Featured Post

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

ছবি
   মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি মুদ্রিত  নবপ্রভাত  বইমেলা ২০২৫ সংখ্যার জন্য  প্রবন্ধ-নিবন্ধ, মুক্তগদ্য, রম্যরচনা, ছোটগল্প, অণুগল্প, কবিতা ও ছড়া পাঠান।  যে-কোন বিষয়েই লেখা যাবে।  শব্দ বা লাইন সংখ্যার কোন বাঁধন  নেই। তবে ছোট লেখা পাঠানো ভালো (যেমন, কবিতা ১২-১৪ লাইনের মধ্যে, অণুগল্প কমবেশি ৩০০/৩৫০শব্দে)। তাতে অনেককেই সুযোগ দেওয়া যায়। সম্পূর্ণ অপ্রকাশিত লেখা পাঠাতে হবে। মনোনয়নের সুবিধার্থে একাধিক লেখা পাঠানো ভালো। তবে একই মেলেই দেবেন। একজন ব্যক্তি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া একাধিক মেল করবেন না।  লেখা  মেলবডিতে টাইপ বা পেস্ট করে পাঠাবেন। word ফাইলে পাঠানো যেতে পারে। লেখার সঙ্গে দেবেন  নিজের নাম, ঠিকানা এবং ফোন ও whatsapp নম্বর। (ছবি দেওয়ার দরকার নেই।) ১) মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখবেন 'মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা সংখ্যা ২০২৫-এর জন্য'।  ২) বানানের দিকে বিশেষ নজর দেবেন। ৩) যতিচিহ্নের আগে স্পেস না দিয়ে পরে দেবেন। ৪) বিশেষ কোন চিহ্ন (যেমন @ # *) ব্যবহার করবেন না। ৫) লেখার নীচে একটি ঘোষণা দিন:  'লেখাটি স্বরচিত ও অপ্রকাশিত'। মেল আইডি :  printednabapravat@gm

গল্প ।। অনাদি বাবুর অভিজ্ঞতা ।। অঞ্জন রায় চৌধুরী


অনাদি বাবুর অভিজ্ঞতা

✍️ অঞ্জন

যে সময়ের কথা বলছি সেটা মাঘ মাসের প্রথম দিক। যদিও শীতের সময়, তবুও বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ কিঞ্চিৎ বেশি থাকায় কুয়াশার চাদরে সন্ধ্যার পর থেকে বেলা পর্যন্ত চারদিক প্রায়দিনই ঢেকে যাচ্ছে। ফলে ঠান্ডার প্রকোপ যে পরিমাণ পড়ার কথা, তার থেকে কিছুটা কমই আছে। 
        অনাদি বাবুর বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালবাগ। বয়স পঞ্চান্ন। রোগা লম্বা চেহারা।উনি পেশায় লালবাগ কোর্টের মুহুরী। মুহুরী হওয়ার সুবাদে সারাদিন অনেক ধরনের লোকজনের সাথে ওনার ওঠা বসা। কেউ কিছু লেখাতে আসেন, কেউ নামের ভুল সংশোধন করতে আসেন আবার কেউ আসেন নিছকই কোর্ট কাগজ কেনার জন্য। এক উকিলের সাথে পরিচিতি থাকায় নোটারি পাবলিক বা এফিডেভিটের কাজও তিনি করে দিতেন, যদিও এর জন্য উনি আলাদা পারিশ্রমিক নিতেন। 
        অনাদি বাবুর সেই উকিল বাবুর বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদের ডোমকল ব্লকের ভগীরথপুর গ্রামে। উনি নিত্য যাতায়াত করতেন নিজের প্রাইভেট গাড়িতে, ড্রাইভারের নাম যতীন।
        একদিন উকিল বাবুর বিয়ে ঠিক হলো। বউভাতের দিন ঠিক হলো মাঘ মাসের নয় তারিখ।অনাদি বাবুকে স্পেশাল করে সেদিন সকাল থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার নেমতন্ন করে গেলেন উকিল বাবু। অগত্যা নির্দিষ্ট দিনে লালবাগ থেকে বাসে অর্ধেক পথ এসে, তারপর বাস পাল্টে ডোমকল পৌঁছে যখন ভগীরাথপুরে পৌঁছলেন তখন দুপুর বারোটা। উকিল বাবুর কাছে খানিকটা বকাবকি খেলেন দেরীতে আসার জন্য। তারপর মধ্যাহ্ন ভোজের পর্ব শেষ করে যখন অনাদি বাবু বিশ্রাম নিচ্ছেন তখন বেলা প্রায় তিনটে। উকিল বাবু প্রথম দিকটায় তাঁর অনাদি বাবু কে সময় দিতে পারলেও বিকেলের পর থেকে উনি অতিথী আপ্যায়নের ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, যদিও তিনি ড্রাইভার যতীন কে অনাদি বাবুর সাথেই থাকতে বললেন তাঁর সঙ্গ দেওয়ার জন্য।
        সন্ধ্যা বেলায় কনে যাত্রী আপ্যায়নের কাজে অনাদি বাবু ও অংশগ্রহণ করলেন। তারপর তাঁদের খাইয়ে দাইয়ে অনাদি বাবু যখন খেতে বসলেন তখন রাত ১১ টা বেজে গেছে। উকিল বাবু অনাদি বাবুকে অনেক করে অনুরোধ করলেন রাত টা কাটিয়ে যেতে কিন্তু অনাদি বাবুর স্ত্রী অসুস্থ থাকায় উনি উকিল বাবুর অনুরোধ রাখতে রাজি হলেন না। অগত্যা উকিল বাবু যতীনকে বললেন গাড়ী করে অনাদি বাবুকে লালবাগ দিয়ে আসতে। যতীন রাত বারোটা নাগাদ অনাদি বাবুকে নিয়ে রওনা হলো লালবাগের উদ্দেশ্যে।
ঘন কুয়াশায় ধোঁয়া হয়ে আছে রাস্তা ঘাট। ডিপার জ্বালিয়ে আস্তে আস্তে গাড়ী চালাচ্ছে যতীন আর পেছনে বসে ঝিমোচ্ছেন অনাদি বাবু।
        ওই রাস্তায় একটা খাল পরে যাকে বলে দৌলতাবাদ খাল। ওই খালের উপর দিয়ে একটা সিমেন্টের ব্রিজ করা। গাড়ী যখন দৌলতাবাদ ব্রিজের উপর এলো তখন রাত একটা বাজে। চারদিকে নিঝুম, একটাও জনপ্রানী নেই। হঠাৎ অনাদি বাবুর কানে এলো সমবেত আর্ত চিৎকার। অনাদি বাবু ব্যাস্ত হয়ে যতীন কে জিজ্ঞাসা করলেন," এত চিৎকার কিসের যতীন?" যতীন বললো," চুপ করে বসে থাকুন। কোন শব্দ করবেন না।" কিন্তু অনাদি বাবু প্রায় চিৎকার করে উঠলেন," মানে? অত গুলো লোকের আর্তনাদ তুমি শুনতে পাচ্ছো না?" যতীন কিছু বোঝাতে যাচ্ছিল, কিন্তু অনাদি বাবু গাড়ির ধীর গতির সুযোগ নিয়ে দরজা খুলে হুর মুর করে নামতে গেলেন। অগত্যা যতীনকে গাড়ি থামাতে হলো। অনাদি বাবু গাড়ি থেকে নেমেই দৌড়ে গেলেন ব্রিজের রেলিঙের কাছে। রেলিং ধরে ঝুঁকে পরে তিনি দেখতে চেষ্টা করলেন ওই আর্তনাদের উৎস। আবছা চাঁদের আলোয় কুয়াশার ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে আবছা দেখতে পেলেন খালের জলে একটা বাসের পেছন দিক টা ভেসে আছে আর বাসের ভেতর থেকে ভেসে আসছে সমবেত আর্ত চিৎকার," বাঁচাও, কে কোথায় আছো!" গাড়ির হেড লাইটের আলোয় অনাদি বাবু আবছাদেখতে পেলেন কয়েক জন জলে হাবু ডুবু খাচ্ছে আর জল থেকে ওঠার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না। অনাদি বাবু সাঁতার জানতেন, তিনি চিৎকার করে বললেন," ভয় নেই,আমি আসছি।" বলে রেলিং ধরে ঝাঁপ মারার উপক্রম করতেই সহসা পেছন থেকে যতীন তাঁর হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে তাঁকে একরকম টেনে হিচড়ে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেলো। অনাদি বাবু হাত ছাড়াবার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু যতীনের শক্ত হাতের বাঁধন খুলতে ব্যর্থ হলেন তিনি। যতীন অনাদি বাবুকে নিজের পাশে বসিয়ে সিট বেল্ট টা ভালো করে বেঁধে দিল। তারপর গাড়ী আবার স্টার্ট দিয়ে ওখান থেকে রওনা দিল। অনাদি বাবু চিৎকার করতে লাগলেন," আমায় এভাবে নিয়ে যাচ্ছ কেনো? ওরা চিৎকার করছিলো বাঁচার জন্য, ওদের বাঁচাতে দিলে না কেন?" কিন্তু যতীন কোনো উত্তর না দিয়ে গাড়ী চালাতে লাগলো। গাড়ী যখন লালবাগ পৌঁছল, তখন বাজে প্রায় রাত দুটো। অনাদি বাবু ততক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যতীন ডাকতে উনি ধর মর করে জেগে উঠলেন। যতীন বললো, " এসে গেছি। এবার নামতে হবে।" গাড়ী থেকে নেমে অনাদি বাবু যতীন কে বললো," তুমি আমাকে তখন টেনে আনলে কেনো?" 
        যতীন বললো," আপনাকে বাঁচাতে।" অনাদি বাবু বললেন," মানে?" যতীন বলতে থাকল," সে বছর পাঁচেক আগের কথা। এরকমই এক কুয়াশা ঘেরা রাতে একটা স্টেট বাস আসছিল করিমপুর থেকে বহরমপুর। দৌলতাবাদ ব্রিজের কাছে কুয়াশার কারণে ড্রাইভার কিছুটা বিভ্রান্ত হওয়ায় বাস টা ধাক্কা মারে ব্রিজের রেলিংয়ে,তারপর পরে যায় খালের জলে। যেহেতু বাসের বেশিরভাগ জানলা বন্ধ ছিল, তাই বাস টা ডোবার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও সফল হন নি। বেশির ভাগ যাত্রী ডুবে মারা যায়। কেউ কেউ বেরোতে পারলেও খালের ঠান্ডা জলে ডুবে মারা যায়। পরের দিন সকালে যখন বাস টা জল থেকে তোলা হলো, তখন বাসের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল সারি সারি মৃত দেহ। তারপর থেকে প্রতি বছর মাঘ মাসের নয় তারিখে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। তাই ওই লোকালয়ে ওই দিন রাত দশটার পর থেকে পুরো এলাকা খালি হয়ে যায়। আকস্মিক ভাবে যদি কেউ রাত ১২ টার পর ওখানে পৌঁছায় তাহলে সে দেখতে পায় সেই দৃশ্য যা আপনি দেখেছেন। অনেক হৃদয়বান মানুষ জলের মধ্যে লাফিয়ে ও পড়েছেন ওনাদের বাঁচাবার জন্য,কিন্তু পরের দিন খাল থেকে উদ্ধার হয়েছে ওনাদের লাশ। আপনি ও সেই একই ভুল করতে যাচ্ছিলেন, যদি আমি আপনাকে না টেনে নিয়ে আসতাম।" অনাদি বাবুর গলা শুকিয়ে গেলো, প্রেত দর্শনের রোমাঞ্চে ওনার সারা গায়ে কাঁটা দিতে লাগলো। যতীন কে অনুরোধ করলেন ওই পথে সেই রাতে আর না যেতে, কিন্তু যতীন বললো," আমার অভ্যেস আছে। তাছাড়া এটা আমার কাছে নতুন কিছু নয়,আমি জানি এই পরিস্থিতি তে কী করতে হবে। আপনি ঘরে ঢুকে পড়ুন, আমি চললাম।" অনাদি বাবু দরজার কড়া নাড়তে ভেতর থেকে আওয়াজ এলো," আসছি"। অপেক্ষমান অনাদি বাবু আনমনা হয়ে দেখছিলেন যতীনের গাড়িটা রাস্তার বাঁক দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে গাড়ীর আলো টাও মিলিয়ে গেলো দূরে। হঠাৎ দরজার শিকল খোলার "ঝনাত" সম্বিত ফিরল তাঁর।।
 
========== 

 
অঞ্জন রায় চৌধুরী
বহরমপুর
মুর্শিদাবাদ 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় লেখা

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৯তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৮০তম সংখ্যা ।। কার্তিক ১৪৩১ অক্টোবর ২০২৪

লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি : মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা ২০২৫

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

উৎসবের সৌন্দর্য: সেকালে ও একালে।। সৌরভ পুরকাইত

মুদ্রিত নবপ্রভাত উৎসব ২০২৩ সংখ্যার ডাউনলোড লিঙ্ক