Featured Post
প্রবন্ধ ।। সমাজ ও সাহিত্য ।। রণেশ রায়
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
সমাজ ও সাহিত্য
রণেশ রায়
বহির্বিশ্বের অবলোকন, সমাজ জীবনের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ ও তাদের আন্তঃসম্পর্ক মানুষের মননে তার আবেগে যে কল্পলোকের সৃষ্টি করে তাকে কথামালায় গল্প কবিতা উপন্যাস প্রভৃতির মাধ্যমে উপস্থিত করা হয় সাহিত্যে । সেই অর্থে সাহিত্য হল মানুষের অনুভূতির ভাবনার ভাষাগত চিত্তাকর্ষক রূপান্তর। সাহিত্যের ময়দানে মানুষের সমাজজীবনের বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাহিত্যিকের কল্পলোক তথা তার মনন গল্প কবিতা উপন্যাস নাটক মনমাতানো সাজে সেজে ওঠে। সাহিত্যিক অতীতকে অবলোকন করে, বর্তমানকে চাক্ষুষ করে, ভবিষ্যতের ছবি এঁকে তার জীবনবোধের সাহায্যে সাহিত্য সৃষ্টি করেন।
সাহিত্যিকের কল্পলোকে প্রতিভাত হয় এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ক্রীড়ারত সমাজের প্রতিচ্ছবি, মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক মানুষের জীবিকা জীবনযাপন এক কথায় মানুষের আর্থসামাজিক জীবন। সমাজের অর্থনীতি রাজনীতি সংস্কৃতি সাহিত্যিকের কলমে কল্পনার রঙে রঞ্জিত হয়ে সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গে তথা গল্প কবিতা উপন্যাস নাটকে সেজে ওঠে। সাহিত্যিক এই ব্রহ্মলোক থেকে মানুষের সমাজজীবন থেকে সংগ্রহ করে সাহিত্যের উপাদান যাকে সে নিজের কল্পলোকে নিজস্ব শিল্প গুনে তথা আপন মনের মাধুরিতে সিঞ্চিত করে তার লেখনীর মাধ্যমে এক অনন্য সত্তা দান করে। সাহিত্য হয়ে ওঠে সার্বজনীন। তাকে আমরা সমাজের দর্পণ হিসেবে দেখি যা প্রবহমান সমাজের প্রতিটি অতীত ও বর্তমান ক্রিয়া কান্ডকে অবলোকন করে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করে। সাহিত্যিকের কল্পলোকে এক অনাগত ভবিষ্যত রূপ পায় যা ভাস্বর হয়ে ওঠে সাহিত্যে।
সমাজ ও তার ক্রিয়াকলাপ বাদ দিয়ে সহিত্যশিল্প গড়ে উঠতে পারে না। সাহিত্যিকের সাহিত্য চর্চায় সমাজের ছবি মূর্ত হয়ে ওঠে। বিশ্ব লোকের অতীত ও বর্তমানের নানা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাত ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার আবর্তে মানুষের ভাবালোকে জন্ম নেয় এক চেতনা যার ভাষাগত রূপান্তর ঘটে শব্দ বন্ধনে ভাষার সুর ও ছন্দে যা সাহিত্য সৃষ্টি করে। আমাদের সমাজ হল সুখ দুঃখ হাসিকান্না বাদবিবাদের এক ক্রিয়া ক্ষেত্র যার ক্যানভাসে সৃষ্টি হয় সাহিত্য যে ক্যানভাসে মূর্ত হয়ে ওঠে সাহিত্যিকের মনোজগৎ, কথা মালায় সেজে ওঠে।
বহির্বিশ্বের আধারে সমাজ জীবন তাঁর সমস্ত বৈচিত্রময় কার্যকলাপ নিয়ে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে সাহিত্য স্রষ্টার অন্তরের অন্তঃস্থলে, তা সিক্ত করে তোলে তাঁর মনোজগতকে। এই মনোজগতেই সৃষ্টি হয় সাহিত্য কল্প যা ভাষায় রূপ পায়। সাহিত্যিক তাকে বাণীরূপ দান করে। প্রকৃতি ও সমাজ থেকে উপাদান সংগ্রহ করে সাহিত্য সৃষ্টি করেন সাহিত্যিক তাঁর সাহিত্য কর্মে।
শুধু ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ভৌত জগৎ নিয়েই সমাজ নয়। মানুষের কল্পলোকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এই ভৌতজগতের যে বিমূর্ত রূপ যা মানুষের চেতনায় ভাবনায় তার মননে প্রতিবিম্বিত হয় তাও সমাজের উপাদান যা অবস্তুগত। আমরা একটা গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হই। আমাদের জীবনে এই বস্তুগত বিশ্ব জগত ও তার থেকে উদ্ভুত মনোজগৎ কোনটা প্রধান। জীবনের এই বিষয়টিই দ্বন্দ্ব তত্ত্বে মানুষের ভাবনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বার বার। সাহিত্য জগতেও এই বিষয়টা উঠে এসেছে। একে কেন্দ্র করে ভাববাদী গড়ে উঠেছে আর বস্তুবাদী ব্যাখ্যা তথা জীবন দর্শন। জন্ম নিয়েছে বস্তুবাদী ও ভাববাদী দর্শন মূর্ত হয়ে উঠেছে তা জীবনবোধে।
আমরা জানি সমাজ এক বহমান সত্তা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের মানুষের সঙ্গে মানুষের নানা ঘাত প্রতিঘাতে জীবন জীবিকার ধরন ও তার ক্রমবিবর্তনের মধ্যে দিয়ে মানুষের জীবনের তথা সমাজের এক ফল্গুধারা প্রবাহিত। অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক জীবন তার বিবর্তন, তার সঙ্গে নির্মাণ ও বিনির্মাণের মাধ্যমে বিকশিত হতে থাকে সমাজ ও সমাজ জীবন । তারই প্রতিফলন ঘটে সাহিত্যিকের মননে কল্পলোকে যা ধরে সাহিত্যেও নির্মাণ বিনির্মাণ প্রক্রিয়া অবিরত চলমান থাকে। তাই কোন চিরস্থিতিশীল অপরিবর্তনীয় কাঠামোয় সাহিত্য চর্চা চলে না। তাতে একটা নির্মাণ বিনির্মাণ প্রক্রিয়া কাজ করে মানুষের জীবনবোধে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। একে উপেক্ষা করে সাহিত্য সৃষ্টি হতে পারে না। প্রকৃতিকে ঘিরে সমাজ জীবন ও মানুষে মানুষের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে এক ক্যানভাস যাকে আমরা সাহিত্যের ক্যানভাস বলি। এই ক্যানভাসে সৃষ্টি হয় গল্প কবিতা উপন্যাস ইত্যাদি যাকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে সাহিত্যের প্রাঙ্গণ বলা চলে। সমাজ জীবনের দর্পণই হলো সাহিত্য।
মনে রাখা দরকার মানুষের সমাজ জীবন কোন নির্দিষ্ট সময়ের খণ্ডিত সত্তা নয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এক একটা যুগ পেরিয়ে তার বহমানতা। নিত্ত নতুন নির্মাণ প্রকল্প যার সঙ্গে বিজ্ঞানের অগ্রগতি যুক্ত। সময়ের নিরিখে এ এক বহমান সত্তা আদি থেকে অন্তে যার হিসেব সঠিকভাবে আমরা পাই না। কারণ সমাজ না জানা সুদূর অতীত থেকে অনাগত সৃষ্টি লোকের ভবিষ্যত পর্যন্ত প্রবহমান আর তারই তটভূমিতে শায়িত আমাদের অতীত বর্তমান ভবিষ্যত। যুগ থেকে যুগান্তরে তার চলন। তারই একটা সময় তার রঙে রসে বর্ণে গন্ধে জীবনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ধরা পড়ে একটা যুগ কোন একজন সাহিত্যিকের মনোজগতে। শুধু বর্তমান নয় যা অতীত হয়ে গেছে যা গড়ে উঠতে পারে বলে আমাদের কল্পলোকে অধিষ্ঠিত তাও ধরা পড়ে একটা বিশেষ যুগে, অতীত বর্তমান বা ভবিষ্যত কাল নিয়ে চর্চিত সাহিত্য চর্চায়। তাই অতীতকে নিয়ে রামায়ন মহাভারতের কাল বর্তমানকে নিয়ে আমাদের বর্তমান পল্লিসমাজ নগর সভ্যতা এমন কি কল্পিত ভাবী চন্দ্রালোকে আমাদের সাহিত্য বিচরণ করে। কোন একটা সময় বা যুগ অতিবাহিত হয়ে গেলে নতুন একটা যুগের দাবিতে সে যুগের সম্ভাব্য সমাজ জীবনকে মূর্ত করে তোলে নতুন করে গড়ে ওঠা সাহিত্যের আঙ্গিক। সেই অনুযায়ী অতীত কল্প কথা যেমন সাহিত্যে জায়গা পায় তেমনি স্বপ্নের ভবিষ্যতের রহস্য কথা বর্তমানের কান্না হাসি জীবন যুদ্ধ জায়গা করে নেয় সাহিত্যের আঙ্গিকে। গতিশীল মানব সমাজ ও সাহিত্য এক নিবিড় অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে সম্পর্কিত।
উল্লেখযোগ্য যে জীবনবোধ নির্মাণ বিনির্মাণে সাহিত্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মানুষের মননে যে মূল্যবোধ সুপ্ত থাকে তাকে জাগিয়ে তুলতে পারে যদি সাহিত্যিক তার জীবনের সৌন্দর্যবোধ মূল্যবোধকে সাহিত্যের আঙিনায় রূপ দিতে পারেন তাকে তাঁর কল্পলোকের সাহায্যে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এর জন্য দরকার সাহিত্যকের অন্তর্লোকের এক জীবনবোধ যা মানুষের সেবায় নিযুক্ত। সুতরাং বাস্তব বর্জিত জীবনে প্রতিভাত না হওয়া নেহাত নিজের কল্পলোকের সাহায্যে বিমূর্ত ভাবে কিছু তুলে ধরে মানুষকে সস্তার বিনোদনের যোগান দেওয়া প্রকৃত সাহিত্যের কাজ নয় যদিও অনাগত সুন্দর স্বপ্ন দেখা ভবিষ্যতের ছবি আঁকে সাহিত্য কারণ সে তার সমস্ত সৌন্দর্য রাশি নিয়ে একদিন আসবে বলে সাহিত্যিকের যুক্তিতে কল্প স্বর্গে তা ধরা পড়ে।
সাহিত্য মানুষের জীবন ধারণ ও ধরনের প্রতিচ্ছবি বা প্রতিবিম্ব। বিভিন্ন সময় কালে মানুষের জীবন ধারণের ধরন সামাজিক ব্যবস্থা ভিন্ন তাই বিভিন্ন ব্যবস্থায় সাহিত্যের ধরন আলাদা। গুরুত্ব পায় ও আলোকিত হয় সমাজজীবনে বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও তার কাজের আপেক্ষিক গুরুত্ব ক্রিয়া কান্ড। একই সময় কোন গোষ্ঠী ও তার জীবন জীবিকা শাসক বর্গের কাছে উপেক্ষিত হলেও উপক্ষিত মানুষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তাদের নিজস্ব সাহিত্য রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই। এমন কি রাষ্ট্রের সক্রিয় বিরোধিতার মুখেও।তাই একই দেশে বিভিন্ন সময়ে যেমন বিভিন্ন ধরনের সাহিত্য দেখা যায় তেমনি একটা সময়ে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী বিভিন্ন ধারার সাহিত্য গড়ে তোলে। তাই সাহিত্য জগতে বৈচিত্রের মেলা।
আমরা দেখলাম যে সাহিত্যে মানুষের জীবনবোধ বিশেষ গুরুত্ত্বপূর্ণ কারণ মানুষের সুখ দুঃখ আনন্দ নিরানন্দ বাদ বিবাদ নিয়ে সাহিত্য চর্চা। প্রকৃতি মানুষকে ধারন করে, তার বেঁচে থাকার উপাদান যোগায়। তাই মানুষের সঙ্গে মানুষের সমাজ সম্পর্ক প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক সাহিত্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর তাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে জীবন বোধ। জীবনবোধকে বাদ দিয়ে সাহিত্য হয় না। বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থায় মানুষে মানুষে সম্পর্কটা ভিন্ন হয় বলে সাহিত্যের ধরনেও ভিন্নতা আসে। আবার প্রকৃতির মানুষের ওপর প্রভাব, প্রযুক্তি বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রকৃতির ওপর দখলদারি বাড়ে বলে প্রকৃতিকে অবদমন করা হয় বলে মানুষে প্রকৃতিতে সম্পর্কের ভারসাম্যে পরিবর্তন আসে। এর ফলে সাহিত্যিকের মননে তার প্রভাব দেখা যায় যা সাহিত্যের নির্মাণ বিনির্মাণের কাজকে প্রভাবিত হয়। বিষয়টা উদাহরণ দিয়ে তুলে ধরা হয়। যেমন প্রাচীন কালে দাস ব্যবস্থায় দাস মালিকরা দাসের শ্রমে জীবন যাপন করত।দাসেরা শোষিত হত।দুধরনের সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে তাকে কেন্দ্র করে।দাস প্রভুদের আধিত্যবাদকে কেন্দ্র করে সাহিত্য, সে সমাজে মানুষের ধর্ম বিশ্বাস নিয়ে সাহিত্য। মালিক পক্ষের সাহিত্যে জীবন বোধ একভাবে প্রতিভাত হতো, মনে করা হত দাস ঈশ্বরের ইচ্ছেতেই জন্মেছে। প্রভুর প্রতি আনুগত্য মানে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য। দাস মালিকরা অনুগ্রহ করে তাদের বাঁচিয়ে রাখবে। সেই অনুযায়ী দাস প্রভুদের মাহাত্ম, কল্পিত ঈশ্বরের জয়গানে মুখরিত হত তাদের সাহিত্য। এর বিপরীতে দাসদের ওপর নির্যাতন তাদের বিদ্রোহ ভাষা পেয়েছে তখনকার প্রগতিশীল সাহিত্যে যাতে একটা নতুন মূল্যবোধ রূপায়িত হয়েছে। প্রতিভাত হয়েছে আগমনী সামন্ত ব্যবস্থার আগমনী বার্তা। একই ভাবে সমাজ বিবর্তনে সামন্ত প্রভুদের মাহাত্ম তার পরবর্তীতে বেনিয়াবাদ পুঁজিবাদের আবির্ভাব মানুষের মূল্যবোধের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্য চর্চা হয়ে উঠেছে বহুমুখী। প্রভাবশালী শাসক গোষ্ঠীর বন্দনা যেমন সাহিত্যে জায়গা পেছে তেমনি নিপীড়িত মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম সমাজ বদলের সংগ্রাম জায়গা পেয়েছে। একই মানব সমাজে বিজ্ঞানের উন্নতি যেমন হয়েছে প্রযুক্তির অপব্যবহারে প্রকৃতি তেমনি ধ্বংস হচ্ছে।মানুষের মূল্যবোধে বিবর্তন এসেছে। সাহিত্যে তার গুরুত্ব বেড়েছে। সাহিত্যে প্রকৃতির সৌন্দর্য যেমন প্রতিভাত হয়েছে আজ তেমনি প্রকৃতির ওপর সভ্যতার বর্বর আক্রমণ এর নিন্দা ভাষা পাচ্ছে সাহিত্যে।শাসক শোষক সম্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি গড়ে উঠছে বিপরীত ভাবনা যা সমাজতন্ত্রের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
আমরা বলেছি যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বস্তুজগত মানুষের মননে কল্পজগতে প্রতিবিম্বিত হয়। আবার মানুষের মনন সাহিত্যের মাধ্যমে বস্তুজগতের ও সমাজজীবনের কর্ম কাণ্ডকে অবলোকন করে তাকে নিজের ভাবনায় রাঙিয়ে নেয়। প্রশ্ন হলো কোনটা প্রধান। বস্তুলোক না মনোলক কোনটা সাহিত্য সৃষ্টিতে সাহিত্যের আধার হিসেবে কাজ করে। যারা সাহিত্য সৃষ্টিতে মনলোককে প্রধান বলে মনে করেন তাঁরা মনে করেন বস্তুজগত জগৎ যেমনই হোক না কেন সাহিত্যিক তাঁর ভাবনায় তাকে যেভাবে দেখেন কল্পনায় তাকে যে ভাবে ভাবেন সেভাবে নিজের ভাবনায় তাকে উপস্থাপন করেন। পাঠকের স্বাধীনতা আছে তাঁর মনন দিয়ে তাকে বুঝে নিতে। তার ফলে বিমূর্ত ভাবে গল্প কবিতাকে পরিবেশন করার সুযোগ থাকে, তাকে নিজের মত করে বুঝে নেয় পাঠক। লেখক যা বলতে চান সে তাকে না বুঝলেও তা যদি পাঠকের মননে আনন্দ উৎসারিত করতে পারে তবেই সাহিত্যিকের পরিবেশন সার্থক বলে এঁরা মনে করেন। আর যাঁরা মনে করেন বস্তুজগতটা প্রধান তার আধারে সাহিত্য সৃষ্টি হয় তারা বস্তুজগতকে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য দিয়ে চেনার চেষ্টা করেন। যেটা যেমন তাকে পাঠক সেভাবে দেখতে পারে। সাহিত্যিক সমাজের ভবিষ্যত গতিপথ নিয়ে ছবি আঁকতে পারেন।সাহিত্য সমাজের কাজে লাগে পরিবর্তনের দিশা দেখাতে পারে নেহাত পাঠকের মনোরঞ্জন করে না, বিমূর্ত ভাবে তাকে পরিবেশন করে না। বস্তু ও ভাবের এক দ্বিমুখী সম্পর্ক দেখা যায়। হেগেলের মত দার্শনিকরা বস্তু ও ভাবের মধ্যে ভাবকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনকে জীবনের ভালমন্দকে ব্যাখ্যা করেছেন । তাঁর অনুগামী সাহিত্যিকরা সাহিত্য কর্মকে সাহিত্যিকের মনের রঙে রাঙানো বলে মনে করেন। রামায়ন মহাভারতে সাহিত্যিকের কল্পনায় চরিত্রের সৃষ্টি। তার বাস্তব অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। সেখানে মানুষকে দেবতার আসনে নয়তো রাক্ষস খোক্ষষ বা অসুর বলে চিত্রিত করা হয়ছে। আবার এ যুগের সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে সত্য মিথ্যা নিয়ে বলতে শোনা যায়, সেই সত্য যা রচিবে তুমি ঘটে যা তা সত্য নহে। বস্তু ও তার সৌন্দর্য বর্ণনা কোন কিছুর নামকরণ নিয়ে তিনি বলেন, আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ চুণী উঠলো রাঙা হয়ে। বস্তুবাদী ভাবনায় বস্তু প্রাধান্য পায়। বস্তুজগতকে সাহিত্যের আধার বলে বিবেচনা করা হয়। কার্ল মার্কস দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী দর্শন অনুসরণ করে সমাজের শ্রেণী দ্বন্দ্বকে শ্রেণীবিভক্ত সমাজে প্রধান দ্বন্দ্ব বলে মনে করেন। আর শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গিকে সাহিত্যিকের কাঙ্ক্ষিত জীবন বোধ বলে মনে করেন। তাকে কেন্দ্র করে মার্কসবাদী সাহিত্য গড়ে ওঠে যেখানে তথাকথিত শ্রেণীনিরপেক্ষ সাহিত্য সৃষ্টিকে শোষক সম্রদায়ের স্বার্থ সিদ্ধ করে, শোষণ নিপী়রণের হাতিয়ার বলে মনে করা হয়।তাঁরা মনে করেন শ্রেণীবিভক্ত সমাজে শ্রেণী নিরপেক্ষ সাহিত্য বলে কিছু হয় না।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন