Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

প্রবন্ধ ।। লকডাউন-আত্মশাসন এবং চাষিঘরের স্বনির্ভরতা : একটু ফরে দেখা ।। অরবিন্দ পুরকাইত

                      


লকডাউন-আত্মশাসন এবং চাষিঘরের স্বনির্ভরতা : একটু ফিরে দেখা

                         – অরবিন্দ পুরকাইত



শুনে এলুম সাতটা গোলা/এসে দেকি ভাজনাখোলা। 
 না, পুরো চিত্রটাই নববিবাহিত ওই মেয়েটির মতো স্বপ্নভঙ্গের ছিল তা তো নয়, সকলের সাতটা গোলা না থাকলেও, ভাজনাখোলানির্ভর বা ভাজনাখোলা-সর্বস্ব সংসার ছিল না । কোনও কোনও পরিবারে চাষের ধানেই চলে যেত সারাবছর, কোনও কোনও পরিবার ভালো চাষ নিশ্চিত দেখে তবেই অবশিষ্ট ধান গোলা থেকে নামিয়ে বেচতেন নতুন ধান ওঠার মুখে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের দিকে (কেন-না চাষি পরিবারে একইসঙ্গে বিশ্বাস ছিল 'খেতে আজ্জায় কপালে ফলে' এবং 'না আঁচালে বিশ্বাস নেই'); কিন্তু এমন চাষি-পরিবার কমই ছিল, অন্তত দু-দশমাস যাঁদের ঘরের ধানে চলে যেত না। যাঁদের অতি সামান্য ধানজমি ছিল বা আদৌ ছিল না, তাঁদেরও অনেকেরই সারাবছর ভানাকোটার কাজ করে চলে যেত। কেউ কেউ ধান কিনে, চাল করে বেচতেন; কেউ কেউ অন‍্যের থেকে ধান নিয়ে, চাল করে দিতেন চাল বা টাকাপয়সার বিনিময়ে। কোনও কোনও গৃহস্থ অগ্রহায়ণ-পৌষ-মাঘমাসের দিকে সারাবছরের মতো ধান কিনে নিয়ে, নিজেরা সিদ্ধশুকনো করে, ভাঙিয়ে, ঘরের চালে খেতেন। সরাসরি ধানচালের মাধ্যমে না হলেও, ধানচালনির্ভর বা তৎসংশ্লিষ্ট কাজেও যে কত মানুষের সম্পূর্ণ বা আংশিক জীবিকানির্বাহ হত! চিড়ে-মুড়ি-খইয়ের কথা আপনিই মনে আসবে। শুধু চাল-মাছ-দুধ নয়, অন্তত গত শতকের সাতের দশক থেকে আটের দশকের মাঝামাঝি সময়কালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার গ্রামে আমাদের মতো যাদের শৈশব-কৈশোর-যৌবন কেটেছে তারা দেখেছে বিশ্ববাজারের হাতছানিহীন সেই সময়ে চাষি পরিবার – কিংবা আরও একটু বড় করে ধরলে গাঁ-ঘরের মানুষ – তাঁদের দৈনন্দিন থেকে দীর্ঘব্যবহার্য প্রয়োজনের কত জিনিসই না নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারতেন! কতখানিই তাঁরা ছিলেন স্বাবলম্বী! কথাটা আরও বেশি করে মনে হয় আবিশ্ব করোনা-পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে।
মানুষ যে এখনও কতখানি পরনির্ভরশীল, কোভিড-১৯ তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আরও নিদারুণভাবে। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্মকাণ্ড করোনা (কোভিড-১৯) এবং তার প্রশমন-প্রচেষ্টাস্বরূপ সম্পূর্ণ লকডাউনে যখন স্তব্ধ হয়ে পড়ল হঠাৎ, মানুষের একেবারে প্রাথমিক চাহিদা – জীবনধারণের উপকরণ খাদ্যেরই সরবরাহ অক্ষুণ্ণ রাখার দরকার পড়ল বিভিন্নভাবে। স্তব্ধ দোকান-বাজার, যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে কত পেশার মানুষই যে কেবল প্রতিদিনের পেটচলার জিনিস সরবরাহের কাজে লেগে পড়ল স্থানীয়ভাবে, অন্যদের বাঁচার ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে! রিকশাওয়ালা রিকশা ফেলে সবজি নিয়ে বেরোলেন, ছোটখাটো কল-কারখানায় কাজ-করা মানুষ বা কাজের মাসি বেরোলেন মাছ নিয়ে, ফুচকাওলা বেরোলেন ফলমূল নিয়ে! লকডাউন এবং ক্রম-আনলক পর্যায়ে সিংহভাগ মানুষকে আবারও উপলব্ধি করতে হল আপনা হাত জগন্নাথ, নিজের পায়ে ভর দিয়ে চলা বা পা-গাড়ির মাহাত্ম‍!
       সেই একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের করোনা-আতঙ্ক এবং তজ্জনিত সম্পূর্ণ লকডাউনের মধ্যেও অন্তত একটি ক্ষেত্র ছিল প্রায় স্বাভাবিক। কৃষিক্ষেত্র। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার জন্যে চাষি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত এবং সমস্যা-সংকটে জেরবার হয়ে পড়লেও এই ক্ষেত্রটা পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়নি। অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতোই চাষি তাঁর খেতে গেছেন, চাষ-আবাদের কাজ করেছেন, পরিবারের জন্যে শাক-সবজি-ফলমূল এনেছেন, কেবল বাজারজাত করার বিঘ্নের কারণে উৎপাদিত ফসলের নগণ্য দাম পাওয়া বা অনেকখানি অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়া তাঁকে বিষণ্ণ বা বিপদগ্রস্ত করেছে; কিন্তু চাষের কাজ স্তব্ধ হয়ে যায়নি – চাষবাস সচল থেকেছে। কিছুদিন পূর্বে তা প্রমাণিতও হয়েছে সরকারি স্বীকৃতিতে। দেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে করোনা বা তজ্জনিত লকডাউওনে অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যাহত হলেও, কৃষিতে বিপুল উৎপাদন হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও দেখেশুনে কৃষিক্ষেত্রকে আত্মশাসনের আওতার বাইরে রেখেছেন।
       গাঁ-ঘরে বিশেষ করে চাষি-পরিবারে সকাল হয় খুবই সকাল-সকাল (আর্লি টু রাইজ আর্লি টু বেড-এর প্রতিমূর্তি যেন গ্রাম!)। অন্তত গত শতাব্দীর সাতের দশক পর্যন্ত আমাদের মতো চাষিবাসী তথা গাঁ-ঘরের মানুষের দিন শুরু হত উনানের ছাইয়ে দাঁত মেজে মুখ ধুয়ে। ছাই ছাড়াও নিমডাল, আশস্যাওড়ার ডাল, খেজুরের ডাগের আগার মতো চারপাশে এমনিতেই-পাওয়া দাঁতনকাঠি ব্যবহৃত হত। এখন দাঁত মাজার উপকরণ হিসাবে ছাইয়ের ব্যবহার তো প্রায় উঠেই গেছে, অন্যগুলিও ব্যবহৃত হয় বোধহয় অতি সামান্যই – তার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে বাজারচলতি বহুবিজ্ঞাপিত হরেক কিসিমের টুথ ব্রাস ও টুথ পেস্ট। অর্থাৎ দিনের শুরুই এখন অন্যনির্ভর হয়ে – কর্পোরেট দুনিয়ার হাত ধরে।
       গোলাভরা ধান, পুকুরভরা মাছ, গোয়ালভরা গরু নিতান্ত কথার কথা ছিল না অনেক চাষি-পরিবারেই। গোলায় আরও থাকত, মরশুম-শেষে বীজমারা সারা বছরের গুড় – খেজুর বা তালের – মাটির কলসিতে মাটিরই খুরিতে মুখ ঢেকে গোবরমাটি দিয়ে মুখ-আঁটা। গোয়ালঘরে বা তার গায়ে থাকত ছাগল বা ভেড়ার ঘর (তিন-শিং বাড়িতে রাখতে নেই বলে সংস্কার, অর্থাৎ কোনও পরিবারে হয় কেবল গরু ও ছাগল অথবা গরু ও ভেড়া কিংবা ছাগল ও ভেড়া থাকবে) কিংবা মুরগি-হাঁসের ঘর – অনেকসময় মেছলা বসানোর মাটির চওড়া ধারির (যাকে 'দোকা' বলা হয়) মধ্যে গহ্বর-করা, মুখের কাছে দু-দিকে দুটি লাঠি পোঁতা থাকত, তার মধ্যে কাঠের পিঁড়ের মতো কিছু ঢুকিয়ে বা বসিয়ে দিলেই মুখ বন্ধ। পুকুরে মাছের সঙ্গে সঙ্গে থাকবে খানিক কলমিশাকের দাম এবং চরবে পোষা হাঁস – খাবে গেঁড়ি-গুগলি) তবে সবাই তো আর সম্পন্ন চাষি ছিলেন না, প্রান্তিক চাষি ছিলেন, ছিলেন অন্যের জমিতে-খাটা জনমজুরও, কিন্তু একটা বিষয়ে মিল ছিল – গাঁ-ঘরের এঁরা প্রায় সকলেই পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজনের বহু জিনিসই নিজেরাই তরি করে নিতেন, গাঁটের কড়ি খরচ করে বাজার থেকে বহুজাতিক কোম্পানির তৈরি রেডিমেড জিনিস না কিনে (পাওয়াও যেত না এখনকার মতো নানান জিনিসপত্র)। সবাই সবকিছু নিশ্চয়ই তৈরি করে নিতে পারতেন না, কিন্তু তাতে আটকাত না। একজন একটা কাজ ভাল করেন বা একটা জিনিস ভাল তৈরে করেন, অন্যজন অন্য একটা কাজ বা জিনিস। পরস্পরনির্ভরভাবে দিব্যি মিলে যেত প্রয়োজনের জিনিসটি। কিন্তু এটা বলতেই হবে, গাঁ-ঘরে বিশেষত চাষি-পরিবারে নারী-পুরুষ অনেকে অনেককিছুই তৈরি করে নিতে পারতেন। আজকের চাষি-পরিবারের মতো এমন চা-দাসত্ব ছিল না তখন। এখন সকাল শুরুই হয় অধিকাংশ চাষি পরিবারে চা দিয়ে, দিনে হয়তো আরও দু-একবার – অন্তত সন্ধ্যায়; সঙ্গে বাজারি বিস্কুট, মুড়ি ইত্যাদি। অথচ একদা চাষি-পরিবারে সকাল শুরু হত মূলত একেবারে পান্তা দিয়েই  (বলা হত, 'পানি পান্তা ভক্ষণ/সেই পুরুষের লক্ষণ।') আর দুপুর ও রাত্রে ভাত। এখন অনেক পরিবারে অন্তত কোনও কোনও সদস্য রুটিই খান – অনেকেই শারীরিক কারণে। আগে রুটি বলতে কেবল অমাবস্যা-পূর্ণিমা, একাদশী কিংবা বার-ব্রততে। কোনও কোনও অত্যন্ত গরিব পরিবার – যাঁদের ধানজমি ছিল না হয়তো, তাঁরা রুটি খেতেন অনেকসময় – মূলত ভেলিগুড় দিয়ে বা খেজুরে কিংবা তালের গুড় দিয়ে (রুটি ভিজিয়ে, অনেকখানি জল-সহ লঙ্কা বা লঙ্কা-পেঁয়াজ সহযোগে পান্তার মতো খাওয়াও ছিল)। এত চিনির চল তখন হয়নি – প্রতি তরকারিতে চিনি দেওয়া তো তখন ছিলই না। মুড়ি-খই-কড়াই মূলত বাড়িতেই ভেজে নিতেন মহিলারা – এক মুড়ি ফুরোবার আগে আবার ভেজে নেওয়া হত। বছরে বিভিন্ন সময়ে বিশেষত উৎসব-অনুষ্ঠানের সময় মুড়ির গুঁড়োর নাড়ু কিংবা নারকেলনাড়ু, চিনি-নারকেল সহযোগে ছাপার সন্দেশ ইত্যাদি বাড়িতেই প্রস্তুত করতেন মহিলারা। ঘরের চাষের বিভিন্ন কড়াই জাঁতায় ভেঙে ভিজিয়ে শিলে বেটে বাড়িতে তৈরি করে নিতেন/নেন বড়ি বা বড়া। প্রস্তুত করতেন/করেন বিভিন্ন রকম আচার। বাড়ির আমসত্ত্ব আজও বন্ধ হয়ে যায়নি।
ঘর-গেরস্থালির কত জিনিসই যে নিজ হাতেই তৈরি করে নিতেন চাষি-পরিবারের সদস্যরা! বসার আসন হিসাবে তালপাতার চাটাই, কোথাও কোথাও খেজুরপাতার (আর ছিল পিঁড়ে, বেশির ভাগ সময়েই যা ঘরেরই কাঠের – তাতে ছুতোরের নকশাকাটা)। ঘর-দাবা এবং রান্নাঘরে ব্যবহারের জন্য আলাদা আলাদা সেট থাকত, রান্নাঘরের চাটাই সচরাচর ঘর-দাবায় উঠত না। কাটা চৌকোনা চটের উপর উল বা সুতোর নকশা-তোলা আসন তৈরির চল ছিল একসময় যথেষ্ট। দেখাশোনার সময় পাত্রপক্ষকে হাতের কাজ দেখানোর জন্যে কুমারী কন্যাদের এমন আসন তৈরি ছিল প্রায় অবধারিত। ফুলো পাতি (পাতিঘাস) কেটে, শুকিয়ে, চাষের-পাটের দড়ি মাটির তৈরি 'বোঁদেল'-এর (প্রথমে রোদে শুকিয়ে, পরে পুড়িয়ে) সাহায্যে তৈরি ঝেঁদলা/ঝ্যাঁতলা কিংবা খেজুরপাতার পাটি – এগুলোতে শোয়া-বসা, অতিথি-অভ্যাগতদের বসতে দেওয়া; পুরোনো হয়ে গেলে তাতে সিদ্ধ-করা ধান বা অন্যান্য শষ্য শুকানো কতকিছুই যে চলত! কেউ কেউ তৈরি করতেন হোগলার মাদুর – তুলনায় আরও মোলায়েম। ঠাকুরমশাইরা বসে পুজো করার জন্যে তৈরি করে নেওয়া হত কুশের (কাশ) আসন। নারকেল পাতা বঁটিতে চেঁছে কাঠি বের করে 'পালা ঝ্যাটা', 'মুড়ো ঝ্যাটা' (ঝাঁটা) তৈরি করে নিতেন/নেন দাবা-ঘর, উঠোন, গোয়ালঘর ইত্যাদির জন্যে আলাদা আলাদা। নারকেলের ডাগের আগার দিকের অপেক্ষাকৃত সরু ও ছোট কাঠিতে তৈরি হত মুড়ি-খই ভাজার কুঁচিকাটি (কুঁচিকাঠি – ছোট্ট ও সরু ঝাঁটার আকারেরই তবে আলগা বাঁধনটি থাকত গোড়া থেকে বেশ খানিকটা উপরের দিকে, যাতে গোড়াগুলিকে মেলে বিস্তৃত করে মুড়ি, খই, কড়াই ইত্যাদি নেড়ে ভেজে তোলার সুবিধা হয়) 
মহিলারা উনান তৈরি করে নিতেন – জোড়া উনান (দুটি পাত্র বসানোর), ছাড়া উনান (একটি পাত্র বসাবার)। সাধারণত পাড়ায় যেসব মহিলা এটা ভালো পারতেন তাঁদের বললে তাঁরা সানন্দে রাজ্যির গল্প করতে করতে, জোগাড়-করে-রাখা কাদা-গোবর-তুষ-লোহার শিক (সঙ্গে পাট বা খড়ের কুচিও থাকতে পারে কাদায় মেশাবার জন্যে) ইত্যাদি দিয়ে হাসিমুখে উনান তৈরি করে দিয়ে যেতেন। বড়জোর খেয়ে যেতেন দুটি মুড়ি বা পান্তা। সেই উনানের রসদ কাঠঘুঁটের জন্যেও কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার দরকার পড়ত না – নিজেদেরই গাছপালা বা গরুর গোবর থেকেই তা মিলত (এখন তো রীতিমতো রান্নার গ্যাস ঘরে-ঘরে)। প্রসঙ্গত, এক-একটা পরিবারে দু-দশটা গরু হামেশাই থাকত এবং তদের খাদ্য ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘরেরই খড়, মাঠের ঘাস, আশপাশের লতাপাতা, বাড়ির ফ্যান-চেলুনি (চেলুনি/চালুনি – চাল-ধোওয়া জল), চাষের শাক-সবজির ঝড়তি-পড়তি ইত্যাদি (বস্তুত চাষি-পরিবারে কিছুই প্রায় ফেলনা ছিল না) – গাইয়ের দুধের সময় বা বলদের বর্ষার হালের সময় বড়জোর কেনা হত টুকটাক খোল। এখন বলদ গিয়ে মূলত গাইগরুতে ঠেকেছে, তাও তার মধ্যে বেশ কিছু জার্সি ইত্যাদি উন্নত প্রজাতির – তাদের জন্যে খোল-ভুসি-ইঞ্জেকশন-ওষুধ ইত্যাদি হরেক কিসিমের ব্যবস্থা।
পুরোনো, পরার-অযোগ্য বাতিল কাপড় সিদ্ধ করে (কেনা সোডা থেকে সে সিদ্ধ করায় ক্ষার হিসাবে ব্যবহৃত হত তেঁতুল বা কলাগাছের জ্বালানির ছাইও) বাড়িতেই কাঁথা বসিয়ে নিতেন মহিলারা। কাঁথা সেলাইয়ের সুতোও পুরোনো কাপড়ের পাড় থেকেই তুলে নেওয়া হত। যাঁরা কাঁথা বসাতে অপটু তাঁরা পটু-কারও থেকে বসিয়ে দেখে নিয়ে সেলাই করতেন নিজেরাই। পুরুষদেরও কেউ কেউ কাঁথা সেলাই করতে পারতেন। শরতের শেষ ও হেমন্তের প্রথম দিকের বসতি মরশুমে কাঁথা বসানো, ঢাকা দেওয়া (পুরোনো – কখনও বা ছিঁড়েখুঁড়ে-যাওয়া কাঁথার উপর পরনের বাতিল পরিষ্কার কাপড় চাপিয়ে পুনরায় সেলাই করা), মেরামত করার ছিল আদর্শ সময় (শিল্পমনস্ক চাষির মূলত এই সময়ই ছিল গান বাঁধা বা পালা রচনার সময় – কার্তিক মাসে মহাভারতপাঠ তো ছিলই কোনও কোনও ঘরে)। পরিবারে কেউ পোয়াতি হলে সে পরিবারে বা সে মহিলার বাপের বাড়িতে দু-চার মাস ধরে তৈরি হত পাতলা ছোট ও মাঝারি অনেক কাঁথা, বিশেষত শীতকালে-হওয়া বাচ্চার জন্যে। বড় বাচ্চা থেকে বুড়োরা শীতে অনেকেই কাঁথা গায়ে দিয়ে পাড়ায় বা পথেঘাটে বেরোতে কুণ্ঠিত হতেন না। একটু বড় বাচ্চাদের, ধুতি বা শাড়ি দু-ভাঁজ করে অথবা কাঁথায় দু-হাত-সহ শরীরে বেড় দিয়ে পা-পর্যন্ত-ঝুল গলায় বেঁধে দেওয়া হত 'বাছাড়' (উচ্চারণ 'বাচাড়')। এত হরেক কিসিমের শাল-চাদর-সোয়েটারের ব্যবহার তখন ছিল না গাঁ-ঘরে – অল্প-আধলা যা থাকত তা মূলত তোলা থাকত আত্মীয়স্বজনের বাড়ি যাওয়া বা উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্যে। বাড়িতে দু-একটা লেপ-কম্বল থাকত যা মূলত ব্যবহার করা হত অতিথি-অভ্যাগতদের জন্যে  - যদিও তাঁদের জন্যে কাঁথারই ছিল আধিক্য এবং অতি আদরের। এমনি এমনি তো আর বলা হয় না – শীতের কাঁথা (চাষিঘরে উচ্চারণ 'কাঁতা'। হায়, নকশি কাঁথা, তোমার সে দিন গিয়াছে!) আর বর্ষার ছাতা। বাজারনির্ভর এত হরেক রকম শীত-মোকাবিলার জিনিস তখন কোথায়! তাই নানান শীতবস্ত্র গায়ে চড়িয়ে এখন লোককে হামেশাই বলতে শোনা যায়, শীত কোথায়! কিংবা, এ বছর শীত তেমন পড়ল না।
নিজেদের বসবাসের ঘর থেকে রান্নাঘর, গোয়ালঘর, গোলা ইত্যাদি নির্মাণে সে বিষয়ে দক্ষ কারও হাতে দায়িত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চাষি-পরিবার সর্বদাই বড় ভূমিকা নিয়েছে, আর যাঁরা নিজেরা পারতেন তাঁদের তো কথাই নেই – লেগে পড়তেন সঙ্গীসাথী নিয়ে। ঘর ছাওয়ার জন্যে ঘরামি অবশ্যই ডাকা হত, কিন্তু এমনটিও দুর্লভ ছিল না যেখানে নিজের খোড়ো চাল নিজেই ছেয়ে নেওয়া হচ্ছে।
       কম করে অন্তত তিন রকম আকারের মই তৈরি করে নিত চাষি-পরিবার। চাষের জমিতে মই দেওয়ার জন্যে 'এক কড়ার মই' (কড়ার আসলে কাড়ার), মাঝারি আকারের মই – ঘর-রান্নাঘর-গোয়াল-গোলা প্রভৃতির চালে ওঠা বা ধান-খড়ের গাদা দেওয়া ইত্যাদির জন্যে আর খুব বড় আকারের মই খড়ের চালের ঘর ছাওয়ার জন্যে। জল, রস বা ধান বওয়ার বাঁক তৈরি করে নিত বাঁশের বাখারি থেকে। চেড়ার বুননে সোজাসুজি চারকোনা বা বেড় দেওয়া গোল-গা গোলা, ধান ঝাড়াইয়ের জন্যে চেড়া ও বাঁশ সহযোগে তৈরি আগড় বা পাটা, শোয়ার জন্যে বাঁশ-চেড়ার তক্তপোশসদৃশ পাটাতন বা বাঁশ-চেড়ার তৈরি আগড়ের দরজা – সবই তৈরি করে নিত নিজেরাই। বড়জোর যিনি ভালো পারেন তাঁর সহযোগিতা নিয়ে। পাটারই পদ্ধতিতে, কিন্তু আরও দক্ষ প্রক্রিয়ায় চেড়ার বেড়ে ও বাঁশের পাটাতনে – কাদার লেপন সহযোগে - তৈরি হত ধান রাখার গোল বা চৌকোনা গোলা বা মরাই। তো সেই সহযোগিতা এককালে কেমন পার্যায়ের ছিল, একটি দৃষ্টান্ত দিলে বোঝা যাবে। আমাদের যে খড়ের চালের ঘর ছিল, সে চাল ছিল চাঁছা-ছোলা সরু-মোটা বিভিন্ন আকারের চেড়ার তৈরি, বেতের বাঁধনে। দেড়-দু-ইঞ্চির বর্গাকার খোপের সে চাল এক শিল্পকর্ম বটে! তো সেই চাল – আমার পিতার কথায় – তৈরি হয়েছিল বসতি মরশুমে গৃহসম্মুখস্থ খামারে দিনের পর দিন পাড়ার একাধিক ব্যক্তির দিনের বিভিন্ন সময়ে স্বেচ্ছায় স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের মাধ্যমে। কিছুর বিবিময়ে নয়, কেবল ধামাভরে মুড়ি বসিয়ে দেওয়া হত সেখানে!    
       মাছ ধরার জাল বুনে নেওয়া হত ঘরে-ঘরেই। কেউ কেউ হয়তো বুনতে পারতেন, কিন্তু জাল তৈরির পরিকল্পনা করতে পারতেন না – তাঁরা অন্যের সাহায্য নিয়ে নিজে বুনতেন। যাঁরা জাল তৈরি করতে পারতেন না, কেবল সারতে পারতেন – তাঁরা অন্যকে দিয়ে বুনিয়ে, ছিঁড়ে গেলে নিজেরা সেরেসুরে চালাতেন। সেই জালের সুতোও ছিল হাট থেকে অত্যন্ত সরু সুতোর নেচি কিনে এনে বাড়িতে পাকিয়ে নেওয়া – চেড়ার তৈরি একরকম চরকার গায়ে নেচি জড়িয়ে তার থেকে চেড়ার-তৈরি কাঁপায় গুটিয়ে নিয়ে, গোল মসৃণ চেড়ার কাঠির নিচে পাথরের চাকতি-ঢোকানো টাকুরে পাকিয়ে নেওয়া। একেবারে সুতির সুতো যাকে বলে, অর্থাৎ তুলাজাত। এখন বাজারের নাইলন সুতোই বেশি চলে, চলে তৈরি-জালও। আরও অনেককিছুর মতো এই জাল বোনার ক্ষেত্রেও সাহায্য-সহযোগিতা ছিল মূলত পারস্পরিক সামাজিক সাহায্য-সহযোগিতানির্ভর, এমনকি অন্যের থেকে পুরো জালটা বুনিয়ে নেওয়ার মধ্যেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো আর্থিক ব্যাপার থাকত না, জাল সেরে নেওয়ার তো নয়ই। মাছ ধরার পোলো বা বর্ষায় পুকুর-ডোবার জল বার করে দেওয়ার চেড়ার বুননে পাটা চাষি পরিবার নিজেরাই তৈরি করে নিত, সারতে পারত ঘনি (ঘুনি)-আটল।
রান্নাঘরে, ফুঁ দিয়ে উনানের আগুন উসকে দেওয়ার ফুঁকোবাড়ি, ভাতের হাঁড়ি বসানোর আলটা, নারকেলের মালা ও চাঁছা চেড়ার সাহায্যে ডাল ঘাঁটার ছোট উঁড়কিমালা – কতকিছুই তৈরি করে নিত চাষি-পরিবার! শীতের নলেন গুড় থেকে গ্রীষ্মের তালপাটালি প্রস্তুত হত কোনও কোনও চাষি পরিবারে। তার প্রয়োজনে প্রস্তুত হত বড় উঁড়কিমালা, তাল-ডেগোর তাড়ু থেকে খড়ের বিভিন্ন আকারের আলটা। ঘরের-চাষের বা কেনা পাট দিয়ে তৈরি হত বিভিন্ন প্রয়োজনে দড়ি – ছাগল-গরু-ভেড়া বাঁধা থেকে, গরুর মুখের জালতি, গাছ থেকে সবেদা ইত্যাদি পাড়ার জালতিবাড়ির জালতি, দোলা; ঝেঁদলা-বোনা, কাপড়-জামা শুকানো বা রাখার জন্যে টাঙানো – সংসারের কত কাজই না হত তাতে! পাট-পাকিয়েই বিশেষ কায়দায় কয়েকদিনের প্রক্রিয়াশেষে তৈরি হত খেজুরগাছ কাটার কাছি।
       কালীপুজোর সময় ইলেকট্রিকের এত বিচিত্র ও বাহারি আলো ছিল না, বড়জোর এক প্যাকেট ছোটছোট সরু বাতি। কিন্তু অশরীরীদের সরিয়ে রাখতে বাড়িতে প্রবেশের দরজার মুখে আলো তো জ্বালিয়ে রাখতে হবে সারারাত! আমাদের বাড়ির মতো কোনও কোনও পরিবারে এক পাউ ফাঁপা কাঁচা বাঁশের মাঝখানে ফুটো করে ভিতরে কেরোসিন ভরে, ফুটোর উপরে সলতে-গলানো এক-দেড় ইঞ্চি কাঁচা কঞ্চি বসিয়ে ফুটোর মধ্যে বসানো কঞ্চির গোড়ার চারিদিকের ফাঁক কাদা দিয়ে বুজিয়ে জ্বালিয়ে রাখা হত সারারাত। কেউ বা লম্বা লম্ফর আকৃতি দিতেন কাটা পাউয়ের এক মুখে ছিদ্র করে ওইভাবে প্রস্তুত করে। কেউ কেউ অত খাটুনি না খেটে সোজাসুজি লম্ফ জ্বালিয়ে দরজার পাশে বেঁধে রাখতেন লাঠির আগায়।
ঘরের মেঝেতে বিছানো থাকত সারা বছরের আলু, গড়াগড়ি যেত কুমড়ো; চাষের হলুদ-সর্ষে-লঙ্কায় চলে যেত সারা বছর। ঘরের পাশে সমুদ্র না থাকলেও, মাঠের নোনা মাটি ছেনে এনে আমরা লবণও তৈরি করেছি দিনের পর দিন।
চাষি-পরিবারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বেশ কিছু আজও তৈরি করে নেওয়া হয়। তবে কল-কারখানায় তৈরি বহু জিনিস বাজারে চলে আসার ফলে – তার মধ্যে বহু সৌখিন জিনিসপত্রও – এবং অনেকসময় হাতে প্রস্তুত জিনিসের তুলনায় তার শ্রম বা দাম কম হওয়ায় অনেক জিনিসই আর তৈরি হয় না ঘরোয়াভাবে। আগের মতো বনজঙ্গল তথা গাছপালা কমে যাওয়ায় কোনও কোনও উপাদানেরও অভাব কিছুটা। এখন বলতে গেলে এক মরশুমের চাষ নয় আর, বিশেষত সুতিখাল আসায় অনেক জায়গাতেই দু-বার ধানচাষ হচ্ছে, প্রচুর বেড়েছে সবজিচাষ। বেড়েছে চিরাচরিত চাষের বদলে অর্থকরীভাবে চাষ। কৃষিজমি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে ফলের বাগানে, সবজিচাষের ডাঙাবাড়িতে। ফলে একই চাষির হাতে নানান চাষের বদলে হয়তো কয়েকটি অর্থকরী ফসলের চাষ বেড়েছে, অন্যান্য ফসল ইত্যাদির জন্যে তিনি হয়তো অন্যদের উপর নির্ভরশীল। সার্বিকভাবে এতে করে ব্যস্ততার কারণে মানুষের হাতে অবসর সময় কমে গেছে। খড়ের ছাওন দেওয়া মাটির বাড়ির ব্যাপারটা প্রায় উঠে যাওয়ায় প্রায় উঠেই গেছে তৎসংক্রান্ত কাজকর্ম।
       শখ-সৌখিনতার সঙ্গে একটু সমঝোতা করতে পারলে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আজও ঘরে তৈরি করে নেওয়া অবশ্যই সম্ভব। পুরোনো অভ্যাস কিছু কিছু ফিরিয়ে আনার মানসিকতা দেখাতে পারলে এবং এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ-উৎসাহ-প্রচার বাড়লে দৈনন্দিন প্রয়োজনের হাতে-তৈরি জিনিসের ব্যবহারেও তার বাড়তি প্রভাব পড়তে পারে তা বলাই বাহুল্য। জীবনযাপনের আধুনিক উপকরণ খুব বেশি এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব তো বটেই, অনেকসময়েই তাতে হিতে বিপরীত হওয়াও বিচিত্র নয়। তবুও চাহিদার লাগামকে একটু চেপে ধরার চেষ্টা করতে পারলে, অল্প পুঁজির যাপনে অভ্যস্ত হওয়া শিখতে পারলে, অযথা পরনির্ভরশীলতা কমে। বিপদের দিনে দিশাহারা হয়ে পড়া থেকে মেলে অনেকখানি রেহাই। তাতে বেশি কিছু না হোক, আত্মনির্ভরশীলতার অনুশীলন বাড়ে, বাড়ে স্বাবলম্বিতা – অনেকখানি রসদ আয়ত্তে থাকে প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির মোকাবিলার বা প্রাকৃতিক হানিতে হয়রান না হওয়ার।

                 *             *             *

মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩