বর্তমানে বাঙালি জাতি!
দুর্গাদাস মিদ্যা
বাঙালি জাতির জাতীয়তা বোধ যে নেই তা সবিশেষ প্রকাশিত বাংলাভাষার প্রতি বাঙালির অবহেলা । বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে চোখ আর কান খোলা রাখলেই এই ছবিটা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
একটি জাতির জাতিসত্ত্বার প্রকাশ ঘটে তাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনের মধ্যে। তাদের আচার আচরণে। সময়ের প্রেক্ষিতে ধ্যান ধারণা বদল হওয়া স্বাভাবিক। হচ্ছে ও তাই হয়েছে ও তাই।
আমাদের বদলটা যেন খুব বেশি।যেমন ধরুন পোশাক আশাকের কথা।এখন কি আমরা ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত হয়ে দিনাতিপাত করি? অথচ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী স্বীকৃত পোশাক তো তাই ছিল। আমরা গতিময় জীবনের যাপনের দোহাই দিয়ে তা অবলীলায় ত্যাগ করেছি। কোনোরকম দ্বিধাবোধ আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে পীড়িত করছে না । মা মাসীদের শাড়ি সায়া ব্লাউজ পরতে দেখে আমরা অভ্যস্ত। এবং শাড়ির আঁচল বাঁ কাঁধে ফেলে রাখা ছিল বাঙালিয়ানার লক্ষণ। এখন তা কী আর ততটা থাকছে। ওখানে ও কাজের দোহাই দিয়ে আস্তে আস্তে সরিয়ে দিচ্ছি।এখন তো খুব বড় প্রশ্ন কোনটা আমাদের জাতীয় পোশাক?
আসলে পরানুকরণপ্রিয়তায় আমরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী।এই ব্যাপারে আমাদের কোন লজ্জা বোধ নেই।
এতো গেল পোশাক আশাকের কথায় । এবার আসি খাবারের কথায়। বাঙালির প্রধান খাদ্য নাকি মাছ ভাত ডাল।এটা এখন কতটা সত্য সে কথা দেখতে হবে। নাগরিক জীবন বিশেষ ভাবে প্রভাব ফেলে গ্রামীণ জীবনে। এখন যেমন শহরে বা নগরে বারমুডা পরার চলন হয়েছে সেই হাওয়া লেগেছে গ্রামের জীবনেও।
উগ্র পশ্চিমী অনুকরণ আমাদের জীবনকে বাঙালিয়ানার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে।
খাদ্যাভ্যাস সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছে নব প্রজন্ম।
তারা আর ডাল ভাত মাছে সন্তুষ্ট নয়। মুড়ি মুড়কি খাওয়া তো দূর অস্ত। আচার বিচারেও প্রভূত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় যদি চোখ খোলা থাকে। বিয়েবাড়িতে এখন যে সমস্ত আচার আচরণ নজরে পড়ে তাতে অবাঙালি কালচারের ছড়াছড়ি। নেমতন্ন খেতে গিয়ে কী দেখেন আপনারা ? সহজ সত্য বলুন বাঙালিয়ানার কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়? না না লুকোবেন না। তাহলে কি বোঝা গেল? পা হড়কে পড়ছে না বাঙালির অহংকার!
শেষে আসি বাঙালি জাতি স্বত্বাই যেখানে বিপন্ন সেখানে বাংলা নববর্ষ! ওটা কী ? খায় না মাথায় দেয়? কী কাজে লাগে বাংলার বর্ষপঞ্জি!
ভেবে দেখুন কীভাবে স্বজাতির গর্ব অহংকার ভূলুণ্ঠিত আজ? কিন্তু কিছু ন্যাকামো তো আছে আর সেটা হল ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এখনও হালখাতা করেন বকেয়া টাকা আদায়ের জন্য।
সেজে গুজে ধুতি (তাও আবার দোকানে তৈরি করা) পাঞ্জাবি পরে আসে। কারণ ধুতি পরাটাও বেশিরভাগ বাঙালি জানে না ।এই হচ্ছে আমার বর্ষবরণের অনুভব।'আত্মবিস্মৃত' এক জাতি বাঙালি যার সব কিছুই মকারি ছাড়া আর কিছু নয় । আর নয় বলেই নববর্ষের উৎসব এখন সম্পূর্ণ প্রথামাফিক পালন করা হয় এতে হৃদয়ের কোন যোগ নেই।
---------
দুর্গাদাস মিদ্যা। বেহালা। কলকাতা ৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন