Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

ভাষাদিবসের প্রবন্ধ ।। মায়ের ভাষা এবং ভাষার মৃত্যু! ।। অনিন্দ্য পাল

মায়ের ভাষা এবং ভাষার মৃত্যু! 

 অনিন্দ্য পাল 


 
ভাষা কী? 
মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত, ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন কোনো বিশেষ সমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্র ভাবে অবস্থিত, তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দ সমষ্টিই হল ভাষা। 
ভাষা মানুষের সর্বোত্তম সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক সমস্ত আবিষ্কার- এর কথা মনে রেখেও মানুষকৃত সম্পূর্ণ নিজস্ব বৌদ্ধিক উন্নয়নের অন্যতম স্বাক্ষর হিসেবে ভাষার উল্লেখ বোধহয় অযৌক্তিক নয়। 
২০১৩ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীতে ভাষার সংখ্যা প্রায় ৭০০০। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা মাত্র ২৩টি ভাষায় কথা বলে। 
কিন্তু ভাষা কি অমর? জন্ম নেওয়া সব ভাষাই কি বেঁচে বর্তে আছে? এর উত্তর হল, না। পৃথিবীর ৪০ শতাংশ ভাষাই এখন প্রায় বিপন্ন। অর্থাৎ বলা যায়, ২৮৯৫ টি ভাষা পৃথিবীর বুক থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। 
ওই ২০১৩ সালের হিসেব অনুযায়ী প্রতি ১৪ দিনে পৃথিবী থেকে একটি ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। যেমন হারিয়ে গেছে আন্দামানের 'বো'- ভাষা, ক্রোয়েশিয়ার 'ডালমাশিয়ান' ভাষা, তাসমানিয়ার ভাষা 'তাসমানিয়ান', নিউ মেক্সিকো ও টেক্সাসের 'লিপান' ভাষা, প্রাচীন চিনের 'খিতান' ভাষা হারিয়ে গেছে। এই ভাষাগুলো হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হারিয়ে গেছে ওই ভাষায় কথা বলা মানুষের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চিহ্ন। ঔপনিবেশিকতা, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং রাজনৈতিক আগ্রাসন কোনো ভাষার বিলুপ্তির অন্যতম কারণ। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন (তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশ), ১৯শে মের ভাষা আন্দোলন (শিলচর, অসম)  এই সবেরই উদাহরণ বহন করে। যদিও বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে শিলচরে ১৯মের (১৯৬১) আন্দোলনের মৌলিক পার্থক্য আছে। পূর্ব পাকিস্তানে দ্বিজাতি তত্ত্বের চাপিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রনীতিকে না মেনে, ধর্মকে পিছনের সারিতে ঠেলে দিয়ে ভাষাকে জাতীয়তাবোধের বাঁধন করে সংঘটিত হয়েছিল বাহান্নর আন্দোলন, যার চরম পরিণতি ঘনিয়ে এনেছিল ২১ শে ফেব্রুয়ারি। আবার বরাক উপত্যকায় ১৯ শে মের হত্যালীলার পিছনে ছিল সেখানকার বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বহুভাষিক চরিত্রের সম্মান রক্ষার লড়াই, যে কারণে অনেক অসমিয়াভাষী মানুষও সেদিন এগিয়ে এসেছিলেন অসমের বহুভাষিক চরিত্র রক্ষা করার ব্রত নিয়ে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অধ্যাপক হীরেন গোঁহাই, ছাত্রনেতা উদ্ভব বর্মণ। প্রাণ দিয়েছিলেন মদন ডেকা, মাধব বর্মণ ( আশির দশকে)। 
      ভাষাবিদ ডেভিড ক্রিস্টাল তাঁর "ল্যাঙ্গুয়েজ ডেথ" বইয়ের ভূমিকাতে লেখেন "Language death is real. Does it matter? Should we care? " এ প্রশ্ন এখন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। বিশেষত বাংলা ভাষার বর্তমান প্রবাহ আমাদের এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। যদিও একথা বলা যাবে না, যে বাংলা ভাষা অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, কারণ বর্তমানে পৃথিবীতে দেশীয় কথ্য ভাষার নিরিখে বাংলা ভাষা পঞ্চম স্থানে রয়েছে। সমস্ত পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে, যাদের মাতৃভাষা বাংলা। আবার আরো প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। আবার সমস্ত পৃথিবীর কথা বলিয়ে ভাষাগুলোর নিরিখে বাংলা ভাষার ক্রম ষষ্ঠ। ভারতে বাংলাভাষায় কথা বলে প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষ, যার নিরিখে বাংলা ভারতের দ্বিতীয় কথ্য ভাষা। 
কিন্তু ভাষার মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে, শুধু মাত্র আমাদের দেশেই নয় ভাষা মারা যাচ্ছে সমস্ত পৃথিবী জুড়ে। যেমন ২০২১ সালে ক্যালিফোরনিয়ার উকচুমনি ভাষার একমাত্র কথক ম্যারি উইলকক্স মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই ভাষাটাও হারিয়ে গেল। একই ভাবে রাশিয়ার কামচাটকা অঞ্চলের বেরিং লিউ ভাষাও ২০২১ সালে হারিয়েছে তার শেষতম বলিয়ে কে। এই তালিকায় আছে ব্রাজিলের জুমা, নর্থ ক্যারোলিনার টুসক্যারোরা, আন্দামানের আকা-কারি, অস্ট্রেলিয়ার নাগন্ডি, পাটাগোনিয়ার তেহুয়েলচে প্রভৃতি ভাষা। 
না, বাংলা ভাষার এরকম খারাপ অবস্থা আসেনি এখনও, তবে একটা অন্য আশঙ্কা তো আছেই। আমরা বাংলা পড়ছি, লিখছি এবং শুনছিও বটে, কিন্তু বাংলা আজ কিছুটা হলেও ইংরাজি আর হিন্দির প্রভাবদুষ্ট, ফলত ভাষার চরিত্রে তার ছাপ পড়ছে। বাংলাটা খানিকটা ব্যাংলা বা ইংলা বা বাংলিশের দিকে এগিয়ে চলেছে। 
তবে কি আমরা অন্য ভাষা শিখবো না? নিশ্চয়ই শিখবো। রামমোহন রায় আরবি-ফারসি-সংস্কৃত ছাড়াও শিখেছিলেন ইংরাজি, মাইকেল মধুসূদন দত্ত শিখেছিলেন সংস্কৃত, ইংরাজি, ফরাসি, গ্রিক ও লাতিন। বিদ্যাসাগরের মত ছিল, সংস্কৃত পড়তে হবে কিন্তু ইংরাজিও জানা চাই। সেই সময় ভাষা শিক্ষার ধারাপাত যে ধারণার অনুসারী ছিল সেটা এরকম, " নানা ভাষার জানালা খুলে রেখে নিজের ভাষার জমিতে ফসল ফলানোই বর্তমান শতকের আধুনিকতার রীতি।" একথা এখনও প্রযোজ্য। রবীন্দ্রনাথ মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন, কিন্তু তার অভিপ্রায় কখনো অন্য ভাষা না শেখানোর ব্যবস্থা করা ছিল না। তিনি তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। সেই সব ভাষার মধ্যে যেমন ভারতীয় ভাষা ছিল তেমনি চিন ও জাপানের ভাষাও ছিল। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল সেই বহু ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা কিন্তু এখনকার মতো জগাখিচুড়ি ভাষাভাষীদের জন্ম দেয়নি। "ওহ্ শিট্! আজও নাইনটিনাইনের রিচার্জটা করতে ভুলে গেলাম! অফারটার আজই লাস্ট দিন ছিল। এই bro তোর কাছে কি ছুট্টা হ্যাজ?"-- আজকের এই জগাখিচুড়ি বাংলা আমাদের কানে প্রায়ই আসে। 
চাকরির ভাষা, কাজের ভাষা হিসেবে ইংরেজি এখন অবধারিত হয়েছে, কতক ক্ষেত্রে হিন্দিও। কিন্তু বাংলা ভাষার শত্রু এরা নয়, শত্রু বাঙালি নিজেই। স্বাধীনতার পর শিক্ষিত বাঙালি বাংলা আর ইংরেজি এই দুই ভাষাতেই মোটামুটি পারদর্শী ছিল কিন্তু হঠাৎ করে তখন বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় থেকে ইংরেজি তুলে দেওয়া হল, তখন বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়ে আর ইংরেজি শেখার উপায় থাকলো না, ফলে মধ্যবিত্ত আর উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ুয়ারা সন্তানরা ইংরেজি শেখার জন্য ভর্তি হল ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে। গত শতকের আটের দশকের শেষ থেকে শুরু হয়ে এখনও চলছে। এর ফলে এখন ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। এই ব্যবস্থা ক্রমাগত দু'টো প্রজাতির জন্ম দিল, একদল বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের অন্য দল ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছেলেমেয়েদের বাংলা দ্বিতীয় ভাষা এমনকি তৃতীয় ভাষাও হল। উন্নাসিক অভিভাবকরা কলার তুলে বলতে পারলো, আমার ছেলে (অথবা) মেয়ে বাংলা বলতেই পারে না। আবার বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের অবস্থাও তথৈবচ। উপরন্তু আস্তে আস্তে একটু সম্পন্ন পরিবার থেকে উপরতলার বাঙালি পরিবার সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে কেজি স্কুলের পায়ে ষষ্টাঙ্গ হল। আর এখন তো "I hope কি আমি ভাল স্কোর করবো"র যুগ রমরমিয়ে চলছে। পোলাও এর বালতি হাতে "রাইস নেবেন?" বা হুড়হুড়ে বাংলা বাক্যের মধ্যে মধ্যে একটা করে 'but' চালিয়ে দেওয়া বাঙালি এখন এটাকেই ভাষার উত্তরণ বলে ধরে নিয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ইদানিং স্যোসাল মিডিয়ার দেওয়ালে দেওয়ালে এক বিকৃত জগাখিচুড়ি বাংলা ভাষার দাপিয়ে বেড়ানো চিন্তার কারণ বৈকি। 
তবে শুধুই চিন্তা নয়, কিছুটা আশা যে নেই তা নয়। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটা বিরাট পরিসরে বাংলা ভাষার চর্চা চলছে, চলছে অনবরত লেখালেখি। লিটল ম্যাগাজিন ও বড়, মাঝারি বহু পত্রিকা নিয়মিত সাহিত্যের সহবাসের মাধ্যমে জন্ম দিচ্ছে শত শত কবিতা, গল্প, অণুগল্প, মুক্তগদ্য প্রভৃতি। আশা করা যায়, বাংলা ভাষার ফুসফুস এখনও এই ক্রমবর্ধমান দূষিত ভাষাবাষ্পের মধ্যেও বহু যুগ শ্বাস-প্রশ্বাস চালিয়ে যেতে পারবে।
 
=====================
 
অনিন্দ্য পাল 
প্রজত্নে -- বিশ্বনাথ পাল 
গ্রাম -- জাফরপুর 
পোঃ-- চম্পাহাটিি 
পিন - ৭৪৩৩৩০
থানা -- সোনারপুর 
জেলা -- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত 


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩