google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re কবিতা ।। আমার ছোটবেলা ।। দীপঙ্কর বেরা - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩

কবিতা ।। আমার ছোটবেলা ।। দীপঙ্কর বেরা

আমার ছোটবেলা 

দীপঙ্কর বেরা 


আমার তোকে একটুও মনে রাখতে ইচ্ছে করে না,
তোর তখন কিছু ছিল না।

না দুবেলা দুমুঠো খাবার, না হাত পা ছড়িয়ে বসার একটু জায়গা
না পরার মত একটু ভালো জামা কাপড়।
রোজ কাদা ঘেটে পাথুরে রাস্তায় খালি পায়ে
স্কুলে যেতে কার ভালো লাগে বল?

স্কুলে যাওয়ার সময় এক মুঠো আলুসেদ্ধ ভাত
আর ফিরে এসে কখনও ভেজা ভাত, নয়তো একমুঠো মুড়ি
না হলে উপোস। এভাবে থাকা যায়? বল?

বাবা মায়ের সঙ্গে মাঠের কাজ
ধান চাষ, ধান তোলা ঝাড়াই মাড়াই, লোকের বাড়ি জনমজুর যাওয়া
মাটি কাটা মাটি তোলা যোগালির কাজ।
এসবের ফাঁকে মাঝে মাঝে পড়াশুনা করা
সত্যিই কি সম্ভব? তুই একবার ভেবে বল?

ক্লাসের বই পেতিস না অঙ্ক করার খাতা পেতিস না
কেরোসিনের অভাবে কুপী জ্বেলে রাতে পড়তে পেতিস না
চোর পুলিশ গোল্লাছুট ফুড়ৎ ডাংগুলি পাঁচগুটি
ছোঁয়াছুঁয়ি ধরাধরি এসব কত কি তুই খেলতে পাস নি,
অভাবের সংসারে শুধু কাজ আর কাজ , আর কত ভাল লাগে বল?

আশেপাশে সারাদিন শুধু গালাগাল কুটকাচালি
মারামারি খিস্তি খেউড় পরনিন্দা পরচর্চা লেগে থাকত
এসব শুনে শুনে বড় হওয়ার লড়াই কি চাট্টিখানির কথা?
বৃষ্টিতে খড়ের চাল বেয়ে ঘরে জল পড়ে‌,
শীতে ছিটে বেড়ার ফাঁকে ফিরফিরে ঠাণ্ডা বাতাস
ছেঁড়া কাথায় কিছুতেই শীত যেত না, শরতে কত মেলা বসত
আর তুই সেই একই জামা পরে মেলায় যেতিস।

বল? এভাবেও বাঁচা যায়? তুই এখন ভাল করে ভেবে বল?
সেই সেবার তুই খড়ের গাদার পাশে চুপ করে বসেছিলি
ঘরে চাল বাড়ন্ত, তোর খেতে দাও খেতে দাও কথার জন্য মা বকেছিল
তাই তোর খুব মন খারাপ,
আরও যেবার শ্মশানের পাশে কালো বিড়াল দেখে
তোর খুব ভয় করেছিল, মায়ের কোলে চুপ করে বসেছিলি,
রোজ সন্ধ্যেবেলা তুলসীমঞ্চ শাঁখের আওয়াজ
লক্ষ্মীর পাঁচালী কৃত্তিবাসী রামায়নের সুর
এসব মনে করতে করতে তোকে মনে পড়ে;
তোকে মনে পড়ে বাবার ফুটিফাটা পা
হাজে যাওয়া হাত আর বলিরেখা আঁকা মুখের সঙ্গে,
তবু তোকে আর মনে রাখতে চাই না
ওগো আমার মিষ্টি সোনা খুব খুব ছোট্ট
একেব্বারে ছোট্ট, 
ছোটোবেলা।


দীপঙ্কর বেরা 
দক্ষিণ ২৪ পরগনা


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন