Featured Post
গল্প ।। অসামাজিক ।। সান্ত্বনা চ্যাটার্জি
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
অসামাজিক
সান্ত্বনা চ্যাটার্জি
শীত আসব আসব। সূর্য্য অস্তাচলগামী , সন্ধ্যার আগমনে আকাশের মেঘেমেঘে লজ্জার গোলাপি রঙধরেছে। স্রীমতি সুভ্রা সরকার বারান্দায় আরাম কেদারায় বসে মোবাইল হাতে অধীর অপেক্ষায় সময় গুনছে।
মেয়ে রুচিরা অফিস থেকে দেরী করে ফেরে। কাজের মেয়ে কালি ও চলে গেছে।
অবশেষে অপেক্ষার অবসান, মোবাইল বেজেছে। নতুন প্রেমিকার মতন বুকটা ধ্বক করে উঠল।
হ্যালো, এতো দেরী করলে আজ …অভিমানের সুর।
আরে আর বোলো না, আজ ড্রাইভার আসেনি , মালতী কে কিটী পার্টিতে ছেড়ে আসতে গিয়ে দেরী হয়ে গেল।
আজ কার বাডিতে পার্টি ? অহনা সান্যাল।
তারপর কি খবর বলো, না না দাঁড়াও , কি শাড়ি পরেছ আজ, সেই আকাশি মলমল ? একবার দেখি তোমায়, হয়াটস এ্যাপের কেমেরাটা খোলো নাএকবার দেখি সুন্দরি প্রেমিকা কে।
খুশীতে ঝলমলে সুভ্রাকে মোবাইলের পরদায় দেখে দীপ্তেন্দু হাল্কা শিষ দিয়ে উঠল। কি ইচ্ছে করছে জানো "! ফোনের এপাড়ে সুভ্রার লজ্জা রাঙা হাসি, যাঃ…।এর পর ধারাবাহিক প্রেমালাপ, দুস্টুমি ভালোবাসা বাসি চলল।তার সংগে কিছু কেচ্ছা কাহিনী । এরা দুজন দূর সম্পর্কের আত্মীয় ,চেনা জানা আত্মীয় পরিজন ।এক ইসামাজিক রঙ্গমঞ্চের থেকে আসা । উঁচু সমাজের নানান কলঙ্ক , নানান অন্তরঙ্গ গল্প গুজব নিয়ে মনের সুখেসংগে আড্ডা জমে উঠল।
এ সব পরকীয়া সমাজের উপরতলার মানুষের মধ্যে হরদম হয়ে থাকে । লোকেরা আডালে। হাসাহাসি, কেচ্ছাটিকা টিপ্পনি করে ঠিকই তবু না বোঝার আড়ালটা রাখে।।
ডাক্তার অতীন সরকার বহুদিন দিল্লীর তে ছিলেন। সুভ্রা ও রুচিরা মাঝে মাঝে কলকাতায় তাদের নিজস্ব চারকামরার ফ্ল্যাট বাড়িতে এসে ঘুরে যেত । গত বছর ডাক্তার সরকার করোনার শিকার হয়ে প্রাণ হারান। তারপরেসুভ্রা মেয়ের সংগে কলকাতাতেই চলে আসে। দীপ্তেন্দু চিরকাল ই কলকাতার বাসিন্দা।
সময় যে কেমন করে কেটে যায় বুঝতেই পারে না।হটাত বেল বাজার শব্দে ঘোর কাটে যেন। এখন আমাদেররাখতে হবে দীপ্তেন্দু, মনে হচ্ছে রুচি অফিস থেকে ফিরেছে।
দরজা খুলে রুচিরাকে দেখে সুভ্রা বলে আজ এত তাড়াতাড়ি ! আয় কি দেব, চা না কফি!
কিছু দিতে হবে না মা, আজ সন্ধ্যায় দেবিকার বাড়ি ছোটো খাটো খানা পিনার ব্যাবস্থা করা হয়েছে, রাত টাদেবিকার ওখানেই কাটাব।আমি শুধুমাত্র কিছু দরকারি জিনিষ নিতে এসেছি মা, দাঁড়াও আমার ঘর থেকে নিয়ে আসছি এক্ষুনি।
বিরক্তি চেপে শুভ্রা দরজার কাছে অপেক্ষা করে। রুচিরা ফিরতেই শুভ্রা বলে, তোর কি কোনও ছেলে বন্ধু নেইনাকি, সব সময় শুধু দেবিকা আর দেবিকা ।
ঠান্ডা চোখে মার দিকে তাকায় রুচিরা! দেবিকার বাড়িতে অনেক ছেলে ও আসবে মা। তোমার প্রবলেমটা কি ? মা, কত বার তো বলেছি আমার এ ব্যাপারে মাথা ঘামিও না ।
তাই বলে কি তুই বিয়ে থা করবি না না কি। দেবিকা কে ছাড় এবার । বুঝিস না কেন, তোদের এই মেয়েতে মেয়েতে ব্যাপার টা সমাজ মোটেই ভালো চোখে দেখেনা। এটা স্বাভাবিক ও নয়।
রুচিরা সরু চোখে মার দিকে তাকায়, বিদ্রুপের সুরে বলে ,তোমাদের মতন প্রেম এক জায়গায় আর বিয়ে অন্যত্র বাড়ি গাড়ি টাকা চাকরি , সম্পত্তি ,সমাজ দেখে করব বলছ!
হ্যাঁ সেটাই স্বাভাবিক ।সংসারের ভার হাতে এলে প্রেম ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। প্রেম দিয়ে তো আর সংসার চলে না।
আমাদের সম্পর্কের ও একটা নাম আছে মা, সমকামী আর আমি তার জন্য একটুও লজ্জিত নই।।
তোমাদের মতন সামাজিক প্রাণী আমি হতে পারব না মা।আর তাছারা তুমি কবে থেকে সমাজের কথা মেনে চল মা!
তার মানে?
বোকা সেজো না মা, তোমার আর দীপ্তেন্দুকাকার মধ্যে যেটা চলছে সেটাও কি সমাজ ভালো মনে নেবে!
বাবা মারা গেছে এক বছর ও হয় নি, এর মধ্যেই দুজনের…. যাক গে সেটা তোমাদের ব্যাপার, কিন্তু ব্যাপারটাকেউ জানেনা ভেবোনা । তাছাড়া বাবার আর তোমার সম্পর্কের মতন দীপ্তেন্দুকাকা আর মালতীকাকির সম্পর্ক বরফ ঠান্ডা নয় ।এটাও সবাই জানে।
পরকীয়াটাও কিন্তু সমাজ ভালো বলে না।
শুভ্রা বিস্ফারিত চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, এ কি তার মেয়ে, চিনতে পারছে না কেন ? গালে হাত দিয়েচেঁচিয়ে ওঠে ছি ছি নিজের গুরুজনদের সম্পর্ক নিয়ে এমন মিথ্যা কথা বলতে পারলি।
সত্যি কি তা তুমিও জানো আমিও জানি মা ।
তাই বলছি তুমি তোমার মতন চল আর আমাকেও আমার মতন চলতে দাও।
শুভ্রার ভয়ে অপমানে কালো মুখের উপর দরজা বন্ধ করে চলে গেল রুচিরা।।
===============
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন