google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re বাঙালির নববর্ষ ।। নন্দা রায় পোড়েল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

বাঙালির নববর্ষ ।। নন্দা রায় পোড়েল

বাঙালির নববর্ষ

নন্দা রায় পোড়েল


স্বাধীনতা পূর্ব নববর্ষ:-আমাদের এই বাঙলায় প্রথম যে নববর্ষ পালিত হয়েছিল তা কবি  ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের হাত ধরে।সেটা ছিল ঊনবিংশ শতকের (1850 সালের)বাংলার1257 1লা বৈশাখ।অনেকেই হয়ত জানেননা যে কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন একজন সাংবাদিক।এমনকী তাঁর বাড়িতে 'সংবাদ প্রভাকর' নামে একটা  ছাপাখানা ছিল।কবি গুপ্ত ওই ছাপাখানা ঘরেই প্রথম নববর্ষের বৈঠক করেন।
সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কবি ঈশ্বরচন্দ্রকে বলতেন 'খাঁটি বাঙালি কবি'; বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা থেকে জানা যায়--- সেই সভায় নগর,উপনগর এবং মফস্বলের প্রায় সমস্ত সম্ভ্রান্ত লোক এবং সে সময়ের বিদ্বান ও ব্রাহ্মণ পন্ডিতরা আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত থাকতেন।
কলকাতার ঠাকুরবংশ,মল্লিকবংশ,দত্তবংশ,শোভাবাজারের দেববংশ প্রভৃতি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকতেন।মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করতেন।ঈশ্বরচন্দ্র মনোরম প্রবন্ধ ও কবিতা পাঠ করে সকলের হৃদয় হরণ করতেন।ঈশ্বরচন্দ্রের ছাত্ররাও যে যার লেখা পাঠ করতেন।যার লেখা সবার মন জয় করতে পারত সেই ছাত্র নগদ টাকা পুরস্কার হিসাবে পেতেন।এছাড়াও বহু গণ্যমান্য কবি এবং লেখকরা যে যার লেখা পাঠ করতেন।সবশেষে আমন্ত্রিত চার-পাঁচশ অতিথিকে ঈশ্বরচন্দ্র মহাভোজে আপ্যায়ন করতেন।
শোনা যায় পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ তাঁর শান্তিনিকেতনের আশ্রমে চৈত্রসংক্রান্তি ও পয়লা বৈশাখে দুদিন ধরে বর্ষশেষ ও নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান করতেন।এই দুদিনই তিনি বর্ষবিদায় ও নববর্ষবরণের ভাষণ দিতেন।কবির ছাত্র-ছাত্রীরা  তাঁরই রচিত গান,কবিতা ,নাটকে অংশগ্রহণ করতেন।এই উপলক্ষেই কবিগুরু 'নববর্ষে','এসো হে বৈশাখ','পুরাতন','নববর্ষ জল আজি','বৈশাখ' প্রভৃতি রচনা করেছেন।আমরা আজও কবির রচিত'নব আনন্দে জাগো' গানটি গেয়েই নববর্ষের অনুষ্ঠানে নতুন বছরকে আহ্বান জানাই।
তবে পয়লা বৈশাখকে নিছক একটা শুধু স্ফূর্তির দিন বলে কবি মনে করতেন না।তিনি কোনো এক জায়গায় লিখেছেন|--"পরাধীন ভারতের মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়,শান্তিরও নয়।তা হচ্ছে সংগ্রামের।বিশ্ববিধাতা যেমন সূর্যকে অগ্নিশিখার মুকুট পরিয়ে সৌরজগতের অধিরাজ করে দিয়েছেন,তেমনি মানুষকেও তেজের মুকুট পরিয়েছেন!যেদিন মানুষ পরাধীনতার বর্ম খুলে স্বাধীনতার বর্ম  পরে মাথায় বিজয়রাজ গৌরবের মুকুট পরবে,সেদিন ই হবে যথার্থ নববর্ষ।
স্বাধীনতার পরবর্তী নববর্ষ:-স্বাধীনতার পর পয়লা বৈশাখ পালন হতো পাড়ায় পাড়ায় প্রভাতফেরি, ব্রতচারী, মনিমালা,শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে্।পাড়ায় পাড়ায় নতুন নতুন সমিতি,সঙ্ঘ বা ক্লাবগুলো পুরোধা ভূমিকা নিত এবং তা পালন হতো পয়লা বৈশাখের দিনভর অনুষ্ঠানে।
আধূনিক নববর্ষ:-বর্তমানেবাংলার গ্রাম-গঞ্জে ব্যবসায়ীদের দোকানেই পয়লা বৈশাখের জাঁকজমক বেশি।বছরের পয়লা দিনে তাঁরা সিদ্ধিদাতা গণেশের সাথে সাথে দেবী লক্ষ্মীর পূজো করে সাবেক খাতার পাট চুকিয়ে হাল বা নতুন হিসাবের খাতা শুরু করেন।এই নববর্ষ উপলক্ষে শহরের মন্দিরগুলোতে সিদ্ধিদাতা গণেশের পাশাপাশি দেবী কালীমাতার পূজো হয় এবং মায়ের প্রসাদী সিঁদুরের চাহিদাও যথেষ্ট।দেবীর প্রসাদী সিঁদুরে মাখা রুপোর টাকার ছাপ নতুন খাতায় প্রথমে দিয়ে শুরু হয় নতুন বছরের হিসেবনিকেশ।হালখাতা উপলক্ষে সম্পন্ন ব্যবসায়ীরা খরিদ্দারের হাতে মিষ্টি ও মুখরোচক খাবারের প্যাকেট ও ক্যালেন্ডার তুলে দেন।
বই পাড়ার নববর্ষ:-কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রায় 175 বছর আগে নিজের প্রেসে,প্রভাকর পত্রিকার অফিসে জ্ঞানীগুণীদের উপস্থিতিতে যে নববর্ষ অনুষ্ঠানের সূচনা করে গেছেন তা বইপাড়ায় আজও অব্যাহত।কলকাতার কলেজস্ট্রীটের বইপাড়ায় লেখক-পাঠক-প্রকাশকের এমন মিলনমেলা ভূভারতে আর কোথাও নেই।বইমেলা যখন শুরু হয়নি,তখন পয়লা বৈশাখের এই সমাবেশই ছিল বই পাড়ার একমাত্র উৎসব।এখন সোস্যাল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্তের যুগে লেখকের সঙ্গে পাঠকের যোগাযোগ করা সহজেই সম্ভব।ফলে ভালোমন্দ প্রতিক্রিয়াও সঙ্গে সঙ্গে জানানো যায়।কিন্তু যখন প্রযুক্তির রমরমা ছিল না,তখন প্রিয় লেখকের একবার সাক্ষাৎ পেতে দূরদূরান্ত থেকে পাঠক পয়লা বৈশাখেই আসতেন এই বইপাড়ায়।নতুন নতুন নানা ধরনের বাংলা বই প্রকাশিত হতো এই পয়লা বৈশাখেই।এখন যদিও বেশইরভাগ নতুন বই কলকাতা আন্তর্জাতিক বই মেলাতেই প্রকাশ হয়,তবুও বইমেলার প্রাচুর্য ও জনপ্রিয়তার পাশেও বইপাড়ায় পয়লা বৈশাখ আজও তার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পেরেছে, যা আজও আমাদের গৌরবান্বিত করে।


          নন্দা রায় পোড়েল
          32/16 এল রোড
          বেলগাছিয়া
          হাওড়া:-8
          

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন