শৈশবের স্মৃতি
সান্ত্বনা ব্যানার্জী
খুব ছোটবেলার একটা স্মৃতি আজও সমানভাবে জীবন্ত। তখন স্কুলেও ভর্তি হইনি।আমরা তখন থাকতাম বর্ধমানে,একটি ভাড়া বাড়ীতে, মা,বাবা,আমি আর ছোটকাকু। ছোটকাকু তখন ইউনিভার্সিটির ছাত্র। আমি ভারি নেওটা ছিলাম তার। রোজ আমার হাতে একটা লজেন্স দিতো আর আমি যখন খুব মনোযোগ দিয়ে তার মোড়ক খুলতাম,অমনি কাকু সাইকেল চালিয়ে হাওয়া!আমি বোকার মত তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেঁদে ফেলতাম। মনে আছে বাবার সঙ্গে মাঝে মাঝে মিষ্টির দোকানে গিয়ে রসগোল্লা খেতাম। তো, এখানেই ঘটেছিলো ঘটনাটা। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ঘরের ভিতর পাতা উঁচু চৌকির ওপর। দারুন একটা গোলমালের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।দেখি,মা প্রাণপণে জানলা গুলো বন্ধ করার চেষ্টা করছে,বন্ধ জানলা দিয়েও হুরহুর করে জল ঢুকছে!গোটা মেঝে জলে থই থই। কাকু একটা বালতিতে জল তুলছে ছেঁচে ছেঁচে। সাংঘাতিক ঝড় জল!ঝড় থামতে বাইরে বেরিয়ে দেখি যেন মত্ত হাতি তাণ্ডব করে গেছে। পাশেই একটা তিনতলা বাড়ির কাজ চলছিলো।সেখান থেকে পড়ে গিয়েছিল একজন রাজমিস্ত্রী একেবারে নীচে। নিথর দেহটাকে যখন সবাই নিয়ে যাচ্ছিল, ওর পিছন পিছন কাঁদতে কাঁদতে যাচ্ছিল আমারই মত একটি ছোট্ট মেয়ে। মৃত রাজমিস্ত্রী ছিল ওর বাবা। সেই ছবিটা আজও ভুলতে পারিনি!
এর পর বর্ধমানের কাছেই একটা গ্রামে কিছুদিন ছিলাম আমরা। সেই বাড়ীর এক
মহিলাকে মনে আছে,যিনি খুব বড়ো বড়ো গল্প বলতেন, এক একটা গল্প শেষ হতে চার পাঁচ দিন লেগে যেতো। আর খুব সুন্দর সব পুতুল,হাঁস,প্রজাপতি ফুল পাখি হাতি গড়ে দিতেন মাটি দিয়ে। আবার রঙ ও করে দিতেন। এর পর বাবা বদলি হয়ে আসে বড়শুলের বি ডি ও অফিসে। এখানে একটা কোয়ার্টাস পায় বাবা। কি সুন্দর!দুটো ঘর, বারান্দা, সামনে ঘেরা উঠোন, রান্নাঘর ,ট্যাপ কলের জল, বড়ো চৌবাচ্চা সমেত বাথরুম পায়খানা, চারপাশে অনেকখানি জায়গা। এখানেই প্রথম স্কুলে ভর্তি হলাম আমি, একেবারে ক্লাস টু তে।ওখানেই আমার জীবনের ভিত গড়ে ওঠে। আমাদের স্কুলে বেসিক ট্রেনিং কলেজের দাদাদিদিরা প্রাকটিস টিচিং করাতেন। নানা রকম ছবি মডেল চার্ট দিয়ে তাদের পড়ানো আমার ভারি ভালো লাগতো।বেশি ক্ষমতাশালী নক্ষত্রের টানে সূর্য থেকে ছিঁড়ে আসা পটলের মত অংশ থেকে ক্রমে ক্রমে পৃথিবী সমেত সৌরজগতের সৃষ্টির যে ছবি দেখিয়ে এক দাদা পড়িয়েছিলেন আজও যেন চোখ বুজে দেখতে পাই। পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা আমার এখান থেকেই শুরু হয়।তখনও পর্যন্ত আমাদের বাড়ীতে কোনো রেডিও ছিলনা।বাবাকে বলেছিলাম ভয়ে ভয়ে.... আমি যদি ক্লাসে ফার্স্ট হই তাহলে মাকে একটা রেডিও কিনে দেবে?.....বাবা কি জানি এক কথায় রাজি হয়ে গেলো। রেজাল্ট বেরোনোর পর বাবা কথা রেখেছিলো, মারফি কোম্পানীর একটা রেডিও কিনে দিয়েছিল মাকে। আজ মায়ের ঘরে রঙীন টিভি, কিন্ত সেই রেডিও পাইয়ে দেওয়ার আনন্দের সাথে তার তুলনাই হয় না। সেই বয়সেই নিঝুম দুপুরে শুয়ে শুয়ে অবন ঠাকুরের ক্ষীরের পুতুল পড়া।
এই স্কুলেই নাচ, গান নাটকের হাতেখড়ি। রিমঝিম ঘনঘন রে.....বরষে রিমঝিম ঘনঘন রে.....,গানের সাথে নাচ করে প্রথম পুরস্কার পাই। মনে আছে সবাই ঘটিহাতা সাদা ফ্রক পরেছিলাম। মা পরে তার ওপরকালো সুতো দিয়ে কি সুন্দর জোড়াশাঁখ বুনে দিয়েছিলো।আশ্চর্য!সেই ফ্রকটাও এখনও মনে আছে!
বাবার শিখিয়ে দেওয়া রবিঠাকুরের নির্ঝরিনী কবিতাটি আবৃত্তি করেও প্রথম হই।পুরস্কার হিসেবে পাই কাহিনী,আর একটি ছড়ার বই। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত লক্ষ্মীর পরীক্ষা নাটক টি যে কতবার পড়েছি তার ঠিক নেই। আর ওই ছড়ার বইটাতে একটা ছড়া ছিলো....
ওই দেখো গো দরজা ফাঁকে
বৌদিদিরা চাটনি চাখে,
চাখতে চাখতে হয়তো এবার
চাটনিটা সব করবে সাবার।
সঙ্গে দরজার ফাঁকে উঁকি দেওয়া ছোট্ট মেয়েটির ছবি আজও চোখে ভাসে।বাবার অফিসের এ ই ও,কনক কাকু নাটক করাতেন টাউনশিপ এর সব বাচ্চাদের নিয়ে। কাকুর লেখা জ্বরবুড়ি বলে একটি নাটকে অভিনয় করে প্রথম নাটক করা শিখি। রবিঠাকুরের রোগের চিকিৎসা নাটকে হারুর রোলটা করে খুব প্রশংসা পেয়েছিলাম।মায়াপিসির মা আমার গাল টিপে আদর করে বলেছিলেন... শশিবাবুর মাইয়াডা ব্যাশ ভালো রে!খুব ভালো অ্যাক্ট করসস!....বড়রাও নাটক করতো। আজকাল, এরাও মানুষ, উল্কা, ক্ষুধা, কত নাটক দেখেছি। একটা নাটকে বাবা আর রণেন কাকু তরজা গান করে দারুন জমিয়ে দিয়েছিলো।
প্রণব কাকুর কথাও খুব মনে পড়ে। বিডি ও অফিসের স্টাফ। প্রতিদিন মাঠে এসে আমাদের কত রকম খেলা শেখাতো। প্রতিমাসে মাইনে পেয়েই আমাদের সবাইকে রসগোল্লা খাওয়াতো। আমরা সেই লোভে অফিসের সামনের বকুলগাছের নিচে বসে থাকতাম। মাঠে গিয়ে আমাদের সঙ্গে স্ট্যাচু খেলায় যোগ দিত, যার একটা আলাদা নাম দিয়েছিলো কাকু, 'হি ল্লা লা ঝুপ"...। সেই প্রণব কাকু যখন বদলি হয়ে চলে গেলো কি কান্না আমাদের! এরপর বাবাদের অফিসে বি ডি ও হয়ে এলেন প্রদীপ মুখার্জি, যিনি অল্প দিনেই হয়ে গেলেন আমাদের প্রিয় জেঠু। বিয়ে থা করেননি, গোটা টাউনশিপ এর সব বাচ্চাই ওর ছেলেমেয়ে হয়ে গেলাম। প্রায়ই ফিস্ট হতো জেঠুর টাকায়। সেই বয়সেই দেখে ফেলেছিলাম গুপী গাইন বাঘা বাইন রীতিমত সিনেমা হলে গিয়ে,জেঠুর উদ্যোগে জীপে করে।জেঠুর কোয়ার্টারের বারান্দায় এইট নাইনের ছেলেরা ঝুলন সাজাতো। আমরা ছোটরা সেখানে পাত্তা পেতাম না,তার ওপর আমারখেলনাপাতিও তেমন ছিলনা। সম্বলের মধ্যে ছিলো একটা কালো রঙের সাপ, বেশ সত্যি সত্যি দেখতে। সেইটা নিয়ে ভয়ে ভয়ে গেলাম তাপস দাদার কাছে,বললাম....এটা তোমরা নেবে?...তাপস দাদা কিছু বলার আগেইঅন্য একটা ছেলে সাপটা হাতে নিয়েই ছুড়ে ফেলে দিলে, বললে... হ্যা! একটা প্লাস্টিকের সাপ নিয়ে ঝুলন করতে এইচে! যা ভাগ!....অপমানে লজ্জায় চোখে জল এসে গেল। তাপস দাদা বললো..ছিঃ!ছোটো মেয়ে, অমন করে বলতে আছে?... আচ্ছা আচ্ছা, তোর সাপ টা আমি পরে নিয়ে আসবো, যা, বাড়ী যা এখন।...পরের দিন বাবনদের বাড়ীর বারান্দায় আমরা বাচ্চারা মিলে ঝুলন সাজালাম, সন্ধ্যেবেলা জেঠু এসে বাঃ বাঃ খুব ভালো হয়েছে বলে এক মুঠো টাকা দিয়ে দিলেন। তাই দিয়ে আবার একদিন ফিস্ট!সেই জেঠু ও বদলি হয় গেলেন আমাদের কাঁদিয়ে।
খুব মনে পড়ে মায়া পিসিদের সুন্দর করে সাজানো ঠাকুরঘরটি। ছোটো খাট,তাতে
সাদা চাদর, ছোট্ট ছোট্ট সাদা কুচি দেওয়া বালিশ,তাতে রাতে শীতল দেওয়ার পর ঠাকুরদের শয়ন হতো। ভোগ দেওয়া হতো ছোট্ট ছোট্ট লুচি, নারকেল নাড়ু, সুজির মোহনভোগ। প্রসাদ পাওয়ার জন্য আর ঠাকুরঘরটা দেখারজন্য রোজই সন্ধ্যেবেলা পাশের কোয়ার্টারে হাজির হতাম। ওখানেই ছিলো নানা গাছপালায় ভরা পঞ্চবটী বন। জামের সময় পাকা জাম কুড়িয়ে আনতাম, মা নুন চিনি মাখিয়ে দিত,দারুন লাগতো খেতে। খুব ভালো লাগতো কাঁচা আম নুন লঙ্কা দিয়ে খেতে।একবার কি কারণে যেন আমার বন্ধু রূপালী আমার সঙ্গেকথা বন্ধ করে দিলে! খুব মন খারাপ, কি করলেও আবার কথা বলে তার জন্য আকুপাকু করছি, একা একাই দুটো কাঁচা আম নিয়ে বসেছি খাবো বলে, রূপালী অন্য দিকে বসেছিল, আম দেখে আর থাকতে পারলে না,..... দে তো আমায় একটা... বলে হাত বাড়াতেই আমি একেবারে কৃতার্থ হয়ে গেলাম! বড়ো আমটা ব্লেড সমেত তাড়াতাড়ি ওকে দিয়ে দিলাম। যাক বাবা শান্তি!
কথাটা তো হয়ে গেলো! কেউ কথা বন্ধ করে দিলে আমার ভীষন কষ্ট হয়,খুব কান্না পায়। যাইহোক, বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে গেলো! রূপালী বেশ ধীরে সুস্থে আম ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে পা দুলিয়ে দুলিয়ে খেতে লাগলো তারপর আমাকে একবারে আকাশ থেকে পাতালে ফেলে দিয়ে কোনো কথা না বলে চলে গেলো!এত কষ্ট হয়েছিলো আমার, অত বড়ো আমটা ও গেলো আবার কথাও বললো না! পরে
যখন আমরা বড়শুল থেকে চলে আসি কেঁদে ভাসিয়েছিলো।
প্রথম নদী আর নদীর চরে বালি দেখা আমার ওই বড়শুলেই। সমুদ্র তো দূর অস্ত গ্রামে
আর মামার বাড়ীতে ক ' টা পুকুর ছাড়া আর কিছু দেখিনি তখন। শীতকাল, দামোদরের জল
একধার দিয়ে ক্ষীণ ধারায় বইছে, সবটাই প্রায় বালি। এত বালি!এত বালি আমি একসঙ্গে আগে
দেখিনি। একেবারে পাগল হয়ে গেলাম আনন্দে। বনবন করে ঘুরছি, মুঠো মুঠো বালি নিয়ে মাথায়
গায়ে মাখছি, ছড়া গান যা জানি সব যেন ফোয়ারার মত বেরিয়ে আসছে। চোখ বুজলে আজও সেই ছোট্ট আমি টাকে দেখতে পাই!
ছোটবেলায় কোথাও বেড়াতে যাইনি আমরা, ওই দেশের বাড়ী, মামার বাড়ী আর পিসির বাড়ী। তাই ওই বড়শুল আর তার আশপাশটা দেখেছি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। সারা বিকালটা ওই টাউনশিপ এর অলি গলি ঘুরে বেড়াতাম। একেবারে পশ্চিমদিকে ছিল বিজ্ঞান মন্দির। কাচের জারে ভরা থাকতো নানা রকমের সাপ, পোকামাকড়, প্রজাপতি। মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ বাস আসতো ওখানে নানা জিনিসের মডেল সাজানো থাকতো। গ্রামের পরিবেশ, শহরের পরিবেশ,বিজ্ঞানের যন্ত্রপাতি, কত কি! দুচোখ দিয়ে যেনো গিলে খেতাম।
শুভদাদার মাকে খুব মনে পড়ে। কি দারুন সুন্দরী, অনেক নাকি শিক্ষিত।কিন্তু পাগল। সারাদিন গাছকোমড় বেঁধে হাতে একটা লাঠি নিয়ে সারা টাউনশিপ ঘুরে বেড়াতো, পরিষ্কার উচ্চারণে বাংলা, ইংরেজী কবিতা বলতে বলতে। কখনও বালির ওপর কাঠি দিয়ে কত কি লিখতো, কি সুন্দর হাতের লেখা।মাঝে মাঝে বাড়ীর সামনের গাছতলায় ইট পেতে ফুল পাতা জড়ো করে পুজো করতো। স্কুলের ফার্স্টবয়, ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র, শুভদাদা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতো কেমন বিষাদ মলিন মুখে। অত ছোটো বয়সেও সেই বিষন্নতা আমার মনকে ছুঁয়ে যেত।পাগল মায়ের জন্য শুভদাদার কষ্টে আমার
খুব খুব কান্না পেতো। আজও সেই ম্রিয়মাণ মুখ আমার চোখে ভাসে।
তখন আমি ক্লাস ফোরে, ইস্কুলে সাতভাই চম্পা নৃত্যনাট্য হলো। আমিও তাতে নাচ করেছিলাম। তার সব গান গুলোই আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছিলো। ভাইকে ঘুম পাড়াতে পাড়াতে একটার পর একটা গান গেয়ে যেতাম। একটা দুটো গান আজও মনে আছে।
বেনুবনের মাথায় মাথায়
চাঁদ উঠেছে পাতায় পাতায়,
ঝিলিক লাগায় নদীর জলে
চাঁদের ছায়া দোদুল দোলে গো....
সাঁঝের বেলা মায়ের কথা
মনে পড়ে গো... পারুলদিদি গো....
শেষে যখন গাইতাম আয় আয় ঘুম আয়, অশোক সোনার চোখের পাতায়....তখনই ভাই
ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়তো...। তখন কি আর জানতাম মাত্র তেরো বছর বয়সে চিরকালের
জন্য ঘুমিয়ে পরবে!
বছরে দুবার দেশের বাড়ী যেতাম আমরা,গোপাল ঠাকুরের মহোৎসবে আর দুর্গাপুজোয়। বাস থেকে নেমে বাঁকা নদীর লাল ব্রীজটা পেরিয়ে গিয়ে দেখতাম গোবিন দাদু ছই গাড়ী নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমাদের সবাইকে কোলে করে ছই গাড়ীর ভিতর বসিয়ে দিতো গোবিন দাদু। গরুর গাড়ীর দুলুনি টা খুব ভালো লাগতো আমার, আর যখন বাঁকা নদীর ধারে ধারে কাশ ফুলের ওপর দিয়ে বাতাস ঢেউ তুলে যেতো তখন যতো কিছু গান কবিতা সব যেন আপনিই বেরিয়ে আসতো.... এসেছে শরৎ হিমের পরশ.....আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে.....। গোবিনদাদু হেট হেট করে গরুর গাড়ী
চালাতে চালাতে বলতো.... বুড়োর খুব আনন্দ হচ্ছে লয়! কদ্দিন বাদে গ্রামে আসছিস!.... আমি মেয়ে হলেও আমায় বুড়ি না বলে বুড়ো বলতো কেনো জানি না।
খুব কমই ছিলো আমার শৈশবের স্থায়িত্ব। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় আমরা পাকাপাকি ভাবে ফিরে এলাম গ্রামের বাড়িতে যৌথপরিবারে, আমার সত্যিকারের শৈশবকে ফেলে রেখে, যার আনাচে কানাচে আমার সেই ছোট্ট আমিটা আজও ঘুরে বেড়ায় অজস্র মণিমুক্তোর সন্ধানে.....আজও!!!!
=====================
Santwana Banerjee
Po+vill Boinchigram
Dist Hooghly
Pin 712135
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন