নববর্ষ ও প্রত্যাশা
সমীর কুমার দত্ত
নববর্ষ আসে যায়। শুরুতে অর্থাৎ ১লা বৈশাখে মানুষের উন্মাদনা দেখার মতো। ১লা নববর্ষ পালিত হয় বিশেষতঃ ব্যবসায়ীদের দ্বারা। পক্ষান্তরে ১ লা জানুয়ারি পালিত হয় সারা দেশ তথা বিশ্ব জুড়ে বিশেষভাবে উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের দ্বারা। নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের কাছে এর কোন গুরুত্ব কিংবা মাহাত্ম্য নেই। তাদের জীবন তো গতানুগতিক ভাবে অর্থাৎ জীবন্মৃত অবস্থায় এগিয়ে চলেছে। হালে পানি না পেয়ে কত সংসার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের কাছে। দোকান পূজো, হালখাতা পূজো দিয়ে পালিত হয় আবার একটা বছরের
ব্যবসায়ীক উন্নতির আশা নিয়ে ক্রেতাদের মনোরঞ্জনের উদ্দেশ্যে মিষ্টি বিতরণ করে সঙ্গে ক্যালেন্ডার যা বিঞ্জাপনের একটা মাধ্যম। বিনিময়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় অর্থ যা নতুন বছরের হালখাতায় জমা থাকে। সাধারণ মানুষ নতুন বস্ত্র পরিধান করে নতুন বছরকে সাদর অভ্যর্থনা জানায়।
কিন্তু নতুন বছর সবাইকে কি সন্তুষ্ট করতে পারে? বোধ হয় না। সারা বছর জুড়ে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। কথায় আছে যে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে চায়, কাউকেও সন্তুষ্ট করতে পারে না। দেশ এখন অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি, হত্যা, জালিয়াতি, রাজনৈতিক ডামাডোল,ভেদাভেদের রাজনীতি , খুনখারাপি, ধর্ষণ ইত্যাদিতে ভরে গেছে। এক শ্রেণীর লোকের হাতে প্রচুর অর্থ। এই এক শ্রেণীর মধ্যে বৃহৎ পূঁজির ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়, গায়ক, অভিনেতা, অভিনেত্রী ইত্যাদিরা পড়েন। পক্ষান্তরে চাকরিজীবী বিশেষ করে বেসরকারি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী,দিন মজুর, ক্ষুদ্রচাষি প্রভৃতি দের অবস্থা ভয়ঙ্কর। উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। বাকিদের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে বই বাড়েনি। এই সকল শ্রেণীর মানুষের হাতে নগদ্ অর্থের অভাব। সর্বসাকুল্যে ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে নিশ্চয়। তবে তেমন উল্লেখযোগ্য ভাবে নয়। একটা করে বছর আসে যায়। আর রেখে যায় হাজারো সমস্যা।
মানুষ আশাবাদী। আগের বছর হয়নি, আগামী বছর হবে নিশ্চয় — এই বিশ্বাস তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে চলে আসছে নববর্ষ উদযাপন। এখন দেখা যাক এর পিছনে কী ইতিহাস লুকিয়ে আছে। পহেলা বৈশাখ বাঙালি জীবনের অসাম্প্রদায়িক, সার্বজনীন একটি উৎসব। পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয় মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে। সময়টা ১৫৫৬, যখন বাংলা সন গণনা শুরু হয়। প্রথমে এটি 'ফসলি ' সন অর্থাৎ নতুন ফসল তোলা থেকে এবং পরে 'বঙ্গাব্দ' নামে পরিচিত হয়। পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। 'আশা নিয়ে বাঁচে চাষা '—ঠিক তাই। উৎসব যখন পালন করি আশা তো থাকবেই। আমাদের সকলেরই আশা —নববর্ষ আমাদের সকলের মনস্কামনা পূর্ণ করুক। হানাহানি,কাটাকাটি বন্ধ হোক। সবার উপর মানুষ সত্য/ তাহার উপর নাই।—কবি চন্ডীদাসের এই বিশ্বাস যেন প্রকাশ পায় আপামর বাঙালি জীবনে। নববর্ষ নিয়ে আসুক আশার আলো। কর্মহীনদের জন্য কর্মের সুযোগ বহে নিয়ে স্বমহিমায় অবতীর্ণ হোক। সুখশান্তি বিরাজ করুক চতুর্দিকে। মানুষ যেন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। সর্বোপরি মানুষের মনুষ্যত্ব বজায় থাকুক। সর্বশেষে ঈশ্বরী পাটনীর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলি— আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।
*******************
Samir Kumar Dutta
Pune, Maharashtra
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন