মিঠুন মুখার্জী
দুপুরের ভাতঘুম থেকে উঠে বাদল দেখলো, সারা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, কালো অন্ধকার করে এসেছে বাইরের পৃথিবীটা। দেখে তার মনে হয় এখনই প্রবল বেগে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হবে। গুম মেরে থাকে সমগ্র আকাশটি। কালবৈশাখীর দিনে ঝড়-বৃষ্টি না হলে চলে। বর্ষাকালটা বাদলের খুবই ভালো লাগে। প্রবল বেগে বৃষ্টিতে ভিজতে ও বৃষ্টি দেখতে সে খুব ভালোবাসে। শরীরে শিহরন জাগে। বাদলের জন্ম হয়েছিল শ্রাবণ মাসের এক বর্ষণমুখর দিনে। এক কথায় বৃষ্টি পাগল মানুষ সে। শরীর খারাপ হওয়ার ভয়তে অন্যরা যখন বৃষ্টিতে ভেজা থেকে বিরত থাকে , তখন শরীরের কথা না ভেবে পাগলের মতো বৃষ্টিতে ভেজে সে। দেখতে দেখতে আধা ঘন্টার মধ্যে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে প্রবল ঝড়ো বাতাস। কারো কথা না শুনে বাদল বৃষ্টিতে ভেজে ও দুই হাত দিয়ে চোখ- মুখের জল সরাতে লাগে। মা ঘর থেকে চিৎকার করে বলেন--- "জ্বরে পড়বি, ওভাবে বৃষ্টিতে ভিজিস না।" দিদিও বকাবকি করে তাকে। তবুও কারো কথা কানে নেয় না সে। এক একটা মানুষের এক একটা বিষয়ের প্রতি নেশা থাকে। বাদলের বৃষ্টিতে ভেজা একপ্রকার নেশায় পরিণত হয়েছিল। তাই অন্যরা বারন করলেও তার আনন্দ ষোলআনা উপভোগ করে নিত সে।
বৃষ্টি থেমেছিল ঘন্টা দুয়েক পর। তখনো বাইরে আলো ছিল। মাত্র দু-ঘন্টার বৃষ্টিতে বাদলের বাড়ির উঠোনে জল জমে গিয়েছিল। জায়গায় জায়গায় কাদায় খুব পিছল হয়েছিল। মাঝে মাঝে সে সেই কাদায় পিছল খেয়ে পড়ছিল, আবার উঠছিল ও পিছলে পড়ে যাচ্ছিল। বিষয়টা ওর কাছে খুব মজাদার মনে হয়েছিল। বাদলের মা শেষমেষ ধৈর্য হারিয়ে বাদলের পিঠে দুটো চড় কষিয়ে দেন। হাত ধরে টেনে এনে কলের জল ঢেলে স্নান করিয়ে দেন। মায়ের মার খেয়েও কোনো শিক্ষা হয়না বাদলের। মাকে বলে--- "মা, বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে, তা তুমি জানা সত্ত্বেও আমায় মারলে।" মা বাদলের এই অভিমান ভরা কথা শুনে বলেছিলেন--- "তোর ভালোলাগা নয়, নেশায় পরিণত হয়েছে। আমি তোকে না মারলে এই নেশা কাটতো না। আর তোকে স্নান না করালে নিশ্চিত জ্বর আসত। এভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভেজে!! যতই তোর ভালো লাগুক। আগুনে হাত দিলে হাত জ্বলে যায়। কারণ আগুনের ধর্ম হলো পোড়ানো। সে শত্রু-মিত্র বোঝেনা। ঠিক তেমনি বৃষ্টির জল মানব দেহের পক্ষে ক্ষতিকর। তা তুই ভালোবেসে ভেজ,কিম্বা না বুঝেই। বৃষ্টি ভালোবাসিস বলে জলে ভিজতে হবে! ঘর থেকে দেখেও সুখানুভুতি সম্ভব।" মায়ের কথা শুনে বাদল তার ভুল বুঝতে পারে। মাকে কথা দেয়, সে আর কোনদিন ইচ্ছা করে বৃষ্টিতে ভিজবে না। সে বুঝতে পেরেছে সবকিছুর ভালো-মন্দ বিষয় আছে। আমরা যেভাবে তাকে ব্যবহার করব সেটা সেভাবে আমাদের ফল দেবে। বাদলের এই শিক্ষালাভ দেখে মা খুশি হন। বলেন--- "ঠিক বলেছিস। আজকে পিঠে তাল পড়াটাই তোর প্রকৃত বোধের উদয় ঘটাল। আমি তো এটাই চেয়েছিলাম।"
================
মিঠুন মুখার্জী
গ্ৰাম -- নবজীবন পল্লী
পোস্ট + থানা -- গোবরডাঙা
জেলা -- উত্তর ২৪ পরগনা
পিন -- ৭৪৩২৫২
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন