এসো হে বৈশাখ
অনিতা মুখার্জি
নববর্ষ মানে নতুনের আবাহন । পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি সমস্ত আবর্জনা কে দূরে সরিয়ে নতুনের মাঝে বেঁচে ওঠা । নব কিশলয়ের স্নিগ্ধতা মাখা নববর্ষ মানুষের মনে বয়ে আনে নতুন করে বাঁচার আহ্বান । কিন্তু সত্যিই কি নতুন বছরের ঝাঁপিতে সুখ আনন্দ আর হাসির প্লাবন থাকে ,তা কিন্তু নয়। সবাই জানি বিদায়ী বর্ষের মতোই নববর্ষ ও আমাদের শুধু আনন্দ আর খুশি দিতে আসবে না । তবু নব আনন্দে জেগে ওঠা, সেই আনন্দ প্রাণ ভরে উপভোগ করার মধ্যেই মানুষের খুশি । তাই সে দুহাত বাড়িয়ে তাকে আহ্বান করে এসো হে এসো। চৈতালি হাওয়ার সানাই শুনেই নববর্ষের আবাহনে তৈরি হতে থাকে মন । এ নববর্ষের আনন্দ ,এর স্বাদ গন্ধ একটু আলাদা। চৈত্রসংক্রান্তি থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসব । গাজনের অনুষ্ঠান উপলক্ষ চরক পূজা দেবাদিদেব মহাদেবের উপাসনা। এরপর হয় বর্ষবরণ।
সমস্ত কিছুরই শুরু দিক থাকে । নববর্ষ কবে থেকে পালিত হচ্ছে তা জানার একটা কৌতূহল থেকেই যায় । মনে করা হয় নববর্ষ শুরু হয়েছিল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে বসার ২৫ দিন পর থেকে। এই দিনটি ছিল পারসিক বছরের 'নওরোজ ।সৌরবর্ষের চেয়ে চন্দ্র বর্ষ ১০-১২ দিন কম হয়। কৃষকদের কৃষিকাজের হিসেব রাখা তখন মুশকিল হয়ে যেত। সম্রাট আকবরের নির্দেশে আবুল ফজল ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফসলি সনের প্রবর্তন করেন। প্রাথমিক বাংলা সন 'তারিখ এ এলাহী' পরে পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ হিসেবে । তখন থেকে বছরের প্রথম দিনটিতে উৎসব করা হতো।
তবে এ বিষয়ে একটু মতভেদ আছে । সম্রাট আকবর কে বাংলা সনের প্রবর্তক বলে ধরা হলেও বাংলা পঞ্জির উদ্ভাবক ধরা হয় আসলে সপ্তম শতকের রাজা শশাঙ্ককে । পরে সম্রাট আকবর এটিকে খাজনা ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে পরিবর্তিত করেন।
প্রায় ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে কৃষি ও ঋতুর সাথে যুক্ত অনেক অনুষ্ঠান যোগ হয়েছে নববর্ষের অনুষ্ঠানের সাথে । একসময় নববর্ষ পালিত হতো ঋতু ধর্মী অনুষ্ঠান হিসেবে । তখন এর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল কৃষির । কারণ কৃষি কাজ ছিল ঋতুনির্ভর । নববর্ষ উপলক্ষে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো । কালের বিবর্তনে অনেক অনুষ্ঠান এখন আর নেই।
এমনই একটা অনুষ্ঠান ছিল পূন্যাহ । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বিলুপ্ত হবার আগে পর্যন্ত এ প্রথা প্রচলিত ছিল । এদিন প্রজারা ভালো পোশাক পরে জমিদারের কাচারীতে যেতেন খাজনা দিতে, একে পূণ্যের কাজ মনে করা হতো, তা থেকেই এই নামকরণ । নববর্ষের সাথে যুক্ত
আরেকটি ভারি সুন্দর অনুষ্ঠান আছে তা হলো হালখাতা।
তবে সমস্ত উৎসব যেন তখন সার্থক হয়ে ওঠে যখন তাপ দগ্ধ ধরিত্রী তপ্ত হয়ে আমের মুকুলকে ফলে পরিণত করে । যখন কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে লাল হলুদের আবির ফুল হয়ে দুলে ওঠে । সমস্ত দিগন্ত যখন সেই দহনকে দূরে সরিয়ে ফুলের আগুন জ্বালিয়ে সেই রুদ্রকে আহ্বান করে ,আমন্ত্রণ জানায় এসো হে বৈশাখ এসো এসো ,তখন সার্থক হয়ে ওঠে নববর্ষ সার্থক হয় বর্ষবরণ । সবার মনের স্বপ্নগুলো সফল হয়ে মুকুল থেকে ফলে পরিণত হোক এটাই একমাত্র চাওয়া ।
"বছর শেষের ঝরা পাতা বলল উড়ে এসে একটি বছর পেরিয়ে গেল হওয়ার সাথে ভেসে নতুন বছর আসছে তাকে যত্ন করে রেখো স্বপ্ন
গুলো সফল করে ভীষণ ভালো থেকো।"
এই ভীষণ ভালো থাকার মনোবাসনাটা সকলের, তাই সবাই ভালো থাকুক এই নববর্ষে ভগবানের কাছে এটাই প্রার্থনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন