সোমা চক্রবর্তী
দানবটার সাথে কবির প্রায়ই লাগে
ঘোরতর সংঘাত।
দানবটার ভীষণ খিদে।
যারা তার খুশী ছিনিয়ে নিয়েছে,
বদলে দিয়েছে জীবনের ঋজু, সরল পথ-
তাদের খুশীর ফুলগুলোকে
নিষ্ঠুর মুঠিতে নিয়ে তছনছ করে দেবার
ভারী ইচ্ছে তার।
কবি বলে, 'ক্ষমা করো।'
কবি বলে, 'আজও তো আকাশ নীলই আছে
আগের মতোই।
আজও তো পৃথিবী তেমনিই বড়ো
যেমন ছিল আগে।'
বহমান সময়ের ধারা
বয়ে নিয়ে যাবে সব ক্ষতি-
কবির মত তাই।
কিন্তু দানবটা যখন দেখে-
মনের ভেতরের রক্তাক্ত ক্ষতগুলো,
যখন তার মনে পড়ে যায়-
ভুলুন্ঠিতা সেই ছিন্ন, শীর্ণ লতাটিকে,
তখন জিঘাংসা তার বাঁধ মানে না।
ওদের নিস্তরঙ্গ জীবনকে ছারখার করে
ভরে দেবে সে শ্মশানের স্তব্ধতা-
পুঁতে দেবে সেখানে করোটির চিহ্ন আঁকা পতাকা;
তবেই নিভতে পারে দানবের বুকের আগুন।
কবি বলে, 'বেশ তো, থাক না ওরা আপন মনে
শুধু নিজেদের নিয়ে।
তুমি যে বিশ্বের!
তোমার কি সাজে ক্ষুদ্রতার মধ্যে পড়ে অধীর হয়ে ওঠা?
এতো যে ধূলি মাটির পৃথিবীতে,
তাও কি মলিন করতে পারে
বিশ্ব মায়ের আঁচল?'
কবি দেখে, ফুল ফুটেছে-
অশোক, পলাশ আর শিমূল।
আমের মুকুল এসেছে গাছে গাছে,
প্রকৃতি ভরে গেছে নতুনের সম্ভারে!
টুং টাং জলের তরঙ্গে তরঙ্গে
নর্তকী নদীর নূপুর বাজে!
কালো জলে তার, তারাদের ঝিকমিক-
সেখানে আকাশ মুখ দেখছে পরম কৌতুকে!
কবি বলে, 'দাও ছেড়ে সব ব্যর্থতা।
ভেসে যাক না তারা মেঘে মেঘে, দূরে...
অচেনার গন্ডী ছাড়িয়ে!
চোখ মেলে চাও সুন্দরের দিকে!
ভালোবাসো! ক্ষমা করো!
দানবের ক্ষমা নেই।
ভালোবাসা সে বোঝে না।
সে শুধু চায় প্রতিশোধ।
কবির সঙ্গে লড়াইতে
প্রায়শই জিতে যায় দানবটাই।
কিন্তু আমি জানি- আজ, এখন
যতোবার খুশী সে জিতলেও,
শেষ পর্যন্ত কিন্তু জয়ী হবেই-
ধূলি-ধূসর বসনা,
করবী ফুলের মালা পরা
অনাদৃতা সেই কবিই!
*********************
সোমা চক্রবর্তী
Kalikapur, Taki Toad
PO. Barasat, Dist: 24 Pgs (N), WB.
Pin: 700124.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন