কাইতিনের হাট
অনিন্দ্য পাল
সবুজ বটতলা
ছুঁয়ে আছে পুকুরের মেদ
এখনও,
দু-এক পা এগিয়ে যেখানে তিনটে মাথার মিল
সেখানে এখন অতীত অমিল,
অথচ সেখানে ছিল ঘুনসিবেলায়
রমরমা শীত, আনন্দমেলায়...
অনেক ছোট তখন
চিনি না লিঙ্গভেদ, জাত-বেজাত
বুঝি না লোকসান - লাভ , মন-আঘাত
গাঢ় চোখে খুঁজিনা বিপরীত অন্তর-বাস
রাতে ভয় পাওয়া তখন স্বভাব,
জানি না তখনও অন্ধকারেরও আছে শরীর
বুঝি না বড়লোক কি?
মরা-গরীব সেই তখন থেকেই দেখেছি মাঙন,
উপবাস
দেখেছি গ্রামের কাইতিন হাট ,
মাঘ-ফাল্গুন মাস পূর্ণিমাতিথী
বৃহস্পতি রবিবারের সদ্য বিকেলে
গুচ্ছের লোক,
ধানের পালিতে মেপে মুড়ি-মুড়কি
বেগুনি, চপ, পাঁপড়, ফুলুরি আরো কতকি
ছেঁড়া ত্রিপলের নীচে ঝাঁকবাঁধা পরিযায়ী
হাঁড়ি কলসি রান্নাবাটি দোকানপাট পোড়ামাটি
কুমোরের পনে পোড়া লাল মাটির খনখনে শব্দে
ভেঙে যেত কাঁচা ঘুম, দুপুরে নিঃশব্দে
আসলে ঘুমটা ভাঙতেই চাইতো
দুষ্টু স্বপ্ন গুলো আঁচড় কাটতো
দুদ্দাড় উঠে পড়ে বায়না রঙীন
এরপর কঠিন কাজ, হপ্তায় দুদিন
ঘুমন্ত বাবার গাঁট কেটে
অবিরাম ঘ্যান ঘ্যান কেঁদে কেটে
একটা সিকি বা আধুলি নিতান্ত মেরেকেটে
মান অভিমানের ছোট্ট সেই সব সিন
পৌষ - মাঘ জুড়ে হপ্তায় দুদিন,
তারপর পেরিয়ে এসেছি সময়
কৈশোর যৌবন
মাঠের সেই একচিলতে ঘাস মাটি
গাজি সাহেবের থান, কাইতিন পুকুরের শান
এখন শুনশান ...
এ প্রজন্ম শপিং মল আর মোবাইলে বাঁচে
কুমোরের চাকে ইতিহাস আর প্রেতাত্মা নাচে ,
হাট মরে গেছে, সভ্যতার ফাঁসে
নিষ্প্রাণ শুয়ে আছে হাজতের থান ,
এখন আমি বাবা
সর্ব শরীরে কেটে বসে আছে স্মার্ট ফোনের থাবা
ঘরের অবসরে, সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে
অবিরাম সামাজিক
আমাদের ছেলেমেয়ে ট্যাব, ল্যাপটপ নিয়ে
বেড়ে ওঠে, বড় হয়, অতি আধুনিক
এ চাঁদের হাটে
সব অন্যরকম কাটে
দেনা পাওনা আমদানি আর ভবিষ্যৎ
পড়ন্ত বিকেলে, একটু একা হলে
দৃষ্টি আছড়ে পড়ে, সেই হাটের কঙ্কালে
সেই বটগাছ ,সেই ঘাস মাঠ
আমার ছেলেবেলার সেই জমাটি হাট
মুছে গেছে সব, কিছু নেই আর, আনন্দ সংসার
লজ্জায় নুয়ে পড়ে মাথা
পৃথিবী বদলেছে, এটাই আধুনিকতা
নতুন ইতিহাস আর লেখা হবেনা
পুরোনো হলুদ পাতায়
হাট মরে গেছে, তার যৌবন বেঁচে আছে
লাজুক ডায়েরির পাতায়।
=====================
Anindya Paul
Vill-- Jafarpur
PO-- Champahati
PIN-- 743330
PS--Sonarpur
DIST--south 24 Parganas
west Bengal, India
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন