google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। গুরুমশাইয়ের বেত ।। জীবন পাইক - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

গল্প ।। গুরুমশাইয়ের বেত ।। জীবন পাইক

গুরুমশাইয়ের বেত 

জীবন পাইক


 সকালে রঙ্গলাল চলেছে পাঠশালে৷পরনে তেল চিটচিটে হাফ প্যান্ট৷গায়ে শত ভাঁজ পড়া রং চটা জামা ৷দেখলেই বোঝা যায় বহুদিন তাতে ইস্ত্রি পড়েনি ৷ গলায় জড়ানো গামছাতে বাঁধা অল্প কিছু ঘরে ভাজা মুড়ি ৷ চিবোতে চিবোতে যাচ্ছিল পাঠশালে ৷ শীতের সকাল ৷ বিছানা ছেড়ে উঠতে আজ ওর বড্ড দেরি হয়েছে ৷
           আজ না গেলে কি নয়? যা না বাবা গোরু দুটোকে একটু মাঠে নিয়ে যা না এবেলা না হয় ওবেলা পাঠশালে যাবি, মা বলে ৷
     রঙ্গলাল বলে, না মা আমাকে যেতে হবে ৷ গুরুমশাইকে তুমি চেনো না মা ৷উনি ভীষণ রাগি ৷ রঙ্গলালের মা আর কোন কথা বলে না ৷পাশের বাড়ির ছেলেটা সদানন্দ না কি যে নাম ৷পড়াশোনা ঠিক মতো করে না ৷ আবার পাঠশালে ও ঠিক ঠাক যায় না ৷ পাড়ার কয়েকটা ছেলে তাঁর সামনে থেকে তাকে চার হাত পা ঝুলিয়ে চ্যাংদোলা দোল করে ধরে নিয়ে যায় ৷ পাঠশালে এসে সারাক্ষণ তাকে মুখস্থ করতে হয়েছে আঙ্ক, আস্ক এক এ চন্দ্র, আর বারো মাসের নাম ৷ সেই থেকে বুড়ো গুরুমশাইকে ও খুব ভয়ে ভয়ে চলে ৷
              গুরুমশাই আমাদের পাশের পাড়ায় থাকেন৷ মুসলমান লোক ৷মুখে বড়ো বড়ো দাড়ি ৷কিন্তু বেশ রাশ ভারি৷ গলার জোরটা ও বজ্র গম্ভীর৷ কথাগুলো রঙ্গলাল বলছিল ওর মায়ের কাছে ৷ও আরো বলে জানো মা সরদার পাড়ার গুণধর পড়তে গিয়ে সে দিন কি করেছে ৷
         কি করেছে? মা বলে।
আমরা তখন তালপাতার চাটাইয়ে বসে লিখে যাচ্ছি অ-আ,ক-খ৷ গুরু মশাই আমাদের ডাক পড়িয়ে একটু ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে চুপচাপ বসে ছিলেন৷ গুণধরকে অঙ্ক দিয়েছেন আগেই৷
কিছু সময় চুপচাপ থাকতে থাকতে গুরুমশাই খোরশেদ বাবু ঘুমিয়ে পড়েছেন৷  হয়তো বা বয়সের ভারে জর্জরিত গুরু মশাই ক্লান্তিতে তখন ঘড় ঘড় করে নাক ডাকছেন৷ গুণধর অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একটা সময় অধৈর্য হয়ে পড়ে৷ গুরুমশাইকে ডাকতে গিয়ে হঠাৎ তাঁর দুধ সাদা দাড়িতে  আলতো হাত দিয়ে বসে৷ তা দেখে ছেলেরা হো হো করে হেসে ওঠে ৷গুরুমশাই চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে ওঠেন৷ বেয়াদব, আমার দাড়িতে হাত ! এতো সাহস! হাতের কাছে থাকা বেত নিয়ে সে দিন তিনি খুব উত্তম মধ্যম দিয়েছিলেন৷ আজ পঞ্চাশ বছর বয়সের দোর গোড়ায় এসে আমাদের পাড়ার গুণধর সেই প্রয়াত গুরুমশাই খোরশেদ সাহেবের বেতের কথা ভুলতে পারে না৷
 
============

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন