Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

স্মৃতিকথা ।। ইনল্যান্ডলেটার থেকে ইন্টারনেট ।। সোমা চক্রবর্তী


স্মৃতিকথা: ইনল্যান্ডলেটার থেকে ইন্টারনেট

সোমা চক্রবর্তী


আমি তখন খুব বেশি হলে ক্লাস টু বা থ্রিতে পড়ি। ভাই আরও ছোট। আমাদের বাড়িতে বাসন মাজার কাজ করত লক্ষ্মীদি। ছোটখাটো রোগা লক্ষ্মীদি নিজের ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে সকালে বিকেলে কাজ করতে আসত। লক্ষ্মীদির মেয়ে ছিল আমার সমবয়সী আর ছেলে ভাইয়ের বয়সী। মেয়েটির সঙ্গে আমি খেলাধুলা করতাম। ওর নাম মিঠু বা মিষ্টি এরকম কিছু ছিল। একদম সঠিক মনে পড়ছে না। লক্ষ্মীদি রোজই মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে তার বরের নামে নালিশ করত। চোখের জল ফেলত। ওর বর নাকি ভয়ঙ্কর কুঁড়ে লোক। কাজকর্ম কিছু করতে চায় না। সারাদিন ঘরে বসে শুয়ে কাটায় আর মাসের শেষে লক্ষ্মীদি মাইনে পেলেই সেইসব টাকাপয়সা নিয়ে নেয়। রোজই এইসব কথা বলত লক্ষ্মীদি। তারপর আবার মায়ের দেওয়া খাবার দাবার যত্ন করে গুছিয়ে বাড়িতে নিয়ে যেত। শুধু ছেলেমেয়ে নয়, ওর অলস অকর্মণ্য বরকে খাবারের ভাগ দিয়ে খাবে বলে। আমার মনে আছে, একদিন মা লক্ষ্মীদিকে বলেছিল, "আচ্ছা তোমার বরকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসো একদিন।" এর কয়েকদিন পর লক্ষ্মীদি বরকে সঙ্গে নিয়ে এল আমাদের বাড়ি। রোগা মত টাকমাথা ছোটখাটো চেহারার একজন লোক। চেককাটা লুঙ্গি আর শার্ট পরা। চোখে মুখে ধূর্ততার ছাপ। আমাদের বাড়িতে নুরুদার সেই প্রথম আসা। মা লোকটার সঙ্গে কথা বলে বুঝিয়ে ওকে রাজি করিয়েছিল আমাদের বাগানটা পরিষ্কার করার কাজ করতে। সেই থেকে কয়েকমাস পর পর নুরুদা আমাদের বাড়ি কাজ করতে শুরু করল। পরে অবশ্য আমাদের পাশের বাড়ি, তারপর পাড়ার অনেক বাড়িতেই বাগানের কাজ করার জন্য ডাক পেত নুরুদা। আমরা যখন বেশ বড় হয়ে গেছি, তখন নুরুদা আর বাগান পরিষ্কার করে না। বাড়িতে বাড়িতে রঙের কাজ করে। তখন নুরুদা রীতিমতো করিতকর্মা লোক। লক্ষ্মীদিকে আর লোকের বাড়ি বাসন মাজার কাজ করতে হয় না। তবু চিরকাল নুরুদা মাঝে মাঝেই আমাদের বাড়িতে "কাকিমা" বলে রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়াত। কোন কাজ আছে কি না জিজ্ঞেস করত। আমাদের বাড়িতেও একবার রঙের কাজ করেছিল নুরুদা। কিন্তু সেসব তো অনেক পরের কথা।

শুরুতে ছুটির দিন দেখে নুরুদা যখন আমাদের বাড়ি কাজ করতে আসত, তখন কাজ করত কম, নারকেল কিম্বা আমগাছের ছায়ায় বসে বিড়ি ফুঁকত বেশি। মা রান্নাঘর থেকে লক্ষ্য করে বেরিয়ে এসে বকাবকি করত। বারবার করে চা বানিয়ে দিত। তখন নিতান্ত অনিচ্ছাসত্বে মুখে একরাশ বিরক্তি মাখিয়ে হাতটাত ঝেড়ে নুরুদা কাজ শুরু করত। আবার বেলা বারোটা বাজতে না বাজতেই কাঁচুমাচু মুখ করে উঠোনের এক কোণায় এসে দাঁড়াত। নীচু গলায় বলত, "কাকা, আজ তাহলে যাই?" এবার বাবার ফায়ার হবার পালা। সকালে দেরি করে এসে, দুপুরে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে দুদিনের কাজ পাঁচদিনে শেষ করত নুরুদা। আমাদের বাড়ির সীমানা ঘিরে তখন পাঁচিল ওঠেনি। কঞ্চির বেড়াঘেরা এক কামরার ছোট্ট বাড়িটা ছিল আমার কাছে স্বর্গরাজ্য। বর্ষার পর দূর্গাপূজার আগে আগে বছরে একবার পুরোনো পচে যাওয়া বেড়া ফেলে দিয়ে নতুন বেড়া বাঁধা হতো। নতুন বাঁশ এনে সেটা লম্বালম্বি চারফালি করে কেটে কঞ্চি তৈরি হতো। লম্বা হিলহিলে সেই কঞ্চিগুলো আড়াআড়ি করে খুঁটিতে বাঁধা হতো নতুন নারকেলের ছোবরার দড়ি দিয়ে। তারপর আরও পোক্ত করার জন্য ছোট ছোট পেরেক দিয়ে সেগুলো খুঁটির সঙ্গে লাগিয়ে দেওয়া হতো। সরু তার দিয়েও বেঁধে দেওয়া হতো যাতে খুলে পড়ে না যায়। অনেকটা প্যান্ডেল বাঁধার মতো আর কি! সকাল থেকে বিকেল গড়িয়ে যেত সম্পূর্ণ বেড়া বাঁধতে। তখনকার দিনে খুব কম লোকের বাড়িতেই ইটের পাঁচিল ছিল। সব পাড়াতেই হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বাড়ি যারা অর্থ বা আভিজাত্যের পরিমাপে আলাদা, তারা ছাড়া বাকি সব বাড়িতে কঞ্চির বেড়াই সীমানা হিসেবে ব্যবহার হতো। আমি অবশ্য এখানে মফস্বলের কথাই এখানে বলছি। শহরের কথা একেবারেই আলাদা। 

গরমের ছুটিতে ট্রেনে করে মামাবাড়ি যাবার সময় স্টেশনে এসে যখন লাল রঙের রেল কোয়ার্টার্স ঘিরে সাদা রঙ করা লোহার বেড়াগুলো দেখতাম, তখন আমি মনে মনে ভাবতাম, "আমি যখন বড় হব, যখন চাকরি করব, তখন আমাদের বাড়িতে ওইরকম সাদা রঙ করা লোহার বেড়া লাগিয়ে দেব। আমাদের বাড়িটার রঙও হবে লাল। তখন আমাদের বাড়িটাও এইরকম সুন্দর দেখাবে। তখন প্রতিবছর আর পুরোনো বেড়া বদলে নতুন বেড়া লাগাতে হবে না। তখন ফাঁকিবাজ নুরুদাটা মহা জব্দ হবে।" ছোটবেলায় সীমানা হিসেবে আমার পাঁচিলের চাইতে বেড়াই বেশি ভালো লাগত। এখনও তাই লাগে। কখনও ভুলেও ভাবতে চাইতাম না যে, আমাদের বাড়িটা ঘিরে একদিন একটা ইটের পাঁচিল হবে। পাঁচিল যখন উঠল, তখন খুশির বদলে মনে মনে হয়তো একটু দুঃখই হয়েছিল আমার, চিরদিনের জন্য বেড়ার রোমাঞ্চ হারিয়ে গেল বলে। বসতভিটের সঙ্গে বেড়া দেওয়া ঘাসে ঢাকা একফালি জমি যেন আজকাল ধূসর একটা স্বপ্নের ছবি বলে মনে হয়। বেড়া ঘেরা বাড়িগুলো সব উধাও হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে উধাও  হয়েছে মায়াবী ছোটবেলাটা আর সরল ভাবনাগুলো।

যাই হোক, যে কথা বলছিলাম, বেড়া বাঁধা হয়ে গেলে বেড়ার গা ঘেঁষে লাগানো হতো বিভিন্ন রকমের গাছ। সবাইকে এক কথায় বলতে শুনতাম, "বেড়াগাছ"। আমরাও তাই বলতাম। তারপর একদিন তাদের নাম সংগ্রহে লেগে গেলাম। কিছু কিছু গাছের কতগুলো ডাকনাম ছিল। যেমন, যে গাছটা সবচেয়ে বেশি লাগানো হতো, সেই গাছটার নাম রাং চিতা। আমরা বলতাম বাঘের চোখ। গাছটা লম্বায় বেশি বড় হতো না। বেড়ার ঠিক পাশে পাশে ফাঁক রেখে রেখে কয়েকটা গাছ লাগিয়ে দিলেই অল্পদিনের মধ্যেই সমস্ত বেড়াটা ছেয়ে যেত গাঢ় সবুজ রাং চিতা গাছে। মোটা মোটা কালচে সবুজ রসালো পাতা। কালচে সবুজ রসালো কান্ড। একটা ডালের ওপর গোল করে ঘিরে ছোট ছোট অনেকগুলো লাল রঙের ফুল ফুটত। ফুলের পাপড়িগুলো সাধারণ ফুলের পাপড়ির মত ছড়িয়ে না থেকে গুটোনো বলে কেমন তিনকোণা আকারের। তাই ফুলগুলোকে আমার ঠিক মাছির মতো দেখতে লাগত। ওই ফুল থেকে আমরা মধু খেতাম। মোটা মোটা পাতাগুলো ছিঁড়ে নিয়ে ভাঁজ করলেই ভাঁজ বরাবর পাতাটা ফেটে যেত। তখন সাবধানে পাতার ফাটা জায়গাটা ফাঁক করলেই পাতার কষ দিয়ে ফাঁকা জায়গাটা ভরে গিয়ে একটা চোখের মত দেখতে লাগত। সেখানে সূর্যের সাতটা রঙ দেখা যেত। সেটাই ছিল আমাদের বাঘের চোখ। কে কত ভালো বাঘের চোখ বানাতে পারে, সেটা হয়ে উঠত একটা উত্তেজনাপূর্ণ খেলা। এক একদিন বিকেলে সারাটা সময় শুধু বাঘের চোখ বানিয়েই আমাদের সময় কেটে যেত।

বেড়াগাছ হিসেবে আর একটা গাছটা খুব ব্যবহার করা হতো। তার নাম ঢোল কলমি। এই গাছগুলো মাঝারি লম্বা হয়। এই গাছের পাতাগুলো হালকা সবুজ রঙের আর পাতলা পাতলা। আকারে অনেকটা পান পাতার মতো। শুনেছি ঢোল কলমির পাতা তেতো হয় বলে নাকি গরু ছাগলে ওই গাছ খায় না। তাই বেড়ালতা হিসেবে খুব ভালো ব্যবহার করা যায়। ঢোল কলমির ফুলগুলো বেশ বড় বড়। দেখতে অনেকটা মাইকের চোঙের মতো। হালকা বেগুনি রঙের পাঁচটা পাপড়ি নিয়ে চারদিক আলো করে বেড়া ঘিরে ফুটে থাকত ফুলগুলো। দূর্গাপুজোর সময় শরতের সোনালী রোদ্দুরে কি অপূর্ব যে লাগত তা বলে বোঝানোর নয়। ফুলের ভেতরের রঙটা গাঢ় বেগুনী। ছোটবেলায় ফুলের ভেতরের ওই গাঢ় বেগুনী রঙ দেখে আমার মনে হতো, ফুলটার ভেতর থেকে যেন কোন রহস্যলোকের হাতছানি আসছে। মনে মনে আমি নিশ্চিত ছিলাম, ওই ফুলের ভেতরে পরীরা থাকে। কিম্বা পরীদের দেশে যাবার রাস্তা ওই ফুলের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। পরীরা খুব ছোট্ট। ঠিক একটা ফড়িং কিম্বা প্রজাপতির মতো। হালকা আর ফুরফুরে পাখনা মেলে উড়ে উড়ে বেগুনি ফুল থেকে ওরা বেরিয়ে আসে। সারাদিন আলোয় আলোয় খেলে বেড়িয়ে সন্ধ্যা হলে ফুলের গাঢ় বেগুনী অভ্যন্তরে টুক করে ঢুকে যায়। কতদিন যে একদৃষ্টে ফুলগুলোরদিকে তাকিয়ে থাকতাম, তার ঠিক নেই। বিশ্বাস করতাম, একদিন না একদিন আমি পরীর দেখা পাবই। সরল হবার একটা মজা হচ্ছে, চারপাশের পৃথিবীটাও সরল বলে মনে হয়। ছোটদের পৃথিবীটা তাই এত সুন্দর। ছোটরা যে কোন কিছু করতে পারে। কারণ, ছোটরা বিশ্বাস করে, বিশ্বাস করতে পারে। ঢোল কলমি এখন আর প্রায় দেখাই যায় না। এই গাছ নাকি এখন প্রায় বিলুপ্ত। সেইসঙ্গে লুপ্ত আমাদের রূপকথা ভরা ছোটবেলা।

তেলাকুচার লতাও বেড়ে উঠত আমাদের বেড়ায়। হয়তো নিজে থেকেই হতো। তেলাকুচার ফুল সাদা রঙের আর কাঁচা ফলগুলো সবুজ। পেকে উঠলে সেগুলো লঙ্কার মত টুকটুকে লাল হয়ে যেত। এই গাছের কচি পাতা আর কাঁচা ফল খাবার জন্য নিয়ে যেত অনেকে এসে। ছোটবেলায় সবার মুখে শুনতাম, এই গাছের নাকি উপকারিতা অনেক। আমাদের বাগানে পান পাতার মতো দেখতে আর একরকম লতা দেখা যেত। বড় আমগাছটায়, লেবুগাছে ছেয়ে যেত। বাবা বলত, "এটা হল গুলঞ্চ। এর উপকারিতার সীমা নেই।" গুলঞ্চ লতা জন্মালে কখনও কেটে ফেলা হতো না। এই গাছে হলুদ ফুল আর সবুজ ফল হতো। পেকে গেলে এই ফলও লাল রঙের হয়ে যেত। একবার বড় আম গাছটা ছেয়ে গিয়েছিল ধুঁধুঁল বা ধুন্দলের লতায়। ধুন্দলকে কেউ আবার বলে পোরোল। ঠিক ঝিঙের মত দেখতে একটা ফল। ফলটা সবজি হিসেবে কাঁচা খাওয়া যায়। কিন্তু পাকলে তখন আর সেটা খাওয়া যায় না। সম্পূর্ণ ফলটা শুকিয়ে ছোবরা হয়ে যায়। তখন তো আর স্নান করার জন্য সিন্থেটিক ছোবরা কিনতে পাওয়া যেত না। মুদির দোকানে ধুন্দলের ছোবরা, কেউ কেউ বলত ছোবা, সেটাই পাওয়া যেত। খোসাটা ছাড়িয়ে নিয়ে সেই ছোবরা ব্যবহার করা হতো। সেবার এত ধুন্দল হয়েছিল যে, আমগাছের পাতাগুলোই দেখা যাচ্ছিল না। তখন আমাদের বাড়িতে যেই আসত, সেই ফেরার সময় পাকা ধুন্দল সঙ্গে করে নিয়ে যেত। আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী বা বাড়িতে কাজ করতে আসত যারা, তারা সবাই। বাবার অফিসের কিম্বা মায়ের স্কুলের বন্ধুরাও বাদ যায়নি। সবাই আমাদের বাড়ি থেকে ধুন্দল নিতে আসত বলে আমি আর ভাই খুব মজা পেতাম। তারপর একদিন নুরুদা ধুন্দলের লতাটা কেটে ফেলে মুক্তি দিয়েছিল আম গাছটাকে।

 "কচার বেড়া" কথাটা শোনেনি এমন বাঙালি বোধহয় আমাদের সময় বিরল ছিল। এও একরকম বহু প্রচলিত বেড়া গাছ। আসল নাম ভেরেণ্ডা। অনেকে বলে ভেন্না। কোথাও বা বলা হয় রেড়ি। এর ইংরেজি নামটা আরও অদ্ভুত। সম্ভবত এর বীজ থেকে তেল তৈরি হয় বলেই হয়তো একে বলে castor-oil plant। বাংলা সাহিত্যে বহুবার বহু জায়গায় রেড়ির তেলের ('রেড়ির তেলের প্রদীপ' ইত্যাদি) যে উল্লেখ আছে, সেই রেড়ির তেল তৈরি হয় এই ভেরেণ্ডা গাছের ফলের বীজ থেকেই। যদিও বেড়া গাছ হিসেবেই এর পরিচিতি বেশি, কিন্তু এর পাতা আর ফলের অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। রেড়ির তেল নাকি ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে। এই গাছের পাতাগুলো অনেকটা পেঁপে পাতার মত দেখতে। ফলগুলো কাঁটাওয়ালা। এত গুণ থাকা সত্বেও বাংলা প্রবচনে এর জায়গাটা একটু অবহেলা ভরা। কেউ কোন কাজ না করলে তাকে বলা হয় "বসে বসে কি ভেরেণ্ডা ভাজছিস" ইত্যাদি। গাছগুলো সম্পর্কে পড়তে গিয়ে জানলাম, এই ভেরেণ্ডা বা ভেন্না বা কচা গাছও নাকি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।

আমাদের বাড়িতে একটা অতসী ফুলের গাছ ছিল। অতসী গাছ সরু আর লম্বা হয়। লম্বা লম্বা নরম পাতাগুলোর ওপরের দিকের রঙ গাঢ় সবুজ আর নীচের দিকের রঙ হালকা সবুজ। এই গাছের ডালগুলোও সবুজ রঙের। ডালের আগায় হলুদ রঙের অতসী ফুল দেখতে ঠিক প্রজাপতির মত দেখায়। হয়তো অতসী ফুলের ভত গায়ের রঙ বলে দেবী দূর্গার এক নাম অতসী। এই গাছের ফলগুলো কাঁচা  অবস্থায় সবুজ। অনেকটা কড়াইশুঁটির মত দেখতে। শুকিয়ে গেলে সেগুলো কালচে হয়ে যায়। তখন সেগুলোকে নাড়ালে ঝুন ঝুন করে শব্দ হয়। ফুলগুলোতে চাপ দিলে ফুলের আগা থেকে ডিমের কুসুমের মত হলুদ রঙের পরাগ বেরিয়ে আসে। অতসী ফুলের আমদানি সম্ভবত ভারতের বাইরে থেকে। আজকাল আর এই গাছটাও দেখতে পাওয়া যায় না। সন্ধ্যাবেলায় ফোঁটা সন্ধ্যামালতী ফুলের গাছ থেকে কালো থানার মত বীজ সংগ্রহ করতাম কি পরম আগ্রহে! সন্ধ্যামালতী ফুলের গাছও আজকাল আর চোখে পড়ে না। আমাদের বাড়িতে গাঢ় গোলাপি রঙের নাইন ও ক্লক ফুটত ঠিক সকাল ন'টার সময়। এই প্রজাতির নাকি আরও গাছ আছে। কেউ সকাল চারটের সময় ফোটে। এদের একসাথে টাইম ও ক্লক বলে। তবে আমি শুধু নাইন ও ক্লকই দেখেছি। বাগান ভরে কাঞ্চন, হাস্নাহানা, গন্ধরাজ, কামিনি এই সবকটি ফুলই একসময় ফুটত আমাদের বাড়িতে। প্রত্যেকটা ফুলই সাদা রঙের হয় আর প্রত্যেক ফুলেরই গন্ধ অসাধারণ। কামিনি গাছটা এখনও আছে পাঁচিলের গা ঘেঁষে গেটের পাশে। অনেককেই বলতে শুনতাম, কামিনি ফুলের গন্ধে সাপ আসে। সাপ তার জিভের সাহায্যে গন্ধ বুঝতে পারে। ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে অনেক সাপও দেখেছি। কিন্তু কামিনি ফুলের গন্ধে সাপ এসেছিল কিনা সেটা আমি জানি না।

ক্লাস ওয়ানে আমাকে ভর্তি করা হয়েছিল পাড়ার প্রাইমারি স্কুলে। স্কুল বসত বেলা এগারটায়। আমার স্কুলে যাবার সঙ্গী ছিল পাড়ার দুয়েকজন বন্ধু। আমরা সবাই একই ক্লাসে পড়তাম। বড় রাস্তা দিয়ে যেমন স্কুলে যাওয়া যেত, তেমনই পাড়ার ভেতর দিয়েও যাওয়া যেত। পাড়ার ভেতর দিয়ে একটু ঘুরপথ হতো, কিন্তু আমরা ওই পথই বেশি পছন্দ করতাম। পাড়ার ভেতরের পথগুলো ছিল জালের মতো। ঘুরে ফিরে একটার সঙ্গে আর একটার সংযোগ থাকত। আমরা মনের আনন্দে এ পথ ও পথ ঘুরতে ঘুরতে যেতাম আর আসতাম। আমাদের পাড়ার পেছনেই ছিল একটা বাঁশ বাগান। বাঁশ বাগানের ভেতর দিয়ে গেলে একটু তাড়াতাড়ি হতো। সবাই বলত, বাঁশ ঝাড়ের গোড়ায় সাপের বাসা থাকে। কেউ বলত, বাঁশ বাগানে ভূত থাকে। তখন সেই ভূতের গল্প হিসেবে পথের ওপর বাঁশ গাছ নুয়ে পড়ার গল্পটার খুব চল ছিল। কথাগুলো সব মনে মনে ঠিক বিশ্বাস করতাম না। আবার সম্পূর্ণ অবিশ্বাস করতেও পারতাম না। সব মিলিয়ে দিনের বেলাতেই বাঁশ বাগান দিয়ে যেতে আমাদের একটু ভয় ভয় করত। কিন্তু তবু অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় ওখান দিয়েই আমরা যেতাম। একবার এক গরমের ছুটির দুপুরে সত্যি সত্যিই বাঁশ গাছের গোড়ায় মস্ত বড় দুটো সাপ দেখেছিলাম। যারা দেখতে পেয়েছিল, তারা হই হই করে ছুটে আসছিল আর বলছিল, "সাপের শঙ্খ লেগেছে"। 

বাঁশতলাটা সবসময়ই খুব ঠাণ্ডা আর ছায়া ছায়া থাকত। ভেতরে দাঁতনের ঘন ঝোপ আর বিছুটির জঙ্গল ছিল। মাঝখান দিয়ে সরু পায়ে চলা পথ। বিছুটি পাতা গাঢ় সবুজ রঙের। গাছটার পাতার ওপরনীচ আর সমস্ত ডালপালা সব জায়গা অত্যন্ত সূক্ষ্ম রোমে ঢাকা। ঠিক শুঁয়োপোকার মত। হাতের পাতা ছাড়া গায়ের আর যে কোন অংশে বিছুটি পাতার স্পর্শ লাগলেই সেখানে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। তারপর জ্বালা করে জায়গাটা ফুলে ওঠে। দুষ্টুমি করে বা শত্রুতা করে ওই পাতা গায়ে লাগিয়ে দিলেই হয়েছে আর কি! বিছুটি পাতাকে আবার ছোতরা পাতা বা চোতরা পাতাও বলে অনেকে। আপাতভাবে বিপজ্জনক এই পাতারও নাকি অনেক ওষধিগুণ রয়েছে। অবশ্য আমাদের দেশের প্রায় সব গাছপালারই কিছু না কিছু গুণ রয়েছে বলে পড়েছি। বিশেষ করে লতা আর গুল্ম জাতীয় গাছ। দাঁতনের যে ভালো নাম আশশেওড়া, সে কথা তখন আমরা জানতাম না। দাঁতনকে কেউ কেউ আবার বলে মটকিলা। দাঁতনের ডাল থেকে ছোট একটা টুকরো কেটে নিয়ে তার একপাশটা দাঁত দিয়ে চিবিয়ে ছিবড়া বানিয়ে নিয়ে তাই দিয়ে লোকে দাঁত মাজত। ওই জিনিসটাকেই বলা হয় দাঁতন। আর ওটা দিয়ে দাঁত মাজাকে বলে দাঁতন করা। গ্রামগঞ্জে নিমের ডালকেও লোকে দাঁতন হিসেবে ব্যবহার করত। মনে হয় সেই জন্যই আশশেওড়া গাছের ডাকনাম দাঁতন হয়ে গেছে। ছোটবেলায় আমিও কয়েকবার মেজে দেখেছি। কিন্তু আমাদের কাছে দাঁতনের মাহাত্ম্য ছিল সম্পূর্ণ অন্য কারণে। দাঁতন পাতা ছিল বিছুটি পাতার প্রতিষেধক। একেবারে অব্যর্থ ওষুধ। কোথাও বিছুটি পাতা লেগে গিয়ে জ্বালা করলে সেখানে খানিকটা দাঁতন পাতা থেতো করে তার রসটা লাগিয়ে দিলেই জ্বালা কমে যাবে। খেলাধুলা করতে ঝোপজঙ্গলে গিয়ে বিছুটি পাতা হাতে পায়ে লেগে যাওয়া ছিল আমাদের রোজকার ঘটনা। তাই দাঁতন আমাদের কাছে খুবই আদরের গাছ ছিল। দাঁতনের ফলগুলো দেখতে হতো ঠিক ছোট ছোট টমেটোর মতো। একটা ডালের আগায় একথোকা গুড়ি গুড়ি ফল হতো। কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের কিন্তু পাকা ফলগুলো গোলাপি থেকে ক্রমশ লাল রঙের হয়ে উঠত। আমাদের রান্নাবাটি খেলার সময় দাঁতনের ফল হতো আমাদের খেলার রান্নাঘরের টমেটো।

বাড়ি থেকে স্কুল আবার স্কুল থেকে বাড়ি। এইটুকুই ছিল সেসময় আমার গোটা জগত। তাই যতটা সম্ভব সেই জগতটাকে বাড়িয়ে তুলতাম আজ এই রাস্তা কাল ওই রাস্তা দিয়ে আসা যাওয়া করে। পথের ধারে ধারে সবুজ ঝোপজঙ্গল। বিছুটি, দাঁতন ছাড়াও সেখানে রয়েছে শিয়ালকাঁটার ঝোপ। উঁকি মারছে হাতিশুঁড়ের আগা। সেই ঝোপে ধুতরা আকন্দ আর ভাঁটফুলের ঠেসাঠেসি। ভাঁটফুলের আর একটা প্রচলিত নাম ঘেঁটু। শেষের তিনটে ফুলের নামের সঙ্গে অনেকেই হয়তো পরিচিত। কারণ এই ফুল শিব ঠাকুরের খুব পছন্দ। শুনেছি শিবরাত্রির দিন এই জংলা ফুলগুলোর দামই হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। আমরা ছোটবেলায় ঝোপঝাড় ভরে থাকতে দেখতাম এইসব ফুলে। হাতিশুঁড় পাতা অনেকটাই বিছুটি পাতার মতো দেখতে। তবে এদের রোম থেকে চুলকানি হয় না। গাছের প্রত্যেকটা ডাল নরম আর সবুজ। সোজাসুজি অনেকটা উঠে আগার কাছটায় বেঁকে গিয়ে ঠিক যেন হাতির শুঁড়ের মতো দেখায়। বাাঁকানো অংশটায় অনেকগুলো ছোট ছোট সাদা বা হালকা বেগুনি ফুল ফোটে। দেখতে ভারি সুন্দর হলেও এই গাছের পাতায় একটা উটকো গন্ধ আছে। শিয়ালকাঁটা ফুলগুলো হলুদ রঙের। হালকা ফুরফুরে পাপড়ি। পাতাগুলোর প্রত্যেকটা আগায় কাঁটা থাকে। সবুজ রঙের ফলগুলোও কাঁটাওয়ালা। এই ফুলের বৃন্ত বা বোঁটা নেই। দেখে মনে হয় ফুলটা যেন সরাসরি একটা পাতার ঝুড়িতে বসানো। একবার উঁচু ক্লাসের একটা ছেলে দুষ্টুমি করে একটা শিয়ালকাঁটা ফল একটা মেয়ের লম্বা চুলে লাগিয়ে দিয়েছিল বলে হেড মাস্টারমশাই ছেলেটাকে সকলের সামনে বেত দিয়ে প্রচণ্ড মেরেছিলেন। আমরা শিয়ালকাঁটা ফুল তুলে তার এক একটা পাপড়িতে জোরে ফুঁ দিতাম। শিসের মতো একটা তীক্ষ্ম শব্দ বের হতো। তখন কেই বা জানতো যে মহাশয়দের আমদানি সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ মেক্সিকো থেকে। এই গাছেরও নাকি গুণ অসীম।

মাঠেঘাটে, রাস্তার পাশে পাশে আর একরকম ঝুপসি গাছ দেখতে পেতাম ছোটবেলায়। কেমন বুনো বুনো একটা গন্ধ পাওয়া যেত গাছ আর পাতা থেকে। কিন্তু গন্ধটা নাকে এলে বেশ ভালো লাগত। কেমন সতেজ ভাব ছিল গন্ধটায়। পাতাগুলো বেশ বড় বড় আর কালচে সবুজ রঙের। গাছটাতে সাদা রঙের ছোট ছোট ফুল ফুটত। প্রথম অবস্থায় ফুলগুলো ঠিক ফুলকপির মত দেখতে লাগত। আমাদের খেলাঘরের রান্নায় ওই ফুল তুলে নিয়ে এসে আমরা ফুলকপি বানিয়ে রান্না করতাম। কিন্তু কিছুদিন পর যখন সমস্ত পাপড়ি মেলে সম্পূর্ণ ফুটে যেত ফুলগুলো, তখন আর ওদের ফুলকপির মত দেখাত না। একসময় চোখের সামনে থেকে হারিয়ে গেল সেইসব আগাছা বুনোফুলের দল। খুঁজতে খুঁজতে অনেক পরে জেনেছি যে ওই গাছের নাম বন মটমটিয়া। সবুজ ঝোপ ভরে আর একরকম বিন্দু বিন্দু সাদা কি যেন ফুল ফুটে থাকত। তার নাম পার্থেনিয়াম তাও তখন জানতাম না। পুটুসের ঝোপ তো অনেক দেখেছি। পাড়ায়, রাস্তার ধারে, ট্রেনে করে যেতে যেতে। হালকা বেগুনি, লাল আর হলুদ ছোট ছোট থোকা থোকা ফুলগুলোর কি বাহার! সত্যিই কি রূপে তারা গোলাপ বা রজনীগন্ধার সমকক্ষ নয়? আর গুণের কথা আজ না হয় বাকিই থেকে যাক। বিভূতিভূষণ কিম্বা বুদ্ধদেব গুহ তখনও পড়িনি। তবু ওই নাম না জানা ফুলেরা ছোটবেলার স্মৃতিগুলোকে আজও উজ্জ্বল করে রেখেছে।

ঝোপে জঙ্গলে কালচে সবুজ পাতা আর হাঁটু পর্যন্ত ঝুপসি গাছের ডালগুলো ভরে বেগুনি রঙের বনফুল ফুটে থাকতে ছোটবেলায় অনেকেই দেখেছে। ফুলগুলো অনেকটা কলকে ফুলের আকারের। বেগুনি রঙের পাপড়ি গুলো খুব পাতলা আর ফুলের একদম ভেতরটায় গাঢ় নীল রঙ। গাছটার বেশিরভাগ পাতাগুলোই সবসময় পোকায় খাওয়া থাকত। সেই ফুলের নাম নাকি পটপটি ফুল। এর আদি নিবাসও দক্ষিণ আমেরিকা। আমরা এই গাছকেও আগাছা বলেই জানি। কিন্তু এই গাছের শিকড় নাকি মূত্রনালীর পাথর অপসারণে কাজে লাগে। আর এক ধরনের জংলা গাছ ঝোপঝাড়ে খুব দেখতাম ছোটবেলায়। পাতাগুলো খানিকটা লম্বাটে আর পাতার চারধারটা ছোট ছোট খাঁজ কাটা। এই গাছের ডাল আর পাতারা খুব নরম আর পাতায় ঝাঁঝালো গন্ধ। একটা লম্বা মঞ্জরীতে পাতা আর ফুল খাঁজে খাঁজে সাজানো থাকে। কালচে সবুজ রঙের পাতার ফাঁকে ফাঁকে গাঢ় বেগুনি রঙের ছোট ছোট ফুল। এই ফুলের নাম গোবুরা। এই ফুলে মধু হয়। মঞ্জরীর সবুজ ফলের মত জিনিসগুলোয় বীজ থাকে। এই গাছেরও অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। তবে এখন আর এই গাছ দেখা যায় কিনা জানি না। বাসক, তুলসী, থানকুনি, কুলেখাড়া এইসব গাছের উপকারিতার কথা কে না জানে! যাদেরই বাড়িতে একটুখানি জমি থাকত,  তাদেরই বাড়িতে এইসব গাছ বেশিরভাগ সময় থাকত। আমাদের বাগানেও এই সব গাছ একদিন অনেক পরিমাণে হতো। আমরা খেতাম। লোকজন এসে নিয়েও যেত। বাসক পাতার একটা গাছ আমাদের বাড়িতে কিছুদিন আগে পর্যন্তও ছিল। এই গাছের পাতা দেখতে খানিকটা আমপাতার মতোই লম্বা লম্বা তবে আমপাতার চেয়ে অনেক পাতলা। সাদা সাদা ছোট ছোট ফুল ফোটে। বাসক পাতা সর্দিকাশির অব্যর্থ ওষুধ। গাছটা যতদিন পর্যন্ত ছিল, আমরা ছাড়া আশেপাশের অনেকে, এমনকি পথচলতি অজানা মানুষ এসেও বাসক পাতা চেয়ে নিয়ে যেত। ছোটবেলায় দেখা আগাছা গাছের সন্ধান করতে গিয়ে চকচকে উজ্জ্বল সবুজ রঙের পানপাতার আকারের খুব ছোট লতা লুচি পাতা গাছের একখানা গালভরা নাম পেলাম- পেপেরোমিয়া। এই গাছ নাকি শাক হিসেবে খাওয়া যায় আর এর ভেষজগুণও অবাক করার মত।

আমার মামাবাড়ির ঠিক পাশে একটা মস্ত বড় পুকুর ছিল। ছুটিতে মামাবাড়ি গিয়ে যখন থাকতাম, দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেতাম একদল হাঁস সারাদিন ধরে নিশ্চিন্ত হয়ে সাঁতার কেটে চলেছে। আমার সেজো মামা ছুটির দিনে ওখানে স্নান করতে যেত। খুব ভালো সাঁতার কাটত সেজো মামা। আমার মা আর মামামাসিরা সবাই সাঁতার কাটতে জানে। ওই পুকুরেই নাকি শিখেছে। আমি আর আমার সমবয়সী মামতুতো বোন পুকুরপাড়ে বসে অবাক হয়ে মামার সাঁতার কাটা দেখতাম। ওই পুকুরটার ধারে ধারে ছিল কলাবতী ফুলের গাছ। গাছ না বলে ঝোপ বলাই বোধহয় ভালো। আগুন রঙা লাল আর হলুদ কমলা অনেকরকম রঙ হয় ফুলের। পাতাগুলো বড় বড়। অনেকটা কলাপাতার মতই দেখতে। সেই সময় থেকেই কলাবতী ফুল আমার ভীষণ ভালো লাগে। তখন অনেক পুকুরের ধার ঘেঁষেই কলাবতীর ঝোপ হয়ে থাকত। আজকাল পুকুরই দেখা যায় না। আর কচিৎ কদাচিৎ দেখা গেলেও তাতে টলটলে জল কই? আর কলাবতীর ঝোপ? তার তো প্রশ্নই নেই। কে জানে, তারাও আজ বিলুপ্তির পথে কি না! পিসির বাড়ি যাবার পথে বাজারের পরই টাকী রোডের ওপর সুটী নদী। অতীতে নাকি এই নদীর আসল নাম ছিল সুবর্ণবতী। তার ওপর সেতু।  নদী এখন মজে গিয়ে প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় ইতিহাসের নিরিখে একটা সময় এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। যাই হোক, এখানে এখন আর সেই গল্প নয়। সুযোগ পেলে অন্য কোন সময় না হয় সেই গল্প হবে। বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়ে প্রতি রবিবার আমরা পিসির বাড়ি চলে যেতাম। সুটী নদীতে এখন আর একটুও জল না থাকলেও তখন সামান্য জল ছিল। তার মধ্যেই ভরে থাকত কচুরিপানা। আসা যাওয়ার পথে আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আজও কচুরিপানা ফুল আমার ভীষণ ভালো লাগে। একবার আমার সেই অপার মুগ্ধতা দেখে বাবা আমাকে রাস্তার ওপর দাঁড়াতে বলে তরতর করে নেমে গিয়েছিল ঢালু পাড় বেয়ে। একটা কচুরিপানা ফুল খুব যত্ন করে তুলে এনে আমার হাতে দিয়েছিল। আমি সেদিন কত যে খুশি হয়েছিলাম, তা বলে বোঝাবার নয়। সারাদিন ধরে আলতো ভাবে ফুলটাকে ধরে আছি। হালকা বেগুনী থোকা একখানা ফুল। প্রত্যেকটা ফুলের একখানা করে পাপড়িতে গাঢ় বেগুনি রঙের ভেতর একটা করে হলুদ ছোপ। অনেকটা ময়ূরের পাখার মত। ফুলটায় খুব মৃদু জলজ গন্ধ। আমাকে দেখাবার জন্য বাবা ফুলের সঙ্গে দুটো সবুজ পাতাও তুলে এনেছিল। পাতাগুলো মোটা ফোলা ফোলা আর তেলতেলে। উঁচু ক্লাসে বিজ্ঞান পড়ার সময় কচুরিপানা নিয়ে আরও জেনেছিলাম। কিন্তু তথ্য বাদ দিয়ে শুধু ওর রূপটাই আমার মনকে ভরে রেখেছে। কোন এক ব্রাজিলের পর্যটক নাকি সুদূর দক্ষিণ আমেরিকা থেকে কচুরিপানাকে এ দেশে নিয়ে এসেছিল। পড়ে আমি ভেবেছি, সেও হয়তো ঠিক আমারই মত এই ফুলটাকে ভালোবেসেছিল। কচুরিপানা পুকুরে জন্মালে পুকুরের জল নষ্ট হয়। এটা একটা জলজ আগাছা- এই কথা জেনেই অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু কচুরিপানার সত্যিই অনেক গুণ। পৃথিবীতে যত লতা আর গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ রয়েছে, তার মধ্যে ওষধি গুণ নেই এমন উদ্ভিদ বোধহয় বিরল।

আমাদের বাড়ির পাশে বিশাল একটা মাঠ ছিল। মাঠের শেষ প্রান্তে একটা ভাঙা পাঁচিল। তার ওপাশে ছিল একটা বিশাল বাগান। ফুলের বাগান নয়। ফলের বাগান। সবাই বলত মালির বাগান। কেন বলত, কেই বা সেই মালি আমি জানতে পারিনি কখনও। তবে এটুকু জানতাম যে, চেনাজানা এমন কোন ফল নেই যেই গাছ ওই বাগানে ছিল না। আম জাম কাঁঠাল জামরুল এইসব অতি পরিচিত ফলের গাছগুলো তো ছিলই। তাছাড়াও ফলসা কুল করমচা কামরাঙা বৈঁচি আতা তাল আরও অনেক রকমের গাছ ছিল। বাগানটার পাঁচিল বেশিরভাগ জায়গাতেই ভাঙা ছিল। ভেতরে গেলে কেউ নিষেধও করত না। পাশের পাড়া থেকে অনেক ছেলেমেয়েরা এসে ফল পাকুড় নিয়ে যেত। কিন্তু বাড়ির কড়া শাসনের জন্য আমি কখনই যাইনি। শুধু একবার কেন যেন ভাইবোনেরা মিলে ভাঙা পাঁচিল টপকে ওই বাগানের মধ্যের পথটা দিয়ে কোথাও গিয়েছিলাম। একটা মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। আমার পিসতুতো দিদি বলেছিল, "পাকা আতার গন্ধ"। বাজার থেকে বাড়িতে পাকা আতা তো কতবার আনা হয়েছে। কিন্তু সেই আতায় ওইরকম গন্ধ কখনও পাইনি।

পিসির বাড়িতে একটা ফলসা গাছ ছিল। ফলসা গাছে হলুদ হলুদ ছোট ছোট ফুল ফুটত আর করমচার মত ছোট ছোট ফল। গরমকালে ফলসায় ভরে যেত গাছের ডালগুলো। ফলসা কাঁচা অবস্থায় সবুজ আর পাকলে কালচে বেগুনি রঙের হতো। ফলসা গাছের ডাল খুব সরু। ওই গাছে ওঠা যায় না। পাকা ফলগুলো উঁচু ডালে ঝুলত। গাছটা ঝাঁকা দিলে টুপটাপ করে মাটিতে পড়ত। আমরা কুড়িয়ে নিয়ে খেতাম। পাকা ফলসা খেতে অপূর্ব। পিসিরা ওই বাড়িটা বিক্রি করে আমাদের পাড়ায় চলে এসেছিল। সেই থেকে এই পর্যন্ত আর ফলসা খাওয়া হয়নি আমার। জানি না, আমাদের এখানে ফলসা গাছ এখন আর আছে কি না! সম্ভবত বাজারেও খুব একটা ফলসা পাওয়া যায় না। কুলের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েকটা কুল গাছ ছিল। টোপা কুল আর নারকেলি কুল। এখনকার দিনে অবশ্য শীতকালে সরস্বতী পূজার আশেপাশে বাজারে কুল পাওয়া যায়। কিন্তু সেই কুলের মধ্যে ছোটবেলার কুলের সেই টক মিষ্টি স্বাদটা পাওয়া যায় না। মনে মনে একটা ছবি ভেসে ওঠে, পড়ন্ত বিকেলে পায়ে এক হাঁটু ধুলো মেখে একদল ছেলেমেয়ে ঝোপঝাড় অথবা মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে। প্রত্যেকের বাঁ হাতের চেটোয় খানিকটা নুন আর ডান হাতে আর জামার পকেট বোঝাই করা কাঁচাপাকা কুল। সবার মাথার চুল এলোমেলো। খেলতে খেলতে সবাই ক্লান্ত। কুল খেয়ে খেয়ে দাঁত টকে গেছে তবু প্রাণে ধরে বাদবাকি কুলগুলো না পারছে ফেলে দিতে, না পারছে কাউকে দিয়ে দিতে। পাড়ার একমাত্র পুকুরটা ছিল সমাদ্দারবাড়ির। নিতাই খুড়ো পুকুরটার দেখাশোনা করত। পুকুরের চারদিকে অনেক কুল গাছ। একটা করমচা গাছও ছিল। কিন্তু খুড়োর ভয়ে কোন বাচ্চার সাহস ছিল না সেই সব গাছে হাত দেবার। এখন আর কুল, করমচা বা কামরাঙা গাছ কোথাও দেখতে পাই না। বাজারে অবশ্য মাঝে মাঝে কামরাঙার দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু ফলসা বা করমচা দেখিনি আমি।


আমরা ছোটবেলায় কচুপাতা দিয়ে প্রজাপ্রতি আর ফড়িং ধরতাম। দুহাতে দুটো কচুপাতা নিয়ে চুপি চুপি কাছে গিয়ে খপ করে ফুলের ওপর বসে থাকা প্রজাপিকে ধরে ফেলতাম। একটু কাছ থেকে দেখে আবার উড়িয়ে দিতাম। অনেকে আবার খালি হাতেও প্রজাপতি বা ফড়িং এর পাখনাটা ধরে ফেলত। আমিও একবার দুবার ধরে দেখেছি। ভালো লাগেনি। প্রজাপতি হাতে ধরলে হাতের আঙুলে ওর পাখনার গুঁড়ো গুঁড়ো রঙ লেগে যায়। সেই রঙ অতসী ফুলের রেণুর মতো নরম কিম্বা পাউডারের মত। অনেক ছেলেমেয়ে ফড়িং ধরে তার লেজে সেলাই করার সুতো বেঁধে নিজের সঙ্গে নিয়ে ঘুরত। এই জিনিসটাও আমার ভালো লাগত না। আমি কখনও কোন প্রাণীকে বন্দী করে ধরে রাখতে চাইনি। রাখিওনি। এই খেলায় বেশিরভাগ সময়ই ফড়িংটার ক্ষতি হতো। কিন্তু যারা করত তারা সেটা বুঝতে চাইত না। ছোটরা অনেক সময় অনেককিছু বোঝে না। বুঝতে চায় না। তাই কখনও কখনও ছোটদের খেলাধুলা তাদের অজান্তেই নিষ্ঠুরতার সীমা ছাড়ায়। এটাও সেইরকম একটা খেলা ছিল। আজ ফেলে আসা সবকিছুর কথা বলতে বসেছি। তাই এই কথাটাও উল্লেখ করলাম। 

আমাদের ছোটবেলায় দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি। আমরা সবাই জানি, রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত যাবতীয় চিঠিপত্র এখন বিশ্ববিখ্যাত পত্রসাহিত্য। ফলে সবসময়ই চিঠি সমসাময়িক  একটা গুরুত্বপূর্ণ দলিল। চিঠি লেখা হতো খামে, পোস্টকার্ডে কিম্বা ইনল্যান্ডলেটারে। খামের চিঠি আলাদা কাগজে লিখে, খামের ওপর ঠিকানা লিখে ডাকটিকিট লাগিয়ে ডাকে ফেলতে হতো। খামের চিঠি ছিল সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। যত ইচ্ছে ততটাই লেখা যায়। খুব ভারিক্কি আর ব্যক্তিগত। তখনকার দিনে পোস্টকার্ড ছিল হলুদ রঙের একটা মোটা কাগজ। তার একপিঠে লেখার জায়গা। অন্য পিঠের অর্ধেকটা ফাঁকা। বাকি অর্ধেক ঠিকানা লেখার জায়গা। সেইখানে তিনটে লাইন টানা আর ওপরে একটা বাঘের ছবি। বাঘের ছবিটা হল ডাকটিকিটের পরিপূরক। পোস্টকার্ড একেবারে খোলামেলা জিনিস। পিওন থেকে পোস্টমাস্টার- যে কেউ চাইলে সেই চিঠিতে চোখ বোলাতে পারে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতো ইনল্যান্ডলেটার। নীল রঙের তিন ভাঁজ করা পাতলা কাগজ। নামেই শাসিয়ে রেখেছে, দেশের ভেতরের জন্য। দেশের বাইরে যারা থাকেন, তাদের জন্য এয়ার মেলের সাদা খাম। চারপাশে লাল আর নীল দাগ দেওয়া। এই ইনল্যান্ডলেটার ছিল মধ্যবর্তী ব্যবস্থা। অর্থাৎ পোস্টকার্ডের থেকে বেশি লেখা গেলেও অপর্যাপ্ত জায়গা নেই। আবার ভাঁজ করে আঠা লাগিয়ে দেবার ফলে বেশ গোপনীয়তা রইল। তা যে চিঠিতে গোপনীয়তা নেই, তা আবার চিঠি নাকি? যেই লিখুক আর যাই লেখা থাকুক, চিঠি মানেই গোপন, ব্যক্তিগত, নিজস্ব।

আমার প্রথম চিঠি লেখার শুরু আত্মীয়স্বজনকে চিঠি লেখা দিয়ে। খুব ছোটবেলা থেকেই দাদু-দিদা, বড়মামা আর মামী, আমার সমবয়সী মাসতুতো বোনের সঙ্গে চিঠির আদানপ্রদান চলত। আমিও খুব আগ্রহ নিয়ে লিখতাম আর উত্তরের অপেক্ষায় বসে থাকতাম। ছোটবেলার সঙ্গীদের মধ্যে আমার এক জেঠতুতো দাদা যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে জলপাইগুড়ি গেল, আর কিছুদিন পর পাশের বাড়িতে থাকা পিসতুতো দিদি বিয়ে হয়ে ভুবনেশ্বর চলে গেল, তখন আমিও একটু বড়। ওদের সঙ্গে সারাবছর ধারাবাহিক ভাবে চিঠির আদানপ্রদান চলত। এখানকার কথা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ওদের জানানো আর ওদের ওখানকার কথা শুনবার ছিল অপরিসীম অপেক্ষা। মনে আছে, একবার টিভিতে একটা পুরষ্কারপ্রাপ্ত ছবি "গরম ভাত" এক রবিবার টেলিকাস্ট হয়েছিল। দাদা তখন হস্টেলে। সেই ছবি হস্টেলের কমন রুমের টিভিতে দেখে চিঠিতে আমাকে লিখেছিল, "ঘি আর লবনের অভাবে গরম ভাত নিতান্তই পানসে লাগল"। সেই সব দিনগুলোতে ওইসব চিঠিও প্রায় শিল্পের পর্যায়েই উঠেছিল। কারণ আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতাম চিঠিটাকে সুন্দর করতে। আমাদের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সাহিত্য নিদর্শনটা চিঠিতে তুলে ধরতে। 

আজকাল ইন্টারনেটের জাদুতে একজনের কথা নিমেষের মধ্যে আর একজনের কাছে পৌঁছে যায়। ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার তার ওপর ফেসবুক, বিভিন্নরকমের ভিডিও কল সবকিছু মিলিয়ে যেন পৃথিবীটাকে খুব কাছাকাছি এনে ফেলেছে। খবর আদানপ্রদান এখন আর কোন সমস্যা নয়। কিন্তু এইসবকিছুর মধ্যে কখন যেন হারিয়ে গেছে 'অপেক্ষা করা'। আজকের পৃথিবীতে কেউ কারোর জন্য আর অপেক্ষায় থাকে না। কেউ কাউকে চিঠিতে লেখে না, "তোমার আসার অপেক্ষায় রইলাম"। টেলিফোনে অধীর হয়ে কেউ জিজ্ঞেস করে না, "তোরা কবে আসবি রে?" হয়তো যা হয়েছে, সবকিছু ভালোই হয়েছে। ডি এন এ টেস্ট আবিষ্কার হওয়ার ফলে একশো বছর আগেকার জ্যাক দ্য রিপারের রহস্যভেদ হয়েছে। দ্রুতগামী মহাকাশযান আবিষ্কার হওয়ার ফলে মানুষ মঙ্গলে পাড়ি জমিয়েছে আর মাত্র ৪৬ বছরে ভয়েজার ১ পার করে ফেলেছে পৃথিবী থেকে ২৩.৮ বিলিয়ন কিলোমিটার পথ। আমরাও এই একটা জীবনে একসঙ্গে অনেকটা জীবন যাপন করে নিলাম। দিন বদলের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলাতে দেখলাম। আমরাও তো বদলেছি অনেকটাই। হ্যারিকেন থেকে ইলেকট্রিক আলো, রিকসা থেকে এরোপ্লেন, তেলাকুচা থেকে জ্যাকারান্ডা আর ইনল্যান্ডলেটার থেকে ইন্টারনেট! প্রত্যেক বছর ১৮ই এপ্রিল বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস হিসেবে পালিত হয়। ঐতিহ্য বলতে আমরা বুঝি আমাদের পুরোনোদিনের বনেদি আর মূল্যবান জিনিস অথবা পরম্পরা। আমাদের ফেলে আসা দিনগুলিও তো সেই অর্থে ঐতিহ্য যা আমরা চেষ্টা করলেও সোনার খাঁচায় ধরে রাখতে পারব না। যা মুছে গেছে, যা বিলুপ্তপ্রায়, যা কিছু স্মৃতিতেও আজ প্রায় আবছা, তারই কয়েকমুঠো ধরে রাখতে চাইলাম আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। 

Who lives who dies who tells your story.......


--------------------------------

সোমা চক্রবর্তী
Kalikapur, Taki Toad 
PO. Barasat, Dist: 24 Pgs (N), WB.
Pin: 700124.

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক