Featured Post

"নবপ্রভাত" ৩০তম বর্ষপূর্তি স্মারক সম্মাননার জন্য প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা আহ্বান

ছবি
  "নবপ্রভাত" সাহিত্যপত্রের ৩০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আমরা নির্বাচিত কয়েকজন কবি-সাহিত্যিক ও পত্রিকা সম্পাদককে স্মারক সম্মাননা জানাতে চাই। শ্রদ্ধেয় কবি-সাহিত্যিক-নাট্যকারদের (এমনকি প্রকাশকদের) প্রতি আবেদন, আপনাদের প্রকাশিত গ্রন্থ আমাদের পাঠান। সঙ্গে দিন লেখক পরিচিতি। একক গ্রন্থ, যৌথ গ্রন্থ, সম্পাদিত সংকলন সবই পাঠাতে পারেন। বইয়ের সঙ্গে দিন লেখকের/সম্পাদকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।  ২০১৯ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠানো যাবে। মাননীয় সম্পাদকগণ তাঁদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠান। সঙ্গে জানান পত্রিকার লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস। ২০২৩-২০২৪-এর মধ্যে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা পাঠানো যাবে। শুধুমাত্র প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির মধ্য থেকে আমরা কয়েকজন কবি / ছড়াকার / কথাকার / প্রাবন্ধিক/ নাট্যকার এবং সম্পাদককে সম্মাননা জ্ঞাপন করে ধন্য হব কলকাতার কোনো একটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (অক্টোবর/নভেম্বর ২০২৪)।  আমন্ত্রণ পাবেন সকলেই। প্রাপ্ত সমস্ত গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকার পরিচিতি এবং বাছাই কিছু গ্রন্থ ও পত্রিকার আলোচনা ছাপা হবে নবপ্রভাতের স্মারক সংখ্যায়। আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। ঠিকানাঃ নিরাশাহরণ নস্কর, সম্পাদকঃ নব

অণুগল্প ।। ঘাতক ।। মিঠুন মুখার্জী

          

ঘাতক

মিঠুন মুখার্জী

বসন্তকালের এক পড়ন্ত বিকেল বেলা বিদিশা বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিল তার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। তার জীবনের বসন্ত আজ ফিকে হয়ে গেছে।তার জীবনে অন্যান্য বছরের মতো এবারের বসন্ত সম্পূর্ণ আলাদা ।অনেক জিজ্ঞাসা করে আমি জানতে পারি তার মনের এমন উদাসীনতার কথা। আমি পাপড়ি , বিদিশার কাকার একমাত্র মেয়ে।
           অন্য বছরের বসন্তের সঙ্গে এই বছরের বসন্তকে মেলানো যায়না।আজ পৃথিবীর চারিপাশে মৃত্যু-মিছিল । ইতালি, স্পেন , চীন , আমেরিকা, ফ্রান্সে প্রতিদিন মুড়ি-মুড়কির মত মানুষ মারা যাচ্ছে । কবর দেওয়ার বা পোড়ানোর সুবন্দোবস্ত নেই ।শুনেছি চীন থেকেই নাকি এই ভাইরাস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। তবে রাজনীতির নিষ্ঠুর খেলায় নিষ্পাপ মানুষের মৃত্যু কাম্য নয় ।আমাদের ভারতবর্ষ পিছিয়ে নেই ।আজ পর্যন্ত ১১ হাজার ১৩৫ জন আক্রান্ত ,সুস্থ ১৩৬৫ জন ,মারা গেছে ৪০৭ জন ।চোখের সামনে মরে যেতে দেখেও ডাক্তার-নার্সরা চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। বিদিশা তার ফেলে আসা দিনগুলোর কথা আমাকে বলতে গিয়ে চোখের জল আটকাতে পারল না ।এই মহামারী তার দীর্ঘ দশ বছরের ভালোবাসার জীবনে এক লহমায় প্রায় ইতি টেনে দিয়েছে ।বিদিশা আমাকে বলেছিল--" হুগলির চন্দননগরের এক ব্রাহ্মণ ঘরের একমাত্র সন্তান অভিনব মুখার্জি ।পেশায় ডাক্তার। বাবা ছিলেন আইপিএস অফিসার ।প্রথম দেখা হয়েছিল লেকটাউনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ।আমি তখন ওখানে নার্সের কাজ করি। একজন বান্ধবীর সূত্রে অভিনবর  সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। তারপর দুজনে দুজনকে ভালোলাগা এবং খুব দ্রুত ভালোলাগা ভালোবাসাতে পরিণত হয় ।ধীরে ধীরে দুই বাড়ির সবাই জেনে যায় ।কারণ ,আমরা দুজনেই দুজনের বাড়িতে যাতায়াত করতাম ।আমাদের দীর্ঘ দশ বছরের অপেক্ষা এই আসছে বৈশাখে শেষ হতে চলেছিল শুভ পরিণয়-এর মাধ্যমে। কিন্তু আমার কপালে সুখ সহ্য হলো না।
            মার্চ মাস থেকে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষদের সেবা করতে করতে এখন অভিনব নিজেই একজন আক্রান্ত রোগী ।বেলেঘাটা আইডি হসপিটালে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। ওর বাবা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক সপ্তাহ হয়েছে। বাবার মরা মুখ দেখতে পারেনি অভিনব ।আমার সুখের জীবনে কার নজর পড়লো বলতে পারিস পাপড়ি?"--কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল বিদিশা।
          বিদিশার কান্না দেখে আমিও কেঁদে ফেলি। এরকম সময় অভয় দেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। আমি বিদিশাকে বললাম--" ভগবানের উপর বিশ্বাস রাখো, অভিনব ভালো হয়ে উঠবেন"।আমি জানি তার যন্ত্রণার কাছে এই অভয় দান কিছুই নয় । বিদিশা আমাকে আরও বলেছিল--"অভিনব খুব উপকারী মানুষ ,যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায় ।আমার বাবার নানান সমস্যায় ওকে বন্ধুর মতো কাছে পেয়েছি। নিঃস্বার্থ নির্দ্বিধায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বড় মন আছে ওর। আজ ভাগ্যের কি নিষ্ঠুর খেলা; যার কাজ মুমূর্ষু রোগীদের সুস্থ করে তোলা, আজ এই মহামারীতে সেই ভগবানরুপি ডাক্তারি রোগীতে পরিণত হয়েছে। বলতে পারিস পাপড়ি ডাক্তার যদি অসুস্থ হয় এই দুর্দিনে আক্রান্তদের চিকিৎসা করবে কারা?"-- আমাকে এই প্রশ্ন করে কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে যায় বিদিশা।
         সত্য কথাটি অস্বীকার করার সাহস আমার ছিল না। সত্যিই তো, যেভাবে সারা বিশ্বে ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে ডাক্তার-নার্সরা আক্রান্ত হচ্ছে তা খুব একটা ভালো ইঙ্গিত দেয় না। মানবজাতির অস্তিত্বের সংকট-এর কথা চিন্তা করে আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে উঠল। আমি বিদিশাকে বললাম "আগামীকাল আমি তোর সাথে অভিনবকে দেখতে যাব"। বিদিশা শুধু বলেছিল--"বেশ, তাই যাবি"।
        পরদিন ভোরবেলা খবরে জানতে পারলাম, ডাক্তার অভিনব মুখার্জী রাত দুটো দশ মিনিটে মারা গেছেন । বিদিশার ঘরে এসে দেখি, ও বালিশে মুখ চেপে কান্না করছে আর বলছে--" হে ভগবান, আমার অভিনবকে তুমি ফিরিয়ে দাও। ওর দোষ কি ছিল?"

===================================

মিঠুন মুখার্জী
গ্ৰাম : নবজীবন পল্লী
পোস্ট+থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগণা
পিন-- 743252


মন্তব্যসমূহ

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

নবপ্রভাত সম্মাননা ২০২৪

জনপ্রিয় লেখা

মুদ্রিত নবপ্রভাত বইমেলা 2024 সংখ্যার জন্য লেখা-আহ্বান-বিজ্ঞপ্তি

প্রবন্ধ ।। লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবিকা ।। শ্রীজিৎ জানা

সাহিত্যের মাটিতে এক বীজ : "ত্রয়ী কাব্য" -- সুনন্দ মন্ডল

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৭তম সংখ্যা ।। আশ্বিন ১৪৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

কবিতা ।। বসন্তের কোকিল তুমি ।। বিচিত্র কুমার

কোচবিহারের রাস উৎসব ও রাসমেলা: এক ঐতিহ্যবাহী অধ্যায় ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৭৪তম সংখ্যা ।। বৈশাখ ১৪৩১ এপ্রিল ২০২৪

অনুভবে, অনুধ্যানে অনালোকিত কবি গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী ।। সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়

প্রচ্ছদ ও সূচিপত্র ।। ৬৬তম সংখ্যা ।। ভাদ্র ১৪৩০ আগস্ট ২০২৩