google-site-verification=aFCzFTmuVjPqPlrdWXeJSj2r_EMig_cypLnlmiUQpw0 re গল্প ।। বৃষ্টি-স্নাত রাত ।। শেফালি সর - নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

Breaking

নবপ্রভাত মাসিক ব্লগ-সাহিত্যপত্র

NABAPRAVAT : A Monthly Bengali Literary Blogzine.

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০২২

গল্প ।। বৃষ্টি-স্নাত রাত ।। শেফালি সর


বৃষ্টি-স্নাত রাত

শেফালি  সর


শ্রাবণের আকাশ জল ভরা কালো মেঘে ঢেকে  গেছে। ফুলে ফুলে  সাজানো  বাসর ঘরে দুটি  প্রাণী মাধবী আর মধুপ,তাদের নীরব মধু গুঞ্জরণে হাসি কান্নার সুর তুলে বাসরের অন্দরে রাতের হাস্নুহানার কুঁড়িগুলোকে একটু একটু করে ফুটিয়ে  তুলছে।তাদের ভালোবাসার  ছোঁয়ায় বাসরের ফুল গুলোও যেন  জীবন্ত হয়ে চুপি চুপি  কথা বলছে।মধুপ বলছে - মাধবী,আজকের এই  রাত শুধু  তোমার  আমার। এই মাধবী রাতে তুমি  আমার  সঙ্গে-,তাই তো জীবনকে  এতো সুন্দর  মনে হ'চ্ছে। 


            আবেগে আবেশে মগ্ন  হ'য়ে মধুপ মাধবীর কানে কানে চুপি চুপি ব'লছে- আমি তো শুধুই  তোমার  মাধবী! মাধবী  লতার মতো মধুপকে জড়িয়ে  ধরে  বলছে-তুমি আমার  আরও  আরও কাছে  এসো। এমনি করে  ঠিক  এমনি করেই  ধরে রেখো নিবিড়  করে, গোপন  ভালোবাসার  বিনি সূতোর বাঁধনে বেঁধে রেখো।আমি আর কিচ্ছু  জানিনা  মধুপ-শুধু এইটুকুই জানি -তুমি শুধু  আমারই  মধুপ সোনা। তোমার  আমার  এমন মিলন যেন  আমাদের  ভবিষ্যৎ  জীবনকে  আরও  মধুময় করে-তাই না বলো? মাধবীকে মধুপ মিষ্টি  চুমু  দিয়ে  আদর করে  আরও  কাছে  টেনে  নিয়ে  বলল- হুঁ, ঠিক তাই!




            বাইরে একটানা সানাইয়ের সুর বেজেই চলেছে।আর বাসরের ভিতরে যখন দুজনের মধুময় আলাপ চলছে তখন  বাসরের বাইরে  অঝোর ধারে বৃষ্টি  পড়ছে যেন শ্রাবণের আকাশ ভেঙে রায় ভিলার আর একটি  ঘরে মাধবীর বাবা হায়ার সেকেন্ডারী স্কুলের প্রধান  শিক্ষক অতনু রায় আজ একটু  যেন নিশ্চিন্তে  ঘুমাচ্ছেন।কতদিন একমাত্র  মেয়ের  বিয়ে নিয়ে  খুব  দুশ্চিন্তায়  ছিলেন -যদিও জানতেন তার  প্রিয় ছাত্র  মধুপের একটা  চাকরি  অন্তত  হবেই।মধুপের বাবা  ছিলেন  একজন  সাধারণ  কেরাণী একটা  অনামী অফিসের।তিনি মারা গেলে সংসার  অচল হয়ে  পড়ে।মধুপের মা অক্লান্ত পরিশ্রমে ছেলের  পড়াশুনা  চালিয়ে গেছে।আজ সে দর্শনের অধ‍্যাপক একটি  নামী কলেজের।মধুপের চাকরি  পাওয়ার  পরেই মাধবীর মা সুতপাদেবী নিজেই মাধবীর বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড়  করে।এতদিন মেয়েকে নানাভাবে ভোলাবার চেষ্টা  করেছে যাতে ওদের ভালবাসাতে ভাঙন ধরে। একবার  এক ইঞ্জিনিয়ার  পাত্রের সম্বন্ধ এসেছিল।সুতপাদেবী যখন  মেয়েকে বোঝায় তখন  মেয়ে বলেছিল- মা,মধুপকে আমি  ভালবাসি।তাকে ছাড়া আর কাউকে  আমার  জীবনসঙ্গী  হিসাবে  মেনে  নিতে  পারবো না। মাধবী মধুপের বাল‍্যসঙ্গিনী।তারপর স্কুলে,কলেজে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে একই  সঙ্গে   পড়াশুনা  করেছে তারা।মাধবী অনেক  পড়াশুনা  করলেও  তার  মনে  একটা  অন‍্যরকম স্বপ্ন  ছিল -স্বামী সন্তান  ও তার  পরিবার পরিজন নিয়ে  একটা  সুখী  সংসার  গড়ার। অতনু বাবুও মেয়ের  সাথে একমত। পড়াশুনা  করলেই  যে মেয়েদের চাকুরী  করতেই হবে এমনটা  তিনি  পছন্দ  করেন  না।কিন্তু সুতপাদেবী চাইতেন  মেয়ে একটা  নামীদামি  চাকরি  করুক।


            যাইহোক, বিধাতার ইচ্ছানুসারে সবশেষে  তাদের  মহামিলন ঘটলো শ্রাবণের শুভক্ষণে।বাবা মা দুজনেই প্রাণভ'রে আশীর্বাদ  করলেন- ওদের  জীবন মধুময় হোক। বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রিত  অতিথিবর্গ সকলেই  উপহার  দিয়ে  আশীর্বাদ  ও শুভেচ্ছা  জানিয়ে গেলেন। অতিথিগণ সকলেই বিয়েবাড়ির ভোজ খেয়ে  সানন্দে  বিদায়  নিলেন।এই উৎসব -মুখর রাত্রির সাক্ষী  রইল  ঝরোঝরো শ্রাবণধারা।


--------------------:--------------------


                       শেফালি  সর
                         জনাদাঁড়ি
                       গোপীনাথপুর
                    পূর্ব মেদিনীপুর
                      ৭২১৬৩৩



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন