কুয়াশা
প্রতীক মিত্র
কুয়াশায় কিছু দেখা যাচ্ছে না।ট্রেন সব লেট।নইলে এতক্ষণে নন্দনের হাওড়া পৌঁছনো হয়ে যেত।পরের ট্রেনের যাত্রীরা হাজির। তাদের মধ্যে অন্তরাও ছিল।ও সাধারণত এইসময়ের ট্রেনটাই ধরে। বরের অফিসে খুব চাপ।বেরোনোর সময় ব্যস্ততা বরের যতটা তার চেয়ে কিছু কম নয় ওর। চুল ঠিকঠাক বাঁধতে পারেনি।কানে যে মাফলার জড়িয়েছে সেটাও খুলে খুলে যাচ্ছে। ভাবছিল ব্যাগ খুলে কোল্ড ক্রিমটা মাখবে কিনা, তখনই নন্দনের সাথে চোখাচুখি হয়।অন্তরাতো আর জানে না নন্দন এর আগে একবার অন্তরাকে দেখেছে।দেখার পর থেকেই বেশ দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছে।বুঝতে পারেনি কি করবে।তুমুল শীতেও ঘেমে-নেয়ে হয়েছে একাকার। এখনও চোখাচুখি হতে চোখ ঘুরিয়েই নিয়েছিল সে।অন্তরাই তড়িঘড়ি করে ওকে 'সোনাই' বলে ডাকাতে নন্দন বেচারা উত্তর দিতে কতকটা বাধ্যই হল। যদিও নন্দনের অস্বস্তি ছিল দেখার মতন। এলাকা ওর।লোকে চেনে।অন্তরা এখানকার নয়।তারওপরে দেখতে শুনতে ভালো। সে এইভাবে ওর ডাকনাম ধরে ডাকলে লোকজনের কৌতুহল হতে পারে বইকি।ছোট্ট মফস্বঃল।সবাই যে সবাইকে চেনে।যারাই ট্রেনে ওঠে বা উঠছে টুকটাক তাদের অনেকেই ওকে চেনে। নন্দন সত্যিই আকাশ থেকে পড়েছে।ওদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর নন্দন আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি।বেরিয়ে গেছে ফেসবুক ইত্যাদি থেকেও যাতে না অন্তরা কিছু জানতে পারে।ও নিজেও অন্তরা সম্বন্ধে সব কৌতুহল চেপে গিয়েছিল ফলে জানতেও পারেনি যে ওর বিয়েই হয়েছে শুধু হয়েছে তা নয় সেটা হয়েছে ওর এলাকাতেই।আর অন্তরাটাও কেমন!যার কারণে রাগ-অভিমান করে এমন মেঠো জায়গায় বিয়ে করে হেলায় চলে এল বাড়ির কথায় সেই অন্তরাই বা কি করে যেচে কথা বলে ফেলে নন্দনের সাথে! নন্দন এক ঝলক অন্তরাকে দেখে যা বুঝলো যে সে বেশ খুশিই আছে।যেমন নন্দনকে দেখেও অন্তরার মনে হল খুব ফোকাসড। বাস্তবটা যদিও অন্য। অন্তরা এখন চলেছে বেলুড়।শপিং মলে।ওখানে সময় কাটাবে।অনেকটা।শ্বশুড় বাড়িতে ওর এক মুহুর্ত ভালো লাগে না।শ্বাশুড়িকে দেখার জন্য একটি মেয়ে আছে।ওর বিয়ের আগে থেকেই আছে।ওর বরের সাথে যেরকম ঢলানেপনা করা তাতে তো ওর মনে হয় মেয়েটির বরের ইতিমধ্যে বেশ ক'বার শয্যাসঙ্গীনী হওয়া হয়ে গেছে।নন্দনও মানসিকভাবে ভালো নেই।ছাড়াছাড়ির পর।তারপর ঠিক এই মুহুর্তেতো খুবই খারাপ অবস্থা ওর।অন্তরাকে অমন সাজে দেখে ও প্রথমে কামুক হলেও পরক্ষণেই মনটা ওর ভেঙে যায় এই ভেবে যে ও অন্য কারো। অন্তরাও যেমন বাচাল যদি মুখ ফসকে এটা বলে দেয় যে ওর বরের সাথে ওর ফুলশয্যে এখনও হয়নি এমনকি বিয়ের বয়স এক বছর হয়ে গেলেও! না কেউই তেমন মুখ খোলেনি।হৃদয়ের কথা যেমন নীরবতায় চাপা পড়েছিল তেমনই রয়ে গিয়েছিল। ঠান্ডাটা বেশি পড়েছিল বলেই কিনা কে জানে।দু'জনে দু'কাপ দুধ চা খেয়ে নিল।তাতে অন্তরার হয়তো অম্বল হবে, অফিস ঢুকতে দেরি হবে নন্দনের।তবু…ফোন নম্বর দেওয়া-নেওয়ার কথাটা নন্দনের মনে হয়েছিল। ওর দৃঢ়তার ভানের মধ্যে করূণ আবদার যথেষ্ট চোখে পড়েছিল অন্তরার।তবে দু'জনের ছাড়াছাড়ির মধ্যে দোষ যেহেতু নন্দনের মত ওরও ছিল তাই এই বিচ্ছেদের শাস্তিটাকে ও মাথা পেতেই নিল। তারপর নম্বরের প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ও দুরে কুয়াশায় যে কিছু দেখা যাচ্ছে না সেটার কথা মনে করালো নন্দনকে। ট্রেন এলো। অন্তরা দুম করে লেডিস কামরায় উঠে গেল। নন্দনও চায়ের পয়সা দিতে দিতে ট্রেনে ওঠবার সময় ভাবছিল ওই কুয়াশারই কথা।
====================
প্রতীক মিত্র
কোন্নগর-712235, পশ্চিমবঙ্গ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন