেছিলাম তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি বলেই তোমার পথ থেকে সরে গিয়েছিলাম আমাদের ভালোবাসাকে পরিণতি দিতে গেলে আজ কি তিয়ানা আর রাফিদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেত? সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না চন্দ্রাবতী কিছু ভালোবাসা অপূর্ণতাতেই সার্থক হয়
 
চোখের জলের ঝর্ণাধারায় টিস্যুটা অনিমার হাতেই ভিজে গেল তারপর সেটাকে কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে চোখমুখ ধুয়ে বেরিয়ে এল অনিমা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকল আকাশের বিশালতায় নিজের সব দুঃখ আর অপ্রাপ্তিগুলোকে মিশিয়ে দিতে চাইছে সে একটু পর টের পেল সজীব এসে দাঁড়িয়েছে পাশে কাঠখোট্টা কণ্ঠের বদলে নরম সুরে সজীব বলল,
বারান্দায় বসে চাঁদ দেখে কী হবে? ছাদে যাই চলো
 
অনিমা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল সজীবের দিকে বিস্ময়ের ধাক্কা সামলাতে পারছে না যন্ত্রমানবের মুখে রোমান্টিক কথা! অনিমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সজীব মৃদুস্বরে ধমকে উঠল,
কী হলো? যাবে ছাদে? পূর্ণিমার চাঁদ তো সারারাত তোমার অপেক্ষায় আকাশে বসে থাকবে না
 
চিরচেনা অবতারে সজীবকে ফিরে আসতে দেখেই অনিমা হেসে ফেলল তারপর খুব যত্ন করে সংগোপনে চোখের কোণের জলটুকু মুছে নিয়ে সজীবের বুকে মাথা রেখে বলল,
হুম চলো ছাদে যাই
 
 

সমাপ্ত

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩