Featured Post
গল্প ।। ভাগিদার ।। আবদুস সালাম
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
ভাগিদার
আবদুস সালাম
ভাবতে ভালো লাগছে এমনি করে সেদিন প্রাণে বেঁচে ছিল সুপ্রিয়া। সুপ্রিয়া জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সংসার ও নিজেকে বিধ্বস্ত করে তুলেছে । সুপ্রিয়া শোভন কে ভালবেসে বিয়ে করেছিল । কলেজের অফ পিরিয়ডে নিজেকে কলেজের পেছনে লিচু বাগানের গিয়ে গল্প করা । আধো-আলো ছায়ায় ভবিষ্যতের গহণ নদীতে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখতো দুজনে । এর জন্য কতদিন যে ক্লাস ফাঁকি দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই । অন্য বন্ধুদের প্রক্সি দেওয়ার সুবাদে তাদের প্রেম অবলীলায় চলতে দোসর হয়েছিল। প্রেম যমুনায় তরী যখন উথাল পাথাল তখন কোনো বাধা আর দুজনকে বেঁধে রাখতে পারছে না ।মোহনার উদ্দেশ্যে গঙ্গা-যমুনা একই স্রোতে মিশতে শপথ গ্রহণ করেছে যেন । সমুদ্রের লোনা জল, তবুও মিশে যাওয়ার তীব্র আকুতি। বয়ে শত বাধা পেরিয়ে আবর্তিত ঘূর্ণাবর্তে ও তারা সংকল্পে অটল।
শোভনের বাবা রাশভারী লোক। প্রথম দিকে খুব শাসন করেছে ছেলেকে । পরক্ষণে আবার সুচতুর বাবা ভবিষ্যৎ কিছু বড় রকমের প্রাপ্তির আশায় মত বদলাতে শুরু করেন। ওদের মেলামেশাতেও তেমন কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন নি ।গ্রামে আছে বিঘে ত্রিশেক জমি, পুকুর বাগান এবং রঘুনাথগঞ্জের মাদারল্যান্ড পল্লীতে প্রাসাদোপম বাড়ি । সুপ্রিয়ারা দুই বোন । দুই বোন সমান সমান ভাগ পেলেও আমার শোভন যে কিছু কম পাবে না তা তিনি ভালো ভাবে বুঝেছিলেন । এই আশাতেই রাশভারী লোকটা ছেলের প্রেমের পথের কাঁটা হননি। ফলস্বরূপ ওদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজে না গেলে ও বি্রোধিতা করেন নি ।
প্রেমের জল যতদিন স্বচ্ছ থাকে ততদিনই সেই প্রেম স্বর্গীয় থাকে। অন্যদিকে জল যখন ঘোলা হতে শুরু করে তখন সেই জল গলধঃকরণ করা দুষ্কর হয়ে ওঠে ।প্রেমের নদীতে তখন আর জোয়ার আসে না । নিস্তেজ নদী প্রবাহহীনতার অসুখে ভোগে। অজস্র শৈবাল দাম আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে । জন্মনেয় বহু অবাঞ্ছিত জলজের । নদী তখন আর নদী থাকে না। এমনই সুপ্রিয়ার প্রেমের নদী পঙ্কিলতার আবর্তে নিমজ্জিত হয়ে গেছে ।
ক্রমশ শোভনের লাগামছাড়া বায়নার হাতিয়ার হতে হতে বিধবা মা গত হয়েছে। চোখের জল ছিল তার নিত্য সঙ্গী ।সংসারের অশান্তিতে সুপ্রিয়া দিনদিন পোড়া কাঠ করে ফেলেছে নিজের চেহারাকে। আজ আর সেদিনের সুপ্রিয়া নেই । শর্মিলা ঠাকুরের মতো চুল বাঁধা। অনেক ছেলেই সুপ্রিয়া কে ভালবাসার বাঁধনে বাঁধতে চেয়েছিল।
সেদিনের সুপ্রিয়া আর আজকের সুপ্রিয়ার মধ্যে অনেক তফাৎ ।শোভনের চাল চাল চলন ও আদবের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে । মদের বোতল ছাড়া একটি দিন ও চলেনা। অবাঞ্ছিত মেয়েদের পাড়ায় শুরু হয়েছে যাতায়াত। বাড়িতে এলে সুপ্রিয়ার কপালে জোটে কথায় কথায় খিস্তি, আর তার সঙ্গে যোগ হয় হস্তযোগ্য উপহার যা কোন দিন ভাবতেই পারেনি সে ।
বাড়িতে ছোট বোন সুভাষিনী জামাই নিয়ে থাকে। ঘরজামাই হয়ে এসেছিল কার্তিক। বেশ সুখেই তারা আছে । অতোবড়ো বাড়িটি একাই ভোগ করছে।
সুপ্রিয়া বাবার বাড়ি এসেছে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে । বাবা মা না থাকলেও নিজের বোন তো আছে।এই ভরসায় দুদিন প্রাণের জ্বালা জুড়াতে। তার চেহারা দেখে সুভাষীনী অবাক । সে তার দুর্ভাগ্যের কথা বোনকে জানায় । জানায় শোভনের দিন দিন অত্যাচারের কথা। সুভাষিনী বলে" দিদি কেন তুমি ঐ চন্ডালের কাছে আছো? এক্ষুনি তুমি চলে এসো । ওই জানোয়ারটা তোমার কি হাল করেছে দেখেছো ? একদম তুমি ওখানে যেওনা দিদি । কোনদিন শুনবো তুমি নেই ।
অর্ধেক বাড়িতো তোমার । একখানা ঘর নিয়ে তুমি থাকবে আর দুখানা ভাড়া দিলে দিব্যি তোমার সংসার চলে যাবে । কিসের আশায় কার জন্য তুমি পড়ে থাকবে দিদি ? সুপ্রিয়া যেন হালে পানি পেল । ছোট বোনের এই জ্ঞানগর্ভ কথা তার মনে ধরেছে ।স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়তে শুরু করেছে ।এখন নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় এসেছে সুপ্রিয়ার। সামান্য একটু ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে আজ । হায়রে প্রেম!!!
দিন পনেরো ছোট বোনের কাছে থেকে গেল সুপ্রিয়া, আর নিজেকে নিজের বাড়িতে স্থিতু করার চিন্তায় বিভোর হয়ে পড়ল ।এমনও চিন্তা করতে লাগল যে বাকি জীবন শোভনের কাছে ডিভোর্স নিয়ে ছোট বোনের কাছেই কাটিয়ে দেবে।
কার্তিকের চিন্তাভাবনা কিন্তু অন্যরকম ।সে নিজের ছাড়া কিছুই বোঝে না। প্রথম প্রথম কার্তিক ভেবেছিল দিন কয়েক থেকে আবার সে স্বামীর কাছে ফিরে যাবে । প্রথমদিকে তাই আপ্যায়নের ত্রুটি রাখেনি কার্তিক। কিন্তু যখন জানতে পারল ও আমাদের সুখের সংসারে ভাগ বসাতে এসেছে, তখন কার্তিকের মাথাটা বিগড়ে গেলো। পুরনো স্বভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে শুরু করলো তার ।
কার্তিক প্রথম যৌবনে ছিল ফাঁসিতলার এক নম্বরের গুন্ডা। এহেন কাজ নেই যা সে করেনি ।কতো লোককে যে নিজ হাতে ফাঁসির দড়ি পরিয়ে গাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই । সবুজ দ্বীপের নদীর ধারে পুঁতে দিয়েছে। কথায় কথায় চেম্বার বের করে মাথায় ঠেকিয়ে ওপারে পাঠানোর হুমকি দিয়েছে । সুপ্রিয়ার মামা তথা শশাঙ্কবাবুর পোষা গুন্ডা এই কার্তিক । শশাঙ্ক ভেবেছিলো কার্তিকের সঙ্গে যদি ভাগ্নি সুভাষীনীর বিয়ে দিয়ে দিই তবে সব সময় ওকে ব্যবহার করতে পারবো । বাড়িতে সবসময়ের জন্য তৈরী থাকবে তার হাতিয়ার। রাজনীতি করতে গেলে এই সব কার্তিঁকদের বিশেষ প্রয়োজন হয় । বুথ দখল, পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালানো ইত্যাদি ইত্যাদি কারণে অকারণে এরাই প্রধান হাতিয়ার। কার্তিকের দৌলতেই শশাঙ্ক মামা হতে পেরেছিলেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের জামাই বলে কথা। জামাই হওয়ার সুবাদে বহু পয়সা এদিকে সেদিকে লুটে নিয়েছে । তবে এখন এইসব ছেড়ে দিয়েছে । মামা তার সাগরেদের সবাইকে কিছু না কিছু পেটের ভাত খাওয়ার মত কাজ জুটিয়ে দিয়েছে । এখানে সেখানে লাগিয়ে দিয়েছে । অনেকেই নিমকহারাম হয়ে যায়। কিন্তু মামা এ কাজ করে নি ।সব ক্যাডারদের খুশি করতে যতোটুকু পেরেছেন ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন । অনেকের ভোটে জেতার পর কিছু মনে থাকেনা। কিন্তু চালাক মামা আগামী ভোটের সময় যাতে মাটি খুঁজে না বেড়াতে হয় তার ব্যাবস্হা করে রেখেছেন।
কার্তিক ও সুভাষিনী রাতের বেলায় ফিসফিস করে বলে হ্যাঁ গো শুনেছিলাম গোটা বাড়িটাই নাকি আমাদের হবে ?কিন্তু তো এখন দেখছি এটা ভাগাভাগি হবে।চোখ লাল করে সুভাষীনীকে বলে" মন খারাপ হয়েছে বাবা দু-পাঁচ দিন থাকবি খাবি- দাবি আবার যে গোহালের গরু সেই গোহালে গিয়ে উঠবি ।তা- না একেবারে পাকা পাকি ভাবে থাকার পরিকল্পনা।! কেমন মজা ! শালা নিজের বাড়ি হবে বলে কতো যত্ন করে বাড়িটাকে ঝকঝকে করে রেখেছি।
থাম মজা দেখাচ্ছি। সাহস তো মন্দ নয়।সুভাষীনী তুমি যদি সাপোর্ট করো তোমার অবস্থা কেমন হবে তুমি বুঝতে পারছো তো?
সুভাষিনীকে বলে , শোনো--- এই শোনো না ---।
আরে বাবা আমি তো শুনছি । বলোনা --!
আরে একটু কাছে এসো --- আরও কাছে---- আরও কাছে ---।
কেন এই তো একেবারেই কাছে আছি বলোনা ----। শুনছি তো ।আমি কি তোমার মতো ঠসা নাকি?
আরে না না বলছি-- আমার দারুন একটা আইডিয়া এসেছে মাথায় ।এই বলে জোর করে সুভাষীনী কে জড়িয়ে ধরে এক্কেবারে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, ওকে যদি সরিয়ে দিতে পারি তবে গোটা বাড়িটায় আমাদের হবে। শুনেই প্রথমে আঁৎকে উঠেছিল সে। হাজার নিজের মায়ের পেটের বোন তো বটে । তারপর বলল তা কেমন করে সরাবে শুনি?
বাড়ি আর সম্পত্তি পাওয়ার নেশায় বোধবুদ্ধি লোপ পেতে বসেছে কার্তিকের।
তোমার দিদির তো জ্বর হয়েছে। ডাক্তারের কাছে গেছে ওষুধ আনতে। আনুক না ওষুধ। ওই ওষুধ ই হবে আমাদের তুরূপের তাস। ওই ওষুধের শিশিতেই সব সমস্যার সমাধান লিখা আছে প্রিয়তমা সুভাষীনী । নিশ্চয়ই কাসি যখন হয়েছে তখন শিরাপ তো অবশ্যই দিবে । ওই শিরাপের শিশিতেই দিবো বিষ মিশিয়ে! তারপরে চিন্তা করতে হবে না।
সমস্ত সম্পত্তি পাওয়ার আনন্দে কার্তিক সুভাষীনীকে জড়িয়ে ধরে চুমু চুমুতে ভরিয়ে দিল । সব লাজলজ্জা কে বিসর্জন দিয়েছে কার্তিক ।
হঠাৎ তোমার ভালোবাসা উৎলে উঠেছে কেন আজ? অনেক দিন তো বিয়ে হয়েছে ।এমন করে তো একদিন ও জড়িয়ে ধরে চুমু খাওনি । কার্তিকের মন গেয়ে উঠছে "আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে..."
পরামর্শ মতো কার্তিক সুপ্রিয়ার শিরাপের শিশিতে দিল তীব্র বিশ মিশিয়ে । নিয়তির কি নিঠুর খেলা । যে এলো বাবার বাড়ি একটু বাঁচার আশায় তাকেই কি না মেরে ফেলার চক্রান্ত।হায় রে নিয়তি।
নিয়তি ও দরজার আড়ালে মুখ টিপে টিপে হাসছে।
ওষুধ খাচ্ছি বলে রাতের বেলা টেবিলের উপর ওষুধ রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে সুপ্রিয়া। সারাদিনের পরিশ্রান্ত শরীর । পেটে খাবার পড়াতেই চোখে নেমে এসেছে রাজ্যের ঘুম । কতোদিন যে ভালো ভাবে ঘুমাতে পারে নি ওই মাতালটার অত্যাচারে ।দরজা খোলা পেয়ে ঘরে ঢুকেছিল বিড়াল ।এক লাফে টেবিলে উঠতেই শিরাপের শিশিটা গেল মেঝেতে পড়ে । শিশি ভেঙে শিরাপ ঘরময় পড়লো ছড়িয়ে । মিষ্টি জিনিসের গন্ধ পেয়ে বিড়ালে মজা করে খেয়েছে । পিঁপড়া আরশোলারাও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বিষের দাপটে ।তারপর মিয়াঁও মিয়াঁও করে ঘরময় দাপাদাপি করতে শুরু করে ।সেই সঙ্গে মুখে গ্যাঁজলা উঠে সাঙ্গ হলো বিড়ালের ইহলীলা।
সুপ্রিয়া ঘুম থেকে উঠে দেখে পড়ে থাকা শিরাপের পাশে মুখে গ্যাঁজলা বেরিয়ে পড়ে আছে বিড়ালটা । ঘরের চেহারা দেখে হতবাক হয়ে গেছে সুপ্রিয়া । আঁচ করতে পেরেছে এদের অভিসন্ধি। এখানে থাকা তার মোটেই সমীচীন হবে না । মনের যন্ত্রণাকে দমিয়ে রেখে বিছানা থেকে উঠে একেবারে থানা।
সাতসকালে মেয়ে মানুষকে থানায় দেখে কর্তব্যরত সাহেব জিজ্ঞেস করলেন এতো ভোরে ভোরে এখানে কেন ? কোনো অঘটন ঘটেছে নাকি ? সুপ্রিয়া তখন হাউমাউ করে কেঁদে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলে ফেললো সব ঘটনা।
অন্য মানুষের কথায় হয়তো সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করতে পাঠাতেন না । কেননা এমন ঘটনা তো হামেশাই ঘটছে ।এ আবার নতুন কি?
তবে মেয়ে ছেলে বলে কথা। ডাগর মেয়ে দেখলেই তো কর্তব্যবোধ উৎলে ওঠে অনেকের । ও সি সাহেবের দরদ ও একই ফর্মুলায় উৎলে উঠলো। পাশে ছোটবাবু ঢুলছিলেন । ঝাঁঝাঁলো গলায় ডাক দিতেই ছোট বাবু ধড়ফড় করে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠলেন।
কি আপদ মাইরী।একটু ঘুমোতে ও দিবেন না।এই তো দুঘন্টা আগে হোটেল রেড করে বাড়ি ফিরলাম ।
কি হলো বলুন?
ছোট বাবু একটু যান তো মেয়েটার সাথে।
গাড়ি নিতে হবে নাকি ?
না না এই তো কাছেই।
থানার পাঁচ ছ 'টি বাড়ির পরে।
অগত্যা বড়ো বাবুর হুকুম মেনে সুপ্রিয়ার পেছনে পেছনে হাজির হলেন কার্তিকের বাড়ি।
ভেজানো দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলেন সুপ্রিয়ার বিবরণ মতো ঘটনা ।
কার্তিকের ঘরের দরজা ঠক ঠক করে ওঠানো হলো বাবুদের। সব পাওয়ার নেশায় একটু রঙিন ও হয়েছিল দুজনে। মিষ্টি মিষ্টি রামের গন্ধ তখন ও ঘরময় ম ম করছে। পুলিশের শব্দ শুনে অগোছালো শাড়ী নিয়ে সুভাষীনী খুললো দরজা।
ছোটবাবু ওদের কিছু বোঝার আগেই দুজনের হাতে হাত কড়া পড়িয়ে টানতে টানতে নিয়ে চললো থানায়----!
##₹###
আবদুস সালাম
প্রয়াস শ্রীকান্তবাটি মাদারল্যান্ড
ডাক রঘুনাথগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ ৭৪২২২৫
।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
শ্রাবণ সংখ্যা রং সম্পাদকীয় সহ প্রায় সব লেখাই উন্নত মানের।
উত্তরমুছুনসুন্দর সংখ্যা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।