google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re অণুগল্প ।। থাং ফিং ।। চন্দন মিত্র - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২

অণুগল্প ।। থাং ফিং ।। চন্দন মিত্র

 

থাং ফিং

চন্দন মিত্র

 

সকালবেলা বিলাসবাবু পেপারে চোখ বোলাতে বোলাতে একটা শিরোনামে এসে আটকে পড়লেন।  'থাং ফিং মুভমেন্ট স্টার্টেড বাই ইয়াং চাইনিজ' কিছু মানুষ থাকেন সবসময় নতুন কিছু খুঁজে  চলেন। বিলাসবাবু তেমন ধাতের মানুষ। তিনি প্রতিবেদনটির ভিতরে ঢুকে পড়েন। আর পেয়ে  যান মুক্তির পথ। চিনা তরুণতরুণীরা কর্পোরেট সেক্টরের লোভনীয় বেতনের চাকরি ছেড়ে হঠাৎ  হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। তাদের আর চোখ ধাঁধানো ঝাঁ চকচকে শহুরে উন্নাসিক আবহাওয়ায় আটকে রাখা যাচ্ছে না। তারা চলে যাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের নিসর্গে, সেখানে হয়তো পাহাড়ের পাদদেশে ঘাসের উপর শুয়ে চিৎ হয়ে আকাশ দেখছে। চিনাভাষায় থাং ফিং শব্দের অর্থ শুয়ে থাকা। না, নিছক খামখেয়ালে তারা এই থাং ফিং বেছে নিচ্ছে না। একবারে সচেতনভাবেই তারা বিকল্প এক যাপনপ্রণালী দেখাচ্ছে। তারা বলছে, তারা আর পুঁজিপতির হাতে রোবটের মতো  নিয়ন্ত্রিত হবে না। তারা বলছে, জীবন মানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেটে নিজেকে নিংড়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ফ্ল্যাট ভরে লোকদেখানো ধনী হওয়া নয়; জীবনের জন্য অবকাশ প্রয়োজন, মুক্তি প্রয়োজন। এই মুক্তির সন্ধান পেতে তারা প্রকৃতিনির্ভর গ্রাম্যজীবন বেছে নিচ্ছে। চিনা সরকার থাং ফিং আটকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

      বিলাসবাবু চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে আবার বিছানায় শুয়ে পড়েন। প্রতিবেদনটি পড়ে তাঁর যেন বোধোদয় ঘটেছে। কাজের মেয়ে কমলা হাঁক দিয়ে যান, 'দাদাবাবু চান করে আসুন,  ভাত বাড়ব।' বিলাসবাবু সাড়া দেন না। কমলা পুনরায় তার কাজে মন দেয়। বিলাসবাবুর  স্ত্রীছেলেমেয়ে কেউই তখনও ঘুম থেকে ওঠেনি। উঠবে কী করে! সারারাত পার্টি করে বেহেড হয়ে ভোরবেলা ঘরে ফিরলে কেউ সকালে উঠতে পারে! বিলাসবাবুর কথা কেউ ভাবে না। অথচ বিলাসবাবু তাদের বিলাসিতার অর্থ জুগিয়ে যান। প্রৌঢ় বিলাসবাবু জীবন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেন। ভাবেন, তিনি কী কেবল একটা টাকা রোজগারের যন্ত্র। তাঁকে খাটিয়ে সবাই নিজেদের মতো করে জীবনের মজা নেবে, বেলেল্লাপনা করে বেড়াবে। কাউকে কিছু না-বলে প্রয়োজনীয়  সামান্য কয়েকটি জিনিস ব্যাগে ভরে তিনি বেরিয়ে পড়েন। প্রথমে ঘুম থেকে ওঠেন বিলাসবাবুর স্ত্রী। তখন ঘড়ির কাঁটা বারোটা পেরিয়ে একটার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে; ছেলে ও মেয়ে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কমলা বলে, 'দিদিমনি, দাদাবাবু কখন বেরিয়ে গেছেন বুঝতে পারিনি, চানও  করেননি।' এমন অভূতপূর্ব ঘটনায় একটু বিস্মিত হন দিদিমনি। তিনি বিলাসবাবুকে ফোন করেন। ফোনটা পাশের ঘরে বেজে ওঠে। এবার তিনি কলেজের প্রিন্সিপাল ড. মজুমদারকে ফোন করেন। না, বিলাসবাবু কলেজে যাননি। 


================

চন্দন মিত্র

ভগবানপুর (হরিণডাঙা)

ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

সূচক- ৭৪৩৩৩১

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন