Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

ফিরে দেখা ।। সাইফুল ইসলাম

ফিরে দেখা

সাইফুল ইসলাম 


১৯৮৭ সাল। আমি তখন একাদশ শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র। আমার পিসতুতো দাদা আলিমদা,আমার পিসিমার ছোটছেলে,যাকে আমি ছোড়দা বলে ডাকতাম।তিনি নিজে বাণিজ্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন,সেই দৌলতে একটা ব্যাঙ্কে তিনি চাকরিও পেয়ে গেছেন।Accountancy বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য আমি মাঝে মাঝে তাঁর কাছে যেতাম।অবিবাহিত ছোড়দা অনেক রাত পর্যন্ত বিছানায় শুয়ে শুয়ে তাঁর কলেজ জীবনের অনেক কাহিনি শোনাতেন।কয়েকটা দিন আসা-যাওয়া  করতে করতে একদিন হঠাৎ  করে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করলাম।ছোড়দার বাড়ি থেকে আমার বিদ্যালয়ের দূরত্ব সামান্য। তাছাড়া রাত্রিবেলা দুজনের জমাটি গল্পে ছোড়দার একাকীত্ব কেটে যেত।
            এমনিতে ছোড়দা বেশ রাশভারি গোছের লোক।বয়সে আমার থেকে বেশ কয়েক বছরের বড়।প্রথম প্রথম তাঁর মোটা গোঁফ,মোটা মোটা দুটো চোখ দেখে আমি ভয় পেতাম;সেটা বোধ হয় ছোড়দা বুঝতে পেরেছিলেন।
-------- কী ব্যাপার রে তোর? আমার সঙ্গে তুই এত কম কথা বলিস কেন?
প্রশ্নটি শোনার পর ছোড়দা যাতে বুঝতে না পারে তার জন্য ইচ্ছে করেই বেশি বেশি করে কথা বলতে শুরু করলাম।রাশভারি লোক হলে কী হবে।ছোড়দা অল্প হেসে বেশি বেশি কথা বলতে ভালোবাসতেন।কয়েকটা দিন যেতে না যেতে ছোড়দা আমার কাছের বন্ধু হয়ে গেলেন।
             একদিন রাত্রিবেলা বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় বললেন-" শোন, তোর দুই দিন স্কুল কামাই হবে।আগামী পরশুদিন আমরা একটা বিয়েবাড়ি  যাব।
আমরা মানে?বাড়ির সবাই?---আমি জিজ্ঞেস করলাম।
ছোড়দা মাথায় একটা টোকা মেরে বললেন,-"আমরা মানে তুই আর আমি। গাধা কোথাকার, এটাও বুঝলি না? 
ও আচ্ছা। তা কতদূর যাবেন? আর কিসেই বা যাবেন?
আমরা মোটর বাইকে যাব মালদা।একেবার সকাল সকাল বার হব বুঝলি?
আপনার ব্যাঙ্ক?
আমি দুইদিন ছুটি নিয়েছি।
একটা বাইকে দুইজন; তাও আবার মালদা।সে তো অনেকটা দূর!
হ্যাঁ, দূর বলেই তো বাইকে যাব।রাস্তায় বেশ মজা করতে করতে যাব বুঝলি?
------- রাস্তায় কী যে মজা হবে তখন না বুঝলেও যাওয়ার সময় বুঝলাম।ছোড়দা আসলে চরম মিশুকে প্রকৃতির আর বাস্তববাদী লোক।কোনোরকম কুসংস্কারে তিনি বিশ্বাসী নন।
   ফরাক্কা সেতু পার হওয়ার পরে রাস্তার বামদিক ঘেঁসে আমাদের মোটর বাইকের ইঞ্জিন বন্ধ হল।গাড়ি থেকে নামতেই একজন পুলিশ এসে বললেন--" আপনাদের কাছে ক্যামেরা ট্যামেরা নেই তো?"
ছোড়দা--"কেন বলুন তো?"
পুলিশ--না মানে।এই এলাকাটি ছবি তোলার জন্য নিষিদ্ধ। বোর্ড দেখেছেন নিশ্চয়ই।তাই আপনাদের সতর্ক করে দিতে এলাম।ক্যামেরা পেলে আমরা সেটি বাজেয়াপ্ত করতে বাধ্য হব।
ছোড়দা-- না স্যর।সে রকম কিছু নেই।আচ্ছা আমরা গঙ্গায় স্নান করতে পারি?
পুলিশ-- অবশ্যই পারেন।তবে সাবধানে।দেখছেন তো কেমন স্রোত।
সত্যিই ঘোলাজলের স্রোত এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করছে।আসলে কোনদিকের জল কোনদিকে যাচ্ছে বোঝা বড় কঠিন।কিছুদূর পর পর কিছু লোকের জটলা দেখে মনে হল তাঁরাও আমাদের মত স্নানে আগ্রহী।একটা জায়গায় কয়েকজন ছেলেকে সাঁতার কাটতে  দেখে মনে হল,এরা স্থানীয় ছেলে এবং এরা নিত্যদিনের সাঁতারু।
ছোড়দা ব্যাগ হতে দুটো লুঙ্গি আর একটা গামছা বার করে একটা আমার হাতে দিয়ে বললেন--"নে।এটা পড়ে স্নান কর।"
     বাড়ি হতে এতদূর এসে গঙ্গায় স্নান করব,তা আমি আগে জানতেই পারি নি।ছোড়দার কান্ডকারখানা দেখে আমি তো অবাক।
     "আরে হচ্ছে যাওয়া।আর একটু গেলেই মালদা।এখানে একঘন্টা সময় অতিবাহিত করে তবেই যাব।"
     আমি ভাবলাম-আমরা যেখানে যাচ্ছি,সেখানে কী স্নান করা খুব অসুবিধা?  নইলে মাঝপথে স্নান করার যুক্তি কী?
বেশী প্রশ্ন করলে চোখরাঙানি।ফলস্বরুপ দূর হয়ে যাওয়া ভয়কে আবার আমন্ত্রণ জানানো।সুতরাং যো হুজুর জাঁহাপনা।
     রাক্ষুসে স্রোতের কাছে নতিস্বীকার করে ভয়ে ভয়ে কোমর জল পর্যন্ত যাওয়া; আর কোন রকমে মাথা ভিজিয়ে আবার তীরে ফিরে আসা। নদীর জলে কিছু একটা ভেসে আসতে দেখে ছোড়দা বেশ উচ্ছ্বসিত। এক,দুই,তিন করে বেশ কয়েকটি ভেসে যেতে দেখে ছোড়দা বছর দশেকের একটা ছেলেকে ডেকে কানে কানে কী যেন বললেন।
ছেলেটি ঝপ করে জলে নেমে সাঁতার কেটে অনেকদূর গিয়ে আবার ফিরে এসে ছোড়দার হাতে একটা ডাব তুলে দিল।
আমি ততক্ষণে গা মুছে রোদে শুকোতে শুরু করেছি।অনেকক্ষণ জলে ডুবে থাকার পর ঠান্ডায় কুঁচকে যাওয়া চামড়াখানি নিয়ে রোদে দাঁড়ানোর এক দারুণ অনুভূতি। 
জল থেকে ছোড়দার গলা--"তোর কাছে ডাবগুলো রেখে দে।"
"ডাবগুলো" কথাটি শোনার পর আমার মনে হল একটা নয়,অনেকগুলো ডাবের পাহারাদার আমাকে হতে হবে। ভাবতে ভাবতে আরো পাঁচটা ডাব এসে হাজির হল।এতগুলো ডাব দিয়ে কী হবে-- তাই ভাবছি।
প্রতিটি ডাবে সিঁদুর লাগানো।কোনোটাতে আবার ফুলের মালার ছেঁড়া অংশ জড়ানো আছে।
ছোড়দা জল থেকে উঠে এলেন।ছেলেটির হাতে কুড়ি টাকার একটা নোট দিয়ে গা মুছতে শুরু করলেন।
"এই তেল সিঁদুর দেওয়া ডাব কী হবে ছোড়দা?--ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
গাধা, ডাব কি করে জানিস না।এগুলো কেটে পান করব।শুনে আমার চোখ ছানাবড়া।এগুলো নিশ্চয় কোনো লোকের ডাব যা দেবতার উদ্দেশ্যে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া।আর এগুলো নাকি আমরা খাব।মনের মধ্যে এক অদৃশ্য ভয় প্রবেশ করল।
একজন বৃদ্ধ লোককে একটা কাটারি হাতে যেতে দেখে ছোড়দা বললেন--" চাচা,এগুলো কেটে দেন না।পাঁচটা টাকা দিচ্ছি।"
পাঁচখানা ডাব খসখস করে কেটে আমার পাশে রেখে বৃদ্ধ চলে যেতেই ছোড়দা বললেন-ঢকঢক করে গিলে ফেল।এতে কত উপকার জানিস?
আমি তো ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছি।মানত করা ডাব মা গঙ্গার কাছ থেকে ছিনিয়ে খাওয়া,না জানি কত বড় অমঙ্গল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।হাতে নিয়েও মুখের দিকে নিয়ে যেতে পারছি না।বেশী কিছু বলতে গেলে তো সেই চোখরাঙানি দেখতে হবে নয়তো বাজখাঁই গলা শুনতে হবে।
এগুলো কী খাওয়া ঠিক হবে?---প্রশ্নটা ছুঁড়েই দিলাম।
কিচ্ছু হবে না খা।যে মানত দিয়েছে তার মনোবাসনা আগেই পূরণ হয়ে গেছে।মা গঙ্গা কী এগুলো খাবেন? এগুলো মানুষের খাওয়ার জন্য।যে বোকা সে খাবে না। 
নাঃ! ছোড়দার কাছে আর বোকা, গাধা শুনতে রাজি নই বলে ঈশ্বরকে স্মরণ করে একটা ডাব চোখ বন্ধ করে খেয়ে ফেললাম। ততক্ষণে ছোড়দা চারটে ডাব সাবাড় করে দিয়েছে।
   সেদিন আমরা কোন বিপদে পড়িনি।পরবর্তী তে যখনই কোন কাজে ঐ রাস্তায় গেছি,গঙ্গার সেই ঘাটে চোখ গেছে।দূরন্ত স্রোতে ডাব ভেসে যায় কিনা আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।

-----------------------------------------------------------


সাইফুল ইসলাম
বর্দ্ধনপাড়া,বীরভূম

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩