আকাশ-ঘুড়ি
সুমিত মোদক
উড়িয়ে দিলাম , উড়িয়ে দিলাম আকাশ-ঘুড়ি
তোমার বুকে ;
তোমার সঙ্গে সেই কবে দেখা হয়েছিল
ঠিক ঠিক মনে নেই ;
কেবলমাত্র মনে আছে অঘ্রাণের ধান উঠে যাওয়া মাঠে
দুজনে মিলে দিগন্তরেখা দেখতে চেয়েছিলাম ;
বিকালের আলোতে আকাশ-পথ চিনিয়ে দিয়েছে
সাদা সাদা বক , কিশোর-স্বপ্ন …
সেখানে এখন আর কোনও ভাবেই
সহজে ঢুকে পড়তে পারি না ;
থেকে যায় একটা ঘাসফড়িং …
যে কিনা সব সময়ের জন্য তিড়িংবিড়িং করে
লাফিয়ে লাফিয়ে উঠে
মনের আনন্দে ;
হয় তো সে দিন দুজনে একটা গোটা আকাশ
নামিয়ে আনতে চেয়েছিলাম
বুকের ভিতর ;
হয় তো সে দিন গান ধরে ছিলাম কোনও এক
পল্লিগীতি কিংবা রামায়নি ;
বেলা শেষ হয়ে আসছে জানি ;
তা বলে ঘুড়ি ওড়াবো না হয় ;
পেঁচকাটি , চাঁদিয়াল , বগ্গা … সবই আছে ;
যখনই ইচ্ছা হয় উড়িয়ে দিতে পারি ;
অথচ , সময় হয়ে ওঠে না আর ;
সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে যে দিন ফিরে এলাম ,
সে দিন তুমি আর নেই পেঁচাখুলির মাঠে ;
চাষীরাও ধান কেটে নিয়ে গেছে যে যার বাড়িতে ;
কেবল পড়ে আছে ছোট ছোট নাড়া ;
ঠিক আমার হৃদয়ের মতো ;
আরও কিছুটা সময়ের পর ধীরে ধীরে
ঘিরে ধরবে কুয়াশার সোহাগ ;
শব্দ উঠবে খসে পড়া হলুদ পাতার ;
তুমি কি তখন ফিরে আসতে পারবে
প্রথম জীবনের মাটির আলপথ দিয়ে
এই ঘুড়ি ওড়ানোর একাকী মাঠে !
যেখানে আজই পূর্ণিমার চাঁদ ছুয়ে থাকে
মাটি ;
এখন একের পর এক ঘুড়ি উড়িয়ে দিচ্ছি আমার আবেগের বাতাসে ;
জানি আর ভো-কাট্টা হবে না সন্ধ্যার আকাশে ;
একটা একটা করে তারারা ফুটে উঠছে ;
আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ;
সে আলো এসে পড়ে আমাদের মাটির উঠানে ;
তোমার বুকে জেগে থাকবে পূর্ণিমার চাঁদ ,
উড়ন্ত এক ঘুড়ি ;
সে ঘুড়ির সুতো অলৌকিক এক আলোর সঙ্গে মিশে থাকে ।
****************
সুমিত মোদক
সোনাঝুরি , দিঘির পাড় বাজার , ফলতা , দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন