রণেশ রায়
জন্ম মৃত্যুর সীমানা ছাড়িয়ে
নীরব চলা জীবনের শেষ যাত্রাপথে,
আচমকা দেখা দুজনে জনপদে
দুটি রাস্তার মিলন পথে
বা হয়তো একই কামরায় জীবন রথে,
মুখোমুখি দুজনে সে যাত্রা পথে।
বুঝি আমি আমারও চুপ থাকা ভালো
যে ক্ষত সেদিনের, আজও রক্ত ঝরে
নীরবতাই পারে সে ক্ষত সারাতে
আমার মননে ব্যথা ক্ষত থেকে।
মনে হয় নিজেরই অতীতের ছায়া
ঘিরে রেখেছে তাকে মুখের প্রত্যয়ে
তার সেই কাজল কালো চোখের রহস্যে,
মনে হয় এ শুভ মুহূর্তে শেষ আমার অপেক্ষা
আজ মিটবে নিশ্চয় সে তিতিক্ষা,
আবার মনে হয় এ আমার ভ্রম, আমি বুঝি না।
আগে ওকে বার বার দেখেছি চঞ্চল অবুঝ
ঠিক সেদিনের পরনে শাড়ীটার মত
কচি কলাপাতার মত অবুঝ সবুজ।
আজ পরনে তার কালো বুটিতে সাদা শাড়ি
যেন স্থির প্রত্যয়ে দাঁড়িয়ে হিমালয় শিখর
বয়সের জ্ঞান মুখের গাম্ভীর্যে।
মনে হয় আজ এক কণা শিশির সে
দিন শেষে সন্ধ্যার ঘাসে ঘাসে
অপেক্ষায় কখন ভোর হবে
সূর্যের তাপে আকাশে বাষ্প হয়ে উড়বে
তারপর মেঘের অশ্রু বৃষ্টি হয়ে নামবে।
বোধ হয় চিনেও চেনেনি আমাকে,
আর চিনবেই না কেন !
আজ সে বসে অতীতের বিস্মৃতির বলয়ে।
কিন্তু চনমনে আমি, আমাকে আমার স্মৃতি ডেকে ফেরে,
সে আজও আমার রহস্যে রয়ে গেছে আলো আঁধারে।
সে নির্বিকার উদ্বেগহীন, আমি উদ্বিগ্ন
খুঁজি তাকে আমার অতীতে
শৈশবের ভোরের সকালে
কৈশোরে বসন্তের সন্ধ্যার রক্তরাগে
যৌবনের দুপুরে গ্রীষ্মের রৌদ্রের দহনে
আজও খুঁজে ফিরি বনানী প্রান্তরে
নদীর ধারে বিজন বিহনে
কখনও বা জনকলাহলে
সমুদ্রের ঢেউ এ ঢেউ এ।
আজ জীবনের সায়াহ্নে
আমার যাত্রারথ এই বুঝি পৌঁছয়
আমি তৈরি নামব বলে সামনের স্টেশনে।
হঠাৎ সে সামনে আসে
যেন অমাবস্যার অন্ধকারে পূর্ণিমার চাঁদ
এ অভাগার জীবন প্রান্তরে।
চিনতে পেরেছে আমাকে,
তারপর দুচারটে কথা পরস্পরে,
বুঝি আমি এ ঘন কালো সকালে
সূর্য আজও হাসে
মেঘের ওপারে লুকিয়ে।
এরই মধ্যে থামে গাড়ি স্টেশনে
নামতে হয় আমাকে,
সে চলে তার গন্তব্যে
আবার রথ চলা শুরু করে
পৌঁছে দেবে তাকে তার সীমান্তে।
=======================
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন