Featured Post

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

ছবি
  সূচিপত্র নিবন্ধ ।। মরিয়ম মির্জাখানি: এক অনন্য গণিতসূর্য ।। ... নিবন্ধ ।। নারী দিবসে যা ভাবা উচিত ।। বিশ্বনাথ পাল প্রবন্ধ ।। প্রাচীনকাল থেকে নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত,... নিবন্ধ ।। আমার চোখে আদর্শ নারী ।। জয়শ্রী বন্দ্... ফিচার।। এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যে নারীদের লেখালেখ... আফ্রিকার লোককথা ।। করোটিকে বিয়ে করা অবাধ্য মেয়েটি ... ছোটগল্প ।। মানবী ।। ভুবনেশ্বর মন্ডল নিবন্ধ ।। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম নারী মু... নিবন্ধ ।। প্রিয় মহিলা সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ।। ... গল্প ।। উই ওয়ান্ট জাস্টিস ।। রবীন বসু প্রবন্ধ ।। নিপীড়িতা ।। শ্যামল হুদাতী ফিচার ।। রমণী রতন ।। মানস কুমার সেনগুপ্ত প্রবন্ধ ।। নারী সমাজ : তখন-এখন ।। তপন মাইতি নিবন্ধ ।। বহমান কালের ধারায় নারী ।। দীপক পাল গল্প ।। আমার দুর্গা ।। অঞ্জনা গোড়িয়া (সাউ) গল্প ।। যোগ্য জবাব ।। সমীর কুমার দত্ত ছোটগল্প ।। আমি দুর্গাকে দেখেছি।। চন্দন দাশগুপ্ত গল্প ।। সম্পর্ক ।। গৌতম সমাজদার কবিতা।। নারী মানে ।। গোবিন্দ মোদক কবিতা।। নারী ।। সমর আচার্য্য ছড়া ।। নারী অসামান্যা ।। সৌমিত্র মজুমদার কবিতা ।। নারী দিবসে ।। বিবেকানন্দ নস্কর কবিতা ।। না...

বীরপাড়ার স্মৃতি ।। চন্দন দাশগুপ্ত

        

বীরপাড়ার স্মৃতি

চন্দন দাশগুপ্ত 


          অবসর নেবার পর ঠিক করলাম একটু ঘুরে বেড়াব। কোথায় যাওয়া যায় ? তীর্থভ্রমণ করতে ইচ্ছে করছে না। আর জনপ্রিয় টুরিষ্ট স্পটগুলোতে অস্বাভাবিক ভিড়। হঠাৎই মনে হল বীরপাড়া গেলে কেমন হয় ? প্রায় ছাব্বিশ বছর আগে সেখানে পোস্টিং পেয়েছিলাম। তখন জায়গাটা জলপাইগুড়ি জেলাতে ছিল। পরে জলপাইগুড়ি ভেঙে আলিপুরদুয়ার আলাদা জেলা হবার পর বীরপাড়া আলিপুরদুয়ারে আসে। চারদিকে চা বাগান ঘেরা আদিবাসী আর নেপালি অধ্যুষিত ছোট্ট জনপদ এই বীরপাড়া। ব্যবসার সূত্রে কিছু বিহারি আর মারোয়াড়ি মানুষও থাকেন। বাঙালীদের সংখ্যা খুবই কম।
        
    আমি যখন বীরপাড়াতে পোস্টেড ছিলাম,  তখন শিলিগুড়ির সাথে যোগাযোগের মূল পথ ছিল বাস। "একদিন প্রতিদিন" বাসের ড্রাইভার শম্ভুদা আর কন্ডাকটর কাজলদার কথা কখনো ভোলা যাবেনা। তাছাড়াও ছিল বাস "সকাল-সন্ধ্যা" । নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আসামগামী মিটারগেজ রেল লাইনে শিলিগুড়ি টাউন, জংশন হয়ে পশ্বাশ্রয়, গুলমা, সেভক, বাগরাকোট, ডামডিম, ওদলাবাড়ি, নিউ মালবাজার জংশন, চালসা, নাগরাকাটা, বানারহাট, বিন্নাগুড়ি হয়ে দলগাঁও স্টেশনে সারাদিনে মাত্র দু জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন যাতায়াত করত।

        এখন দিন বদলেছে। মিটারগেজ রেল লাইন ব্রডগেজ হয়েছে। শিয়ালদা থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস এ উঠেছিলাম। দলগাঁও স্টেশনে নামলাম ঠিক সকাল দশটা পাঁচে। মনটা একটু খারাপ হয়ে আছে আমার। স্টেশনের কাছেই থাকতেন সুশীলদা, মানে সুশীল সাহা আর অসীমদা, মানে অসীম ভট্টাচার্য। সুশীলদা ছিলেন বীরপাড়া পঞ্চায়েতের সেক্রেটারি, আর অসীমদা ছিলেন স্থানীয় জুবিলি ক্লাব লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান। বয়সে দুজনেই অনেকটা বড় হলেও আমার মতো যুবকের প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। অফিস ছুটির পর জুবিলি ক্লাব লাইব্রেরিতেই ছিল আমাদের আড্ডা। আজ দুজনের কেউই এই পৃথিবীতে নেই।

         একটা রিক্সা নিয়ে আগেই বুক করে রাখা হোটেলে উঠলাম। যেতে যেতেই দেখলাম, কিছু নতুন বাড়িঘর হলেও বীরপাড়ার একমাত্র রাস্তাটা চওড়া করা হয়নি। অথচ গাড়িঘোড়ার সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে যানজট লেগেই আছে।

         লাঞ্চের পর বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমেই গেলাম আমার পুরোনো অফিসে। মনে পড়ছে কত কথা,,,,,,। অফিসটা ছোট হলেও আমরা সবাই ছিলাম একটা পরিবার। ক্লার্ক-টাইপিস্ট ছিলেন  ছেত্রীবাবু। ওনার কাছ থেকেই আমার প্রথম নেপালি শেখা শুরু। স্বপন ছিল পিয়ন। কিন্তু অফিসের সব কাজে ছিল ভীষণ পোক্ত। ক্যাশ বুক লেখা আমি ওর কাছ থেকেই শিখেছিলাম। মাংস রান্না আর খাওয়াতে সে ছিল ওস্তাদ। ইন্সপেক্টর ছিলেন মানিকবাবু। ওনার মতো ভদ্র, বুদ্ধিমান এবং এফিশিয়েন্ট কর্মী আমি কমই দেখেছি। আরো দুজন ছিল আমার অফিসে। প্রথমে বলব তুলসীর কথা। তুলসী ওঁরাও। সে ছিল আমাদের অফিসের দারোয়ান কাম নাইট গার্ড। মাঝে মাঝেই 'শিকারে' যেত বলে অফিস কামাই করত। ওর শিকারের অস্ত্র ছিল তীরধনুক আর গুলতি। দ্বিতীয়জন ছিল আমার ক্লার্ক কৌশিক। তার ছিল একটাই সমস্যা। সে লেট রাইজার। বারোটার আগে সে অফিসে আসতো না। কিন্তু রোজই রাত আটটা পর্যন্ত আমার সাথে কাজ করত। তাকে পরীক্ষার জন্য অনেকবার বলেছি,
------কিছু ফলস্ বিল বানাও। যা পাওয়া যাবে তুমি আর আমি ভাগ করে নেব।
        কিন্তু কৌশিক ভীষণ অনেস্ট। সাথে সাথে বলত,
------স্যার, আপনি যা বলবেন সব করব। কিন্তু দুগ্গিবাজি করতে পারব না।

        সব মিলিয়ে চমৎকার ছিলাম আমরা। সারাদিন অজস্র লোক আসত নানা কাজে। রোজই দুখানা করে মিটিং ডাকা থাকত। বিভিন্ন মানুষের নানা সমস্যার সমাধান হত। প্রথমটা শুরু হত এগারোটায়। সেটা দুটোয় শেষ হতেই পরেরটা শুরু হয়ে যেত। বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সাথে আমার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। আশেপাশের চা বাগানের ম্যানেজার রাও আমাকে পছন্দ করতেন, কারণ  আমার কোনও ব্যক্তিগত চাহিদা ছিলনা। আমার সবচেয়ে ভাল লাগত, মিটিং -এ বসে  নেতাদের সাথে ম্যানেজার দের তীব্র বাদানুবাদ হলেও তা কখনই শালীনতার সীমা অতিক্রম করত না। আর, মিটিঙের পরেই সবাই হাত মিলিয়ে নিতেন, এমনকি একই গাড়িতে নেতারা এবং ম্যানেজার রা ফিরে যেতেন। লক আউট হয়ে যাওয়া চা বাগানের মিটিঙে তীব্র উত্তেজনা থাকত। কিন্তু বাগান খোলার চুক্তি হবার পর ধামসা-মাদল বাজিয়ে শ্রমিকদের উল্লাস আজও আমার চোখে ভাসে।
         পায়ে পায়ে পুরনো অফিসের সামনে এসে পড়েছি। অনেকটা একই রকম রয়ে গেছে দেখছি অফিসটা। কিন্তু দরজা জানালা বন্ধ কেন ? আজ তো বুধবার। সরকারী ছুটির দিন তো নয় !

          গাছের অসংখ্য পাতা পড়ে আছে অফিসের বারান্দায়। কেউ মনে হয় ঝাড়ুও দেয়নি দীর্ঘদিন। এদিক ওদিক দেখছিলাম। চোখে পড়ল মুন্নার চায়ের দোকানটা। আমাদের অফিসের সব মিটিয়ে ওর দোকান থেকেই চা আসতো। মুন্নার বয়স হয়েছে। চোখে উঠেছে চশমা। 

         আমাকে দেখেই মুন্না এগিয়ে এলো। ওর কাছে শুনলাম, এই অফিসে এখন একজন নয়, দু-দুজন অফিসার পোস্টেড।  তার মধ্যে একজন তিনবছর আগে কোথায় চলে গেছেন, কেউ জানে না। আর দ্বিতীয় জন মাসে দু-তিন দিন আসেন। অবশ্য তিনি রোজ এলেও লাভ নেই।  এখন এখানে কোনও ক্লার্ক,  টাইপিস্ট,  দারোয়ান,  নাইটগার্ড, ইন্সপেক্টর,,,,,,কিছুই নেই।  যারা ছিলেন,  কেউ রিটায়ার করেছেন,  কেউ প্রমোশন পেয়ে বদলী হয়ে গেছেন, ছেত্রীবাবু মারা গিয়েছেন। সরকার থেকে শূণ্য পদ আর পূরণ করা হয়নি। উল্টে মাথা ভারী প্রশাসন করে দুজন অফিসারকে এখানে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। তাঁরা কাদের নিয়ে কাজ করবেন ? এখন আর কোনও লোক এই অফিসে কাজ নিয়ে আসেনা।
           ইচ্ছে ছিল পুরনো কয়েকজনের সাথে দেখা করার।  কিন্তু সেই ইচ্ছেটা মরে গেছে। আমি আজই সন্ধ্যার ট্রেনে ফিরে যাব। আমি তো অন্য এক বীরপাড়াকে চিনতাম। বীরপাড়া আমার চোখে চিরকাল সেরকমই থেকে যাবে।

==================

চন্দন দাশগুপ্ত 
রামকৃষ্ণ উপনিবেশ, রিজেন্ট এস্টেট, 
কলকাতা।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

প্রচ্ছদ।। ৮৩তম সংখ্যা ।। মাঘ ১৪৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ।। প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮১তম সংখ্যা ।। অগ্রহায়ণ ১৪৩১ নভেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮৪তম সংখ্যা ।। ফাল্গুন ১৪৩১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮২তম সংখ্যা ।। পৌষ ১৪৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। নবপ্রভাত ৮৫ ।। চৈত্র ১৪৩১ মার্চ ২০২৫

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল