নারীকল্যাণে সাক্ষ্য আইনের সংশোধনী প্রশংসনীয়
মেশকাতুন নাহার
সম্প্রতি ঔপনিবেশিক আমলের সাক্ষ্য আইনের সংশোধনী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এই আইনটি ভুক্তভোগী জনসাধারণের কল্যাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।
আমাদের সমাজে আজও ধর্ষণের শিকার হয়ে নারীদের হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। কে ধর্ষণের জন্য দায়ী তা উপস্থাপন না করে বরং ধর্ষিতা নারীকে যৌন আচরণ নিয়ে জেরার সম্মুখীন হতে হয়। আদালতে এ ধরনের ভুক্তভোগীকে তাঁর চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করা হয়ে থাকে।
এই আইনটির সংশোধনী পাস হওয়ায় নারীর মান মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে। কোন ব্যক্তি যখন ধর্ষণ কিংবা শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন তখন আদালতে ভুক্তভোগীর নৈতিক চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। যাঁর ফলে ভুক্তভোগীরা মানসিক যন্ত্রণা থেকে অনেকাংশে মুক্তি লাভ করবেন।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় আজও আমাদের সমাজে নারীদের যৌন হয়রানি, বৈষম্য,ইভটিজিং সহ নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই লড়াই করে বাঁচতে হয়। কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে,পথে-ঘাটে, বাসে,লঞ্চে, রেলস্টেশনে, ফেইসবুকে, কোথায় নেই শ্লীলতাহানি। এমনকি আজকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। গায়ে ধাক্কা, কুরুচিপূর্ণ বাক্যবাণে আঘাত করা, কুদৃষ্টি, ফেইসবুকে নারীদের অশ্লীল মন্তব্য করা, ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জার,হোয়াট এপসে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ এ যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ করলে উল্টো বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সমাজের মানুষের কাছে বিচার দিবেন সে তো পুরুষ সেখানে কি সঠিক বিচার পাওয়া যায়? বিপরীতে ধর্ষণ,যৌন হয়রানি,নারী নির্যাতনের শিকার হতে হবে।
ধর্ষণের শিকার হয়েও উল্টো ধর্ষিতাকে অপরাধীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। সংবাদ মাধ্যম,ইউটিউব সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় ধর্ষিতার খবর,অথচ প্রকৃত আসামি থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। লোকলজ্জা আর ভীতির কারণে অনেক ধর্ষণের ঘটনা থেকে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। অনেকে নিরবে নিভৃতে কাঁদে, অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে কেউ যদি মামলার মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করে সেখানে ভুক্তভোগীর চরিত্র নিয়ে বিপরীতে জেরার সম্মুখীন হতে হয় আদালতে।
শ্লীলতাহানির শিকার হওয়া এমন অনেক নারী রয়েছেন যাঁরা আদালতে চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠার সংকোচে মামলায় যান না। এভাবে তাঁরা ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। এই আইনটির সংশোধনীর মাধ্যমে নারীরা এ সকল সমস্যা কাটিয়ে উঠবেন বলে আমার ধারণা।
এরই প্রেক্ষাপটে বৃটিশদের করা ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনটির সংশোধনী পাস করা হয়। স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসে আরেকটিবার পেয়েছে নারীরা মুক্তি। পেয়েছে তাদের অধিকার, পেয়েছে নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ। অভিবাদন জানাই চমৎকার উদ্যোগকে। এ আইনের সুফল ভোগ করবে এ দেশের অধিকার বঞ্চিত,লাঞ্চিত, নির্যাতিত আপামর জনসাধারণ।
এই আইনে ডিজিটাল তথ্যকে ও সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে। ডিজিটাল তথ্য উপাত্ত সঠিক কি না তাও প্রমাণের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে।
তবে ডিজিটাল তথ্য উপাত্তের যেন কিছুতেই অপব্যবহার না হয় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
নারী কল্যাণের ক্ষেত্রে এ আইন বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এ ধরনের পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে আইনটির কার্যকরী ও বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে। আইন প্রণয়ন ও আইন সংশোধনের পাশাপাশি আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা জরুরি।
==================
মেশকাতুন নাহার
প্রভাষক সমাজকর্ম
কচুয়া বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ,
কচুয়া, চাঁদপুর।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন