google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re না-ফেরার-দেশে বিশিষ্ট ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ।। পাভেল আমান - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

না-ফেরার-দেশে বিশিষ্ট ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদার ।। পাভেল আমান


না-ফেরার-দেশে বিশিষ্ট ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

 

বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন 'ভাষা আন্দোলন' হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। অথচ, যে ভাষাটির জন্য বাঙালিরা প্রাণ বিসর্জন দিলেন, সেই ভাষাই আজ বহু বাঙালির কাছে চরম অনীহার বিষয়। মাতৃভাষা বাংলা যেন আজ গুরুত্বহীন হয়ে উঠছে বাঙ্গালীদের কাছে। বর্তমান প্রজন্ম বাংলা মাধ্যমিক থেকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াকেই বেশি প্রাসঙ্গিক মনে করছে।এজন্যই তো এখন অনেক বাঙালিরা বলেন, 'জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না।' সেই অনীহাকেই মজার কবিতার রূপ দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন ভবানী প্রসাদ মজুমদার। তাঁর ক্ষুরধার লেখা, শব্দের প্রয়োগ, নজরকাড়া কিছু কথা অনেকের কাছে আজও অজানা। তাঁর এই কবিতার প্রতিটা শব্দ আজকের দিনে বাঙালি পিতা-মাতার কিছু দৈন্যতা তুলে ধরে বৈকি।বাংলা ভাষার প্রতি আমরণ টান, ভালোবাসা, নতুন কিছু গড়ার স্বপ্ন, সর্বোপরি নবপ্রজন্মের মধ্যে এই ভাষার জন্য আবেগ তৈরি করার ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের প্রচেষ্টা আজীবন বাঙালি মনে রাখবে। আজও বাংলা ভাষাকে বাঁচানোর তাগিদে যারা লড়েন, তাদের মুখে স্লোগানের মতোই শোনা যায় এই কবিতা। 
    বর্তমান বাংলা সাহিত্যের তিনি ছিলেন প্রবাদপ্রতিম ছড়াকার। অবশেষে ৭ ফেব্রুয়ারি ৭৪ বছর বয়সে শারীরিক অসুস্থতার কারণে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বাংলার বিখ্যাত ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। তিনি ছিলেন নিপাট মাটির মানুষ, খুব আন্তরিক, ব্যক্তিগত জীবনে খুব সহজ সরল।
    ভবানীপ্রসাদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাওড়া জেলার জগাছা থানার অন্তর্গত দাশনগরের কাছে দক্ষিণ শানপুর গ্রামে ৯ এপ্রিল ১৯৫৩ সালে। তাঁর পিতা নারায়ণচন্দ্র মজুমদার এবং মাতা নিরুপমা দেবী। কবির শৈশব জীবন তাঁর গ্রামেই কেটেছিল। পেশায় ছিলেন একজন নিষ্ঠাবান শিক্ষক। কর্মস্থল ছিল হাওড়া জেলার শানপুর গ্রামের কালিতলা প্রথমিক বিদ্যালয়। পরে তিনি এই বিদ্যালয়টিরই প্রধান শিক্ষকের পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। স্কুলে শিক্ষকতা করেছিলেন ভবানীপ্রসাদ। ছোট ছেলেমেয়েরা ছিলেন তাঁর প্রাণ। তাদের জন্য কিছু করতে পারলে প্রাণ তৃপ্ত হত ভবানীপ্রসাদের। তাই ছড়া লিখতেন তাদের আনন্দ দিতেই। হয়েছিলেন সেই স্কুলের প্রিন্সিপালও। 'ভবানী স্যার' নামে গোটা তল্লাটে দারুণ সুনাম ছিল তাঁর। গ্রামের সবুজ ঘেরা পরিবেশ দেখতে দেখতেই তাঁর বেড়ে ওঠা। প্রকৃতির সৌন্দর্য, সময়ের সঙ্গে মানুষের জীবনের পরিবর্তন, দিনযাপনের আদবকায়দা সবটাই নিজের হৃদয়ে সঞ্চয় করে কলমের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন তাঁর লেখায়।প্রধানত ছোটদের উপযোগী মজার মজার ছড়া-কবিতা লেখায় তাঁর জুড়ি ছিল না। তাঁর প্রকাশিত ছড়ার সংখ্যা কুড়ি হাজারেরও বেশি। ছড়া নিয়ে নিরন্তর নানান রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে ভালোবাসতেন। প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: মজার ছড়া, সোনালী ছড়া, কোলকাতা তোর খোল খাতা, হাওড়া-ভরা হরেক ছড়া, ডাইনোছড়া প্রভৃতি। এছাড়া প্রকাশিত হয়েছে শ্রেষ্ঠ ছড়া সমগ্রও।তিনি সত্যজিৎ রায় ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে লিখেছেন: ছড়ায় ছড়ায় সত্যজিৎ এবং রবীন্দ্রনাথ নইলে অনাথ।বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন সাহিত্য সম্মানও পেয়েছিলেন। 'শিশুসাহিত্য পরিষদ পুরস্কার', 'অভিজ্ঞান স্মারক', 'ছড়া" সাহিত্য পুরস্কার' ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এই কবিকে আমরা কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমাদের শৈশব, আমাদের শিশুরা তাঁর সাহিত্যের কাছেই নিজেদের খুঁজে পাব এবং পাবে।আমাদের বাল্য ও কৈশোর তাঁকে নিয়েই। আমাদের ছোটবেলায় জনপ্রিয় ছড়াকারদের মধ্যে অন্যতম। ছড়া বিষয়টা এখন খুব কমে গিয়েছে। নানারকমের  ছড়ার মধ্যে কিছু ছড়া গভীর জীবনবোধ থেকেও তৈরি হয়। এই বিশেষ ছড়া লেখার গুণ ছিল তাঁর। তিনি এক আলাদা কল্পলোকে নিয়ে যেতেন। তাঁর প্রয়াণ খুবই দুঃখের সংবাদ কিন্তু তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে তিনি আমাদের মধ্যে থেকে যাবেন।' তাঁর লেখা শিশুদের জনপ্রিয় সাহিত্য পত্রিকা সন্দেশে নিয়মিত প্রকাশিত হত। আনন্দবাজার পত্রিকাসহ বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রেও তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। উনি বিরাট একটি পুষ্ট ছড়ার ভাণ্ডার রেখে গেলেন।ওনার লেখায় অনুপ্রাণিত হননি কোনো সময়ে; এমন কেউ আছে বলে মনে হয় না। যুক্তি, ব্যাঙ্গ রস  এমন ভাবে মিশে থাকতো লেখায়;তাতে মজা যেমন থাকতো তেমনি থাকতো শিক্ষাও। বাংলা সাহিত্য জগতে নিঃসন্দেহে এক অপূরণীয় ক্ষতি তার মৃত্যু।আপামর বাঙালি মননে ভবানীপ্রসাদ মজুমদার রয়ে যাবেন চিরকাল তার অমর ও কালজয়ী সৃষ্টির ধারাতে। বাংলা সাহিত্যে একজন সফল জনপ্রিয় ছড়াকার হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় বহু চর্চিত ও পঠিত হয়ে থাকবেন বাঙালি পাঠকের মননে।

=========================================== 


প্রতিবেদক -পাভেল আমান -হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন