Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

ছোটগল্প ।। বিবাগী ।। কুহেলী ব্যানার্জী

বিবাগী  

কুহেলী ব্যানার্জী


সকালে একপ্রস্থ করে সকলেরই চা পর্ব মিটে যায়। কিন্তু শম্ভুকাকা এলে আর একবার সকলেই খায়। সাড়ে নটা থেকে দশটা নাগাদ এটা ছুটির দিনে সকলের জন্যই বরাদ্দ। শম্ভুকাকা অবশ্য বাবা-জ্যেঠাদের কাকা। তা সত্বেও পাড়াশুদ্ধ এমনকি গোটা গ্রামজুড়েই তাকে সকলে ওই নামে  ডাকতো।  আমরাও সেই দেখাদেখি ওই নামেই ডাকতাম।  
        আমাদের বাড়ি এলেই শম্ভুকাকা দাদুর সাথে গল্প জুড়ত। সঙ্গে চলতো চা পর্ব । সে সব লোভনীয় গল্প শুনবার জন্য আমরাও ছুটির দিনটার জন্য সারা সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করতাম। বর্ষার দিনে কেমন করে তাল কুড়োতে যাওয়া হতো কিম্বা ছোট খাল-বিলগুলো বর্ষায় জল ভরে গেলে সেখানে কাঁকড়া-মাছ কিভাবে ধরা হতো, দূর গাংপারের ধার হতে টিয়ার বাসা থেকে কিভাবে ছানাগুলোকে ধরা হতো, কখনো কিপটে নরহরিদাদুর কাছ থেকে সরস্বতী পুজোর চাঁদা না দিলে দাদুর বাগানের ফল-ফুল কিভাবে তোলা হতো তার গল্প ও চলতো। সে সব যেন এক-একটা অভিযান পর্ব বলেই মনে হতো আমাদের। আর গল্পখোর আমরা সেসব হাঁ করে শুনে যেতাম। মনে হতো শম্ভুকাকা রোজ কেন আসে না। তাহলে এমন রহস্য-রোমাঞ্চে ঘেরা গল্পগুলো রোজ শোনা যেত।
   
        ইজি চেয়ারটায় হেলান দিয়ে দাদু আর শম্ভুকাকার সেই সব গল্পগুলো আজ বড় আশ্চর্য ঠেকলেও সবে স্কুল পেরোনো আমার কাছে ছিল এক অফুরান খুশির জগৎ। সে যুগে খেলাধুলো, গান-নাচের পর এগুলোই ছিল আমাদের মূল আনন্দধন।
        তবে শম্ভুকাকা নিজেই ছিল একটা গল্প। আজকের দিন হলে তো তাকে নিয়ে সিনেমা থিয়েটারের চিত্রনাট্যও তৈরি হয়ে যেতো হয়তো। তবে সে সময় কালে গাঁ-ঘরে এমন কাহিনী লেখার মতো চরিত্রের ও অবশ্য অভাব  ছিল না। তবে শম্ভুকাকার সাথে অবশ্য কারও তুলনা চলে না।
        শম্ভুকাকা সরকারি অফিসে কাজ করত। বয়সটা পঞ্চাশ পেরলেও মনে যেন সদা তারুণ্য বজায় ছিল। বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরলে আমাদের বাড়ি থেকেই বোঝা যেতো। আসলে শম্ভুকাকার ছিল নস্যি নেওয়ার অভ্যেস। আর সেই নস্যি নেওয়ার শব্দ কিম্বা তৎপরবর্তি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া স্বরূপ হাঁচি যার অবিশ্বাস্য রকমের বিকটাকার আওয়াজ। আমরা ভাইবোনরা সে সময় হয়তো পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছি কিন্তু তা সত্বেও সব ভুলে আমরা শম্ভুকাকার হাঁচির সংখ্যা গুনতাম। কখনো দশবারোর কম তো হতোই না।  সে একবার শুরু হলে সহজে থামার নাম নিতো না।
         তবে এ নিয়ে সে বয়সে যতই হাসি ঠাট্টা করি না কেন আজ কিন্তু তাঁর কথা মনে পড়লে অসীম শ্রদ্ধাই জাগে। শম্ভুকাকার ছিল এক দরদী মন। যা তাকে গ্রামশুদ্ধ লোকের অপার ভালবাসা দিয়েছিল। বয়স বাড়লেও সকলের প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য সবসময় এক পায়ে খাড়া থাকতো শম্ভুকাকা। সাহায্য চেয়ে কাওকে কখন শুকনো মুখে ফিরে যেতে দেখিনি। কাকিমাও ছিল ঠিক তেমনই। কি এক অপার করুণামাখা মুখ। যে বাড়ি যেত তাকেই ঘরে নাড়ু-মুড়ি যা থাকতো তাই বসিয়ে খাওয়াতো।
      শম্ভুকাকাদের বাড়ির আশপাশটা ছিল বাঁশ, আম, আমড়া, জামরুল গাছে ঘেরা। বাড়ির পাশে ছিল ছোট একটা ডোবা। ডোবার গা লাগিয়ে খামারবাড়ির পরেই ছিল আমাদের বাড়িটা। অনেকটা জায়গা-জমি থাকার দরুন শম্ভুকাকার বাপঠাকুরদার আমলে বেশ কিছু গরিবগুর্বোদের ঘর বসত করার জন্য দিয়েছিল। এই উদার স্বভাবটা বংশপরম্পরাগত ভাবে কাকা মানে শম্ভুদাদু ও পেয়েছিল। এই গরিব মানুষগুলো ছিল কাকার প্রাণ। তারাও অন্ধের মতো তাঁকে ভালবাসত। মাঠেঘাটে মজুরি খাটা মানুষগুলোর কোন দুঃখ কষ্টই সহ্য হত না দাদুর।
      একদিন রাত্রে খাওয়া-দাওয়ার কিছু আগে হঠাৎ দেখি ভীষণ চিৎকার চলছে। শম্ভুকাকা দাদুর গলার আওয়াজ পাচ্ছি। মিলিত কয়েকটি কণ্ঠস্বরের সাথে একটা কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। মিলিত কণ্ঠগুলো অবশ্যই কাকাদের আশ্রিত গরিব মানুষগুলোর। এমনিতে খুব ভাল মানুষ তারা। তবে দোষের মধ্যে দোষ হল দিনমজুরি শেষে অনেকেই নেশা করত। আর সেই থেকেই প্রায় সন্ধ্যেই এমন ঝগড়াঝাঁটি চলতো যে তা কখন কখন হাতাহাতি পর্যন্ত গড়াতো। আর মধ্যস্ততা করতে হতো শম্ভুকাকা আর কাকিমাকেই। আমরাও সেদিনকে সেরকমই কিছু একটা ভেবে বাড়ির সকলেই নিজের কাজ করছি। কিন্তু চিৎকারটা ক্রমে বাড়তে থাকায় বাবা জ্যেঠারা ব্যাপারটা দেখতে বেরিয়ে গেল।  আমিও সঙ্গে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি হাউমাউ করে কান্না জুড়েছে কাকিমা। শম্ভুকাকা নাকি কোন এক আশ্রমে তার জমানো সব টাকা দিয়ে দিয়েছে আর সেখানে নাকি সাধুর কাছে দীক্ষাও নিয়েছে। সাংসারিক বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে গৃহত্যাগী হতে চাই কাকা। আমরা সকলেই বড্ড অবাক হলাম। সদা হাস্যময় আমাদের পরিচিত সেই দাদুকে এক নিমেষে কেমন যেন অচেনা লাগতে লাগলো।
        এরপরের ঘটনা আজ আর খুব স্পষ্ট করে মনে পড়ে না। তবে তারপর থেকে আমাদের সকলের প্রিয় শম্ভুকাকা-দাদুকে আর কোনোদিন আমরা দেখতে পাইনি। তবে তার সেই স্নেহভরা হাসিমাখা মুখখানা আজও ভুলতে পারিনি। ছেলেবেলার ছুটির দিনগুলোতে তার সেই অফুরান গল্পভান্ডার যা কল্পনার জগৎকে ছড়িয়ে দিয়েছিল বহুদূর পর্যন্ত। যার অভাব বোধ করেছি দীর্ঘকাল। আজও স্মৃতির পাতা ওলটালে সেসব দিনের কথাগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
                                                             

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক