google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re বাঙালি জাতিসত্তার বার্তাবাহক নববর্ষ ।। পাভেল আমান - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

বাঙালি জাতিসত্তার বার্তাবাহক নববর্ষ ।। পাভেল আমান

বাঙালি জাতিসত্তার বার্তাবাহক নববর্ষ 

পাভেল আমান  


আমরা জানি, একটি জাতির পরিচয় নির্ভর করে অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যের ওপর। একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভাষা, পেশা, পোষাক- পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, দেহের গড়ন, গড়-গড়তা গায়ের রং, সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি- নৈতিকতা এবং ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়া ও জলবায়ু-সবকিছু মিলিয়ে ঐক্যসূত্র প্রোথিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষ আলাদা বৈশিষ্ট্য নিয়ে যে ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হয়- তা ই জাতির উন্মেষ ঘটাতে মূল ভূমিকা পালন করে। কখনো কখনো ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ বংশ-পরম্পরায় যদি স্থানান্তরিত এলাকায় বসবাস করে নতুন পরিস্থিতির সাথে নিজেকে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়- দেখা যায় তার পরবর্তী প্রজন্ম নতুন জাতিসত্তার সাথে লীন হয়ে যায়।বাঙালি জাতিসত্তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের যে সব সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ হলো পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। এখন দেখা যাক এ বাংলা নববর্ষের সূচনা হলো কীভাবে। ভারত-বর্ষের মোঘল সম্রাট আকবর কৃষক এবং প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে একটি নতুন সন উদ্ভাবনের উদ্যোগ নেন। আকবরের নির্দেশে তার প্রধান জ্যোতির্বিদ আমীর ফতেহ্ উল্লাহ সিরাজী ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ একটি সৌরবর্ষ উদ্ভাবন করেন যা বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। এতে বৈশাখ মাসকে বছরের প্রথম মাস এবং চৈত্র মাসকে বছরের শেষ মাস বলে নির্ধারণ করা হয়। আকবরের সিংহাসনে আরোহণের সন থেকে বাংলা সনের প্রবর্তনকাল ধরা হয় এবং হিজরি সন প্রবর্তনের কাল থেকে এর গণনা শুরু হয়।বাংলা সনকে বঙ্গদেশে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পূর্বপুরুষ সুবেবাংলার নবাব মুর্শিদকুলী খান। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে সুবে বাংলার নতুন রাজস্ব ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় যা ইতিহাসে মুর্শিদকুলী খানের বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। মুর্শিদকুলী খানের আমলে চৈত্র মাসে রাজস্ব আদায় শেষ হতো এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিন 'পুণ্যাহ' (সালতামামী) উৎসব পালন করা হতো। এরই ধারাবাহিকতায় বাঙালি চৈত্র সংক্রান্তি এবং পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ পালন করে আসছে।পহেলা বৈশাখ বাঙালির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা। বিশ্বব্যাপী সব বাঙালির মৈত্রী, সম্প্রীতি ও চেতনার ঐক্যসূত্রের জাগরণের দিন বাংলা নববর্ষ ১লা বৈশাখ। শুভ নববর্ষ।নতুন বছর যেন প্রাণের উৎসব, নিজেকে নতুন করে নতুন উদ্যোগে জাগিয়ে তোলা।। ১৪৩১ পেরিয়ে এল ১৪৩২। সূচনা হল আরও একটা নতুন বঙ্গাব্দের ,শুরু হল নবরূপে নববর্ষের পথচলা। নববর্ষ মানেই পুরনো বছরের সকল দুঃখ, যন্ত্রনা, বিষাদ, গ্লানি, নৈরাশ্য এবং জীর্ণতাকে বিসর্জন দিয়ে সুখ -শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় নতুন জীবনের আশ্বাসকে বরণ করে ,নতুন ভাবে বাঁচার আশায় বুক বাঁধা। দীর্ঘ বারো মাসের পাওয়া না পাওয়াকে পেছনে ফেলে নতুন আশার আলো নিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার আর এক নাম-ই হল পহেলা বৈশাখ । তাই পহেলা বৈশাখ বাঙালীর ১২মাসের ১৩ পার্বণের মধ্যে যে একটি অন্যতম উৎসব মুখর পার্বণ সে তো আর বলার অপেখ্যা রাখে না। দুর্গাপুজোর পরেই এই নববর্ষ বাঙালীর কাছে এমন একটি উৎসব যাকে ভোজন প্রিয় বাঙালী নানা রকম খাওয়া-দাওয়া,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,নতুন জামা-কাপড় কেনা ,মন্দিরে-দোকানে-বাড়িতে পুজো করা , শুভেচ্ছা বার্তা বিনিময়, বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, হালখাতা ইত্যাদি নানাবিধ কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বরণ করে আসছে । তাই নববর্ষ- আদতে বাঙালী জাতির কাছে এক ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন ,প্রকৃতপক্ষে যার তাৎপর্য হল নিজেদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উদযাপন করে স্বাজাত্যবোধ ও বাঙালিয়ানাকে বজায় রাখা ও সেই সাথে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যেতে বসা শিল্প ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করে বিশ্ব দরবারে তাদের মর্যাদা প্রদান করা। পরবর্তী কালে সময়ের হাত ধরে পহেলা বৈশাখ পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিলে মিশে আরও আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠেছে  এবং সেই সাথে বাংলা নববর্ষ প্রতিটি বাঙালির জীবনে কল্যাণ ও নব জীবনের প্রতীক হয়ে বছরের একটি অন্যতম শুভদিন হিসেবেও পালিত হচ্ছে।আমাদের জাতীয় চেতনা অর্থাৎ বাঙালি সত্তার সাথে পহেলা বৈশাখের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। প্রতি বছর নববর্ষ বাঙালির মনে ও মননে ছোঁয়া দিয়ে যায় বাঙালিয়ানার। নবর্ষের ছোঁয়ায় নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাঙালির নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রথা,আচার ও অনুষ্ঠান। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উজ্জাপিত হয় নববর্ষ। বাঙালির চিরায়িত ঐতিহ্য মজবুত করতে প্রতিবছরই ফিরে আসে পহেলা বৈশাখ। পরিশেষে শুভ নববর্ষে প্রতিটি বাঙালির জীবনে ভোরে উঠুক সুখ-সমৃদ্ধি প্রশান্তি। 

::::::::::::::::::::::::::::::::::::

পাভেল আমান- হরিহরপাড়া -মুর্শিদাবাদ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন