Featured Post
রম্যরচনা ।। নাম মাহাত্ম্য । । উত্তম চক্রবর্তী
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
নামমাহাত্ম্য
উত্তম চক্রবর্তী
মানুষ জন্মের পর থেকেই তার একটা নাম নিয়ে সমাজে পরিচিত হয় । এটা হতে পারে তার ডাক নাম বা এর থেকে হয়ত তার হয় সুনাম / দুর্নাম অথবা বদনাম বা মাহানাম । শুনেছি শ্রী কৃষ্ণের নাকি সহস্র নাম ছিল । অনেক দেব দেবীরও এরকম অনেকগুলি করে নাম থাকে। যেমন মা কালীর নাম হয় কখনো তারামা বা কখনো ভবানী অথবা কখনো হয় মাহা-কালী কখনো বা ছিন্ন মস্তা ইত্যাদি ইত্যাদি।
লেখকদের মধ্যে অনেকেরই ছদ্মনাম আছে । কেউ কেউ আবার সেই ছদ্মনামেই বেশি পরিচিত । বা যাত্রা, নাটক, সিনেমাতেও অনেক শিল্পিকে ছদ্মনামে অনেক নাম ডাক করতে দেখা গেছে।
ভাল নাম প্রত্যেকেরই হয়ত একটা থাকে, কিন্তু বাড়ির বা পাড়ার ডাকনামটও সবারই একটা করে থাকে। ডাকনামের মধ্যে অনেকেরই খুব অদ্ভুত ও মজার সব নাম দেখা যায় । আপনি হয়ত শুনে অবাক হয়ে যাবেন এমন সব নামও আছে যা আপনি কোনদিনও শোনেননি । যেমন ধরুন হুদো, কোঁতকা, মুলো, পচা, পিক্কা, বলটু, ট্যারা, টেকো, হুলো, ঘণ্টা ইত্যাদি।
আগেকার দিনে ডাকনামগুলি সত্যি খুবি অদ্ভুত ছিল । এটা বিশেষত দেখা যেত বাংলাদেশে । যেমন ধরুন কাইল্যা, কেশটা , ভুপা, মিশ্রী, হৈরা ইত্যাদি। মেয়েদের মধ্যেও অদ্ভুত সব নাম দেখা যেত। যেমন ধরুন, গিরিবালা, কনকবালা, প্রভাবতী, কুসুমকুমারী ইত্যাদি। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে এখনকার দিনে কোন লোকই তার মেয়ের নাম এরকম পুরানো দিনের নাম দিয়ে রাখবেন না।
অনেকের আবার ডাকনাম বা ভাল নামের পাশাপাশি রয়েছে লোকের দেওয়া নাম। যেমন ধরুন আপনি হয়ত খুব লম্বা মানুষ। আপনার বন্ধু বান্ধব হয়ত আপনাকে লম্বু বলে ডাকে। ব্যাস, কোন এক সুন্দর সকালে আপনি আবিষ্কার করবেন পারার বাচ্চা বুড়ো সবাই আপনাকে কেউবা লম্বুদা, আবার কেউবা লম্বু বাবু বলে ডাকতে শুরু করে দিয়েছে। এরকম অবস্থায়ে আপনাকে তা মেনে নিতেই হবে নইলে উল্টো বিপদ। মানে ব্যপারখানা দুজনের মধ্যে একটা ম্যুচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং এর মত আরকি। অবাক হবেন না যদি হঠাৎ শোনেন কেউ কাকে যেন ডাকছে " এই ভোঁটকা, বা এই সুটো, এই ন্যাটা, এই পেঁচো বা এই ঠ্যাটা বা এই চুম্বক এই ধরনের অদ্ভুত সব নামে।
আমি এমনও নাম শুনেছি যখন একটা সুন্দর ছেলের ডাকনাম দেওয়া হয়েছে গম, বা কাউকে ডাকা হয় পটলা বা কেউ হয়ত বা নুলো। যে নাকি খুব ভাল শুনতে পায় তার নাম ডাকা হয়েছে কালা, খুব ভাল চেহারার ছেলেকেও ডাকা হয় ক্যাংটা বা ফর্সা ছেলের নাম হয়ে গেছে কেলো ।
স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেও টিচারদের অদ্ভুত সব নাম দিতে দেখা যায়। যেমন আমি শুনেছি এক টিচারকে ডাকা হত মুরগী কারন উনি খুবই রোগা মানুষ ছিলেন আর ধূতির ফাঁক দিয়ে রোগা রোগা মুরগীর মত ঠ্যাং দেখা যেত। আবার মধুরভাষী এক স্কুল টি চারের নাম ছিল বসন্তের কোকিল। এক স্থূলকায় টিচারকে ডাকা হত কোলাব্যাঙ । একজন খুব রগচটা ধরনের টিচারকে ডাকতে শুনেছি শকুনি স্যার । আবার অনেক টিচারকে নামের আদ্যাক্ষর দিয়েও ডাকা হয় যেমন প্রিয়তোশ মুখারজি স্যার মানে পি এম, বা নারায়ণ দাস মানে এন ডি স্যার। একজন বেটে টিচারের নাম দেওয়া হয়েছিল বামনা স্যার। তবে এই সব আজব নামে এদের ডাকা হত শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে, যাতে টিচাররা তা শুনতে না পান।
২
মানুষের মতো বিভিন্ন জায়গার নমেও বাহার আছে। যেমন সিটি অফ জয় মানে কলকাতা, পিঙ্ক সিটি মানে জয়পুর, বা গার্ডেন সিটি হোল বাঙ্গালরে। আবার আজব নামও আছে, যেমন গোবর ডাঙ্গা , ধনে খালি, মহিষ পোতা, বেরা চাঁপা। হিন্দি সিনেমাতে বা বাংলা সিনেমাতেও আজকাল সব অদ্ভুত নাম দেওয়া হচ্ছে। কোন দিন হয়ত শুনবেন নতুন বাংলা সিনেমার নাম হল গিয়ে 'তুমি বড় নেয়োটা', বা হিন্দি সিনেমা আসছে যার নাম 'ম্যা তুঝে দেখ লুঙ্গা' । একটা যাত্রার নাম ছিল "বাবা কেন চোর"। বুঝুন ঠ্যালা।
আমার এক বন্ধুর স্বভাব ছিল কেবল লোকের আজগুবি নাম দেওয়া। ওদের পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোকের পায়ে একটু defect ছিল । উনি যখন হাঁটতেন তখন ওনার পায়ের চটির ঘষায় একটা অদ্ভুত আওয়াজ হত, অনেকটা ঘড়ড় ঘড় ড়…ড় । ঘড় ড় ড় ড় । তাই ওই লোকটার নাম ও দিয়েছিলো আর ডি বর্মণ । আমাদের পাড়াতে একজন লোক ছিলেন নাম বুদ্ধনাথ সরকার। আমার বন্ধু ওর নাম দিলো বোদ্ধা সারকর। একটি মেয়ের মুখটা ছিল আমের আটির মতো আর তাই তার নাম হল বাংলার পাঁচ। পাশের বাড়ির নতুন মোটা বউটার নাম হয়ে গেল ঢেপসী ।
নাম নিয়ে আমার একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে গেল। একবার এক বন্ধুর বিয়েতে বরযাত্রী গিয়ে কনে পক্ষের একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে ইচ্ছে করেই 'হরিদা ও হরিদা' বলে ডেকে বারবার কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে আসতে বলছিলাম। উনিও বরযাত্রীদের আপ্যায়নের যাতে কোন খামতি না থাকে বারবারই ড্রিংকস এনে দিচ্ছিলেন। পাঁচ ছয় বার এরকম ডাকবার পর উনি শেষে আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন 'আচ্ছা, তুমি তো আমায় চেন দেখছি, তবে আমার কিন্তু তোমার নাম মনে পড়ছে না। কোথায় দেখেছি বলত বাবা'। আমিতো হকচকায়ে গিয়েছিলাম আর কোনমতে তক্ষুনি 'না ওই সবাই আপনাকে ওই নামে ডাকছিল কিনা, তাই' বলে তখনকার মতো মানেজ করে নিয়েছিলাম । কিন্তু পরে আর কোনদিনই কাউকে ওইভাবে মজা করার জন্য নিজের দেওয়া নামে ডাকিনি, কে জানে বাবা , যদি সেই নামটাও আবার মিলে যায়।
আর একবার একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল ট্রেনে। আমি কালকা মেলে মুঘলসরাই হয়ে বেনারস যাচ্ছিলাম অফিসের কাজে। মাঝরাতে গয়া স্টেশনে নেমে চা খেতে গিয়ে ফিরে এসে দেখি কে বা কারা আমার ব্যাগটা চুরি করে নিয়েছে। ওটা ব্যাঙ্কে মাথার বালিশের পাশে রাখা ছিল আর ওর মধ্যে আমার টিকেটখানা রাখা ছিল।
এদিকে ট্রেন ছেড়ে দেয় আর আমি পড়ি ভীষণ চিন্তায় যে আমি এখন বেনারস পৌছব কী ভাবে। শেষে ট্রেনের টিটিকে ধরলাম আর বললাম ঘটনাটা। টিটি লোকটা পান চিবোতে চিবোতে হিন্দিতে বলল, 'কোঁই চিন্তা নাহি, মুঘলসরাই মে উতারকে ওয়াহাকা টিটিকো বলিয়েগা 'শঙ্কর বাবু', ব্যাস আউর কুছ নাহি করেগা।' আমি কছুটা শান্তি পেয়ে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম 'আপনি কি কিছু লিখে দেবেন ?'
তা উনি দাঁত খিঁচিয়ে শুধু বলেছিলেন 'আপকো হামারা উপর ভরসা নেহি হায় ক্যা? " আমি আর কিছু বলতে পারিনি আর মুঘালসরাইতে নেমে গেটে টিটিকে গম্ভীর ভাবে 'শঙ্কর বাবু' বলে সোজা গেট পার হয়ে গিয়েছিলাম, আর টিটিও সসান্মানে গেট ছেড়ে দিয়েছিলো। বুঝলাম এটা ওদের কোন কোড ওয়ার্ড হবে হয়ত বিনা টিকিট যাত্রীদের জন্য, যাদের কাছ থেকে এরা পয়সা খায় আর গেট পার করে দেয় । যদিও আমার টিকেট কাটা ছিল, কিন্তু চুরি গেছে, আমি তাও ওই সময়টাতে নিজেকে খুব চালাক ভেবে খুশিও হয়েছিলাম।
৩
তবে পরে আর কোনদিন আমি "শঙ্কর বাবু' বলে বিনা টিকেটে গেট পার হতে পারব বলে বিনা টিকিট জার্নি করবার কথা ভাবিনি। আর আমার পাঠককেও অনুরোধ করবো যে আর যাই করুন, ওই মুঘালসরাই স্টেশনে ' শঙ্কর বাবু' নাম বলে গেট পার হবার চেষ্টা ভুলেও করবেন না। বলা যায়না হয়ত সেদিন ওদের কোডটাই বদলে গিয়ে 'বিশু বাবু' বা 'শাহরুখ খান' বা 'অমরেশ পুরি' ও হয়ে যেতে পারে, তখন ?
------শেষ-------
Uttam Chakraborty.
Flat No - A. 208. Nishant Pride Apartment.
Kamdhenu Nagar.
B Narayanpura Main Road.
Bangalore - 560016.
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন