google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re স্মৃতিকথা ।। ১লা বৈশাখে খুবই একলা যে আমি ।। বিশ্বনাথ পাল - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

স্মৃতিকথা ।। ১লা বৈশাখে খুবই একলা যে আমি ।। বিশ্বনাথ পাল

১লা বৈশাখে খুবই একলা যে আমি 

বিশ্বনাথ পাল


নববর্ষ আর নবহর্ষ কেন জানি না লোমহর্ষ  ব্যাপার বলে আমার স্মৃতির ভাণ্ডারে সেই শিশুকাল থেকে চলে  আসছে।ছোটবেলায় সস্তা কাগজের বর্ণপরিচয়ের কভার পাতার সঙ্গে রঙ মিলিয়ে নতুন খাতার চিঠি দোকানদার বাড়িতে দিয়ে যেত। সকাল থেকে উঠে তক্কে তক্কে থাকতাম কখন বিকেল হবে। দাদুর সঙ্গে নোতুন খাতা করতে যাব। দুটাকা দিয়ে ও পাড়ায় নতুন খাতার করাটা বেশ সমীহের ছিল।দোকানদারের একজন বিশেষ বন্ধু চাকরিকরলেও এই বিশেষ দিনে এখানে নাম আর টাকার পরিমাণ লিখলে --দোকানীর নিজে পদ্মপাতায় এক হাতা পরিমাণ রসাল বোঁদে দিতেন। সেই বোঁদে নিয়ে দাদুর পিছনে পিছনে যাওয়া এই ছেলেটাই দাদুকে টপকে এক দৌড়ে ঘরে আসতাম। তারপর  নিজেদের প্রাপ্য পেতাম ভাই বোনেরা।নতুন বছরে নতুন জামা পড়ার রেওয়াজ তখন চেনা পরিচিত গণ্ডীর মধ্যে টের পাই নি তাই এ নিয়ে কোন মাথাব্যথা ছিল না আদৌ। গ্রামের ইস্কুল থেকে বড় ইস্কুলে গিয়ে দেখলাম।নতুন খাতা আসলে একটা উৎসব। দেদার আয়োজন।দোকান সাজানো,প্যান্ডেল,লাইট মাইক ।
বড় ভালো লাগত।তারপর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বর্ধমান ও কোলকাতায় থাকার সুবাদে পয়লা বৈশাখ আমার কাছে নতুন রূপে ধরা দিল।বাংলা গান নিয়ে মিছিল,বাংলা কবিতা দিয়ে নতুন বছরকে আহ্বান করার জন্য কবিতা সন্ধ্যায় ঘুরঘুর করা এগুলো রীতিমতো করতে করতে ১৪০১ এর এমন একটি দিনে কয়েকজন আগ্রহী বন্ধুকে নিয়ে প্রকাশ করলাম পাক্ষিক সংবাদ পত্র কলকল্লোল। সুখে দুঃখে সেই পত্রিকা প্রত্যেক বছরে চব্বিশটি করে সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে। প্রতি বছর শারদ সংখ্যা তো আছেই। এবারের পয়লা বোশেখের দিন সে একত্রিশ বছরে পা রাখবে। 
প্রত্যেক বছর নিয়ম করে পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে এসেছি। বহু মানুষের শুভেচ্ছায় কলকল্লোল ধনী হয়ে ওঠে। সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার,কবি কৃষ্ণধর,কবি জয় গোস্বামী,স্বামী বলভদ্রানন্দজী মহারাজ,সহ সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন,বেলুড় মঠ,স্বনামধন্য সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী কার না শুভেচ্ছা পেয়েছি!
এই কাগজ করার পাশাপাশি আমি তখন হাট গোবিন্দপুর  ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়াতাম।পরে মেমারী কলেজে ছিলাম।দু জায়গাতেই অংশকালীন অধ্যাপক।বি এ ও বিকমের খাতা দেখে দশ হাজার টাকা রোজগার করতাম তা দিয়ে বর্ধমানে থাকা খাওয়া স্বচ্ছন্দে চলে যেত।
একদিন বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে মেমারী যাওয়ার ট্রেনটির লেজটুকু দেখে মন খারাপ হয়। সেদিনের বর্ধমানে কোন সাহিত্য সভা বা সাংবাদিক সম্মেলন না থাকায় সাইকেল নিয়ে সেই ভাড়া বাড়িতে চলে আসি। দিনটা বিফলে যায় দেখে  খারাপ মনটাকে কলমে চড়িয়ে বেশ কয়েকটা ছড়া লিখে ফেলি।দেখলাম একটা ছড়ার বই-ই হয়ে গেল। একজন আঁকার মাস্টারের খোঁজ পেয়ে তাঁকে দিয়ে ইলাস্ট্রেশন  করিয়ে ছাপতে দিলাম"স্বাস্থ্যবিধানের ছড়া"ভূমিকা লিখেছিলেন অবিভক্ত বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি উদয় সরকার। কিন্তু বই তো প্রেসের নিয়ম মেনে বের হবে-ওদিকে আমি অধৈর্য হয়ে আর একটা ক্ষুদে বই লিখে ফেললাম "স্বাস্থ্য জিজ্ঞাসা"। হাট গোবিন্দপুর কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ডঃ সুধীর রায়, প্রাক্তন সাংসদ,আমার সেই বইয়ের  প্রশস্তি সূচক ভূমিকা লিখেছিলেন। এবং উনি ঐ বই লেখার জন্য  আমাকে এন এস এসের সঞ্চালক করে দেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হয়ে  খড়্গপুর  আই আই টি হতে ট্রেনিং নিয়েছিলাম।আর হাটগোবিন্দপুর কলেজের উত্তরের আশ্রম পর্যন্ত রাস্তাটি ছাত্রদের স্বেচ্ছাশ্রমে আমিই করিয়েছিলাম।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে  (এন এস এসের সঞ্চালক) প্রতিনিধি হিসেবে দিল্লি যাওয়ার আগেই জামুড়িয়ার একটি বিদ্যালয়ে এস এসসি দিয়ে  শিক্ষকতার কাজে যোগ দিই।ওখানকার শিক্ষকতার জীবন এবং ঐ এলাকার আপামর জন সাধারণের উদ্যোগে  বারোয়াড়ি দুর্গামণ্ডপে প্যান্ডেল ও জেনারেটর সহ যোগে আমার বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত  ও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের পদধূলি ধন্য সিহাড়শোল রাজ  উচ্চ বিদ্যালয়ে (রাণীগঞ্জ ) গমন উপলক্ষে সম্মাননা ভোলার নয়। আমার উপন্যাস "ঘর-সংসার " এ তার স্পষ্ট উল্লেখ আছে।
যাই হোক পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখির চর্চাও থেকে গেছে। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের পরমপূজনীয় প্রেসিডেন্ট মহারাজ স্বামী স্মরণানন্দজী মহারাজ আমার দিব্যত্রয়ীকে নিয়ে লেখা "ছড়াই ছড়ানো কুসুম" নিজ হাতে উদ্বোধন করেছেন। মাটির ছন্দে মাটির ছড়া-বইটি পানাগড় মাটি উৎসবে সহোৎসাহে উদ্বোধন করেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী, আমার আর একটি বড় বই "চৈতন্য চিন্তন"এর ভূমিকা লিখে দিয়েছেন সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। আই এসবি এন যুক্ত এই বইটির একহাজার কপি নিঃশেষিত। আর একজন দিকপাল সাহিত্যিক শংকরের সঙ্গে  চৈতন্য চিন্তন হাতে ছবি রয়েছে আমার কাছে।
 ‌          ১লা আর একলা আইলা ঝড়ের মতো আমার জীবনে এসে গেছে হঠাৎ সেটাই বলে এই লেখার ইতি টানবো, যে বছর সঞ্জীব বাবুর সঙ্গে ছবি তুললাম তারপরের বছর উনি সাহিত্য একাডেমী পান। আর যে বছর শংকরের সঙ্গে ছবি তুললাম তার পরের বছর উনি সাহিত্য একাডেমী পেলেন।আমার স্ত্রী অঞ্জনা হেসে বললো এবার তোমার পালা। সত্যিই তার পরের বছর ১৯শে এপ্রিল ২০২১ রোগ জানার উনিশ দিনের মাথায় ব্লাড ক্যান্সারে অঞ্জনা চলে গেল। উপরোক্ত বাংলা সাহিত্যের দুই দিকপাল সাহিত্যিকের  সঙ্গে পত্নীহীন হয়ে এক পঙতিতে রয়ে গেলাম। আমার স্ত্রীর দেওয়া উপহারে আমি সত্যি সত্যিই একলা খুব একলা। একলা বৈশাখে একলাই আমি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন