Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

ভাষাদিবসের গদ্য ।। "আ-মরি বাংলা ভাষা…" ।। শ্রীজিৎ জানা


"আ-মরি বাংলা ভাষা…"


শ্রীজিৎ জানা




বাংলা ভাষা উচ্চারণে মুখগহ্বরে সৃষ্টি হয় এক চরম আনন্দঘন উন্মাদনা। তারই প্রতিধ্বনি শ্রবণীর পথ পাড়ি দিয়ে 'মরমে পশিলো গো' আর 'আকুল করিল পরাণ'। বাংলাভাষী রোমাঞ্চিত হোয়ে বলে উঠেন-- "মোদের গরব মোদের আশা/আ-মরি বাংলা ভাষা"! মাতৃভাষার প্রতি এমন আবেগময় কথন অমূলক নয়। বিশেষত যে ভাষা তার স্বাধিকার রক্ষায়,নিজের অস্মিতাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে জীবন বাজি রাখতে পারে। সমগ্র একটা ভূভাগ তার ভাষাগত  ঐক্যের স্পর্ধা দিয়ে রূখে দিতে পারে শাসকের কুটিল আগ্রাসন। কিম্বা কখনো প্রাদেশিক সরকারের একপেশে ভাষানীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সিদ্ধান্ত বদলের দাবীতে বুক পেতে গুলি নিতে পারে। সেই ভাষার দুয়ারে,সেই ভাষা শহীদের বেদীতে আজন্ম নত থাকুক একজন বাংলাভাষীর মস্তক। শুধু বাংলাভাষী নয়,বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষকে রোমাঞ্চিত হোতে বাধ্য করায় ঢাকার রাজপথের রক্তাক্ত দিন, শিলচরের রক্তভেজা মাটি আর মানভূমের ভাবিনী মাহাতোরা। মাতৃভাষার জন্য এমন আত্মত্যাগের মহিমাকে কুর্নিশ জানাতেই ইউনেস্কো বিশ্বের স্মরণীয় দিবস মানচিত্রে ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস(২০১০) নামে চিহ্নিত করেছেন। একজন বাঙলাভাষী মানুষ এ নিয়ে গর্ব করতেই পারেন। কিন্তু গর্ব অনুভবের পরেই আসে ঐতিহ্যকে ধরের রাখার দায়িত্ব ও কর্তব্যভার। এইক্ষণে বিস্ময় ও প্রশ্নচিহ্ন দুটোই সপাটে বসানো যেতে পারে।

 

তথ্য বলছে ইউনেস্কোর মতে যে ভাষায় এক হাজারের কম মানুষ কথা বলে তার বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এস. আই. এল তথা ২০১৯ এ প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে বিশ্বে ভাষার সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। ইতোমধ্যে পৃথিবী থেকে হারিযে গ্যাছে পাঁচশ তিয়াত্তরটি ভাষা। আগামী বছরগুলোতে প্রায় তিন হাজার ভাষা ক্রমে ক্রমে বিলুপ্ত হবে।

 

অন্য একটি তথ্য জানাচ্ছে, "বর্তমান বিশ্বে ৫১টি ভাষা আছে যার সর্বশেষ মাত্র একজন ব্যাক্তি জী্বিত।একশ জনের কম জানে এমন ভাষা প্রায় পাঁচশ।এক হাজার জন জানে এমন ভাষা দেড় হাজার। বর্তমানে ছয় শতাংশ ভাষায় কথা বলেন বিশ্বের চুরানব্বই শতাংশ মানুষ।আর ছয় শতাংশ মানুষ কথা বলেন বাকি চুরানব্বই শতাংশ ভাষায়।"

ভাষাপ্রেমীদের কাছে এহেন পরিসংখ্যান ভয় এবং ভাবনা উদ্রেককারী!

 

শুধুমাত্র বৈশ্বিক সংখ্যাতত্ত্ব নয়,ভারতবর্ষের দিকে চোখ রাখলে প্রাপ্ত তথ্য ভষাপ্রেমীদের খুব একটা  স্বস্তি দেয় না। ইউনেস্কোর ভাষা বিলুপ্তির গাণিতিক বিচার মতে "ভারতের ৭৮০ টি ভষার মধ্যে বিপদের সম্মুখীন ৬০০টি ভাষা। এমনকি জানা যায় গত ৬০ বছরে প্রায় ২৫০টি ভারতীয় ভাষা লুপ্ত হোয়ে গ্যাছে।" তাহলে চিন্তার একটা কালো মেঘ উঁকি দিচ্ছে ভাষার আকাশে।স্বান্ত্বনা শুধু ২০১১ সালের রিপোর্ট বলছে বিশ্বে প্রায় ২৮ কোটি মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্চে বাংলা ভাষা।যার মধ্যে ভারতে ১০ কেটি আর বাংলাদেশে ১৮ কোটি। সেই হিসাবে বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান পঞ্চম। কিন্তু এসব গেলো তো সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবনিকেশ। এবার তাহলে বাস্তবতার খানিকটা পোস্টমর্টেম করা যাক।

 গুপ্তকবির সেই কবেকার কয়েকছত্র পঙক্তি  আজও সকলের মাতৃভাষাগত ঔদাসিন্যের দরজায় ধাক্কা দ্যায়- "মাতৃসম মাতৃভাষা/পুরালে তোমার আশা / তুমি তার সেবা কর সুখে"! যেখানে সেবার প্রশ্ন,সেখানে স্বার্থহীন হওয়াটাই বোধকরি কাম্য। কিন্তু আজকের ভাষা শিক্ষার প্রবণতায় প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে স্বার্থ সমন্ধীয় নিক্তিধরা মাপামাপি! আর বর্তমানে মাতৃসেবার সুষ্ঠু ব্যবস্থা যখন সুযোগ্য পুত্ররা বৃদ্ধাশ্রম নামক আবাসে করেছেন,তখন মাতৃভাষার সেবা কতখানি হৃদয়ের সাথে করবে তা নিয়ে ভয়ানক সংশয় থেকে যায়।

 

আজকের প্রজন্মকে শেখানো হচ্ছে 'কাজের ভাষা' আর 'অকাজের ভাষা'র মধ্যেকার প্রভেদ। সেখানে  Utility Value -ই শেষকথা, Emotional Value -র কোন মূল্য নেই। ক্ষুধার্তের কাছে বিষফল ও সুমিষ্ট ফলের কোন প্রভেদ থাকে না। উদরপূর্তি তার একমাত্র লক্ষ্য। আজকের দুনিয়ায়  একধরনের যে ভাষা আগ্রাসন নীতি কৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তার প্রধান অস্ত্রই হল উক্ত ক্ষুধার পরিবেশ সৃষ্টি করা। 'বাংলা জানলে কিস্যু হবে না','লাইফে কোন জব্ অপারচুনেটি নেই' ইত্যাদি গোছের শ্লোগান বাজারে চাউর করে বেড়ানো। ব্রিটিশরা এদেশে রাজত্বের প্রশ্নে  বাংলা রপ্ত করতে বাধ্য হয়েছিল। বাংলা ছিল তাদের কাছে কাজের ভাষা। আর অধুনা প্রজন্ম এই ধারণায় বড় হচ্ছে বিদেশি ভাষা কর্মের ও মর্মের ভাষা,সেক্ষেত্রে বাংলা ভাষা না শিখলেও দিব্যি চলে।

 

চতুর্দিকে ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। "আমাদের বাবুসোনার এক্কেবারে বেঙ্গলীটা আসে  না" গোছের উন্নাসিক উচ্চারণে তৃপ্তির হাসি। কথায় কথায় হিন্দি ও ইংরেজির শব্দের গাজোয়ারি অনুপ্রবেশ,সিনেমা- সিরিয়ালের সংলাপে ল্যাজামুড়োতে খাবলা খাবলা ইংরেজি ও হিন্দি শব্দবন্ধ ঢুকিয়ে চেকনাই মার্কা ডায়লগ থ্রো আল্ট্রামর্ডান সোসাইটিকে নাকি ফ্লারিশ করছে। ইংরেজি কিম্বা হিন্দি জানেন না মানে আপনি বর্তমান সমাজে ব্রাত্য একটি প্রাণী। কথায় কথায় ইংরেজি না আউড়ালে আপনার ব্যাক্তিত্বের বিশেষণ হবে স্মার্টনেস হীন একটি ম্যাদামারা জীব।

একটু শহর নগরে ঢুঁ মারুন,দেখবেন পিওর বাঙালি কিন্তু হিন্দি কপচাচ্ছে, তাও ভুল উচ্চারণে। পশ্চিমবঙ্গের  ব্যাঙ্কে যান তো মনে হবে আপনি যেন ভিন্ রাজ্যে পৌঁছে গ্যাছেন। কাঁচের ওপ্রান্তে যিনি তিনি বাংলা বোঝেন না। ফলত জীবন ওষ্ঠাগত। ইন্টারনেট দুনিয়ায় আপনার মগজে ঠুসে দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষা চলবে না। এবং এই চাপিয়ে দেওয়া নীতিকে মানতে বাধ্য হচ্ছে বহুলাংশ।


অন্যদিকে ভাষাগত শ্লীল ও অশ্লীলতার বিষয়টি হয়তো এইক্ষণে বিস্তারিত এবং ভারিক্কী বোধ হবে।সেক্ষেত্রে সামান্য এড়িয়ে বলা যায় বাংলা ভাষার ভিতর প্রতিনিয়ত যেধরনের শব্দের আমদানি হচ্ছে তা ভাষার কৌলিন্যকে খাটো করছে। বিশেষত রাজনৈতিক নেতা নেত্রীদের ব্যবহৃত শব্দবন্ধ কখনোকখনো মারাত্মকভাবে ক্ষতিকারক ও হিংসাত্মক পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে। এমন কিছু গান ও গানের কথা লেখা হচ্ছে এবং গাওয়া হচ্ছে তা কোন বাংলা ভাষার উপভাষার ছাঁদে পড়ে না। অত্যধিক চটুল সেসব গানকে সস্তা খেউড় বলে মনে হয়। খেঁউড়গান পূর্বেও ছিল। কিন্তু ভাষা যখন বহতা নদীর মতো তখন কালে কালান্তরে তার উৎকর্ষতাই সকলের কাছে কাঙ্খিত,অবনমন নয়।


প্রতিনিয়ত বাংলা ভাষায় সংযোজিত হচ্ছে অদ্ভুতুড়ে শব্দমালা। মা ক্রমে মামি,মম্,বাবা ক্রমে বাপি,বাবাই, ড্যাডি,ড্যাড,পাপা,পপ্স,কাকা হয়েছে কাকু কাকাই আঙ্কেল,কাকিমা হয়েছে কাম্মা,কাকিন্স্,দিদি হয়েছে দিদিভাই,দিভাই,দি,দাদা হয়েছে দাদাভাই,দাভাই,ব্রো,জেঠিমা হয়েছে জেম্মা,জামাইবাবু হয়েছে জাম্বো,জিজু- তালিকা বিস্তর! অন্যদিকে ঝিঙ্কু,ঝক্কাস,হেব্বি প্রশংসাসূচক, ঝারিমারা প্রেমসূচক,ক্যালাবো,বাঁড়া গালাগালিসূচক,খিঁচে যাওয়া,চাঁড়েচলে যাওয়া বিরক্তিসূচক,গুড়জল,গুড়বাতাসা,চড়ামচড়াম প্রভৃতি শাসানিমূলক শব্দের বহুল প্রচলন আজকের বাংলা ভাষার সম্পদ হোয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞাপনে, পোস্টারে,দেওয়াল লিখনে বানানে ও শব্দ প্রয়োগের বিস্তর প্রমাদ দৃষ্টিকে যন্ত্রণা দ্যায়। ভাষাকে কুলুষিত করে। বাংলা ভাষার সেই আত্তীকরণ ক্ষমতা আছে যেখানে সে অন্য ভাষার শব্দ সহজেই গ্রহণ করে নিজস্ব শব্দ ভান্ডারে সমৃদ্ধ করতে পারে। বাঙলাভাষীরা গর্ভ নিরোধক বড়ি বলে না, সেনিটারি ন্যাপকিন বা প্যাডের বাংলা করে ন্যাকড়া বা গামছা বলর না,কন্ডোমের বাংলা শব্দ ব্যাবহার করে না, তার মানে ইংরেজী ভাষায়-ই পরিত্রাতা বা শেষ ভরসা- এমন সিদ্ধান্ত বালকসুলভ। কাকের ময়ূর সাজার অর্থ -"স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় পরধর্ম ভয়াবহঃ"!


দায় কার? প্রশ্ন যখন দায় নিয়ে তখন স্পষ্টভাবে খোলামেলা আলোচনা করা খুবই দরকার। প্রথমত কর্মসূত্রে যারা ভিন রাজ্যে থাকেন তারা বাধ্য হোয়েই এড়িয়ে থাকছেন বাংলা ভাষাকে। তাঁদের ছেলেমেয়েরা সেই রাজ্যের ভাষাতেই স্বচ্ছ্ন্দবোধ করছে। অনুরূপ ঘটনা ঘটছে প্রবাসী বাঙলাভাষীদের ক্ষেত্রেও। তবে কিয়দংশের মানুষ তাঁদের নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা শেখাচ্ছেন যত্ন ও উৎসাহভরে। দ্বিতীয়ত বাংলা মাধ্যমের স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা তাঁদের ছেলেমেযেদের বাংলা মাধ্যম অপেক্ষা ইংরেজি ও হিন্দি মাধ্যম স্কুলে পড়াতে বেশি আগ্রহী। তৃতীয়ত অনেক পরিবারে কোন মিডিয়ামে সন্তানকে পড়ানো হবে তা নিয়ে স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে বচসা এমন মাত্রায় পৌঁছায় যে সংসারের শান্তি রক্ষার্থে শেষ পর্যন্ত একপক্ষ জেতে এবং তা ইংরেজি। চতুর্থত  ইংরেজিতে কথা বলাটাই একমাত্র স্মার্টনেস ও পাণ্ডিত্যের সূচক - এই ভ্রান্ত ধারনায় ডুবে আছেন আধুনিক সমাজের বহুলাংশ। পঞ্চমত ফ্যামিলি স্টেটাস ও দেখনদারি বাংলা মাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার একটি কারণ। ষষ্ঠত বিনোদন মাধ্যমগুলির একচেটিয়া  বাংরেজি  ভাষণ সপ্তমত মোবাইলে চ্যাটিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে ইংরেজি মাধ্যমের সুবিধা অষ্টমত সরকারি সমস্ত দপ্তরে, সর্বভারতীয় বিভিন্ন  চাকুরীর পরীক্ষায়, উচ্চ শিক্ষায়,বিদেশ সফরে ইংরেজি এবং হিন্দির বাড়তি সুবিধাপ্রাপ্তি নবমত বাংলা মাধ্যম স্কুল গুলির বাংলাভাষা শিক্ষার প্রতি অবহেলা দশম মোবাইলে কথা বিনিময়ে ইংরেজি হরফের ব্যবহারিক সারল্য!


বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা সেখানে বাংলা ভাষার লড়াই এক ধরনের কিন্তু এপার বাংলায় বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে, বাসে, ট্রামে, ট্রেনে, অফিস-আদালতে একজন বাংলাভাষী মানুষ কমিউনিকেশনে প্রতিনিয়ত ধাক্কা খাচ্ছে। আর এই ধাক্কা খাবার জায়গা থেকে আগামী প্রজন্মকে সে ভিন্নতর ভাষায় দক্ষ করে তুলতে চাইছে। আশ্চর্যের বিষয় অনেক সাহিত্যিক তাদের সন্তান-সন্ততিকে কতখানি বাংলা ভাষার প্রতি অনুরাগী করে তুলেছেন তা নিয়ে বিস্তর সংশয় থেকে যায়! তাঁদের লেখা সাহিত্য তাঁদের আত্মজরা পড়েছে কিনা সন্দেহ  করা অমূলক নয়!এমন গল্পও শোনা যায় টালিগঞ্জের বহু অভিনেতা-অভিনেত্রী বাংলা ভাষা পড়তে জানেন না অথচ তারা বাংলা সিনেমা- সিরিয়ালে অভিনয় করেন। তাদের ইংরেজি অক্ষরে বা্ংলা শব্দ লিখে দিতে হয়। অনেক গায়ক- গায়িকাও তথৈবচ।একাধিক ভাষা জানা দোষের না, বরঞ্চ তা তার মেধা ও দক্ষতাকেই বিকশিত করে। রামমোহন রায়, সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলার পাশাপাশি একাধিক ভাষা পারদর্শীছিলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয়, স্বামী বিবেকানন্দ বাংলার পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমাণে ইংরেজি জানতেন। মধুকবির ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় দখল ছিল অসামান্য! কিন্তু যখন মাতৃভাষাকে সম্পূর্ণভাবে অবহেলা করে অন্য ভাষার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ প্রদর্শিত হয় তখন নিজেদের দৈন্যতাকে প্রকট করে। ভাষাকেন্দ্রিক এক  সংকটের মুহূর্তে তৈরি করে।ভিন্ন ভাষা কর্মের ভাষা হতে পারে কিন্তু মর্মের ভাষা হতে পারে না।আবেগের ভাষা হতে পারে না।  হৃদয়ের অন্তঃস্থলের অনুরণন কেবলমাত্র মাতৃভাষার অনুষঙ্গে বিকশিত ও প্রকাশিত হয়। বেবি ফুড সাপ্লিমেন্টারি  ফুড কিন্তু মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নয়। বিদেশী ভাষা মাতৃভাষার বিকল্প নয়। কর্মের ও মর্মের ভাষার, প্রয়োজনের ও প্রাণের ভাষার প্রভেদ বোঝা এবং বোঝানো খুব দরকার।

একুশে ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মাতৃভাষা দিবস কেবলমাত্র উদযাপনের ফ্রেমে বন্দী একটি  স্মরণীয় মুহূর্ত! ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কাছে কিছুক্ষণের জন্য সম্মান প্রদর্শনের নীরবতা প্রদর্শন। কালো ব্যাজ পরে রাজপথে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মৌন প্রভাতফেরী।তারপর দিবস উদযাপনের পরাকাষ্ঠার ভিড়ে হারিয়ে যায় বাংলা ভাষার গৌরব রক্ষার কর্তব্যভার। ফিবছর বিস্তর বাংলা ভাষায় বই বেরোচ্ছে মানেই বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এমন ভাবনা বাতুলতা মাত্র। বিদেশি ও প্রাদেশিক ভাষার অজগর নিঃশ্বাস বাংলা ভাষার আয়ুর পরিসীমাকে ক্রমেই ছোট করে দিচ্ছে। রামনিধি গুপ্তের সেই অমোঘ লাইন কয়টি বাংলাভাষীদের বারবার স্মরণে আনা উচিত- "নানান দেশের নানা ভাষা/ বিনে স্বদেশী ভাষা/ পুরে কি আশা!" একথা তো একশোবার সত্যি। বাংলা ভাষা বাংলাভাষীদের উচ্চারণে যুগ যুগ বেঁচে থাক। বিশ্বের ভাষা মানচিত্রে আপন গরিমায় সুউচ্চে ধরা থাক তার বিজয়কেতন।




মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩